২২ই অক্টোবর/২০২২ইং।
রোজঃ শনিবার।
বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন, আমিও মোটামুটি আছি। মানুষ মরণশীল, এ জগতে জন্ম নিলেই অবশ্যই মরতে হবে। মৃত্যু থেকে কাহারো নিস্তার নেই, একে একে আমাদের কেউ চলে যেতে হবে পরপারে যে কোন মুহূর্তে । পৃথিবীতে কোন কর্মই ১০০% করা সম্ভব হয় না, কিন্তু মৃত্যু ১০০%। দুই দিনের এই দুনিয়া, মিছে মায়ার বাঁধনে ডুবে আছি সবাই।যাইহোক যা বলছিলাম আরকি ?
।। পিতৃ কুলের শেষ প্রদীপ ও নিভে গেল ।।
আমার বাবারা ছিল দুই ভাই, তিন বোন। ভাই বোনদের মধ্যে আমার পিসিমা (বাবার বড় বোন) ছিল সকলের বড়। তার ছোট ছিল আমার জ্যাঠামশাই, বাবা ছিল মেজ, অপর দুই বোন ছিল বাবার ছোট। বাবা সহ একে একে সকলেই পরলোক গমন করেছেন। বেঁচে ছিল শুধু আমার বাবার বড় বোন, অর্থাৎ আমার পিতৃকুলের শেষ প্রদীপ। তিনি গত ১০ই অক্টোবর/২০২২ ইং তারিখে বার্ধক্য জড়িত কারণে মৃত্যু লোক গমন করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল-১০৫ বছর। এখন আর আমার বাবার পিতৃকুলের কোন প্রদীপ রইল না।
আজকে ছিল সেই পিসীমার শ্রাদ্ধ। জয়পুরহাট জেলার, পাঁচবিবি উপজেলার ফুল বোন (কলন্দপুর) গ্রামে তার শ্বশুর বাড়ি। পিসেমশাইও অনেক আগেই গত হয়ে গেছেন। আমাদের রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে পিশিমার বাড়ি প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে। অত্যন্ত স্নেহ করতো আমাকে। যেমন আদর করত তেমনি শাসনও করত। মৃত্যুর দিনেও মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গিয়েছিলাম সেখানে। পিসি মার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তিনটি মেয়ে, তাই আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। আর্থিক সঙ্গতি ও অনেক ভাল ছিল তার।
আজকে সেই পিসিমার শ্রাদ্ধ হয়ে গেল। সেই শ্রাদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য গিয়েছিলাম।শ্রাদ্ধ অর্থ হচ্ছে-মৃত্যুর পর মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যাকে ফতেয়া/চল্লিশা বলেন। আমাদের হিন্দু শাস্ত্র মোতাবেক তাকে আমরা শ্রাদ্ধ বলি। শ্রাদ্ধ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এবং তাদের আশীর্বাদ কামনায় দান-ধ্যান ও অতিথি ভজন অনুষ্ঠান বলা হয়ে থাকে। সাধারণত মৃত ব্যক্তির সন্তানরা অথবা আত্মীয়-স্বজনরা এই অনুষ্ঠানটি পালন করে থাকে। আজকে সেটি ছিল আমার পিসিমার জন্য।
অতিথি আপ্যায়নের জন্য বেশ ভালো আয়োজন ছিল পিসিমার শ্রাদ্ধের জন্য। ছিল সাদা ভাত, বুটের ডাল, মাছের ঝোল, সবজি ভাজি, তেতুলের টক, আমরা টক, মিষ্টি ও দই। মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য গ্রাম প্রতিবেশীদের ও আত্মীয়-স্বজনদের এ আয়োজন করা হয়ে থাকে। বেলা বারোটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে এই অতিথি আপ্যায়নের পরিবনা। খুবই শান্তির শৃংখলভাবে হয়ে গেল শ্রাদ্ধের সেই অতিথি আপ্যায়ন।
বাবার অবর্তমানে সত্যি ই আমার একজন শ্রদ্ধেয় ও কঠোর অভিভাবক ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। অসংখ্য আপদে-বিপদে অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছিলাম এই পিসি মার কাছ থেকে। প্রতিবছর পূজো এলেই আমাকে মোবাইল করে ডেকে নিতো এবং পুরো পরিবারের জন্য নতুন পোশাক কিনে দিত। খুবই ভালো মনের অধিকার ছিলেন তিনি। তার খাওয়া দাওয়া চলাফেরার মধ্যে ছিল একটি যথেষ্ট নিয়মানুবর্তিতা। অত্র এলাকা জুড়ে তিনি একমাত্র ব্যক্তি যার মৃত্যুকালে বয়স-১০৫ বছর। এই বয়সেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লাঠি হাতে নেননি। তার জীবনের মজার একটি ঘটনা, তিনি কখনো ফার্মাসিটিক্যাল ঔষধ সেবন করত না। নরমালি জ্বর সর্দি কাশ বিষ ব্যথা ইত্যাদিতে গাছরা ওষুধ সেবন করতেন।
