।। এখনো স্বপ্নে দেখি-"সেই অভাগী মায়ের আর্তনাদ"।। 10% shy-fox beneficiary।।
৬ই সেপ্টেম্বর/২০২২ইং।
রোজ রোজ: মঙ্গলবার।
বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন। আমিও ঈশ্বরের কৃপা ও আপনাদের আশীর্বাদে ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদার দুর্ঘটনায় বিবরণে এক "অভাগী মায়ের আর্তনাদ" এর কিছু কথা নিয়ে হাজির হয়েছি। যে ঘটনা এখনো মনে হলে আমি ঘুমোতে পারি না। মাঝে মধ্য স্বপ্নে সেই অভাগী মায়ের আর্তনাদে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। সেই ঘটনার ভার আমি একাই আর সইতে পারছি না। তাই আপনাদের মাঝে ঘটনাটি শেয়ার করে নিজেকে কিছু হালকা করতে চাই।
এখনো স্বপ্নে দেখি
।। সেই অভাগী মায়ের আর্তনাদ।।
ফনি ভূষণ রায় অমিতাব।
১৯৯৪ ইং সনের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা । আমি তখন চাকুরীর সুবাদে রংপুর শহরে থাকতাম। বারটি ছিল শুক্রবার, অফিস বন্ধের দিন। শুক্রবার করে বিকেল বেলা আমরা দু তিনজন শহরের বিভিন্ন এলাকায় একটু হাটাহাটি করতাম। ঐদিন সহকর্মী নাজমুল, তৌফিক ইলাহী ও আমি সহ লালবাগ থেকে দশনা মোড় হাইওয়ে রোডের দিকে হাঁটছিলাম। টার্গেট ছিল দর্শনায় এসে হাইওয়ে রোডের পশ্চিমে একটি কেন্টিনে গাভীর দুধের চা খাব।
দর্শনা মরে এসে আমরা সকলেই হাইওয়ে রোডের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হাইওয়ে দিয়ে তখন অনবরত যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদি ছুটছে। একটু হালকা হলেই হাইওয়ে রোড ক্রসিং করে আমরা পশ্চিমে চলে যাব এই অপেক্ষায়।এমন সময় একজন মধ্যবয়সী মহিলা সঙ্গে ৮-৯ বছরের ছেলের হাত ধরে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালে, উদ্দেশ্য আমাদের মত।
৪-৫ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পর একটু যানবাহন চলাচল হালকা হয়ে গেল। আমরা পারাপারের জন্য এদিক ওদিক তাকিয়ে দৌড়ে হাইওয়ে রোড পার হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় ওই মধ্যবয়সী মহিলা ও ছেলেটি রোড ক্রসিং করে দৌড়ে পার হচ্ছিল। ছেলেটি যখন হাইওয়ে রোডের মাঝামাঝি পৌঁছে গেছে ঠিক তখনই একটি ঘাতক ট্রাক কাছাকাছি এসে যায়। মধ্যবয়সী মহিলা থমকে দাঁড়ালেও ছেলেটি আর দারাইনি। আর অমনি ঘাতক ট্র্যাকটি চোখের পলকেই ধাক্কা মেরে পিছনের চাকায় ছেলেটিকে পিষিয়ে দিল। তৎক্ষণাৎ হাত বোমা বাস্ট হওয়ার ন্যায় একটি বিকট আওয়াজ করে চারিদিকে কম কিছু করে তুলল। ট্র্যাকটি শো শো করে চলে যাওয়ার পর উক্ত স্থানে দন্ডায়মান সকলেই সামনের দিকে লক্ষ্য করি দেখত পাই, সরিয়ে ছিটিয়ে থাকা নিশ্চিহ্ন মাংস টুকরো ও নাড়ীভূড়ি। ওহ ঈশ্বর এ কি দেখলাম আমি ! এক পলক দেখার পর আমি সেন্সলেস হয়ে গেলাম।
প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর আমার চেতনা ফিরে আসে। আমি চোখ মেলে দেখতে পাই রাস্তার পাশেই ঘাসের উপরে শুয়ে আমার সহকর্মী দুইজন আমার মাথায় কাগজের ঠোঙ্গা দিয়ে বাতাস করছে। রাস্তার দুই পাশে অগণিত যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ইত্যাদির জ্যাম লেগে গেছে। রাস্তার মাঝখানে শত শত লোক জমায়েত হয়েছে। আমার কাছ থেকে ৫-৬ গজ দূরেই সেই মধ্যবয়সী মহিলা গগন বিদারী চিত্তে আত্মচিৎকার করছে, বারবার নাইবুল নাইবুল সম্বোধন করে অচেতন হয়ে পড়ছে। ওই মহিলার গগনবিদের সেই আত্মচিৎকারে আকাশ পাতাল ভারী হয়ে উঠছে। বেশ কয়েকজন নারী তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই তাকে শান্ত করতে পারছে না। নিজে নিজেই সজরে বুক থাপাচ্ছে আর আত্মচিৎকার করছে। ইতিমধ্যে পুলিশের গাড়িও এসে গেছে।
