বৃষ্টি নিয়ে আমার মজার অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।
Source
ফিরে গেলাম চব্বিশ বছর আগে। সালটি ছিল ১৯৯৮ সালে জুলাই মাসের শেষ দিকের ঘটনা।আমি তখন এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।আমাদের পাশের বাড়ির একটা মেয়েকে আমার খুব পছন্দ ছিল। তাকে আমি এতটাই পছন্দ করতাম।যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।একটি বেলা যখন না দেখতে পেতাম মনটা ছটফট করত,কিছুই খেতে ভালো লাগতো না।যখন সে স্কুলে যেত না আমি ও অসুস্থ বলে বাসায় থাকতাম। যাতে ওকে দেখতে পাই।আমাদের উভয়ের বাসা পাশাপাশি ছিল। ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে আমরা বাজারে যেতাম।আর সে আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে স্কুলে যেতো।যখন স্কুলে যেতনা তখন মেয়েটিকে দেখার জন্য মনটা যখন ছটফট করতো তখন আমাদের উভয়ের বাড়ির রাস্তা এপাশ ওপাশ হাঁটাহাঁটি করতাম যাতে একটি মুহুর্তের জন্য তাকে দেখা যায়।এভাবে আমি প্রায়ই আমাদের বাসা আর ওদের বাসার চারদিকেই হাঁটাহাঁটি করতাম।মেয়েটিরও আমাকে ভালো লাগতো।মেয়েটি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।আমি যখন ওকে দেখার জন্য রাস্তা দিয়ে আমাদের ও ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতাম তখন মেয়েটিও জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতো। একদিন সকাল থেকে সারাদিন বৃষ্টি।এত বৃষ্টি যে ঘর থেকে বের হওয়া ও অসম্ভব। পরিবারের সবাই বাসায়। দুই পরিবারের সবাই আমাদের বিষয়টা জানত।কিন্তু তারা এত গভীরভাবে বিষয়টা চিন্তা করেনি।পরিবারের লোকজন ভেবেছিলো,পাশাপাশি বাড়ি তাই এভাবেই কথাবার্তা বলে।কিন্তু বৃষ্টি যে থামছে না।তাই বাসা থেকে বাজারে যাবার কথা বলে একটি ছাতা নিয়ে বের হলাম।বৃষ্টি যেন আরো বেড়ে গেল।
camera -pixel 4a
আমি যখন আমাদের বাড়ি অতিক্রম করে ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছি তখন দেখলাম মেয়েটিও ওদের ঘরের জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। যেন আমার জন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একবার ওদের বাড়ি অতিক্রম করে আরো সামনের দিকে হাঁটি আবার আমাদের বাড়ি অতিক্রম করে সামনের দিকে হাঁটতে থাকি।এভাবে প্রায় দুই ঘন্টা এদিকে একবার আবার ওদিকে একবার হাঁটাহাঁটি করেছিলাম।বৃষ্টি যেন বেড়েই যাচ্ছে। মনের ভেতরের তখন কত যে আবেগ ও অনুভূতি দোলা খাচ্ছিল তা বলে প্রকাশ করা যাবে না।এভাবে হাটতে হাটতে যখন আমাদের বাড়ির দক্ষিণদিকে
camera -Pixel 4a
একটি ব্রিজ আছে সেই পযর্ন্ত গিয়ে হঠাৎ পেছন দিকে ঘুরবো ঠিক তখনই আমার পেছন দিক দিয়ে যেন বৃষ্টির ফোটাঁয় আমার পিছনটা ভিজে যাচ্ছে।আমি প্রথমে ভেবেছিলাম প্রচন্ড বৃষ্টি যার কারনে সম্ভবত ছাতা দিয়ে পুরো শরীরটা ঢাকা সম্ভব হচ্ছে না আর ছাতাটি সামনের দিকে আছে তাই পেছনটা ভিজে যাচ্ছে।কিন্তু পেছনে ঘুরে যেন আমার বাক শক্তি বন্ধ হয়ে যাওয়া উপক্রম।মুখের সমস্ত ভাষা যেন হারিয়ে গিয়েছে অজানা কোথায়।যা কখনো আমার চিন্তা চেতনায় ছিল না।আমার ঠিক পেছনে মেয়েটি তখন আরেকটি ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এতক্ষন ওর ছাতার পানি দ্বারা আমার পিছনের অংশটা ভিজেছে যা আমি বুঝতে পারিনি।আমার মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না।এতদিন যাকে দুর থেকে দেখতাম এখন সে কাছে।তারপরও মনকে স্থির করে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,তুমি এত বৃষ্টির মধ্যে কেন বের হলে এবং কখন, কিভাবে বের হলে?সে বলল আপনি যখন আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বারবার যাচ্ছিলেন,তখন আমার আপনার সাথে হাটঁতে মন চাচ্ছিল,আর এই দুপুরে এত বৃষ্টির কারনে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে আছে। তাই আমিও ছাতা নিয়ে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটা শুরু করেছিলাম যা আপনি দেখতে পাননি।
camera -Pixel 4a
সেদিন আমরা একসাথে অনেকক্ষণ হেটেঁছিলাম।আর সেটাই ছিল আমার ওকে ভালো লাগার প্রথম সামনাসামনি সাক্ষাত।সেই বৃষ্টি ভেজা দিনটি যেন আমার হৃদয়ের স্মৃতিফ্রেমে আজও গাঁথা।