বন্ধুরা, এই ছিল আজকে আমার বাবার পরেই একজন অভিভাবক হারানোর কথাকথা। পিতৃকুলের শেষ প্রদীপ ও নিভে গেল এর কিছু কথা। আজ এ পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই প্রত্যাশায় সকলের মঙ্গল কামনায় শুভরাত্রি।
নাম | শ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব। |
User Id | @amitab |
Camera | Symphony Mobile phone. |
Mobile Phone Model | Z-35. |
Photo Location | full bone, pass bibi, Jaipur hat. |
My Address | Vendabari Prigonj Rangpur Bangladesh. |
Writing location
ওপারে আপনার পিসি শান্তিতে থাকুক । এ কামনা করি ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
পোস্টের টাইটেল দেখে আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, তারপর বুঝতে পারলাম মূল বিষয়টি, শত বছর পার করেছিল তিনি অবশেষে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন, সত্যি বলতে খুব বেশি কিছু বলতে পারছি না শুধু এতোটুকুই বলবো যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক সৃষ্টিকর্তাকে উত্তম স্থান দান করুক।
সত্যি যারা নিয়মমাফিক চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া করেন সেই সাথে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সর্বদা থাকার চেষ্টা করেন তাদের পক্ষেই এটি সম্ভব। এত বছর বেঁচে থাকা ওই এলাকায় উনি একজন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
জন্মাইলে মরতে হবে এটাই চিরন্তন সত্য কথা। আসলে আমরা যদি এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করি তাহলে অবশ্যই মৃত্যু একদিন আসবেই। উনি দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন। আসলে একদিন তো সবাইকে চলে যেতে হবে। হয়তো বংশের শেষ পিতৃপুর তিনি বেঁচে ছিলেন। ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ভালো লাগলো লেখা গুলো পড়ে।
মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
সত্যি দাদা জন্ম নিলে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। এখান থেকে কারোর নিস্তার নেই। পিসিমার বয়স ১০৫ হওয়া সত্ত্বেও কখনো হাতে লাঠি নেননি এটা রীতিমতো চমকে দেয়ার মত একটা কথা। আবার নাকি সব সময় ভেষজ ঔষধ সেবন করতেন। মাঝে মাঝে মনে হয় এই মানুষগুলোর অর্ধেক জীবন কাল পর্যন্তও কি বাঁচতে পারবো! যাই হোক ভালোমতো যে শেষ কার্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে এটাই বড় কথা। পিসিমার আত্মা যেন স্বর্গবাসী হয় এই কামনাই করি।
জি দাদা, উনি একজন কঠিন স্বাস্থ্যসম্মত মানুষ ছিলেন। চলাফেরায় নিয়ম-কানুন খুবই মানতেন। সর্বদা ভোজস ওষুধেই সেবন করতেন। দীর্ঘ সময় বসে থাকা ওই এলাকায় উনি একজন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। আপনার জন্য দীপাবলীর শুভেচ্ছা রইল।
আপনার পিসিমার আত্মার শান্তি কামনা করি। ওম্ দিব্যান লোকান স্ব গচ্ছতু।আসলে এমনি হয় এক এট করে পুরোনো জেনারেশন চলে যায় তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কে রেখে। এটাই তো কালের নিয়ম। বংশগতির নিয়ম।দুঃখ করবেন না। উনি এখন ঈশ্বরের ঘরে আছেন।
তাই যেন হয় দিদি, ঈশ্বর ওনাকে স্বর্গবাসী করুক। আপনার জন্য দীপাবলীর শুভেচ্ছা রইল।