।। আমার বাস্তব জীবনে এক-"অকৃতজ্ঞ নারী" ।। 10% shy-fox beneficiary।।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

১৯ই অক্টোবর/২০২২ইং।
রোজঃ বুধবার।

বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই শরৎ ঋতুর অপরূপ সৌন্দর্য কাশফুলের শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন, আমিও ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে আমার বাস্তব জীবনের একজন "অকৃতজ্ঞ নারী" এর কথা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমি জীবিত থাকবে যতদিন এই নারীকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধিক্কারসহ ঘৃণা করে যাবো।

Picsart_22-10-19_22-12-39-567.png
image source

।।"অকৃতজ্ঞ নারী"।।

লেখক-ফনি ভূষণ রায় অমিতাব
পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষই তার কর্ম জীবন, সাংসারিক, ব্যবসায়িক ও পারিপার্শ্বিক জীবন নিয়ে কোয়াটার পরিশ্রম, মেধা ও সাধনা বুকে লালন করে জীবনের ছোটখাটো স্বপ্ন সহ সাফল্যের উৎস সিড়ি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এভাবেই অসংখ্য মানুষ সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে। আবার অসংখ্য মানুষের সাফল্য তিল তিল করে বুকে লালন করা স্বপ্ন গুলো নিমিষে চুরমার হয়ে গেছে কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষের কারণে।
ঠিক তেমনি আমার জীবনে একটি তিল তিল বুকে লালন করা স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে একজন "অকৃতজ্ঞ নারী"। যা সারা জীবনের জন্য ভুলতে পারবো না কোনদিন। যতদিন বেঁচে থাকব অন্তর থেকে ধিক্কার জানাবো এই অকৃতজ্ঞ নারীকে।
একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরীর সুবাদে ২০০০ ইং সাল থেকে ২০১৫ ইং সাল পর্যন্ত রংপুরের ফ্যামিলি সহ ভাড়াটিয়ে বাসায় থাকতাম। এরমধ্যে প্রথমে রংপুর শহরের কামারপাড়া একটি বাসায় উঠেছিলাম। সেখানে ২০০০ ইং সাল থেকে ২০০৫ ইং সাল পর্যন্ত একনাগারে ৫ বছর ভাড়াটিয়ে ছিলাম। সেই ভাড়াটিয়ে বাসায় একই আঙ্গিনায় আমরা দুইটি ফ্যামিলি ভাড়াটিয়েছিলাম। বাসা মালিকের সঙ্গে পাঁচ বছর কোন সমস্যা হয়নি আমাদের। কিন্তু অপর ভাড়াটিয়া সঙ্গে মনোমালিনের কারণে বাসাটি ছেড়ে দিয়ে পুনরায় ভাড়া বাসা নিলাম রংপুর শহরের চারতলা মোড়ে।
এই বাসাটি ছিল অত্যন্ত নিরিবিলি ও নির্ঝঞ্ঝাট। বাসাটি ছিল টিন সেটের, সাত শতক জমির মধ্যে এক সাইটে চার শতক জমির মধ্যে বাসাটি। বাসাটির পাঁচটি রুম এটাস্ট বাথরুম সহ টিপটপ একটি বাসা। তিনটি রুম আমরা ব্যবহার করতাম আর দুটি রুম ব্যবহার করত বাসার মালকিনি। বাসার মালিক এই মহিলা ছিলেন বিধবা ও অসুস্থ। উনার স্বামী রংপুর ডিসি অফিসে কাম অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। আমি বাসা কি ভাড়া নিয়ে আর এক বছর পূর্বেই অবসর নিয়েছেন। আমি বাসা ভাড়া নেয়ার তিন মাস পূর্বেই উনার স্বামী পরলোক গমন করেছেন। তিন মেয়ে ছিল তাদের বিবাহ দিয়ে দিয়েছে। এখন একমাত্র সম্বল তার ছোট ছেলে রশিদ। রশিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইন্টারনি করছে। স্বামীর পেনশনের সমুদয় অর্থ এই মহিলা কয়েকটি ব্যাংকে মাসিক মুনাফার শর্তে ফিক্সড করে রেখেছে। সেই মনে হওয়ার অর্থ দিয়েই চলে রশিদের পড়ালেখা খরচ ও মহিলার সংসার। স্বামীর পেনশনের টাকা মেয়ে অথবা মেয়ে জামাইদের কে না দেওয়ার কারণে কেহই মহিলার খোজ খবর নেন না। অর্থাৎ এই বাসায় মহিলা নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করে। আমি বাসা ভাড়া নেওয়ার পর থেকে এই অসুস্থ মহিলা নতুন জীবন ফিরে পায়।
আমার ফ্যামিলি সহকারে বাসায় ওঠার পর এই ভদ্রমহিলাকে আমি নিজের মায়ের মত দেখতাম। ইতিপূর্বে তিনি একাই রান্না করে খেতেন কিন্তু আমি বাসায় ওঠার পর থেকে উনি আমাদের রান্নায় খেতেন। এর জন্য চাল ডাল খরচা কিছুই নিতাম না আমরা। উনি শুধু ওনার অসুস্থতার ওষুধটুকু কিনে খেতেন। প্রায় প্রায় বাসায় উনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন। উনি একজন এজমা রোগী ছিলেন। অন্ততপক্ষে আমার জীবনে ওনাকে ৫০ বার মেডিকেলে নিয়ে ছিলাম । ২০০৭ ইং সালে রশিদ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি ডাক্তার হিসেবে জয়েন করেন। এরমধ্য এই ভদ্রমহিলা আরো অসুস্থ হয়ে অচল হয়ে পড়েন। হুইল চেয়ার সারা চলাফেরা করতে পারেন না। আমিও আমার স্ত্রী তার সমস্ত সেবা যত্ন করে থাকি। আমাদের সেবা যত্নের ফলে এই ভদ্রমহিলা আমাকেও ছেলে সম্বোধন করতে থাকে। ২০০৯ ইং সালে আব্দুর রশিদ রাজশাহীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আর সেখানেই রশিদকে শ্বশুর নিজস্ব জমিতে একটি বাড়ি উপহার দেন। সেই বাড়িতে ছেলের রশিদ মাকে নিয়ে যাবেন। এখন এই রংপুরের বাড়িটি বিক্রির প্রস্তাব করেন। ওই সময় ৭ শতক জমি সহ এই বাড়িটি দাম ওঠে ৯ লক্ষ টাকা। ১০ লক্ষ টাকা হলে বাড়িটি বিক্রি হবে।
আমিও দীর্ঘদিন থেকে ভাড়াটিয় বাড়িতে থেকে থেকে প্রচুর টাকা দিয়েছি বাসা মালিকদের। মনে স্বাদ ও স্বপ্ন জাগলো স্মৃতি শহরে যদি এমন একটি বাড়ি থাকতো তাহলে কতই না মজা হত। অবশেষে বাড়িতে আলোচনা করে আমার এবং বাবার কাছ থেকে নিয়ে অনেক কষ্টে ৮ লক্ষ টাকা ম্যানেজ করে ১০ লক্ষ টা খায় বাড়িটি আমি নেয়ার প্রস্তাব দিলাম। এই ভদ্রমহিলা মহা খুশি আমি বাড়িটি নিতে চাওয়ায়। ৮ লক্ষ টাকা তার হাতে বায়না দিলাম। আর দুই লক্ষ টাকা দুই মাস পরে দিয়ে বাড়িটি রেজিস্ট্রি করে নিব এই শর্তে। কষ্ট হলেও স্বপ্ন দেখতাম রংপুর শহরে আমি একটি বাড়ির মালিক হব। কিন্তু সেই আশায় আমার গুড়ে বালি হয়ে গেল। একমাস পরেই এই মহিলা আমার বায়ান্নার টাকা ফেরত দিলেন। বললেন বাবা বাড়িটি আমরা আর বেশি করছি না। তোমাকে কথা দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার কথাটি রাখতে পারলাম না। এক সপ্তাহের মধ্যে আমি আমার ছেলের বাসায় চলে যাব। তুমি তোমার টাকাটা ফেরত নাও আর পাশের বাসার মালিক রহমান সাহেবকে তুমি ভাড়ার টাকাটা দিয়ে দিও।
আমাদের স্বামী স্ত্রীর দুচোখ বয়ে শুধু ঝরঝর করে জল পড়তে লাগলো। কি আর করার বুকে পাথর চেপে বাসা কেনার জন্য বাইনার ৮ লক্ষ টাকা ফেরত নিতে হলো। পরে মনকে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম যেহেতু বাসাটা বিক্রি হচ্ছে না সেহেতু আফসোস করার কিছুই নেই। টাকাটা ফেরত নেওয়ার সময় আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে পরবর্তীতে বিক্রি করলে তোমাকেই দিব। যাইহোক পরের সপ্তাহে উনি চলে গেলেন রাজশাহীতে ছেলের বাসায়। ছেলে রশিদ নিজেই এসেছেন মাকে নেয়ার জন্য। খুবই অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকে বিদায় জানালাম।
পরবর্তী মাস শেষে ে পাশে ভাড়াটিয়া আমার কাছে আসলেন ভাড়ার টাকা নেওয়ার জন্য। ভাড়ার টাকা নিতে নিতেই রহমান সাহেব আমাকে বলে ফেললেন ভাষাটি উনি কিনেছেন ১২ লক্ষ টাকায়। এই কথা শোনার পর কয়েক রাত্রি আমরা স্বামী স্ত্রী ঘুমাতে পারিনি। সারারাত ধরে বুকে বালিশ চাপা দিয়ে কেঁদেছি। মানুষ এত অকৃতজ্ঞ কিভাবে হতে পারে ? সামান্য ২ লক্ষ টাকার জন্য মুখের জবান রক্ষা করতে পারল না ? যে লোকটিকে মায়ের মত শ্রদ্ধা সম্মান করলাম ! বছরের পর বছর ধরে একটা অসুস্থ লোকের সেবা যত্ন করলাম। এর কি কোনই মূল্য নেই ? যতদিন বেঁচে থাকব এই পৃথিবীতে ততদিন প্রাণ ভরে ঘৃণা জানাবো এই " অকৃতজ্ঞ নারীকে ।"
পরে রাগে ক্ষোভে ওই বাসা ছেড়ে অন্যত্রে বাসা ভাড়া নেই।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

