হাসির গল্প "একটি ট্রাফিক জ্যামের ইতিবৃত্ত”।।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।
হায় বন্ধুরা
কেমন আছেন?
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি “আমার বাংলা ব্লগ” এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ,আশাকরি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ আমি ও ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে আবারও হাসির গল্প "একটি ট্রাফিক জ্যামের ইতিবৃত্ত” নিয়ে হাজির হয়েছি।আশাকরি গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।
সকাল সকাল মহাম্মদপুর টু বনানী বাসে উঠে মজনু জানালার ধারে একটি সিট পেয়ে গেল।বাস তখনো ছাড়েনি।বাসস্ট্যান্ড থেকেই জ্যাম।সে জ্যামের সঙ্গে পরিচিত তাই ব্যাগে সময় কাটানোর প্রয়োজনীয় সব উপাদান সাথে নিয়ে নিয়েছে।ব্যাগ থেকে এয়ারফোন বের করে কানে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করতে না করতেই এক মেয়ে জিজ্ঞেস করল,আমাকে জানালার পাশে সিটটা দেওয়া যাবে?
মজনু চোখ খুলে দেখল রূপবতী এক মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।অতি সুন্দরী কাউকে দেখলে তার এক-দুইটা হার্টবিট মিস হয়।এই মেয়েকে দেখে হার্টবিট প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগাড়। জি অবশ্যই বলে সে তাড়াতাড়ি জানালার পাশের সিট ছেড়ে দিল।মেয়েটি বসল।জানালার হাতলে ময়লা।মেয়েটি ফুঁ দিয়ে ময়লা পরিষ্কারের চেষ্টা করছে তা দেখে মজনু ব্যাগ থেকে একটি টিস্যু পেপার বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল।
মেয়েটি টিস্যু দিয়ে জানালার হাতল মুছে বাইরে তাকাল।বাস তখনও বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যেতে পারেনি।জ্যাম! মজনু উশখুশ করছে,পাশে এত সুন্দরী মেয়ে কখনো তার পাশে বসেনি।মেয়েটির কাছ থেকে বেলি ফুলের সুবাস আসছে।সে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইল কিন্তু কিভাবে কথা শুরু করা যায় বুঝতে পারছেনা।বাস কচ্ছপের গতিতে চলতে শুরু করেছে।বাসভর্তি মানুষ।বাইরে রোদ,ভিতরে ব্যাপক গরম।ড্রাইভার বাসের ফ্যান ছাড়েনি কারন ফ্যান নাকি নষ্ট।মেয়েটি ওড়না দিয়ে নিজেকে বাতাস করছে।
মজনু ফট করে ব্যাগ থেকে একটা ছোট ব্যাটারি চালিত পোর্টেবল ফ্যান বের করে ছাড়লো।অল্প বাতাস কিন্তু শরীর জুড়িয়ে যায়।মেয়েটি তার দিকে চেয়ে হাসল।মজনু চান্স পেয়ে গল্প জুড়ে দিল।যত দ্রুত গল্প এগুচ্ছে তত দ্রুত বাস এগুচ্ছে না।ঘন্টা দুয়েক পর মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে আসাদগেট পর্যন্ত আসতে আসতে সেই মেয়েটির নাম-ঠিকানা পরিচয় সব জেনে নিল।মেয়েটির নাম বিলকিস।মজনু নিজের পরিচয়ও দিল।
সে কোথায় পড়েছে, ভার্সিটির বন্ধুদের কার কি নাম,কার কেমন স্বভাব,কার কয়টা গার্লফ্রেন্ড,রেজাল্ট কেমন, পাস করে কি করবে,বাসায় কে কে আছে সব বলল।এমনকি মোবাইল বের করে বাসার সবার ছবিও দেখিয়ে দিল।এভাবে একে অপরের জীবনবৃত্তান্ত জেনে নিল।বাস তখনও আসাদগেটের সিগন্যালে।
রাস্তায় জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে একদল ছেলে ফুটপাতে ক্রিকেট খেলছিল।মজনু ভাবল,এই সুযোগে নিজের ক্রিকেট প্রতিভা সে জাহির করতে পারবে। স্কুলে থাকতে সে ভালো ব্যাট করতে পারত।সেই কনফিডেন্স কাজে লাগিয়ে সে রাস্তায় নেমে পড়ল ক্রিকেট খেলতে।ভালই রান করে সে। হাফ সেঞ্চুরির পর সে ব্যাট উঁচিয়ে মেয়েটির দিকে অভিবাদন জানাল।মেয়েটি জানালা দিয়ে মুখ বের করে হাসল।মজনু টের পেল দুজনার মধ্যে প্রেম হতে যাচ্ছে।ঘন্টাখানেক ক্রিকেট খেলে সে যখন আবার বাসে ফিরে এলো তখন সে ঘেমে একাকার।
মেয়েটি ব্যাগ থেকে পানির বোতল আর বক্স ভর্তি খাবার বের করল।মেয়েটি জানাল জ্যামের কারণে দীর্ঘক্ষন বসে থাকতে হয় বলে বাসা থেকে সে প্রতিদিন কিছু খাবার ব্যাগে করে নিয়ে আসে।মেয়েটির হাতে বানানো খাবার খেয়ে সে তার ভূয়শী প্রশংসা করল।খাওয়া-দাওয়া যখন শেষ তখন বিজয় সরণির সিগনালে আটকা।কেটে গেছে আরও কয়েক ঘণ্টা।মেয়েটির সঙ্গে মজনুর প্রেম আরও গাঢ় হচ্ছে।
