হাসির গল্প “হরেকরকম ফাঁকিবাজি”।।[১০% লাজুক শিয়ালের জন্য]
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।
হায় বন্ধুরা
কেমন আছেন?
আমি আনিসুর রহমান। আমার ইউজার আই ডি @anisshamim।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি “আমার বাংলা ব্লগ” এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন।আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ আমি ও ভালো আছি।সৃজনশীলতা লক্ষ্যে আজ আমি আমার পোস্টে কিছু ভিন্নতা আনার জন্য আপনাদের মাঝে একটি হাসির গল্প “হরেকরকম ফাঁকিবাজি”নিয়ে হাজির হয়েছি ।আশাকরি গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।
বাসার নিচে ব্যাপক হইচই।কী হয়েছে, জানার আগ্রহ সামাল দিতে পারলাম না।লিফটের জন্য অপেক্ষা না করে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলাম নিচে। গিয়ে দেখি যা ভেবেছিলাম, ঠিক তা না।মানে আমাদের বিল্ডিংয়ের দারোয়ান সংক্রান্ত কোন ঝামেলা না। বরং ঝামেলাটা আমাদের বিল্ডিংয়ের ঠিক সামনের বিল্ডিংয়ের দারোয়ান সংক্রান্ত। আমি ঝামেলার আদ্যোপান্ত জানার জন্য সামনে এগিয়ে গেলাম।
দায়িত্বশীল একজনের সঙ্গে কথাও বললাম।জানতে পারলাম, দারোয়ান তার কাজ ঠিকমতো করছিল না। সে কিছুক্ষণ গেট-সংলগ্ন টুলে বসেই ঝিমাচ্ছিলো।তারপর গার্ডরুমে ঢুকে নাক ডাকিয়ে ঘুম। আর তাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ জুগিয়েছিল এই বাসারই ক্লিনার। শুধু তাই না,দারোয়ানকে এই আশ্বাসও দিয়েছিল, আপনে কোন টেনশনই কইরেন না।আপনার ডিউটি আমি করতাছি।এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল।
হৈচৈ বাধল তখনই,যখন বাসায় চোর ঢুকে গেল। যাই হোক, ক্লিনারকে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি দারোয়ানের ডিউটি করতে রাজি কেন হয়েছিলেন আর রাজি যখন হয়েছিলেন কাজে ফাঁকিবাজি করছিলেন কেন? ফাঁকিবাজি না করলে চোর ঢুকলো কিভাবে? ক্লিনার বলল, আসলে হয়েছে কি, আমি যার সঙ্গে প্রেম করি,তাকে বলছি আমি দারোয়ানের চাকরি করি।ক্লিনারের চাকরি যে করি সেটা বলি নাই।
তো আজকাল আমার প্রেমিকা কেন জানি আমাকে নিয়ে সন্দেহ করে।খালি বলে, আমি দারোয়ানের চাকরি করি এটা নাকি তার বিশ্বাস হয়না। আজকে যখন দেখলাম দারোয়ান ঝিমাইতেছে তখন মনে করলাম এটাই তো সুযোগ।তাকে ঘুমানোর জন্য পাঠাইয়া দিয়া বইসা পড়লাম তার জায়গায়।আমি বললাম,সব ঠিক আছে।চোর ঢুকলো কিভাবে?
ক্লিনার বলল,হইছে কী,আমি দারোয়ানের জায়গায় বসে যখন প্রেমিকাকে ফোন দিয়ে বললাম, ডিউটিতে আছি,তখন সে বলল নিজের চোখে দেখতে চায়।না দেখলে বিশ্বাস করব না,সত্যি সত্যি আমি দারোয়ানের ডিউটি করতাছি। তারপরে যেটা হয়েছে তাকে দেখানোর জন্য আমি ‘লাইভে’ ঢুকেছিলাম।আমারে ‘লাইভে’ ঢুকতে দেইখা যে এই সুযোগে গেইট দিয়ে চোর ঢুইকা যাইবো সেইটা কি জানতাম!
আমার এক বড় ভাই বলল, আজকাল কেউ নিজের কাজটা ঠিকমতো করতে চায় না।খালি ফাঁকিবাজির তালে থাকে। আর এই সুযোগ নানা অঘটন ঘটে।এই যেমন মনে করো আজকের অঘটনাটা।সময় মত আমি যদি আসল ব্যাপারটা ধরতে না পারতাম তাইলে এতক্ষণে ডায়রিয়া শুরু হয়ে যেত না? আমি বড় ভাইকে অনুরোধ করলাম টিভির খবরের প্রধান প্রধান শিরোনাম টাইপের কথা না বলে বিস্তারিত বলার জন্য।বড় ভাই আমার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বললেন,আমার বাসার বুয়াটা ফাঁকিবাজ।কোন কাজ সময়মতো করে না।
আবার অনেক কাজ রেখে দেয় জুনিয়র বুয়াটা যে আছে,তার জন্য। তো আজকে দুপুরের তোর ভাবি আগে খেয়েছে।আমার ক্ষুধা ছিল না তাই পড়ে খেতে বসেছিলাম।একপর্যায়ে ডাল নিলাম।তারপর ভাত মেখে মুখে দিতেই মনে হলো বিষাদ লাগছে। তোর ভাবিকে ডাক দিলাম।
সে তদন্ত করে জানতে পারলো,আমি ডাল মনে করে যে পানিটা নিয়েছি,সেটা আসলে তোর ভাবীর প্লেট ধোয়া পানি।বুয়ার দায়িত্ব ছিল তোর ভাবি খাওয়া শেষ করার পরপরই এটো পানির ডেকচিটা টেবিল থেকে সরিয়ে ফেলা।সে তার কাজে ফাঁকি দিয়েছে আর আমি পাতলা ডাল মনে করে এটো পানি দিয়ে আরামসে ভাত মেখে লোকমা মুখে পুরে দিয়েছিলাম।ভাগ্যিস গিলিনি।গিললে তখন তোর খরচ বেড়ে যেত।আমাকে দেখতে কলেরা হাসপাতালে যেতে হতো।খালি হাতে তো আর যেতে পারে পারতি না।খালি হাতে কেউ কি রোগী দেখতে যায়!তাও ডায়রিয়ার রোগী!
