প্রথম প্রেমের অনুভূতি।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।
হায় বন্ধুরা
আশা করি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে সবাই ভালো আছেন। আপনাদের দোয়ায় আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।প্রতিটি মানুষের জীবন একবার হলেও প্রেম এসেছিল,এসেছে বা আসবেই।প্রথম প্রেমের অনুভূতি একেক জনের একেক রকম। আমি আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতিটুকু 'প্রতিযোগিতামূলক কনটেন্ট -২০ 'এর মাধ্যমে শেয়ার করছি। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।
Camera -IPhone-5s
Source
এস এস পরীক্ষা শেষ। কিছু দিন আগে আমাদের পাশের গ্রামে একটি বড় বাড়ি কিনে আব্বা। আর পুরাতন বাড়িটি দুই কাকাকে দিয়ে দেয়। আজ নতুন বাড়ি যাবো।তাই সকালে আমরা সবাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রওনা দেই। আমরা যে বাড়িটি কিনেছিলাম সেটা পাশের বাড়ির লোকেরা জোর করে দখল করে রেখেছিল। আমরা প্রকৃত মালিক থেকে কিনার পরে তারা কয়েকবার বিচারের ব্যবস্থা করেছিল যাতে তারা বাড়িটি ফেরৎ পায়। আব্বা ও তাদের বলেছিল যে পরিমাণ মূল্য দিয়ে কিনেছে তা দিয়ে দিলে তাদের সেটা ফেরৎ দিয়ে। কিন্তু তাঁরা কোন টাকা না দিয়েই ফেরত চায়।এভাবে জোরপূর্বক না পেরে শেষে তারা আদালতে যায়।তাই আমরা নতুন বাসায় আসার পর থেকে পাশের বাড়ির সাথে দা-কুড়াল সম্পর্ক। কিন্তু পাশের বাসার ছেলেমেয়েরা আমাদের বাসায় আসতো এবং বিকেল বেলা খেলাধুলা করতো। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে আসার পর আমার তেমন কোন বন্ধুবান্ধব ছিল না।আবার এসএসসি পরীক্ষা শেষ তাই বাসায়ই থাকতাম। আবার বিকেলে পাশের বাসার ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করতাম।
Source
প্রথম দর্শন
আমাদের বাসায় একটু সামনে বিশাল একটি বকুল ফুলের গাছ ছিল। বকুল ফুল আমার খুব পছন্দের ফুল।সকাল হবার পূর্ব থেকেই অনেকেই বকুল ফুলের গাছ থেকে পরে যাওয়া ফুল সংগ্রহ করত আবার কেউ মালা বানিয়ে বিক্রি করত।আমি প্রত্যেকদিন ফজরের নামাজ পড়ে বকুল ফুলের গাছ থেকে পরে যাওয়া কিছু ফুল সংগ্রহ করতাম।নাকের কাছে নিলে প্রচন্ড ঘ্রাণ পেতাম।এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগতো।একদিন আমি ফরজ নামাজের পূর্বে উঠে অনেক ফুল সংগ্রহ করে নামাজের জন্য মসজিদে যাই।নামাজের সময় একটু বৃষ্টি হয়েছিল এবং নামাজ শেষ হতেই বৃষ্টি কমে যায়।তাই নামাজ শেষ করে যখন বকুল ফুলের গাছের কাছে যাই।তখন অনেকেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল ফুল সংগ্রহের জন্য। কিন্তু একটু বৃষ্টির কারনে ফুলগুলো মাটির সাথে মিশে যায়।তাই আমার পরে যারাই ফুলের জন্য গিয়েছিল তারা কেউই ফুল পায়নি। হঠাৎ একটি মেয়ে আমার কাছে এসে বললো, ভাইয়া আমি খুব একটা এখানে আসি না।আমার আজ কিছু ফুল দরকার।কিন্তু বৃষ্টির কারনে তো কোন ফুলই পাইনি।আপনি তো অনেক ফুল পেয়েছেন,আপনার থেকে আমাকে কিছু ফুল দিবেন।আমি প্রথম পলকে কিছুক্ষন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আসলে এর আগে কোন মেয়ের দিকে এভাবে তাকানো হয়নি।অবশ্য ফুলগুলো আমারও দরকার,আমার বড় বোন ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে কলেজের অনুষ্ঠানে যাবে। তাইতো আজ খুব ভোরে আমাকে পাঠিয়েছে, যাতে বেশি করে ফুল নিয়ে বাসায় যেতে পারি। অবশ্য ফুলও বেশি পেয়েছিলাম।কিন্তু ফজরের নামাজের সময় বেশিক্ষণ ছিল না। তাই মনে মনে চিন্তা করলাম নামাজ পড়ে একেবারে ফুল নিয়ে বাড়িতে যাবো।মেয়েটি আবার জিজ্ঞাস করল ভাইয়া দেবেন।আমার ফুল খুব দরকার।আমি কি করবো ভাবতে পারলাম না।