।। মাজার শরীফের অলৌকিক গাছ ।। 10% shy-fox beneficiary।।
১৯ই আষাঢ় /১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
৩রা জুলাই/২০২২ইং।
রোজঃ-রবিবার
বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন। আমিও অসুস্থ শরীর নিয়ে এক রকম আছি আর কি। আজ আমি আপনাদের সামনে মাজার শরীফের একটি অলৌকিক গাছের কথা বলার জন্য হাজির হয়েছি। আশা রাখি আপনাদের সকলকে ভাল লাগবে।
।। মাজার শরীফের অলৌকিক গাছ ।।
সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শতশত পীর আউলিয়াদের মাজার শরীফ রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশকে পীর আউলিয়াদের বাংলাদেশ ও বলা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার গিলা ঝুঁকি (ফকিরেরহাট) নামক স্থানে রয়েছে শত শত বছর পুরনো একটি মজার শরীফ। আর মাজার শরীফ টি হচ্ছে বড় পীর মহিউদ্দিন (রহ:) এর মাজার শরীফ। স্কুল লাইফে বয়জষ্ঠ ও মুরুব্বিদের কাছে গল্প শুনেছিলাম উক্ত মাজারে অলৌকিক একটি গাছ রয়েছে।* কিন্তু কোনদিনও গাছটি দেখতে যাওয়ার জন্য সৌভাগ্য হয়নি। গত সপ্তাহে বিশেষ একটি কাজে গিয়েছিলাম সেই ফকিরের হাটে। ব্যক্তিগত কাজ শেষ করার পর মনে পড়ে গেল সেই মাজারের কথা। মাজার শরীফটি ফকিরেরহাট থেকে পূর্ব দিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত। যাই হোক সুযোগটি হাতছাড়া না করে আমি এবং আমার সঙ্গে থাকা বন্ধু শামীম সহ দেখতে গেলাম মাজার শরীফের সেই অলৌকিক গাছটি।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০১
মাজার শরীফের কাছে গিয়েই শরীরটা একটু শিউরে উঠল। প্রায় এক বিঘা জমি জুড়ে এই মাজার মাজার শরীফটি। বাহির থেকে মাজার শরীফের ভিতরে কি কি রয়েছে তা দেখার কোন উপায় নেই। পুরো মাজার শরীফের এলাকাটা গাছ,পাতা ,লতা, ডাল,পালা দিয়ে দিয়ে চাদরের ন্যায় ঢেকে রয়েছে। মাজারের প্রবেশদ্বারে যেতেই দেখা হয় স্থানীয় ৭২ বছর বয়সী মুরব্বি মজিবুর রহমান চাচার সঙ্গে। এই মুরব্বি চাচাকে সঙ্গে নিয়েই মাজার শরীফের ভিতরে প্রবেশ করলাম অলৌকিক সেই গাছটি দেখার জন্য। ভিতরে প্রবেশের পরেই আরো ভীষণ ভয় লাগতে শুরু করল, সত্যি সত্যিই এটি একটি অলৌকিক গাছ! সময় তখন বেলা দুইটা বাজে। প্রখর রোদ তবুও ভিতরে অন্ধকার। মাজারের উপরে লতাপাতা গাছ পালার জন্য সূর্যের আলো ঢোকার কোন উপায় নেই।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০২
পুরো মাজার শরীফের এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য গাছ, সেই গাছগুলোর সঙ্গে শত শত অজগর সাপের ন্যায় লতা জড়িয়ে রয়েছে। প্রত্যেকটি গাছের সঙ্গেই একাধিক লতা, এক গাছ থেকে আরেক গাছে ,গাছ থেকে আবার মাটিতে, মাটি থেকে আবার প্রত্যেকটি গাছের মগডালে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ওপেছিয়ে রয়েছে। কি ভয়ানক দৃশ্য ! যতই দেখছিলাম ততই আশ্চর্য হচ্ছিলাম। আর ভয়ে শরীরের লোম খাড়া হচ্ছিল। কিন্তু স্থানীয় মজিবর চাচা বারবার অভয় দিচ্ছিলেন। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে আরো, মাজার শরীফে এত গাছ লতাপাতা থাকলেও মাজারের মাটিতে কোন প্রকার লতাপাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। অত্যন্ত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন দেখা যাচ্ছে।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০৩
