মানুষের সুখ কিসে
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।
ভাইয়া /আপুরা কেমন আছেন?আশাকরি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ভালো আছেন।আপনাদের দোয়ায় আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে মানুষের সুখ কিসে এবং কিসে আমাদের অসুখী করে তোলে সে সর্ম্পকে বিষদ ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরার চেষ্টা করিতেছি।আশাকরি,বিষয়টি আপনাদের ভালো লাগবে।
Source
'সুখ' দুই অক্ষরের একটি ছোট্ট শব্দ এবং মানবজীবনে এর মহিমা অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত।সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ সুখের পেছনে ছুটছে। বায়বীয় এ বস্তুটি কারও হাতে ধরা দেয়,কারও গোটা জীবন পার হয়ে যায় এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে ছুটতে। কিন্তু সুখের দেখা আর মেলে না।
সুখ আসলে কি? জীবনে কতটা পেলে মানুষ নিজেকে সুখী ভাবতে পারে কিংবা না পেলে অসুখী, তার নিদিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। তবে এ নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণাও করেছেন। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী সুখ একটি মানবিক অনুভূতি। এটা মনের একটি বিষয়ে অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা,তৃপ্তি,আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জৈবিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, দর্শনভিক্তিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে সুখের সংজ্ঞা নির্ধারনের চেষ্টা হয়েছে। সুখ পরিমাপের কোন ব্যারোমিটার বা নিক্তি এ পযন্ত আবিষ্কার হয়নি।পৃথিবীতে কে সুখী আর কে অসুখী তা মূলত নির্ভর করে ব্যক্তির ভাবনাচিন্তা ও মানসিকতার উপর।
আসলে সুখ একটি আপেক্ষিক ব্যাপার।এর অনুভূতি একেক জনের একেক রকম। কেউ অল্পতে তুষ্ট হয়ে নিজেকে সুখী মনে করে,আবার কেউ হাজার পেয়েও অতৃপ্ত থাকে।আকাঙ্ক্ষা থাকে আরও পাওয়ার।এ আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনকে অতৃপ্ত করে তোলে, যা তাঁকে সুখী হতে দেয় না।এটা অস্বীকার করার কারো সুযোগ নেই যে,এ পৃথিবীতে যারা অল্পে তুষ্ট তাঁরাই সবচেয়ে সুখী।
গ্রামের একজন দিনমজুর কিংবা চাষির কাছে তাঁর পৃথিবী তাঁর সংসার।তাঁরা সেটা নিয়েই বাঁচতে চান।সংসার নির্বাহের জন্য তাঁরা কায়িক শ্রম করেন সারাদিন। খেয়েদেয়ে রাতে দেন প্রশান্তির ঘুম। রাজনীতি, সমাজনীতি এবং বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে তাদের যেন কোন চিন্তা-ভাবনা নেই। তাদের ভাবনা জুড়ে শুধু তিনবেলা খেয়েপরে বেঁচে থাকা।এই আত্মাকেন্দ্রিকতা অবশ্য সমাজজীবনের নিরিখে গ্রহনযোগ্য নয়।কেননা মানুষ যেহেতু সমাজবদ্ধ জীব তাই নিজের পাশাপাশি সমাজের জন্য তাদের রয়েছে দায়বদ্ধতা। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই মানুষকে নিজের পাশাপাশি অন্যের সুখ - শান্তির কথা বিবেচনায় রাখতে হয়।আত্মকেন্দ্রীকতা থেকে আত্মস্বার্থপরতার জন্ম হয়। আর আত্মস্বার্থপরতাই সমাজের সব বিভেদ -বৈষম্য, অনাচার -অবিচারের জন্ম দেয়।
এই কথাটি সকলের জন্য অনস্বীকার্য যে,মানুষের কর্মের ওপরই তার জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য আসা-না-আসা নির্ভর করে। যিনি যে রকম কর্ম করবেন তার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিও ঘটে সে রকম। তবে কর্ম করলেই জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য আসবে এমন কোন গ্যারান্টি নেই। দেখা যায় একজন সারাজীবন পরিশ্রম করেও ঐশ্বর্যের নাগাল পায় না,আবার কেউ অল্প আয়াসেই তা হস্তগত করে ফেলে। এখানে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো,ঐশ্বর্য মানুষকে সুখী করতে পারে কিনা?এটা তো আমরা প্রতিনিয়তই দেখি,বিপুল বিত্তের অধিকারী মানুষটিও সংসার জীবনে চরম অসুখী। তার পারিবারিক জীবন, কর্মক্ষেত্র সব নিয়ে সে অতৃপ্ত।এ অতৃপ্তি তাকে একজন অসুখী মানুষে পরিণত করে।
এখানে আমরা প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাসের একটি উক্তিকে প্রাণিধানযোগ্য বলে ধরে নিতে পারি। তিনি বলেছেন,
'সুখ ধনসম্পদে থাকে না,সুখের অনুভূতি আত্মায় বাস করে'।
এখানে আমরা আত্মা বলতে মানুষের মন বা মানসিক চিন্তা- চেতনাকে বিবেচনায় নিতে পারি। মূলতঃ আরো যে অধিক পরিমাণে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা,সেটাই মানুষকে অসুখী করে তোলে। অন্যের কাছ থেকে যায় কোন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না থাকে,অপ্রাপ্তির হতাশা তাকে কখনও গ্রাস করতে পারে না। আর এটাই তাকে সুখী করতে পারে।
আমরা মানুষ কিছুতেই তৃপ্ত হতে চাই না।যে যত পায় ততই চায়। আর এই অপরিমিত চাওয়া আমাদের জীবনে নানা ঝুট-ঝঞ্জাট সৃষ্টি করে।শান্তির জীবন করে তোলে অশান্তিময়।এ অসুখকে খাঁচা বন্দী করতে মানুষের কতই না প্রচেষ্টা।কেউ চাকরি করতে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির সাগরে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়, কেউ বা ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্ত নীতি -নৈতিকতা ছেঁড়া ন্যাকড়ার মতো ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধাবোধ করে না।কিন্তু সুখ কি এদের জীবনে ধরা দেয়?অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা শুধু অধরাই থাকে না, বরং তার জীবনকে বিষিয়ে তোলে।
তাইতো দেখা যায় হাজার কোটি টাকার সম্পদের অধিকারীকে সংসার জীবনে চরম অসুখী হতে। আসলেই সুখ নামের ওই শুকপাখিটাকে খাঁচাবন্দি করতে যতই চেষ্টা করি না কেন, তা সহজেই ধরা দেয় না।আর এই না ধরা দেবার একমাত্র কারণ মানুষের প্রত্যাশার বিপুল চাহিদা।
পরিশেষে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের মাঝে কিসে সুখ বা সুখী-অসুখী জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে।।তারপরও সবোপরি পুরো বিষয়টি সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করে আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যদি আমার এই লিখায় মাধ্যমে কোন ভূল হয়ে থাকে তবে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ এ পযন্তই
আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে সুখ ধনসম্পদের মধ্যে বিরাজ করে না মনের মধ্যে সুখ বিরাজমান। সুখের জন্য সুন্দর মন এবং সুন্দর চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন। এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আপনার এত সুন্দর মন্তব্য আমাকে আরো সুন্দরকরে পোস্ট লিখতে উৎসাহিত করবে ।আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো