"শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ- ১৩ তম পর্ব"

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago


হ্যালো..!!
আমার সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আমি @aongkon বাংলাদেশের নাগরিক

আজ- ১৩ই জানুয়ারি,শনিবার, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ

আমি আশা করি, আপনারা সবাই সুস্থ এবং সুন্দর আছেন। আমার মাতৃভাষা বাংলার একমাত্র ব্লগিং কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ফাউন্ডার, এডমিন প্যানেল, মডারেটর প্যানেল এবং সকল সদস্যসদস্যাদের আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইল।



আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সবাইকে শ্রী শ্রী মা দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা। আজকে আমি আপনাদের সাথে শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমনের ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করবো। শ্রী শ্রী মা দুর্গাপূজা দেখতে ছোটবেলা থেকেই আমি অনেক পছন্দ করি। আমি যখন ছোট ছিলাম মা-বাবা, দাদু-ঠাকুমা এদের হাত ধরে শ্রী শ্রী মা দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে পূজা দেখতাম। তারপর একটু বড় হলে বাইসাইকেলে করে বন্ধুদের সাথে শ্রী শ্রী মা দুর্গা পূজার এই চারটি দিনে পুজো দেখার পাল্লা দিতাম। আমার শৈশবের শ্রী শ্রী মা দুর্গা পূজার সময়টা সত্যি অনেক মধুর ছিলো। আজকে আমি "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ-১৩ পর্ব" আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।



শ্রী শ্রী মা দুর্গার প্রণাম মন্ত্র🙏

ওঁ সৰ্ব্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তু তে ৷৷



প্রতিবছর শরৎকালের আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, দুর্গাসপ্তমী,মহাষ্টমী, মহানবমীবিজয়াদশমী নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। শারদীয়া দুর্গাপূজাকে "অকালবোধন" বলা হয়।



শ্রী শ্রী মা দুর্গার আগমন ও গমন

"শ্রী শ্রী মা দুর্গার আগমন ঘোটকে, যার অর্থ ছত্রভঙ্গ"

"শ্রী শ্রী মা দুর্গার গমন ঘোটকে, যার অর্থ ছত্রভঙ্গ"

এই বছর শ্রী শ্রী মা দুর্গার আগমন ও গমন দুটোই ঘোটকে। এটা আমাদের সবার জন্য অশুভ ইঙ্গিত। আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমিতে গমন হয়। আরও বলা আছে, কোনও বছর দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হলে তা অত্যন্ত অশুভ।

বর্তমানে তো দেখতেই পাচ্ছেন বিশ্ব রাজনীতির প্রবল আগ্রাসন এবং বিভিন্ন মহামারী ও যুদ্ধ লেগেই আছে। তাই বর্তমান বিশ্ব অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আমাদের সবার প্রার্থনা মা দুর্গা আমাদের এই সংকট থেকে উদ্ধার করুক। কারণ তিনিই আমাদের একমাত্র ভরসা মহাশক্তি মহামায়া।



কভার ফটো

কয়েকটি ফটোগ্রাফিকে একত্রিত করে কভার ফটো তৈরি করে নিয়েছি।



এই বছরের শারদীয়া দুর্গাপূজাতে অনেক সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছিলাম। আমাদের পাড়ার ইয়াং জেনারেশনরা মিলে আমরা বিজয়া দশমীর একদিন পরে রাজবাড়ী জেলার নলিয়া জামালপুর এ গিয়েছিলাম। এই জায়গাটিতে প্রতিবছর বেশ জাঁকজমকপূর্ণ শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গা উৎসব পালিত হয়। এবারে পুজার ভিতরে অবশ্য আমাদের বাড়ি থেকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে এই জায়গাটিতে পূজা দেখতে গিয়েছিল আমাদের পরিবারের লোকজন। আমাকেও এই জায়গাটিতে পূজা দেখতে যেতে বলেছিলো বাড়ি থেকে কিন্তু আমি পাড়ার ছেলেপেলেরা একসাথে যাবো বলে গিয়েছিলাম না। আমারা বিজয়া দশমীর একদিন পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, রাজবাড়ী জেলার নলিয়া জামালপুরে শ্রীশ্রী দুর্গা পূজা দেখতে যাব। আমরা এর আগেও এক বছর নলিয়া জামালপুরে পিকআপ ভাড়া করে পূজা দেখতে গিয়েছিলাম ইয়াং জেনারেশনরা মিলে। তাই এই বছরেও সবাই মিলে একটি পিকআপ ভাড়া করেছিলাম নলিয়া জামালপুরে পূজা দেখতে যাওয়ার জন্য।