কিন্তু মাটিতে মাঝেমধ্যে শ্যাওলা দেখা যাচ্ছে। মাদারষট্টি দেখছিলাম আর মাঝেমধ্যে চাচার কাছে গল্প শুনছিলাম। মজিবর চাচা বলছিলেন এই মাজার শরীফে সন্ধ্যার পরে আসলে কোন প্রকার মশা বা বিষাক্ত পোকামাকর কামড় দিবে না বা চোখে পড়বে না। এই মাজার শরীফের নামে ২২ বিঘা জমি আছে। যা যা স্থানীয়রা রক্ষণাবেক্ষণে করেন এবং এই জমির ফসল থেকে যায় আসে তা দিয়ে বিভিন্ন মসজিদের উন্নয়ন করা হয়। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন পর্যটক আছেন এই মাজার শরীফের অলৌকিক গাছটি দেখার জন্য প্রতিবছর ১৩ পৌষ এখানে একটি ইসলামী জলসা হয়ে থাকে এই মাজারের নামে। ইসলামী জলসা টিও অত্যন্ত জাকজমক ভাবে পালন করা হয়।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০৪
উক্ত ইসলামী জলসায় লক্ষ লক্ষ টাকার মান ত আদায় হয়ে থাকে। ইসলামী জলসায় আগত অতিথিদের আপ্যায়নের সুব্যবস্থা থাকে। বর্তমানে এই মাজার শরীফটির চতুর্পাশে যে প্রাচীর দেখা যাচ্ছে, এগুলো গত দুবছর হলো করা হয়েছে। এর আগে পুরো মাজারটি শুধুমাত্র এই অলৌকিক গাছ দ্বারায় সুরক্ষিত ছিল। এই বড় পীরের মাজার শরীফ কে আবার স্থানীয় অনেকেই পাঁচ পীরের মাজার হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। কারণ হিসেবে মজিবর চাচা জানালেন বড় পীর মহিউদ্দিন সাহেব তার চারজন বিশ্বস্ত সাহাবীকে নিয়ে এখানে বৈঠক করেছিলেন। তবে এখানে মাজার রয়েছে পাঁচটি।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০৫
শত শত বছর পূর্বে এই মাজারটি আবিষ্কার করারও একটি অলৌকিক কাহিনী রয়েছে বললেন মজিবর চাচা। এই গিলে ঝুকি গ্রামের এনামুল হক নামে এক ৪০ বছর বয়সি এক লোক বাজার করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। তখন এই মাজার শরীফের জায়গাটি ছিল একটি জঙ্গল। লোকটি প্রায় এক মাস হল হারিয়ে যায় কোথাও খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় বাড়ির লোকজন অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে পড়ে।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০৬
কিন্তু এক মাস পর একদিন দুপুরবেলা গ্রামের লোকজন দেখতে পায় ওই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে হারিয়ে যাওয়া এনামুল হক। এনামুলকে দেখে সবাই অবাক ! গ্রামের লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করলো, এতদিন কোথায় ছিলি, তোকে কেউ নিয়ে গিয়েছে কিনা, আমরা তো ভেবে নিয়েছিলাম তুই মারা গিয়েছিস ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন। এতসব প্রশ্নের বানে উত্তর দেওয়া শুরু করেন বলেন যে, আমি একমাস ধরে এই বড় পীর মহিউদ্দিন সাহেবের মাজারে ছিলাম। তাহার সাথে আরো চারজন সাহাবী রয়েছে, আমি একমাস ধরে ওনাদের খেজমত করেছি।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০৭
এনামুলের কথা শুনে গ্রামের সবাই অবাক হয়ে যায়। এবং গ্রামের লোক সকলে মিলে এনামুলকে নিয়ে এই মাজার শরীফের জঙ্গলের ভিতরে যান। গিয়ে দেখেন যে সত্যি সত্যি এখানে পাঁচটি মাজার শরীফ রয়েছে। তারপর থেকে মাজার শরীফের প্রায় এক বিঘা পরিমাণের এলাকাটুকু সেই বড় বড় অজগর সাপের নেয় লতা পাতা পরিষ্কার করে মাজার শরীফ টি সংরক্ষণ করা হয়। মাজার শরীফ টি আবিষ্কারের পূর্বে ভয়ানক ভয়ানক লতার জন্য ভয়ে কেউ ভিতরে প্রবেশ করত না। কি আশ্চর্যজন ও অদ্ভুতভাবে এই মাজার শরীফের আবিষ্কার। সাথে মাজারের বড় বড় লতা যুক্ত বট বৃক্ষের অলৌকিক গাছ।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০৮
