।। খড়ি বিক্রি করেই জীবন জীবিকা ! ।। 10% shy-fox beneficiary।।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

২১ই সেপ্টেম্বর/২০২২ইং।
রোজঃ রবিবার।

বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন, আমিও ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে যুগ যুগ ধরে বহন করে আসা একটি ঐতিহ্যের স্মৃতি চারণ নিয়ে হাজির হয়েছি। আশাকরি আপনাদের সকলকে ভাল লাগবে। আর আমার সেই স্মৃতি চারণের বিষয় বস্ত হচ্ছে খড়ি বিক্রি করেই এদের জীবন জীবিকা। চলুন তাহলে ফিরে যাই মুল আলোচনায়।

।। খড়ি বিক্রি করেই জীবন জীবিকা।।

ছোটবেলায় গল্পে পড়েছিলাম কাঠুরিয়ার কাহিনী। সেই গল্প পড়ে আমরা ছোটবেলায় সততা ও আদর্শের শিক্ষা লাভ করেছি। সে সততা আর আদর্শ এখনো রয়েছে নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের কাছে। নিম্ন আয়ের মানুষগুলো খুব বেশি একটা চাহিদা নেই তাদের। দিনশেষে দুমুঠো ডাল ভাতের সংস্থান হলেই যথেষ্ট।

IMG_20220920_150755827~2.jpg

খুব ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমাদের ঐতিহ্যবাহী ভেন্ডাবাড়ি হাট। এই হাটে যুগ যুগ ধরে আজও খড়ির বোঝা বেধে খড়ি বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকাতে খড়ির আরত খড়ি মন ধরে বিক্রি হলেও এখনো আমাদের এখানে সে প্রচলন গড়ে ওঠেনি। তবে আমি পরোক্ষ করে দেখেছি এতেই ক্রেতার মুনাফা রয়েছে। এখানে এক বোঝা খড়ি বিক্রি হয় বোঝার আকার অনুপাতে ৮০-১৩০ টাকা পর্যন্ত।

IMG_20220920_150737072~2.jpg

প্রতিদিন এখানে খড়ির বাজার বসে। আর এই পেশার সঙ্গে এলাকার প্রায় দেড় থেকে ২ শতাধিক পরিবার যুক্ত রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, এত খড়ি এরা পায় কোথায় ? জি সবার আগে এই প্রসঙ্গটা পরিষ্কার করা ভালো। আমাদের এই ভেন্ডাবাড়ি থেকে উত্তরে ও দক্ষিণে ৩-৪ কিলোমিটার গেলেই শত শত একর সরকারি বনভূমি রয়েছে। আর এই বনভূমিতেই এই সমস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ বনের গাছের মরা ডাল পালা সংগ্রহ সহ সরকারি ভাবে টেন্ডার এর মাধ্যমে বিক্রি হওয়া গাছের মোতা সংগ্রহ করে খড়ি তৈরি করেন।

IMG_20220920_161156936~2.jpg

তাছাড়া অনেক সময় বন কর্মকর্তারা বোনের গাছ পরিচর্যার জন্য ডালপালা পরিষ্কার করে থাকেন। তখন এই সমস্ত নিম্ন আয়ের মানুষদের দিয়েই এগুলো পরিষ্কার করে থাকেন। আর এই সকল পরিষ্কারকৃত গাছের ডালপালাগুলো মজুরি হিসেবে তারা নিয়ে নেন। এগুলো বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শুকিয়ে পর্যায়ক্রমে বাজারে বিক্রি করে থাকেন এইসব দিনমজুর মানুষ। নিম্ন আয়ের এই সমস্ত মানুষগুলো অধিকাংশই সৎ হয়ে থাকেl

IMG_20220920_150649548~2.jpg

আমার বাসায় অবশ্য সিংহভাগ সময়ে জ্বালানি হিসেবে এই খড়ি ব্যবহার করে থাকি। গ্যাস ও রয়েছে কিন্তু তা মাঝেমধ্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। কারণ গ্যাসের থেকে আমাদের এখানে খড়িতেই সাশ্রয় বেশি। আমি অবশ্য বাজারে খড়ি কিনি না। খড়ি ফুরিয়ে গেলে খরি বিক্রেতা আবুল চাচা, মহব্বত চাচা, ইলিয়াস ভাই সহ আরো অনেককেই বললে বাসায় ৭-১০ বোঝা খড়ি বাসায় দিয়ে যায়। বাজার মূল্য পরে এসে টাকা নিয়ে যায়। বাসায় খড়ি ফুরিয়ে যাওয়ায় গতকাল বিকেলে বাজারে গিয়েছিলাম আবুল চাচাকে খড়ি দেওয়ার কথা বলতে। গিয়ে দেখি প্রচন্ড রৌদ্রে সকলে খড়ি রেখে একটু ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে বসে আছে।

