।। ব্যতিক্রমী গল্প-"৩০ বছরের বাসি ডাল ও খিচুড়ি ! "।। 10% shy-fox beneficiary।।
৩রা সেপ্টেম্বর/২০২২ইং।
রোজঃ শনিবার।
বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন। আমিও ঈশ্বরের কৃপা ও আপনাদের আশীর্বাদে এক রকম আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে একটি "ব্যতিক্রম ধর্মী গল্প-৩০ বছরের বাসি ডাল ও খিচুড়ি" নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি সকলকে ভাল লাগবে।
আজকের এই ব্যতিকর্মী গল্পটি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উপস্থাপন করছি। উদ্দেশ্য সমাজের কিছু বিকৃত রুচির মানুষের মুখোশ উন্মোচন ও গণ সচেনতা বৃদ্ধির জন্য।
।। ৩০ বছরের বাসি ডাল ও খিচুড়ি।।
আমাদের এলাকায় একটি উন্নত মানের খাবারের হোটেল রয়েছে। সেই হোটেলের রান্নাবান্না, মিষ্টি মিষ্টান্ন সবাই বেশ চমৎকার সাধে সুস্বাদু। দিব্যি চলে সেই হোটেলের বেচাকিনা। প্রায় সময়ই ওই হোটেলে বন্ধুবান্ধবসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া হয়ে থাকে। ওই হোটেলে আমার পাশের গ্রামের এক ছোট ভাই ছোটবেলা থেকেই হোটেল বয়ের কাজ করে আসছে।* প্রটেকশনের কারণে হোটেলের নাম ও হোটেল বয়য়ের নাম প্রকাশ করছি না । তবে গল্পের শ্রী বৃদ্ধির জন্য হোটেলের ছদ্মনাম দিলাম "সোনিয়া হোটেল ও হোটেল বয়ের নাম দিলাম রাজু" গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকতার বিষয় গত দায়িত্ব পালন করতে সকাল আটটায় বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল। আমার বাসায় সকাল ৯ টার আগে খাবার রেডি হয় না।
তাই বাসা থেকে বের হয়ে সোনিয়া হোটেলে গিয়ে চিকন চালের মজাদার খিচুড়ি, বুটের ডাল ও ডিম ভাজি অর্ডার করলাম। এত সকালেও প্রচন্ড ভিড়। দেখলাম হোটেলের প্রত্যেকটা টেবিল বুক করে জমিয়ে সুস্বাদু খিচুড়ি খাচ্ছে সকলে। অর্ডারের কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার টেবিলে হোটেল বয় রাজু খাবার পৌঁছে দিলেন। আমি দু-এক গ্রাস মুখে দেওয়ার পর ধক করে একটি পচা পচা গন্ধ পেলাম। হোটেল বয়কে ডেকে বললাম একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, খাওয়া যাচ্ছে না। আমি অবজেকশন দেওয়ার পর কয়েকজন এই অবজেকশনটি করল। কিন্তু হোটেল বয় আর মালিক দাম্ভিক গলায় বারংবার বলছে এটি সকালের টাটকা খাবার।
অগত্বে সকলেই গিলে খাচ্ছে এই মজাদার খাবারটি। কিন্তু আমি কিছুতেই খাইতে পারলাম না। শুধু ডিম ভাজি খেয়ে দুই গ্লাস পানি মেরে দিলাম। হোটেলের বেসিনে হাত ধুতে গিয়ে হোটেল বয় রাজুকে ডাকলাম। ওকে এক সাইটে ডেকে আবারো জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা বলেন তো খাবারটির কি সমস্যা ? ও আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলছে কাউকে বলবেন না তো ? না বলবো না, আপনি বলেন।
উনি আবার আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল দাদা এটি ৩০ বছরের বাসি খাবার। আপনি আমার নিজের লোক পারলে সকালে এখানে আর কোনদিন খিচুড়ি খাইতে আসবেন না। আমি তো শুনে অবাক ! উনি কি বলছেন ? আবার একটি ধমক মারলাম। হোটেল বয়কে। ধুর মিয়া ফাজলামি করেন ? এটা কিভাবে সম্ভব ? তখন হোটেল বয় আবারও নম্র সুরে বলতে লাগলো- দাদা আমি ৩০ বছর হলো এখানে চাকরি করছি। ৩০ বছর ধরে দেখে আসছি। এখন আপনার সঙ্গে গল্প করার সময় নেই, আপনি কোথায় যাবেন জান সন্ধ্যা আসবেন আমি প্রমাণ দিব।
