আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা যার ভাল চান তার জন্য যা কিছু সম্ভব তা তিনি নিজেই করেন।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম ওরা রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।


আশাকরি,'আমার বাংলা ব্লগ' পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে সকলেই ভালো আছেন।আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি বাস্তব জীবনে এক ডাক্তারের একটি ঘটনা উল্লেখ করবো।এ গল্পের মাধ্যমে আমাদের জীবনে কোন কিছুর প্রয়োজন পরলে কি করতে হবে সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।আশাকরি,গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।

images (1).jpeg


Source

এক দেশে এক বিখ্যাত ডাক্তার ছিল। তিনি সর্বদা রোগীদের সেবায় এতটাই নিবেদিত ছিলেন যে সারা বছরই তাকে রোগীদের সেবায় ব্যাস্ত থাকতে হতো।তিনি ছিলেন সেই দেশের একজন অন্যতম বিখ্যাত স্নায়ু চিকিৎসক। উনার নাম হচ্ছে ইষান।শুধু উনার এপয়েন্টমেন্ট পেতে হলে মাঝে মাঝে ২ মাসের মত অপেক্ষা করতে হয় রোগীদেরকে। উনাকে প্রায়ই প্লেনে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয় চিকিৎসার কাজে ।

একদিন তিনি প্লেনে করে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাচ্ছিলেন।হঠাৎ করেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেল সারা আসমান ।বজ্রপাত, বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়ে গেল । তখন হঠাৎ করেই সেই প্লেনের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিল এবং যেখানে ইঞ্জিনের সমস্যা হয়েছিল সেখানের কোন এক এয়ারপোর্টে প্লেনটিকে ল্যান্ড করতে হল। যে এয়ারপোর্টে তিনি নামলেন সে জায়গাটা ছিল শহর থেকে অনেক দূরে এবং সাথে সাথে ইঞ্জিন ঠিক করার জন্য দক্ষ কারিগর সেখানে ছিল না।উনার সেখানে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না।কিন্তু তার এত জরুরী কাজ ছিল যে সেখানে তার দ্রুত পৌঁছানো খুবই জরুরী ছিলো।


তিনি ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলেন,কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?ক্যাপ্টেন বললেন,ঠিক বলা যাচ্ছে না,কিন্তু অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে হবে ।তিনি বললেন,কিন্তু আমার তো সেখানে সময়মত পৌঁছানো খুবই দরকার । ক্যাপ্টেন বললেন,তাহলে আপনি গাড়ি করে চলে যেতে পারেন।এখান থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার রাস্তা।এ ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না।তাই তিনি গাড়ি করেই রওয়ানা দিলেন।


কিছু দূর যাওয়ার পর আবার সেই ঘন কালো মেঘ, বৃষ্টি আর ঝড় শুরু হয়ে গেল। যেহেতু গ্রামের মাটির রাস্তা তাই বৃষ্টির কারণে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।কারণ বৃষ্টির কারণে রাস্তায় এত কাদা হয়ে গিয়েছিল যে গাড়ির চাকা কাদার মধ্য দিয়ে চলছিল না।তখন কিছুদূর সামনে একটা বাড়ি দেখতে পেলেন।ঠিক করলেন ঐ বাড়িতে গিয়ে বৃষ্টি থামার আগ পর্যন্ত যদি আশ্রয় পাই,তাহলে নামাজ আদায় করতে পারবো এবং ঝড় থামলে তখন সেই গন্তব্যে যাওয়া যাবে।তিনি ঐ বাড়ির কাছে গেলেন এবং দরজায় নাড়া দিলেন।


এক বৃদ্ধ মহিলা দরজা খুললেন এবং উনাকে ভেতরে আসতে বললেন।তিনি বৃদ্ধ মহিলাকে সবকিছু বললেন এবং নামাজ পড়ার অনুমতি চাইলেন।বৃদ্ধ মহিলা উনাকে ভেতরে এসে নামাজ পড়তে বললেন।ভেতরের রুমে একটা জায়নামাজ ছিল এবং জায়নামাজের পাশে এক ছোট্ট ছেলে শুয়ে ছিল।একটু পর পর বৃদ্ধ মহিলা ছেলেটির পাশে এসে বসে দেখে যেতেন ছেলেটি কেমন আছে এবং তারপাশে বসে বসে দো'আ করতেন।


বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ইষান বৃদ্ধ মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন ছেলেটির কি হয়েছে ?বৃদ্ধ মহিলা বললেন, ছেলেটির মা-বাবা কেও দুনিয়াতে নেই। আমি ওর নানী। ছেলেটা খুবই অসুস্থ।আশেপাশের সকল ডাক্তারকে দেখিয়েছি কিন্তু কোন কিছুই হচ্ছে না। এখানকার ডাক্তাররা বলেছে, শহরে একজন ভাল ডাক্তার আছে,যে হয়তো এই ছেলেটার ভাল চিকিৎসা করতে পারবে।আমি অনেক চেষ্টা করেছি সে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেয়ার জন্য তারা বলেছে ছয় মাস পর যোগাযোগ করার জন্য,ছয় মাসের আগে সেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না।সেদিন থেকে আল্লাহ'র কাছে দো'আ করছি"হে আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দাও।"


ছেলেটা অসুস্থ,"হে আল্লাহ ।আমাদেরকে সাহায্য কর।"তখন ডাক্তার ইষান জিজ্ঞেস করলেন,সে ডাক্তারের নাম কি ?বৃদ্ধ মহিলা বললেন,ডাক্তার ইষান এই কথা শোনার সাথে সাথেই ডাক্তার ইষান কাঁদতে শুরু করলেন। তখন ডাক্তারের বুক ফেটে কান্না বের হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।বৃদ্ধ মহিলা ডাক্তারকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,আপনি কেন কাঁদছেন?ডাক্তার ইষান কাঁদতে কাঁদতে বললেন,আপনার দো'আ আল্লাহ কবুল করেছেন ।

শুধু আপনার দো'আ আল্লাহ কবুল করেছেন বলেই,এই ঝড়,বৃষ্টি,বজ্রপাত এসে আমাদের প্লেনকে থামিয়ে দিল, তারপর যখন গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম তখন আবার সেই ঝড়,বৃষ্টি আর বজ্রপাত আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে ।আর আপনাকে প্রশ্ন করার সাথে সাথেই বৃষ্টিও থেমে গেছে ।ডাক্তারের কথা শুনে বৃদ্ধ-মহিলাও কাঁদতে শুরু করলেন ।এই কাহিনী বলার পর ডাক্তার ঈষান বললেন,সেদিন আমি শিখেছি,আল্লাহ যার ভাল চান তার জন্য যা কিছু সম্ভব তা তিনি নিজেই করেন।

অবশেষে ডাক্তার ইষান ছেলেটির চিকিৎসা করেছিলেন ।একটু ভেবে দেখেন ৬ মাস আগের এপয়েন্টমেন্ট ছাড়া যে ডাক্তারের সাথে দেখা করাটাও অসম্ভব ছিল সেই ডাক্তারকে এত দূর একটা গ্রামে টেনে আল্লাহ সেই ঘরেই এনে তুলেছেন যেখানে তার দরকার ছিল ।

আর এই গল্পটি মাধ্যমে যদি আপনাদের কিছু বুঝতে পারি তাহলে মনে রাখবেন,যখন যা দরকার আল্লাহ'র কাছে চাইতে ভুলবেন না।মনের মধ্যে সেই বিশ্বাসটুকু রেখে আল্লাহ'র কাছে চাইবে।ইনশাআল্লাহ,আল্লাহ আমাদের নেক দো'আ কবুল করবেন।
Sort:  
 2 years ago 

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু
তর্কে বহুদুর

কবিতাংশটি অনেকের পরিচিত । তারপরেও আমরা বিশ্বাসের চেয়ে আশঙ্কায় বেশি ভুগে থাকি । সৃষ্টিকর্তার উপরে ভরসা রাখা তাঁর থেকে বিন্ম্র মনে চাইতে থাকা আমাদেরকে অনেক বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে । ধন্যবাদ ভাইয়া । এত্ত সুন্দর এবং শিক্ষা মুলক গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ।

 2 years ago 

আপনার এত সুন্দর ও চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার এত সুন্দর মন্তব্য আমাকে আরো সুন্দর করে কনটেন্ট লিখতে উৎসাহিত করবে।

 2 years ago 

এই গল্পটা কি আপনার নিজের লেখা ?

 2 years ago 

হা ভাইয়া। আমি একবার বিমানে দেশের বাহিরে যাচ্ছিলাম।আমার পাশে ছিটে এক ডাক্তার বসা ছিলেন।কথা প্রসংঙ্গে তিনি তার বাস্তব জীবনের সেই কাহিনিটি বলেন। এটা অনেক বছর আগের ঘটনা।আমার তার কাহিনিটি শুনে চোখে পানি এসে গিয়েছিল।হঠাৎ গল্পটি মনে পড়েছিল।তাই একটু সাজিয়ে নিজের মতো করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছি।

 2 years ago 

জি বুঝতে পেরেছি। অনেক সুন্দর হয়েছে।

 2 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60841.72
ETH 2603.92
USDT 1.00
SBD 2.56