বাইশে শ্রাবণে রবীন্দ্রনাথ( ১০% @shy-fox এবং ৫% @abb-school এর জন্য)

নমস্কার বন্ধুরা🙏
আমি অমিত। "আমার বাংলা ব্লগ" এর নতুন এক সদস্য। গতদিন আপনাদের কাছে আমার ইন্ট্রো দিয়েছিলাম। "আমার বাংলা ব্লগের" সদ্য সদস্য হলাম। বিশ্বাস করুন মনের অন্তঃস্থল থেকেই বলছি আমি মুগ্ধ, আপ্লুত,অভিভূত। আপনাদের সাথে আলাপ হয়ে আমি যেন নতুন এক পরিবার পেলাম। এটা একটা পরিবার। সত্যিকারের পরিবার । সবাই যেন আমার মতো এক নবাগতকে আপন করে নিয়েছেন।
আজ ২২ শে শ্রাবণ।বাঙালির কাছে এই দিনটির তাৎপর্য অপার।দিনটি আনন্দের নয়,বরঞ্চ বেদনার।যে সমস্ত বরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিশ্বের দরবারে বাঙালির মর্যাদা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন,তাদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রয়াত হয়েছিলেন এই দিনটিতে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোনো একজন ব্যক্তি নয়,নিজেই একটা পুরো প্রতিষ্ঠান।এই দেবতুল্য মানুষটির সম্পর্কে বলার সামর্থ্য আমার নেই।এই মানুষটি স্বয়ং আমার কাছে সাহিত্যের ঈশ্বর।মানুষটি বিরাট এক সমুদ্রের মতন,যাঁর কোনো আদি নেই,অন্ত নেই।সাহিত্যের এমন কোনো জায়গা নেই,যেখানে তাঁর অবাধ বিচরণ হয়নি।সাহিত্যের উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু -সর্বত্রই তিনি তাঁর প্রতিভার উজ্জ্বল ছাপ রেখে গিয়েছেন। একাধারে লেখক,কবি,নাট্যকার, ছোট গল্পকার,প্রাবন্ধিক,গীতিকার,সুরকার,পরিচালক, নাট্যাভিনেতা,চিত্রশিল্পী। আজ আমি আপনাদেরকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু অজানা তথ্যজ্ঞাপন করবো।যদিও আপনাদের অনেকেই হয়তো এই বিষয়ে অবগত হয়ে আছেন আগে থেকে।

IMG-20220808-WA0017.jpg
মানুষটির উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট দুই ইঞ্চি।দীর্ঘকায় এই মানুষটিকে সৃষ্টিকর্তা যেন দুই হাত ভরে হিমালয়সম প্রতিভা দিয়েছেন।সৃষ্টিকর্তা শুধু প্রতিভা দিয়েই ক্ষান্ত হননি,তার সাথে দিয়েছেন অটুট স্বাস্থ্য আর অনাবিল সৌন্দর্য।মানুষটি শারীরিকভাবেও ভীষণ দৃঢ় ছিলেন।মাত্র সতেরো বছর বয়সে কবিকে বিলাতে যেতে হয়েছিল পড়াশুনো করার সূত্রে।সেখানে কাকভোরে বরফগলা জলে স্নান করতেন। তাঁর সহপাঠীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন যদি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।কবি অসুস্থতা যেন কবিকে ছুঁতেই পারতো না। কবি তাই মাঝেমধ্যে তার বন্ধুদের বলতেন যে তার শরীরে ব্যামো হওয়ার গেট বন্ধ।তিনি কুস্তি করার কৌশল রপ্ত করেছিলেন। ঘোড়া চালানোতেও ছিলেন পারদর্শী।তবে জীবনের শেষের দিকে বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।অর্শের সমস্যা কবিকে বেশ জব্দ করে ফেলেছিলো।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম সঙ্কটজনক অসুখে ভুগেছিলেন ১৯৩৭ সালের সেপ্টেম্বরে। শান্তিনিকেতনে গল্প গল্প করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যান।ইরিসিপেলাসের আক্রমণ।কলকাতা থেকে ছুটে আসেন নীলরতন সরকার।এছাড়াও ঠাকুরের চিকিৎসা করেছেন ডাক্তার ললিত মোহন,ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়।তবে মানুষটির অসম্ভব ইচ্ছে শক্তি ছিল। শেষদিন পর্যন্ত তার কলমের গতি থামেনি।তারপর আসে সেই বেদনার দিন ১৯৪১ সালের ৭ ই আগস্ট,বাংলায় ২২ শে শ্রাবণ।মন্থর পায়ে নিঃশব্দে বিদায় নিলেন দীর্ঘ রণক্লান্ত এই মানুষটি।( সূত্র: রবিবার,বর্তমান পত্রিকা)