যাই হোক কাজের ব্যস্ততার কারণে আমিও তাড়াতাড়ি খাবারের বিল পরিশোধ করে চলে গেলাম উপজেলা সদরে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করে বিকেল বেলা বাসায় এসে রেস্ট নেওয়ার পর আবার সন্ধ্যায় চলে গেলাম সেই হোটেলে। হোটেলের টেবিলে বসে গরম গরম সিঙ্গারা অর্ডার করলাম রাজুকে। হোটেল বই রাজু, সিঙ্গারা দিতে দিতে আমাকে বললেন এটি খেয়ে আমার পিছু পিছু হান্ডি ঘরে আসেন।
যেই কথা, সেই কাজ। আমি হোটেল বয়ের পিছু পিছু হান্ডি ঘরে প্রবেশ করলাম। হান্ডি ঘরে পুরুষ করে দেখি প্রায় ছয় থেকে সাতটি চুলায় বিভিন্ন রান্না হচ্ছে। কেউ কেউ গরম গরম মিষ্টি, কেউ তরকারি রান্না করছে, কেউ মাংস পাক করছে ইত্যাদি। হোটেল বয় আমাকে দেখিয়ে মিষ্টির কারিগর কে বললেন-এই দাদা এসেছে আমার কাছে গরম গরম মিষ্টি খাওয়ার জন্য। উনাকে আমার তরফ থেকে দুইটা গরম মিষ্টি দাও।
যথারীতি একটি প্লেটে করে আমাকে দুটি মিষ্টি দেওয়া হল। আর মিষ্টি খাওয়ার ফাকে ফাকে হোটেল বয় রাজু আমাকে দুইটি হাড়ির ঢাকনা উল্টে আর দেখাইলেন। আমি দেখতে পেলাম একটি হাঁড়িতে ১০ কেজি পরিমাণের সকাল বেলার খিচুড়ি। অপর হাঁড়িতে প্রায় পাঁচ কেজি বুট কালাই এর ডাল। হান্ডি ঘরে কোন কিছু না বলে রাজু আমাকে ইশারা করলেন বাহিরে আসতে। বাহিরে আসতে আসতে আবার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, দাদা দেখলেন ? আমি বললাম হ্যাঁ দেখলাম তো। এগুলোই আবার আগামীকাল সকালে গরম খিচুড়ি এবং গরম ডালের সঙ্গে মেশানো হবে।*
কথা শুনে আমার চোখ তো কপাল উঠে গেল ! হোটেল বয় রাজু আবার বলছেন, দাদা আপনারা সাংবাদিক মানুষ পারলে কিছু একটা করেন। *আমার চাকরির বয়স ত্রিশ বছর। ৩০ বছর ধরে আমি এই নিয়মেই দেখে আসছি।
অর্থের জন্য মানুষ কত বিকৃত মনের অধিকারী হতে পারে এটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যাইহোক বিষয়টি দেখার পর আমিও আর স্থির থাকতে পারছি না। পরের দিন উপজেলাতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেনেটারী অফিসারের সঙ্গে কথা বললাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্যানেটারি অফিসার দুই একদিনের মধ্যেই এই হোটেলে ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে হোটেল মালিকের জেল জরিমানা করার আশ্বাস দিয়েছেন। *আর সেদিন এই হোটেল মালিকের মুখোশ উন্মোচন করার আশা ব্যক্ত করলাম আপনাদের নিকট।
বন্ধুরা, এই ছিল আজকে আমার *ব্যতিক্রমী গল্প- "৩০ বছরের বাসি ডাল ও খিচুড়ি।" আজ যে পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, শুভ রাত্রি।।
নাম | শ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব। |
---|---|
User Id | @amitab |
Camera | Symphony Mobile phone. |
Mobile Phone Model | Z-35. |
Photo Location | Vendari. |
Photo design | Picsart Photo & Video Editor. |
My Address | Vendabari Prigonj Rangpur Bangladesh. |
সত্যি ভাইয়া ৩০ বছরের বাসি ডাল ও খিচুড়ি গল্প পড়ে বেশ ভালোই লাগল।আসলে আমরা অনেক সময় না জেনে টাকা দিয়ে এসব বাসি খাবার গুলো অনন্দের সাথে খেয়ে থাকি। হান্ডি ঘরে প্রবেশ না করলে আপনি হয়তো জানতে পারতেন না যে এটা কি ধরনের খাবার। ধন্যবাদ আপনাকেআমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই হলো হোটেলের অবস্থা। স্বশক্তি দেখলে আমরা কত কু খাদ্য খাচ্ছি। মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।