বাংলার সমাজ ও প্রকৃতির গভীরের কথা

আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালো আছেন আর বিভিন্ন জটিলতা ও অসুবিধাকে পাশ কাটিয়ে সুন্দরভাবে নিজেদের জীবনের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছেন। মানুষের জীবনে সবসময় একইভাবে মসৃণ গতিতে পার হয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় নি, বরং নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা ও চড়াই উতরাই জীবনের একটি বড় অংশ যা নতুন দিনে অনেক কিছু শিখিয়ে যায়।

আজ আগস্ট মাসের প্রথম দিন, নতুন একটি মাস আবারো সবার জন্য অপেক্ষারত। আবহাওয়া পুরো বাংলা জুড়ে তেমন একটা ভালো যায় নি বলা চলে গতকালের পর থেকে, বেশ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত দেখতে পেয়েছি। এ বছরের বর্ষাকাল যেভাবে এলো ঠিক তেমনি বড় একটি বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস বা প্লাবন সৃষ্টি না করেই শেষের পথে।

যা সত্যিই খুব ইতিবাচক হয়েছে বাংলার কিছু অসহায় মানুষের জন্য।বর্ষা এলেই যেন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলে। নদীমাতৃক দেশটির পুরোটা ভূভাগ জুড়ে শুধু খাল বিল নদী, শাখা প্রশাখা জালের মতো ছড়িয়ে। পানি একটু বেড়ে যাওয়া মানে হচ্ছে সড়ক, রাস্তাঘাট আর গুরুত্বপূর্ণ চলাচলের, যোগাযোগের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া, তার সাথে নাগরিক জীবনের ভোগান্তি চরমে উঠে যাওয়া কে ঠেকায় ?

Src

কিন্তু এ বছর যতটা না আকাঙ্খা ছিল, ততটা ঘটে নি। ব-দ্বীপ আর ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের দেশটিতে প্রকৃতি সেই শতাব্দী কাল প্রাচীন সময় থেকেই কখনে হয়েছে সমভাবাপন্ন, কখনো চড়াও হয়েছে স্বভাবসুলভ তান্ডব নিয়ে। মানুষ অসহায় হয়ে, নিরূপায় হয়ে নিজেদের প্রতিরোধের পথ খুঁজে বেড়িয়েছে দিনের পর দিন। এর মাধ্যমেই সংগ্রাম করার মানসিকতা তৈরি করে নিয়েছে, যখন সময় দাবি জানিয়েছে কর্তব্য পালনের।

এ সব গল্প চোখ মেলে তাকালে সবদিকেই দেখতে পাওয়া যায়। তবুও আমরা সবসময় সুযোগ পাই না কাছে যাওয়ার, মাটি ও মানুষের। বিশেষ করে যারা শহরে থাকে, ইট পাথরের নগর ইমারতে গড়া যেখানে মানুষের মনে জড়িয়ে আছে শুধুই ব্যস্ততা আর জটিল ধাঁধায় গড়া মন, যা চেয়ে চলে কিভাবে কৌশল খাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। কখনো প্রতিপক্ষকে ভীষনভাবে জব্দ করে হলেও।

জীবনে অর্থনৈতিক উন্নতি অবশ্যই প্রয়োজন,কিন্তু আমি মনে করি তা কখনোই অন্ত্যজ যারা, মাটির কাছাকাছি যারা তাদের থেকে দূরে থেকে কখনোই নয়। খুব বেশি চোখ মেলে যখন দেখি, সমাজে একটি কৃত্রিম বিভাজন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে ধনী গরীব উঁচু নিচু ভেদাভেদ অর্থের উষ্ণতার খাতিরে যেমন বেশি, তারচেয়ে বরং মনের হৃদ্যতার আন্তরিকতার অভাববোধ থেকে।

যারা এসি লাগানো ব্যাক্তিগত গাড়িতে চড়ে, খাজনার পয়সায় পকেট ভারী করে নির্লিপ্ত ভাবে জীবন যাপন করে চলে, তারা ঘামে ঢাকা গরীব মেহনতী মানুষের দিকে সুনজরে তাকায় না। স্বভাবের ভেতরে বাবুগিরি, আর সরাজ্ঞানের একটি অস্ফুট আশ থেকে যায়। এটি ব্রিটিশ রাজত্বের পর থেকেই ঘনীভূত হতে শুরু করেছিল, এখন নতুন লেবাস পেয়ে উঠেছে ।

Src

যদিও পুরোপুরি তা লোপ পেয়ে যায় নি, তবু একটি আক্ষেপ আমার থেকে যায় যখন দেখি মানুষজন মিলেমিশে চলতে পারে না, আর ভেদাভেদের পারদ চওড়া হয়ে উঠতে শুরু করেছে। গ্রামের দিকে গিয়েছি, প্রকৃতির নানা সাবলীল রূপ দেখেছি, আর সে পরশের ছোঁয়ায় মানুষরাও নিজেদের মনের গঠন তৈরি করে নিয়েছে।

কিছু ক্ষেত্রে বিভাজন প্রকট হয়ে যায় আর সে পার্থক্যের ফায়দা কাজে লাগায় একটি স্বার্থখোঁজা মহল যাদের অন্য উদ্দেশ্য থাকে চরিতার্থ করে নেওয়ার। যুগে যুগে শুধু দেখে এসেছি, শেষটায় যারা আন্তরিকতার ডালি খুলে হাত বাড়ায়, তারাই পেছনে পড়ে যায়। কেউ তাদের মূল্যায়ন করে না, মনেও রাখে না। ক্রেডিট শুধু যাদের অবস্থান ভালো আর সবটাই লেবাসে মোড়ানো।

তবুও নতুন যুগের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবী এগিয়ে চলেছে, সময়টাও কারো জন্য থেমে নেই। আয়োজনেরও ঢাকা পড়া ভাব নেই। কিন্তু কিছু বিষয় বেশ অনেকটা সময় গড়িয়ে যাওয়ায় পরও থেকে যায়। আর তার থেকেই প্রাপ্তিযোগ বড় হয়ে ওঠে। এভাবে যুগেরও শেষ দেখতে পাওয়া যায়৷

Src

লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। বিষয়টি নিয়ে আপনাদের নিজেদের ভাবনাও তুলে ধরতে পারেন কমেন্ট বক্সে। আবারো দেখা হবে ইন শা আল্লাহ নতুন কোন পর্বে, নতুন দিনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

১০% সাইফক্স ও ৫% এবিবি স্কুল বেনিফিশিয়ারি