IMG_20220920_150702296~2.jpg

শুধু আবুল চাচাই খড়ি হাটিতে একটি গেঞ্জি গায়ে দিয়ে খড়ির নিকটে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাছে গিয়ে তাকে খড়ি ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বললাম, উনি আগামীকাল খড়িবাড়িতে পৌঁছে দিতে চাইলেন। এই ব্যক্তিটাকে আমি ছোট থেকে দেখছি এরকম করে বাজারে খড়ি বিক্রি করতে। অতিরিক্ত কোন চাহিদা নাই এদের, প্রতিদিন খরি বিক্রি করে যা আসে তাই দিয়ে ছেলে-মেয়ের খাবার সংগ্রহ করে থাকেন তিনি। শুধু উনি নয় এরকম শতাধিক ব্যক্তি রয়েছে এই পেশার সঙ্গে।

IMG_20220920_161236175~2.jpg

আমাদের অনেকের মাঝেই একটা উচ্চ আকাঙ্ক্ষা সর্বদা কাজ করে। গাড়ি, বাড়ি, ধনসম্পদ সহ প্রচুর প্রাচুর্যে। কিন্তু এই ব্যক্তিগুলো আমি শুরু থেকে দেখে আসছি আজও যে অবস্থায় রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে, কোন পরিবর্তন হয়নি। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলাম তাদের এই পেশার সম্পর্কে। তাদের এরকম বক্তব্য যে-যে অবস্থায় আছি সৃষ্টিকর্তা এই অবস্থায় তুলে নিল আমাদের কোন আপত্তি নেই। কাঠ বা খড়ি বিক্রি করে ঈশ্বর যেভাবে চালাচ্ছে তাতেই খুবই সুখী আছি। তাদের কথার মধ্যে কোন আফসোস নেই, তাদের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে সত্যি সত্যি আমার সেই ছোটবেলার কাঠুরিয়া গল্পের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সত্যি সততা, নিষ্ঠা, এই সমস্ত মানুষের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে এখনো। এরাই সত্যিকারের কাঠুরিয়া গল্পের নায়ক।

IMG_20220920_161222961.jpg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

বন্ধুরা, এই ছিল আজকে আমার জীবন জীবিকা নিয়ে খড়ি বিক্রি করেই জীবন জীবিকা।* আজকে এ পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই প্রত্যাশায় সকলের মঙ্গল কামনায় শুভ দুপুর।

k75bsZMwYNtze9xHvT6xWCdz7q3QGD35ZKdaPpVrFksWkH68jVCNK4hKZwCGfUMBFP8ZsUJgfSSBfzXnu7zpWkg5zGzFwka5KMkG7dT2yTrZYwE6LM85iWR2zCzbpbtGXnNUJuioFxovEYAGN2FJd85aUUR7tXXgz.png

নামশ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব।
User Id@amitab
CameraSymphony Mobile phone.
Mobile Phone ModelZ-35.
Photo LocationVendari.
My AddressVendabari Prigonj Rangpur Bangladesh.

Writing location

Sort:  
 2 years ago 

খড়ি বিক্রি করে জীবন জীবিকা গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভালো লেগেছে। ঠিকই বলেছেন আবুল চাচার মত মানুষের জীবিকা কাঠুরিয়ার গল্পের মত। ওদের সততা ও আদর্শ এখনও রয়েছে। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত লোকেরা বেশিরভাগই যে যতটুকু রোজগার করে তার উপরে তারা অনেক বেশি খুশি থাকে। তাদের কোন লোভ থাকে না। তাদের কোন আফসোসও থাকে না। তারা এই সামান্য রোজগার দিয়ে খুব সুখে জীবন যাপন করে।

 2 years ago 

গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলোই প্রকৃত মানুষ। এরাই আমাদের মত মানুষের অন্য বস্ত্র বাসস্থানের যোগানদাতা। এদের মধ্যে রয়েছে সততা ও মানবিক গুণাবলী। মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

খড়ি বিক্রি করেই জীবন জীবিকা আবুল চাচা অনেক দরিদ্র একটি মানুষ কিন্তু অনেক সৎ। গল্পটি পড়ে আমার বেশ ভালো লাগলো গল্পটির সাথে সম্পূর্ণরূপে মিল রয়েছে কাঠুরিয়া গল্পের সাথে। এমন মানুষ অনেক ভালো হয়ে থাকে এদের মধ্যে কখনো অহংকার থাকে না অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আজ আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

অসৎ মনোবৃত্তিটা এরা অনেকেই বোঝেনা। এদের মধ্যে কল্পনাও নেই কাউকে ঠকানোর। এরা শুধু বোঝে পরিশ্রম আর পরোপকারিতা। মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59403.33
ETH 2607.28
USDT 1.00
SBD 2.38