মেয়েটি এবার তার বান্ধবী ও তার পরিবারের ছবি তাকে দেখালো।ভিডিও কলে দুজনা দুজনার বন্ধুদের সঙ্গে একে অপরকে পরিচয় করিয়ে দিল।এভাবে কেটে গেল আরও দুই ঘন্টা।দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে।মজনু এবার তার ব্যাগ থেকে খাবারের বাটি বের করল।তারা দেখল বাসের প্রত্যেকে ব্যাগ থেকে দুপুরের খাবার বাটি বের করে বাসে মাঝের ফাঁকা জায়গায় পাটি বিছিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে নিচ্ছে।সব বাসের একই চিত্র।একবাসের যাত্রী আরেকবার ছাত্রীদের তরকারি বাটি এগিয়ে দিচ্ছে।এভাবে খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল।
বাস ততক্ষণে মহাখালী।রাস্তা জুড়ে লাখ লাখ গাড়ির সাড়িঁ লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।কোন নড়াচড়া নেই।মজনু ও বিলকিস ততক্ষনে প্রেমে মশগুল।একে অপরকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।মজনুর কপালের ঘাম বিলকিস তার ওড়নার কোনা দিয়ে মুছে দিচ্ছে। তারা একে অপরকে বলে ফেলেছে ’আই লাভ ইউ জান‘।মজনু তার মোবাইলের কভার পিক পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলল।সেখানে দিল দুজনে সদ্য তোলা একটা সেলফি।ফুটপাতের হকার থেকে সে বিলকিস এর জন্য কানের ইমিটেশনের দুল কিনে এনে নিজ হাতে পরিয়ে দিল।
এভাবে কথায় কথায় মজনু তার পুরনো এক ক্রাশের ছবি বিলকিসকে দেখিয়ে দিল।এতেই বিলকিস তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।মজনু যতই বোঝায়,এইটা বাল্যকালের মোহ।বিলকিস কিছুতেই তা মানতে রাজি হলো না।বাসের ভিতর দুজনের ঝগড়া শুরু হলো।বাসের অন্য যাত্রীরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু তারা থামছে না! ঝগড়া বেধে গেল।বিলকিশ রাগ করে মজনুর দেওয়া কানের দুল ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিল।মজনু টান দিয়ে ছিনিয়ে নিল তার দেওয়া পোর্টেবল ফ্যান।বাস ততক্ষণে চেয়ারম্যান বাড়ির সিগন্যালে।
মজনু ও বিলকিস এর মধ্যে তুমুল ঝগড়ার একপর্যায়ে বিলকিস ব্রেকআপ বলে গটগট করে হেঁটে বাস থেকে নেমে গেল।সামনে লম্বা ট্রাফিক জ্যাম।বাকি পথ হেঁটে পার হবে।বাসের এক যাত্রী আফসোস করে বলল,“একটি রিলেশন গড়ে ভেঙেও গেল বাস তবুও মোহাম্মদপুর থেকে বনানী পৌঁছাতে পারলো না, আফসোস!”
পরিশেষে আমি চেষ্টা করেছি "একটি ট্রাফিক জ্যামের ইতিবৃত্ত” হাসির গল্পটির মাধ্যমে আপনাদের কিছুটা আনন্দ দেওয়ার জন্য। জানি না কতটুকু আনন্দ দিতে পেরেছি। যদি আমার এই গল্পটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।আপনাদের উৎসাহমূলক একটি মন্তব্য আমাকে নতুন কিছু লিখার অনুপ্রেরণা যোগাবে।
আমার পরিচিতি
আমি আনিসুর রহমান।আমার ইউজার আই ডি @anisshamim. আমি মুন্সিগজ্ঞে বসবাস করি।আমি নিজেকে একজন বাংঙ্গালী হিসেবে গর্ববোধ করি।আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে কবিতা ও গল্প লিখি, ফটোগ্রাফি করি।নিত্য নতুন কিছু রান্না করা আমার প্রচন্ড শখ।ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
ও বাবা ঝগড়ার পরিণতি শেষ অব্দি এই জায়গায় এসে নামল। মজনু আর বিলকিসের মধ্য দিয়ে আপনি বেশ মজার এই কাহিনী টি খুব সুন্দর ভাবেই এগিয়ে গেছেন। তাদের ঝগড়ার ধরন দেখে বিরাট হাসি পেলো দাদা। সুন্দর হয়েছে গল্প টা।
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা, আমার লিখা গল্পটি পড়ে এত সুন্দর ও চমৎকার মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য। আসলে দাদা চেষ্টা করেছি গল্পটি মাধ্যমে একটু বিনোদন দেওয়ার জন্য। গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে, এটাই আমার স্বার্থকতা।
দারুণ হয়েছে ভাই অনেকদিন পর এইরকম একটা হাস্যকর গল্প পড়লাম। জ্যামে পড়ে প্রেম আবার জ্যামেই বিচ্ছেদ হা হা। সুন্দর লিখেছেন।।
আপনার গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া।দোয়া করবেন যাতে আরো হাস্যকর গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হতে পারি।