আমার সহকর্মীরা আমাকে নিয়ে মেসে ফিরে যাওয়ার বন্দোবস্ত করছে। তারা একটি রিক্সা নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরাও জনসমাগমের কারণে সেখান থেকে কিছুতেই বের হতে পারছি না। আমরা রিকশায় উঠতে উঠতেই ওখানকার স্থানীয়দের কাছে জানতে পারলাম। ওই মধ্যবয়সী মহিলা ওখানকার স্থানীয়। মাস তারেক আগেই তার স্বামী রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। পেশার স্বামী একজন রিকশাচালক ছিলেন। একটি মাত্র ছেলে নাইবুল ইসলাম। এই অভাগি মা তার ছেলেকে নিয়ে লালবাগ এ গিয়েছিলেন মার্কেট করার জন্য। স্বামীর অবর্তমানে ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন এই অভাগিমা। ঈশ্বরের কি নির্মম পরিহাস সেই অভাগী মায়ের বেঁচে থাকার স্বপ্নকে চিরতরে নিঃশেষ করে দিলেন এই ঘাতক ট্রাক।
নিজের কর্ম ব্যস্ততার কারণে পরবর্তীতে আর সেই অভাবী মায়ের খবর নেয়া সম্ভব হয়নি। জানিনা কি ঘটেছে পরবর্তীতে। এটি আমার জীবনের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় এক অধ্যায়। ঘটনার পর দুই এক বছর প্রায় দিন স্বপ্নে আমি চিৎকার করে উঠতাম। আর দেখতাম সেই অভাগী দুখিনী মায়ের আত্মচিৎকার। এই ঘটনার কথা যেদিন স্মরণ হয় সেদিন ঠিকমতো ঘুমোতে পারি না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, এমন করে যেন আর কোন মায়ের কোল খালি না করে। সেই সাথে বাকি জীবনে যেন আমার চোখের সামনে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
বন্ধুরা, আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ের বর্ণনা করে আমি কিছুটা হালকা হয়ে গেলাম। সেই সাথে সকলের কাছে অনুরোধ, সাবধানে রাস্তা পারাপার করবেন, সাথে অপরকেও সাবধান করবেন। আজ এ পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই প্রত্যাশা ও সকলের মঙ্গল কামনা করে শুভ রাত্রি।।
নাম | শ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব। |
---|---|
User Id | @amitab |
Camera | Symphony Mobile phone. |
Mobile Phone Model | Z-35. |
Photo design | Picsart Photo & Video Editor. |
My Address | Vendabari Prigonj Rangpur Bangladesh. |
সত্যি ভাইয়া সেই অভাগী মায়ের আর্তনাদ গল্পটি অনেক খারাপ লাগল।আসলে আল্লাহর ওপর কার ও হাত নেই। মহিলাটি তার স্বামী মারা যাওয়াতে ছেলেকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস অবশেষে তাকে ও কেড়ে নিল।আর এ রকম ঘটনা দেখলে যে কেউ সেন্সলেস হয়ে পড়বে।ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
আপা নিজের চোখের সামনে এরকম ঘটনা আমার জীবনে প্রথম। সবই তার ইচ্ছা, ঠিকই বলেছেন তিনিই জানেন কার কপালে কি রয়েছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
সত্যি আপনার লেখাটি পড়ে আমারও মন খারাপ হয়ে গেলো। এক পলকে মায়ের সামনে বাচ্চার মৃত্যু। আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুক। এসব ঘটনা চোখের সামনে ঘটলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা মনে থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে।
জি আপু খুবই হৃদয় বিদারক। মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
হুম দাদা খুব কষ্ট লাগলো পড়ে ৷দাদা মা কথাটি সত্য অথচ তার গভীরতা অনেক ৷একটি মা জানে ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারন করে প্রসব যন্ত্রণা ৷আসলে মায়ের মতো পৃথিবীতে আপনজন কেউ নেই ৷আর একটি মা জানে ছেলে হারানোর বেদনা ৷কিন্তু এখানে কারো হাত নেই৷ মৃত্যু কখনো আসবে তা কেউ জানে না ৷যাই হোক দাদা পোষ্টটি কষ্টের হলেও ৷আমাদের সবার উচিত রাস্তা দেখে শুনে পার হওয়া ৷একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না
গঠনমূলক মন্ত্র করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।