পরিশেষে আমি চেষ্টা করেছি আমার জীবনে 'বৃষ্টি নিয়ে অনুভূতি'প্রকাশ করতে।জানি না কতটুকু পেরেছি। কিন্তু এতটুকু জানি,আমার সেদিনের হৃদয়ের জমানো অনুভূতিগুলো আপনাদের মাঝে প্রকাশ করতে পেরেছি।যদি'আমার বৃষ্টি নিয়ে অনুভূতিটুকু' আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন আর ভূল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ এ পযর্ন্তই।
আমার কাছে আপনার বৃষ্টি নিয়ে অনুভূতি শেয়ার করা পোস্ট টি সেরা মনে হয়েছে। খুব দারুণ লেগেছে। আপনার এই অনুভূতিটি বোঝার ক্ষমতা সবার হবে না কারণ আপনি দীর্ঘ দুই ঘন্টা কষ্টের বৃষ্টির মধ্যে আসা-যাওয়া করছিলেন তার এবং আপনার মাঝে এক অদ্ভুত খেলা করছিল তখন। দুটো হৃদয় তখন এক ধরনের আলোড়ন ও ব্যাকুলতা কাজ করছিল। আপনি যখন তাকে পেছনে ফিরে দেখলেন তখন সত্যিই মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ টুকু পায়ের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে মস্তিষ্কের মধ্যে এক অদ্ভুত অদ্ভুত ভালোলাগার শিউরন কাজ করেছে তখন। ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে আপনার আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য
আমি চেষ্টা করেছি আমার জীবনে বৃষ্টি নিয়ে মনের ভেতরের লুকিয়ে থাকা অনুভূতি প্রকাশ করতে।আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের মধ্যে আমি একটা বিষয় নিশ্চিত যে আমার মনের ভেতরের বৃষ্টি নিয়ে সুপ্ত অনুভূতি বোঝাতে পেরেছি। আপনার এত সুন্দর ও চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
দারুন লাগলো আপনার গল্প। আসলে কৈশরের ভালোলাগার যে অনুভূতি তার সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোন কিছুর তুলনা চলে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভূতিগুলো মনে হয় ভোতা হয়ে যায়। আরো ভালো হতো যদি ওই মেয়েটির সঙ্গেই আপনার সারা জীবনের পথ চলার পথ তৈরি হতো। ধন্যবাদ সুন্দর একটি কাহিনী আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য।
আপনার এত সুন্দর মন্তব্য আমাকে আমার মনের ভিতরের জমানো অনুভূতিকে জাগ্রত করে ভবিষ্যতে আবারো কোন কনটেস্টে মাধ্যমে প্রকাশ করতে উৎসাহ যোগাবে।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
বৃষ্টিময় দিনে ভালোবাসার অনুভূতি দারুন একটা গল্প আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন। প্রথম দেখার অনুভূতি সত্যি সেটা বলে বোঝানো যায় না। এখানে মানুষ বাকশক্তি হারার মতো হয়ে যায়। বৃষ্টিময় দিনের স্মৃতি অনুভূতিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
বৃষ্টিময় দিন আর প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্তটা সবসময়ই অসাধারণ একটা মুহূর্ত। আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রথমে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আমাদের প্রিয় কমিউনিটিতে প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার জন্য। আপনার বৃষ্টি নিয়ে অনুভূতি শুনে খুবই ভালো লাগলো। আসলেই প্রতিযোগিতার না হলে আপনাদের অনুভূতি গুলো শোনা যেত না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এবং শুভকামনা রইল।
ঠিকই বলেছেন আপু, প্রতিযোগিতা আছে বলেই সেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মনের ভেতরের সুপ্ত অনুভূতিগুলো অতি সহজেই প্রকাশ করতে পারি।আপনার এত সুন্দর উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
মন প্রাণ ছুঁয়ে যাওয়ার মত সুন্দর একটা অনুভূতি শেয়ার করেছেন আপনি এই বৃষ্টিকে নিয়ে। আসলে বৃষ্টি ভেজা অনেক ঘটনা থেকে থাকা জীবনে, তার মধ্য থেকে কিছু অনুভূতি শেয়ার করার সুন্দর একটা পথ তৈরি করে দিয়েছে আমার বাংলা ব্লগ।
আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ওয়াও আপনার অনুভূতিটা আসলেই চমৎকার ছিল। আসলে এই ধরনের পোস্ট করে মনের ভেতরে যেন অন্যরকম একটা শান্তি কাজ করে আমিও আজকে আমার বৃষ্টির দিনের অনুভূতি শেয়ার করছি আপনার কাছ থেকে অনেক অনুপ্রাণিত হলাম ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি চেষ্টা করেছি বৃষ্টি নিয়ে আমার মনের ভেতরের সুপ্ত অনুভূতিটুকু প্রকাশ করতে। আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।