যে যার মতো করে সুখী হই । { একটি সমিধ জীবন ভাবনা }
আসসালামু আলাইকুম / আদাব।
সবাইকে শুভেচ্ছা ও আমার বাংলা ব্লগে স্বাগতম জানিয়ে আজকের লেখা শুরু করছি। কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালোই আছেন আর জীবনের নানাধরনের সমস্যা, সুবিধা- অসুবিধার মধ্য দিয়ে ভালোই সময় কাটছে।
আমি ইচ্ছা পোষণ করি এমনিই ভালো থাকার মধ্যে বাকি দিনগুলো আমাদের সবার অতিবাহিত হোক এবং স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসুক আগামীর দিনের জন্য।
আজকে বেশ অনেকদিন পর সময় করে ফিরে এলাম ব্যস্ত শহরকে ছুটিতে পাঠিয়ে গ্রামছাড়া মফস্বলের আঙিনায়। বাস্তবতা আদৌত এই, অনেকদিন পেরিয়ে যায়, সবসময় সময় হয়ে ওঠে না - প্রকৃতি আর মানুষের অনাবিল সৌন্দর্য্যের মেলবন্ধন দেখবার। কারণ সংসারের নিত্যদিনের চাহিদা রয়েছে, কর্তব্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত যার শাখা প্রশাখা দিনদিন যত ঘিরে ধরে ততই সুযোগ কমে যায়।
আপনারা হয়তো বেশিরভাগই আমার মতো একই পথের পথিক যারা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সময় কাটাতে পারেন না। আমরা যা মন থেকে চাই, আর যা করি, তার মধ্যে বাস্তবতা আর কর্তব্য একটি বড় ভূমিকা রাখে। যাদের কর্মসথল হলো একটি বড় শহর, ইট পাথরের নগর ইমারতে গড়া আর ব্যস্ততা কোলাহলের ঝুপড়ির রাস্তা ঘাট দালানকোঠা, তাদের মন না চাইলেও ফিরে যেতে হয় কাজের ক্ষেত্রবিশেষে, অফিস কাচারি , কর্পোরেট বিল্ডিংয়ে, ছোটবড় প্রতিষ্ঠানে।
একদিকে পরিবার আর গ্রামের মানুষজন আত্নীয় স্বজন আর প্রতিবেশীদের ভেসে ওঠে, যখন ছুটি মেলে তখন ফিরে আসার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ উদ্দীপনা, অন্যদিকে ভালোবাসার মানুষজনের সাথে মেলামেশা সাক্ষাতের একটি সুযোগ তৈরি হয়।
তাও আবার বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে, বাকি সময় কেটে যায় নিজের বর্তমানের কর্মচাঞ্চল্যের ওপর ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণে।
বছরের পর বছর ধরে কিন্তু ঘুরেফিরে একই সমীকরণে জীবন বাঁধা হয়ে থাকে, অন্তত আমাদের গ্রেটার বাংলা জনপদে গ্রাম -শহরের ভেদ আছে, দ্বিমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আছে যার ওপর দাঁড়িয়ে সমাজ টিকে আছে। খুব ছোটবেলায় গ্রামের আবহাওয়া দেখে দেখে বড় হয়েছি আর কৈশোরের পর থেকে ছোট বড় শহর নগরের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত জীবন গতিলাভ করেছে সমিধ ধারায়, সময়ের পালতোলা নৌকা বেয়ে।
বেশ অনেকবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আমার জীবনধারা যেভাবে বয়ে চলছে বাকি মানুষের জীবন কি একই স্রোতে বহমান নাকি ভিন্নধারায় অস্তিত্বের মুখোমুখি হয়ে রয়েছে। এখানে আমরা যারা আছি তারা কমবেশিই গ্রামের সাথে সম্পর্ক আছে।
কারো আদি বসতি পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি ছড়িয়ে আছে সেই ঠিকানায় যার শিকড় তাজা মাটিতে নিবদ্ধ আর আত্নাটা অন্তজ শ্রেণির মতো করে সাজানো।
তাহলে গ্রামের সাথে সম্পর্কহীন মানুষও হয় ?