বন্ধুরা, এই ছিল আজকে আমার বাস্তব জীবনে এক-"অকৃতজ্ঞ নারী" এর কথা। আজ এ পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, এই প্রত্যাশায় সকলের মঙ্গল কামনায় শুভ বিকাল।

k75bsZMwYNtze9xHvT6xWCdz7q3QGD35ZKdaPpVrFksWkH68jVCNK4hKZwCGfUMBFP8ZsUJgfSSBfzXnu7zpWkg5zGzFwka5KMkG7dT2yTrZYwE6LM85iWR2zCzbpbtGXnNUJuioFxovEYAGN2FJd85aUUR7tXXgz.png

নামশ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব।
User Id@amitab
CameraSymphony Mobile phone.
Mobile Phone ModelZ-35.
Photo designPicsart Photo & Video Editor.
My AddressVendabari Prigonj Rangpur Bangladesh.

Writing location

Sort:  
 2 years ago 

আপনার পোস্ট পড়ে প্রথমে অনেক ভালো লেগেছে। আসলে বর্তমানে এমন অসৎ মানুষের জন্য অনেক ভালো মানুষ কেউ অবিশ্বাস করতে হয়।আর যেসকল মানুষ কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না সেতো কোন মানুষের মধ্যে পরে না।আপনি ও আপনা স্ত্রী কষ্ট পেয়েছেন, সত্যিই কষ্ট পাওয়ারই কথা। এই অসৎ মানুষের থেকে বা কিনে ভালো করেছেন।হয়তো আপনার জন্য এর চেয়ে অনেক ভালো বাড়ি আসবে ভবিষ্যতে।

 2 years ago 

অনেক কষ্ট পেয়েছি আপু। সমবেদনা জ্ঞাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আপনার লেখা পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে আপনার এবং আপনার স্ত্রীরজন্য। আমি নিজেও ভাড়া বাসায় থাকি এবং আমারতনেক দিনের স্বপ্ন নিহের একটি ফ্ল্যাট হবে। কারন ভাড়া বাসায় থাকার অনেক যন্ত্রণা। আপনি মহিলার জন্য যা করেছেন নিজের ছেলেরাও আজকাল তা করেনা। আপনি আর আপনার স্ত্রী উনাকে খাইয়েছেন, সেবা করেছেন, হসপিটালে নিয়ে গিয়েছেন ৫০ বারেরও বেশি। এত কিছুর পরও মাত্র ২ লাখ টাকার লোভ সামলাতে পারেনি? মানুষ কীভাবে পারে? আপনারা অনেক কেদেছেন, দাদা কষ্ট নিবেন না। উপরওয়ালা আপনার জন্য হয়ত ভাল কিছু রেখেছেন। ভাল কাজ সবাই করতে পারে না। সেই মহিলা অকৃতজ্ঞের মত কাজ করেছে। ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

হয়তোবা তাই হইতে পারে। ঈশ্বর যদি কখনো চোখ তুলে দেখে। সান্তনা দিয়ে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

খুবই খারাপ লাগলো পড়ে এটা দাদা। সমাজটাই এতো খারাপ হয়ে গেছে যে কি বলব। আজকাল মানুষের ভালো মোটেই করতে নেই। মানুষ একটা বেইমান জাতে পরিনত হচ্ছে। কেউ কাউকে আর ভরসা করতে পারবে না।

 2 years ago 

সঠিক কথা বলেছেন দিদি। বর্তমানে পৃথিবীতে অকৃতজ্ঞের সংখ্যায় বেশি। ফলে যারা ভাল মানুষ এবং পরোপকারী তারাই আজ হুমকির মুখে। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68565.31
ETH 2455.74
USDT 1.00
SBD 2.62