মেয়েটিকে দিতেও মন চাচ্ছে আবার বাসায় বড় বোনের জন্য না নিয়ে গেলে ও রাগ করবে।এভাবে অনেকক্ষণ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কত কি যে ভাবতে লাগলাম।মেয়েটি পুনরায় বললো দেবেন ভাইয়া।আমি এবার কোন কিছু না ভেবে সব ফুলগুলো মেয়েটিকে দিয়ে দিলাম।মেয়েটি বকুল ফুলগুলো নিয়ে চলে গেলো।যাওয়ার পর মনে হলো মেয়েটি নাম কি? কোথায় থাকে?কিছুই তো জিজ্ঞাস করা হলো না?মেয়েটিকে প্রথম দেখাতে এত ভালো লেগেছিল,তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।বাসায় ফিরে এলাম। বড় আপা জিজ্ঞাস করলো ফুল কোথায়।আজ কি কোন ফুল পাওয়া যায়নি।আমি বললাম অল্প পেয়েছিলাম।আপু বলল তবে সেগুলো কই। আমি বললাম আপু একটা মেয়ে চেয়েছিল এবং মেয়েটির ফুলগুলো অনেক দরকার আর বারবার চাওয়া কারনে দিয়ে দিয়েছি।আপু একটু রাগে বলল কিছুদিন আগে এখানে আসলাম। এরমধ্যে আবার তোর সাথে কোন মেয়ের পরিচয় হলো।আমি বললাম আপু আমি চিনি না।আপু বলল তুই তো কোন মেয়েদের সাথে কথাই বলছ না আর তুই চাইল আর দিয়ে দিলো।তোকে না বারবার বললাম আমার একেক বান্ধবিরা ফুলের মালা পরে কলেজে যাবে আর আমি বকুল ফুলের মালা পরে কলেজে যাবো।এরপর আপুর মনটা খারাপ হবার কারনে আমার মনটা ও খারাপ হয়ে গেলো।পরদিন সকালে ফজর নামাজ পরে বকুল ফুল গাছের নিচে গিয়ে বসলাম। এবার কিন্তু ফুলের জন্য নয়,সেই মেয়েটিকে দেখার জন্য,মেয়েটির নাম ও কোথায় থাকে তা জানার জন্য।ফজরের নামাজের পর থেকে অনেক বেলা হয়ে গেল।মেয়েটিকে আজ দেখতে পেলাম না।এভাবে প্রতিদিন বকুল গাছের নিচে গিয়ে বসি। অনেকে ফুলের জন্য সকাল থেকে আসে আবার ফুল নিয়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটিতো আর আসে না।এভাবে সকালে এমনকি মেয়েটিকে দেখার জন্য বিকেলেও ফুল গাছতলায় গিয়ে বসে থাকতাম।কিন্তু মেয়েটির আর দেখা পাইনি।
প্রথম ধাক্কা
কয়েক মাস পর আমের মৌসুম আসে।আমাদের বাড়িতে আমগাছ খুব কম ছিল ফল খুব একটা হতো না কিন্তু পাশের বাড়িতে অনেক আম গাছ ছিলো।আম ও অনেক হতো কিন্তু গাছের ডালপালা আমাদের বাড়ির উপর ছিল।তাই আম আমাদের বাসায় পরত।কিন্তু দুই বাড়ি সম্পর্ক তো ভালো ছিলো না।তাই আম আমাদের বাড়িতে পরলে পাশের বাড়ির বড়রা কেউ আম নিতে আসতো না।আমাদের বাড়িতে বিকেলে ঐ বাড়ির যারা খেলাধুলা করত তারা নিতে আসতো।একদিন বিকেল বেলা প্রচন্ড ঝড় আকাশ ও এত কালো দেখাচ্ছে যেন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আমি দরজা খুলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ উঠানে গাছ থেকে অনেকগুলো আম পরল।আমি দৌড়ে আম আনার জন্য যখনই গেলাম তখনই আরেকজনের ধাক্কায় দুজনেই মাটিতে পরে গেলাম।অন্ধকার থাকায় আরো কেউ যে আম নেওয়ার জন্য দৌড়ঁ দিয়েছিল তা আমি দেখিনি।কার ধাক্কায় পড়লাম দেখার জন্য উঠে দাড়াঁলাম।তাকিয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।বাকশক্তি যেন হারিয়ে গেলো।আমি অনেকক্ষণ শুধু তাকিয়েই রইলাম।অপরদিক থেকে শুধু একটি শব্দই শুনতে পেলাম।ভাইয়া ভালো আছেন।ভাইয়া আপনি আম নিয়ে যান। আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না।কন্ঠে কোন শব্দ বের হচ্ছে না।শুধু তাকিয়েই ছিলাম।সে চলে গেল আম সে ও নেয়নি আর আমি তো কি করবো বা কি বলবো ভাবতে ভাবতে মেয়েটি চলে গেল। আমার তখন একটি কথাই বারবার মন হচ্ছে যাকে আমি দুই মাস ধরে খুঁজছি সে যে আমাদের পাশের বাড়ির একটু ও বুঝতে পারিনি। মনে মনে খুবই আনন্দ লাগলো আবার ভয়ের শংকা ও মনের মাঝে আসলো তা হলো দুই বাড়ির মুরুব্বিদের সাথে তো দা-কুড়াল সম্পর্ক।