আমরা পূজার মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু সময় আমাদের দলের অন্য মেম্বারদের জন্য অপেক্ষা করি। আমরা প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন মতো গিয়েছিলাম সবাই মিলে একসঙ্গে গেটে ঢোকার অপেক্ষায় ছিলাম। অনেক দূর থেকে পূজা দেখতে এসেছি সবাই মিলে একসাথে পূজা দেখব এটাই তো অনেক আনন্দ। এবারের পূজাতে এখানকার গেটের দৃশ্যটা আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। এত বড় গেট এবারে দুর্গাপূজাতে আমার দেখা সেরা গেইট।

এই সুন্দর গেটের সামনে ছিল মহাকাল শিবের মূর্তি। সমুদ্রমন্থনের সময় অমৃত হওয়ার আগেই ভয়ংকর বিষ নির্গত হয়। আর এই ভয়ংকর বিষের প্রভাবে অসুর এবং দেবতারা দিশেহারা হয়ে প্রথমে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। তারপর ব্রহ্মার কথামতো কৈলাশ পর্বতে গিয়ে ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করেন। এই হলাহল বিষ এমন বিষ যেটা দেবতা বা অসুররা কেউই সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। তারপর ভগবান শিব নির্গত হওয়া সমস্ত বিষ অর্থাৎ এই বিষাক্ত হলাহল সেবন করে। তারপর থেকেই ভগবান শিবের আরেক নাম হয় নীলকন্ঠ।

আমরা সবাই একসাথে হওয়ার পর গেটের ভেতরে প্রবেশ করি। একটি লাইনে ছিল পুরুষরা একটি লাইনে ছিল মহিলারা। এখানে প্রচণ্ড ভিড় হওয়ার কারণে এই পুরুষ এবং মহিলাদেরকে আলাদা আলাদা লাইনে করে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছিল। সত্যি আমার কাছে এই ব্যাপারটা বেশ ভালো লেগেছে। কারণ এত ভিড়ের ভিতর পুরুষ এবং মহিলাদের এক লাইনে নেওয়াটা ঠিক না। যাই হোক আমরা আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। কিন্তু এত ভিড় মনে হচ্ছিল কয়েক মিনিট পরপর এক দু পা করে সামনের দিকে এগোচ্ছি। সন্ধ্যার পরে রাতের চাঁদের দৃশ্যর সাথে গেটের দৃশ্যটা অনেক সুন্দর লাগছিল তাই আমি ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিলাম।

এই সুন্দর গেটের সামনে দিয়ে জলের ভেতরে মৎস্যকন্যা আর মূর্তি বানানো ছিলো। এই দৃশ্য দেখতে ভীষণ ভালো লাগছিল তাই আমি ফটোগ্রাফি করে রেখেছিলাম। এক কথায় গেটের সামনে সকল এনভায়রনমেন্ট ছিল দেখার মতো। কয়েক বছর আগে এসেছিলাম এখানে এতটা ডেকোরেশন দেখেছিলাম না কিন্তু এবার ডেকোরেশন অনেক ভালো করেছে।

সমগ্র বাংলাদেশের ভেতর নলিয়া জামালপুরে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দুর্গাপূজা হয়। গেটের সামনে যে, শুধু মৎস্য কন্যার মূর্তি ছিল তা নয়! গেটের সামনে আরো ছিলো পরীর মূর্তি। এমন সিস্টেমে পরী বানানো হয়েছিল পরীর দুই হাত এবং মুখ দিয়ে সব সময় ঝর্নার মতো জল বের হচ্ছিলো। এই দৃশ্যটিও আমার কাছে বেশ চমৎকার লেগেছে। এখানকার বাইরের দৃশ্যটা দেখে মনে হচ্ছিল যে, সবকিছুই স্বয়ংসম্পূর্ণ।

আমরা মোটামুটি প্রায় বিশ মিনিট ধরে ৫০ মিটার মতো এগোতে পেরেছিলাম। কারণে এই জায়গাটিতে সন্ধ্যার পরে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভিড় হয়। আর যেহেতু আমরা বিজয়া দশমীর একদিন পরে গিয়েছিলাম তাই ভিড়ের পরিমাণটা অনেক গুণ বেশি ছিলো। কারণ বিজয়া দশমীর পরেই এই জায়গাটিতে সব থেকে বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। প্রবেশের জন্য আমরা প্রথম গেটটি পার হওয়ার পরেই দেখি আরো একটি গেট রয়েছে।