20220808_224705.jpg
কবি সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য:
১)আমরা আদতে অনেকেই জানি যে কবিগুরু ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টা তিনি। কিন্তু আসলে ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতে তার অবদান অনস্বীকার্য।
২)কবিগুরুর 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থ যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন, সেই গ্রন্থের মুখবন্ধ রচনা করেছিলেন ডব্লিউ. বি. ইয়েটস।
৩) সত্যজিৎ রায় এক ইন্টারভিউতে স্বীকার করেছিলেন যে তার জীবন সাফল্যের জন্য কবিগুরুর অবদান স্বীকার্য।কারণ সত্যজিৎ রায়ের জ্ঞানচর্চার সূত্রপাত হয়েছিল কবিগুরুর হাতেধরে শান্তিনিকেতনে। তার কারণ হিসাবে শোনা যায় যে কবিগুরুর 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থের বেশ কয়েকটা কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পিতা সুকুমার রায়।পরবর্তীতে সুকুমার রায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে সত্যজিৎ রায় যখন পিতৃহীন হয়ে পড়েন,তখন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ কবিগুরু সুকুমার রায়কে প্লানচেটে ডেকেছিলেন।সুকুমার রায় বলেছিলেন যে তাঁর ছেলেকে একটু শিক্ষা দিতে।
৪)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধুমাত্র প্রথম এশিয়ার মানুষ হিসাবে নোবেল পাননি।তিনি নন-ইউরোপীয় হিসাবে প্রথম ব্যক্তি যিনি নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০৪ সালে সেই নোবেলটি শান্তিনিকেতন থেকে চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে সুইডিশ একাডেমি পুনরায় একটি সোনার ও একটি রপোর নোবেল পুরস্কারের রেপ্লিকা দিয়েছিলেন।
৫) সাহিত্যে অবদান ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বাধীনতা সংগ্রামে ও সেবামূলক কাজেও বেশ অগ্রণী ছিলেন। শিলাইদহের কুঠিরবাড়িতে থাকাকালীন তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য বেশ কিছু সমর্থক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। স্থানীয় চাষিদের স্বার্থে জন্যে বেশকিছু উন্নয়নমূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।প্রয়োজনে তিনি করের বোঝা কমিয়েছিলেন।স্বাধীনতা সংগ্রামেও তিনি বেশ অগ্রণী ছিলেন।জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি সদর্পে ব্রিটিশ সরকারকর্তৃক প্রদত্ত নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়ে হিন্ধু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মিলনের জন্যে রাখি উৎসব চালু করেছিলেন।কংগ্রেসের অধিবেশনে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে সভাপতি করার জন্যে গান্ধীজিকে অনুরোধ করেছিলেন।এছাড়াও রবীন্দ্র কবিতা,সংগীত সর্বদাই বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করতো।

IMG-20220808-WA0035.jpg
আমার সাথে কবিগুরুর সম্পর্ক:
আমার দিনারম্ভ থেকে দিনান্ত পর্যন্ত প্রতিক্ষণে সাক্ষী থাকে এই মহামানবটি,তার অসাধারণ সব সৃষ্টি। তার গান আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। আমার জীবনের যখন প্রেমের জোয়ার বয়ে যায়,আবার যখন আমার জীবনে প্রেমের খরা হয়-রবিঠাকুরের সৃষ্টি আমার হৃদয়কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে।রবিঠাকুরের কখনো ২২ শে শ্রাবণ হয় না। তিনি ছিলেন,আছেন ,তিনি থাকবেন। তিনি সদা শাশ্বত।শুধু বাঙালি হৃদয়ের মণিকোঠায় নয়,তার বিজয়রথ আজো সারাবিশ্বের রাজপথে সদর্পে এগিয়ে চলেছে।

Sort:  

This is a one-time notice from SCHOOL OF MINNOWS, a free value added service on steem.
Getting started on steem can be super hard on these social platforms 😪 but luckily there is some communities that help support the little guy 😊, you might like school of minnows, we join forces with lots of other small accounts to help each other grow!
Finally a good curation trail that helps its users achieve rapid growth, its fun on a bun! check it out. https://plu.sh/altlan/

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59907.23
ETH 2647.48
USDT 1.00
SBD 2.43