সত্যি খুবই মনোমুগ্ধকর এই লতাগুলো। মাজারের পুরো এলাকা জুড়ে শতশত লতা ও গাছ একটির সঙ্গে আরেকটির সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। আরো আশ্চর্যজনক হচ্ছে কোনটি আসল গাছ বা মূল গাছ এটি নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। শত শত বছর পরেও আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না এই গাছটির মূল কোনটি।
অলৌকিক গাছের চিত্র-০৯
সারা দেশ থেকে বিভিন্ন পর্যটক আর সে মূলত মাজারের এই অলৌকিক গাছটি দেখার জন্য। এমনকি মাজার শরীফের এলাকায় মাটি বেয়ে বেয়ে পড়ে রয়েছে অসংখ্য এই গাছের লতা। যা দেখতে কেবল অজগর সাপের মতো। যে কেউ একাই যদি মাজারে ঢুকে পড়েন নির্ঘাত সে অচেতন হয়ে পড়বে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতাম না, শুধু গল্প শুনতাম, আজ বাস্তবে দেখলাম পৃথিবীতে এখনো অসম্ভব কিছু অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। যা দেখলে এখনো শরীর উঠবে।
চিত্র-১০
মাজার শরীফের প্রবেশ দ্বারে নিজের একটি সেলফি
বন্ধুরা এই ছিল আজকে আমার অলৌকিক মাজারের অলৌকিক গাছের কাহিনী। সময় ও সুযোগ থাকলে এই মাজার শরীফের অলৌকিক গাছটিকে দেখার আমন্ত্রণ রইল সকলের জন্য। পরিশেষে আমার বাংলা ব্লগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি শুভ বিকাল।
নাম | শ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব। |
---|---|
User Id | @amitab |
Camera | Symphony Mobile phone. |
Mobile Phone Model | Z-35. |
Photo Location | Gila Jhuki Mithapukur Rangpur. |
My Address | Vendabari Prigonj Rangpur Bangladesh. |
আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জায়গাতে বিভিন্ন ধরনের পীর আউলিয়াদের মাজার রয়েছে এই জন্যই মূলত বাংলাদেশকে পীর আউলিয়ার দেশ বলা হয়।
মাজারের মধ্যে অলৌকিক গাছের চমৎকার কিছু ফটোগ্রাফি আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। এই গাছটি অলৌকিক কোনো গাছ কিনা তা আমি বলতে পারব না কিন্তু বটগাছগুলোতে এই ধরনের শিকড় সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়।
মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
একদম সঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া বাংলাদেশের শত শত পীর আউলিয়াদের মাজার রয়েছে।তাদের আগমনের ফলে এই ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচার হয়েছে।এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের কেরামতি আগেও ছিল এবং এখনো আছে।আসলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি এই বাংলাদেশের জন্মে কারণেই বাংলাদেশে ৩৬০ আউলিয়ার দেশ।আজকে আপনার মাধ্যমে একটি অলৌকিক গাছের ফটোগ্রাফি এবং বর্ণনা দেখতে পেলাম। আমার খুবই ভালো লাগলো আজকের পোস্টটি পড়ে। সত্যিই আমার অনেক ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইজান আমাদের মাঝে এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
বাংলাদেশ মানে পীর আউলিয়ার দেশ। এখানে অনেক পীরের মাজার রয়েছে। আমাদের এলাকাতেও একটি পীরের মাজার রয়েছে
সেখানেও এমন অনেক ঘটনা কথা শুনে থাকি।যাই হোক নতুন একটি বিষয়ে সাথে পরিচিত হতে পেরে খুব ভালো লাগলো আমার।
মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।