আবার এই গেট থেকে আরেকটি গেটের দূরত্ব আরো ৫০ মিটার মতো। এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে যদি একটু অসহ্য লাগছিল কিন্তু আমাদের কিছু করার ছিল না। এক কথায় ভেতরের দিকে ঢুকতেই অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় ব্যয় হয়ে যাবে। তবে আমরা যারা গিয়েছিলাম সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ গল্প করছিলাম। আসলে সবাই মিলে একসাথে থাকতে কষ্টও কষ্ট মনে হয় না।

এমন লম্বা লাইন দেখলে ভেতরে আর যাইতে ইচ্ছা করে না। তবে অনেক দূর থেকে এসেছি পূজা দেখব মনের ভিতর আলাদা একটি আনন্দ কাজ করছিল সবার মাঝে। প্রতিবছরে এই শারদীয় দুর্গাপূজায় দেখার আনন্দটা সত্যিই সর্বোচ্চ হয়ে থাকে। জীবনের প্রতিটা সময় যদি এমন আনন্দ বিরাজমান থাকতো তাহলে জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর হতো।

আজকে আমি "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ-১৩ তম পর্ব"আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আবার অন্য একটি পোস্টে "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ- ১৪ তম পর্ব" আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।



পোষ্টের ছবির বিবরণ

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি এফ-৫৪
লোকেশননলিয়া জামালপুর, রাজবাড়ী
তারিখ২৬শে অক্টোবর ২০২৩


প্রিয় বন্ধুরা,

আমি স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে প্রতিনিয়ত আমার সৃজনশীলতা দিয়ে ভালো কনটেন্ট শেয়ার করে এই কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করতে চাই এবং উচ্চতার শিখরে নিয়ে যেতে চাই। আমার "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ ব্লগটি কেমন হয়েছে আপনারা সবাই কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই মন্তব্য করবেন, সামান্য ভুল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সুপরামর্শ দিয়ে পাশে থাকবেন। আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে শীঘ্রই, ততক্ষণে সবাই নিজের খেয়াল রাখবেন সুস্থ এবং সুন্দর থাকবেন এটাই কাম্য করি।



আমি কে !

20230826_112155.jpg

আমি অংকন বিশ্বাস, আমার ইউজার নেম @aongkon। আমি মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে। আমি বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে সিভিল টেকনোলজিতে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করছি। আমি ভ্রমণ করতে, গান গাইতে ও শুনতে, কবিতা লিখতে ও পড়তে, আর্ট করতে, রান্না করতে ও ফটোগ্রাফি করতে খুবই পছন্দ করি। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব "আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, ধৈর্যই সফলতার চাবিকাঠি।

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
@aongkon



VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png
OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

standard_Discord_Zip.gif

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 6 months ago 

ওয়াও দাদা প্রথমত বলবো আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারন ছিল ৷ আসলে দুর্গাপুজো মানে আনন্দের শেষ নেই ৷ তবে ছোট বেলার খুনসুটি গুলোই আমার ভালো লাগে ৷ যা হোক পাড়ার ইয়াং ছেলে বন্ধুদের সাথে দশমীর দিন দারুন সময় অতিবাহিত করেছিলেন ৷ খুবই ভালো লাগলো ব্লগটি দেখে ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা

 6 months ago 

আমার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো আপনার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম দাদা। হ্যাঁ দাদা আমরা অনেক আনন্দ উল্লাস করেছিলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল দাদা।

 6 months ago 

বাহ,বেশ ভালো লাগলো শিবের নীলকন্ঠ রূপ দেখে।আসলে আপনাদের দেশে শারদীয়া দুর্গাপূজা এখানে সুন্দরভাবে পালন করা হয়েছে দেখেই ভালো লাগলো।ভালোই ভিড় ঠেলে পূজা দেখেছেন।মৎস্যকন্যার মূর্তিটি অসাধারণ।ধন্যবাদ দাদা।

 6 months ago (edited)

তারপরেও দিদি আপনাদের দেশের থেকে আমাদের দেশের দুর্গাপূজা অনেক কম জাঁকজমক ভাবে করা হয়। অনেক সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58752.84
ETH 3153.55
USDT 1.00
SBD 2.44