আমার এক ছোট ভাই বলল,সবাই নিজের কাজটা ঠিক মত করে ফেললে অনেক ঝামেলা কমে যেত।এই যে এত এত বিশৃঙ্খলা,এসবের কোনটাই থাকতো না।আমি ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করলাম।ঠিক এই মুহুর্তে তার মোবাইল বেজে উঠল।সে মুখ তিতা বানিয়ে রিসিভ করল।সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে তার বাবার ঝাড়ি– এই ফাজিলের জাত ফাজিল! তোর আজকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা না?বিল দেস নাই কেন? ছোট ভাই তোতলানো শুরু করলো। তারপর তার বাবা লাইন কেটে দিলে সে তাকালো আমার দিকে। আমি তার ডায়লগটাই তাকে শুনিয়ে দিলাম,সবাই নিজের কাজটা ঠিক মত করে ফেলল অনেক ঝামেলা কমে যেত।সঙ্গে এটাও বললাম,ভুলে গেলে চলবেনা বিদ্যুৎ বিল দেওয়াও কিন্তু কাজেরই অংশ। এই ডায়লগ দেওয়ার পর আমার মোবাইলটা বেজে উঠল। নিকট অভিজ্ঞতার আলোকে কলটা রিসিভ করিনি।
এমন সময় আমার এক প্রতিবেশী বললেন,আমরা কাজের চেয়ে কথা বেশি বলি,সমস্যাটা কিন্তু এখানে। আমাদের উচিত কথা কম বলা।আর মনে রাখা,বোবার কোন শত্রু নেই,এবার পাশ থেকে এক সিনেমাপ্রেমী বলে উঠলেন,বোবার শত্রু নাই,কথাটা ঠিক না।আমি একটা সিনেমায় দেখেছি মান্না বোবা ছিল।তারপরেও মিজু আহামেদ তাকে ধইরা আইনা পিটাইছে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
আমার পরিচিতি
আমি আনিসুর রহমান।আমার ইউজার আই ডি @anisshamim.
আমি মুন্সিগজ্ঞে বসবাস করি।আমি নিজেকে একজন বাংঙ্গালী হিসেবে গর্ববোধ করি।আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে কবিতা ও গল্প লিখি, ফটোগ্রাফি করি।নিত্য নতুন কিছু রান্না করা আমার প্রচন্ড শখ।ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
সত্যি ভাইয়া আপনার পোস্ট টি অনেক ভালো লাগল। দারোয়ান গার্ডরুমে ঢুকে নাক ডাকিয়ে ঘুম। আর তাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ জুগিয়েছিল এই বাসার ক্লিনার।এদিকে ক্লিনার লাইভে ছিল তার প্রেমিকার দেখানোর জন্য অন্য দিকে লাইভে’ ঢুকতে দেইখা যে এই সুযোগে গেইট দিয়ে চোর ঢুইকা যাইবো সেইটা সে জানত!দারুণ ব্যাপার। ভাবীর প্লেট ধোয়া পানি ডাল মনে করে খেতে দেওয়া।বোবার শত্রু নাই,তারপরেও মিজু আহামেদ তাকে ধইরা আইনা পিটাইছে।অসাধারণ।সত্যি ভাইয়া হরেকরকম ফাঁকিবাজি” নিয়ে দারুণ একটা গল্প লেখেছেন।ধন্যবাদ
😂😂😂😂😂।।
এরা কারা ভাই। গল্পটা অসাধারণ হাসির ছিল তবে অনেক শিক্ষনীয়। আমরা সবাই বলি কেউ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না। অথচ আমরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছি কীনা এটা কিন্তু আমরা দেখি না। দারুণ লিখেছেন।।
মান্নাকে মিজু আহমেদ ধরে এনে পিটাইছে এটা কিন্তু অভিনয় তবে বাস্তব জগতে মানুষের সাথে কম কথা বলা উচিত। আমরা প্রয়োজন ছাড়া অপ্রয়োজনে গাল গল্প করে বেড়ায়, সেখানেই দেখা যায় নানান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই প্রয়োজন ছাড়া অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত কথা না বলাটাই একান্ত কাম্য।
বাহ ভালই লাগলো আপনার পোষ্টটি পড়ে। বেচারা দারোয়ান সেজে প্রেমিকাকে ভালভাবে দেখাতেও পারলো না যে সে দারোয়ানের চাকরি করে। চোর বাসায় ঢুকার আর সময় পেল না। ধন্যবাদ ভাইয়া।