মনে মনে এও ভাবলাম 'পরে যা হবে হবে এ চিন্তায় এখন ঘুম নষ্ট করে লাভ নেই' পরদিন মেয়েটিকে দেখলাম আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এরপর প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময়, টিফিন ও বাসায় ফেরার সময় দেখার জন্য আমাদের ঘরের পিরায় বসে থাকতাম।মেয়েটি ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যেতো।মেয়েটি হাসলে ওর গালে টোল পরত সেটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগতো। মেয়েটিকে দেখতে দেখতে এতটাই দেখার প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পরেছিলাম যে,যখন না দেখতাম তখন কিছুই ভালো লাগতো না।এমনি কিছুই খেতে পারতাম না।এরই মধ্যে আমার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়।আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। রেজাল্ট ও ভালো করি।তাই আব্বা-আম্মা চেয়েছিল আমি ঢাকা হোস্টেলে থেকে যাতে ভালো কলেজে পড়ি। ভালো কলেজ পড়লে আর একটু খাটলেই ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। প্রতিদিন আব্বা -আম্মা বোঝাতো।আমি তো মেয়েটিকে না দেখে থাকতেই পারি না।তাহলে ঢাকা কিভাবে থেকে পরবো।তাই আমিও আব্বু-আম্মুকে বলতাম আমার খাওয়া -দাওয়াতে সমস্যা এমনি নিজের জামাকাপড় ভালো করে এখনো ধুতে পারি না।অবশেষে আব্বা-মা রাজি হয়ে এলাকায় একটি সরকারি কলেজে ভর্তি করালেন।
বন্ধুর সাথে শেয়ার করা মনের কথা
স্কুলের এক বন্ধু আমার সাথে কলেজে ভর্তি হলো।তাকে আমি আমার সবকিছু খুলে বললাম, সে আমাকে বলল তুমি কি মেয়েটিকে ভালোবাসো,আমি বললাম ভালোবাসি কিনা জানি না,কিন্তু না দেখে থাকতে পারি না।বন্ধু বলল,মেয়েটি জানে? আমি বললাম, মেয়েটিকে সামনে থেকে কিছু বলিনি এমনকি সামনেও যেতাম না শুধু দূর থেকে দেখতাম এবং সে-ও আমার দিকে দূর থেকে তাকিয়ে থাকে এবং বন্ধুকে দুই বাড়ির শত্রুতার কথা বললাম।বন্ধু বলল,তবে বাদ দাও।তখন আমি বললাম বন্ধু আমি চেষ্টা অনেক করছি পারছি না।বন্ধু তখন বলল এসব বাদ দেওয়া তো কোন ব্যাপারই না।আমি বন্ধুকে বললাম 'আমার চোখ দিয়ে যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম এবং আমার হৃদয় দিয়ে যদি তোমাকে অনুভব করাতে পারতাম' তবে কেন বাদ দিতে পারবো না তা তোমাকে সহজেই বুঝাতে পারতাম।সেদিনের সেই কথাটির পড়ে আমার বন্ধু বলেছিল,' ঠিকই বলেছো বন্ধু আমাদের চোখ দিয়ে যা দেখি এবং হৃদয় দিয়ে যা অনুভব করি' তা যদি কোন অবিভাবক উপলব্দি করতো তবে কোন সমস্যাই হতো না। হয়তবা আজ আমরা যা ভাবছি যখন আমরা অবিভাবক হবো তখন হয়তোবা মানবো নতুবা মানবনা।এভাবেই পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ চলছে, চলবেই।
আমার অনুভূতি
সেদিনের না দেখলে যে ছটফট ভাব বা না দেখতে পেলে যে বিষন্নতা ভাব সেটাকে তখন ভালোবাসা বলে কিনা জানি নি।তবে এটুকু বলতে পারি কোন ভালো লাগার বিষয় যদি কাউকে নিজের চোখ বা হৃদয় দিয়ে বোঝানো বা দেখানো যায় তবেই সে যতই কঠিন বা কঠোর হউক না কেন সে আপনার পক্ষে থাকবেই।
পরিশেষে আমি চেষ্টা করেছি আমার জীবনের প্রথম ভালবাসার অনুভূতিটুকু প্রকাশ করতে।জানিনা কতটুকু পেরেছি। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি। সবার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার প্রথম প্রেমের অনুভূতিটা পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনার প্রথম প্রেমের সেই কথাগুলো। আশা করি সামনের অন্যান্য কনটেস্ট গুলোতে আপনি অংশগ্রহণ করবেন এভাবে।
আপনার এত সুন্দর ও চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ভাইয়া। দোয়া করবেন ভাইয়া যাতে প্রতিটি কনটেস্টে অংশগ্রহণ করে এক এক বিষয়ের উপর কনটেন্ট লিখে শেয়ার করতে পারি।