এ ব্যাপারটি নিয়ে এদেশের ব্যস্ততম শহর ছেড়ে আশার সময় যাত্রাপথে অনেকটা সময় ধরে ভেবেছি। সত্যিই যখন চারপাশের কিছু ব্যস্ত মানুষের সাথে মিশে জানতে পারলাম যে, তারা ছোটবেলা থেকে শহরেই বড় হয়েছে, জন্ম এখানে বেড়ে ওঠা, চাকরি বাকরি শিক্ষা দীক্ষা, আত্নীয় স্বজন সবকিছুই এখানকার। নিরন্তর যান্ত্রিকতা, নগরের কোলাহল থেকে যে স্বস্তি পায়, খুব খোলামেলা গাছগাছালির গ্রামীণ পরিবেশ তাদের ধাতে সয় না।
কেন এমন হয় ? এ প্রশ্নের সন্ধান করতে গিয়ে অনেককাল কাটিয়ে দিয়েছি, কয়েকজন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলেছি, একান্ত সাক্ষাৎকারে কেটেছে অজস্র সময়। কখনো অফিসের করিডোরে, হসপিটালের বারান্দায়, কিংবা পার্কে। সেসকল মানুষরা যারা আশৈশব শহর থেকেই বড় হয়েছে, আর কৈশোর যৌবনের বিয়ের ফুল ফোটার পর প্রৌঢ়ত্বের মাঝে এসেও মন একই রয়ে গেছে।
বারেবারে তাদের নিজ জন্মভূমির যে পরিবেশ ছিল, সে যতই যান্ত্রিকতায় ঘেরা হোক তার থেকে বের হয়ে স্বস্তিকর উপায়ে শ্বাস নেওয়ার উপায়ন্তর নেই। এমন এক অনুসিদ্ধান্তে যখন পৌঁছলাম তখন এ বিষয়টি নিয়ে আর ভাবছি না৷ অন্তত প্রত্যেকটা মানুষই তার নিজের ইচ্ছার বিভিন্নতায় স্বাধীন, তা রূচিতে, অনুগ্রহে আর ভালোলাগায় গত্যন্তর হতে হতে বেড়ে ওঠে।
আমার কাছে শেষ সময়ে এসে মনে হয়েছে, যদি জীবনকে এগিয়ে নিতে হয় তাহলে মানুষকে অনেককিছু ত্যাগ করে চাওয়া পায়য়ার হিসেব মেলাতে হয়। অনেক সময় আমরা নিজেকে আর অন্যদের যোগ-বিয়োগেরর হিড়িকে মিলিয়ে ফেলি। বুঝি সবকিছু হারিয়ে যায়, অন্য কেউ পেল আর আমি পেলাম না, মনোদাহনের খেলা সেখানে শেষ হয় না।
তবে, জীবনের সবকিছু নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। একদিন যা হাতছাড়া হয়ে যায়, তার থেকে ভালো কিছু আশা করা বোকামি, চিন্তা করে চলাও। যদি বর্তমানের ক্ষুদ্র সুখ উপেক্ষা করা হয় তাহলে দেখা যায় তার বিষয়বস্তু অসাড় হয়ে যায়, সময়ের সঠিক উদযাপন হয়ে পড়ে নিরানন্দ ধাঁচের।
বাইরে বাস চলেছে সারি সারি সবুজাভ গাছ বেয়ে, তার মধ্যে দিয়ে এক চিলতে রোদ ঝলমলে বিকেলটায় গ্লাসের ভেতর দিয়ে আমার সানগ্লাস পরা চোখে এসে পড়ছে। আর আমার মনের মুগ্ধ চোখে রঙিন স্বপ্ন মাখা হয়ে তাতে সকল দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা গুটিয়ে যাচ্ছে। বাইরের হু হু বাতাসে খুঁজে চলেছি নিজেকে যেন সে আমার কতদিনের চেনা, তার গানের ধুয়া ধরে গাড়ি চলছে।
পথ চেয়ে রয়েছি, দেরি করে হলেও বাড়ি পৌঁছাবো আর প্রকৃতির মাঝে নিজেকে ঠাঁই দিতে পারবো একটা সময়ের পরে।
শ্রাবনের দিনের ধারার অপেক্ষায় স্নিগ্ধ মনে অঢেল ভালোলাগা বিরাজে আর মধুর ঝংকারে সে স্বপ্ন বয়ে চললো...