হঠাৎ ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

নমস্কার সবাইকে,
আমার বাংলা ব্লগ এর সকল সদস্যদের জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি ঈশ্বরের কৃপায়।

হঠাৎ ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছা হওয়াকে কেন্দ্র করে কিছু কথা লিখতে যাচ্ছি।

FB_IMG_1674069594044.jpg

ইলিশ ভাজা চলছে

প্ল্যান ছিল বউকে নিয়ে সন্ধ্যায় বের হবো বাহিরে কিছু খেতে। যার কারনে তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসলাম।বাহিরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। পরিবেশটা বেশ সুন্দর লাগছিল। বউকে বললাম রেডি হয়ে নাও বের হবো। আনুমানিক রাত ৯.৩০ এর দিকে বেরোলাম আমরা। হাঁটছিলাম বাসার পাশ দিয়েই, যে কোথায় যাব কোন রেস্টুরেন্টে যাব। হঠাৎ ইচ্ছে জাগলো ইলিশ খাওয়ার। বউকে বলতেই বউও রাজি হয়ে গেলো। কারণ সে কখনো মাওয়া যায় নাই। আমি আবার মাঝে মাঝেই যাইতাম বন্ধুদের সঙ্গে। পরে একটা ছোট ভাইকে কল করলাম যে তোমার গাড়িটা নিয়ে আসো। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতে মনে হল যে মুকুল ভাই এবং ভাবি উনাদের সঙ্গে নিলে ব্যাপারটা বেশ ভালোই হয়। পরে বাসায় উঠে ভাবিকে বললাম রেডি হন আমরা ঘুরতে যাবো। পরে ভাই কে বললাম। অনেক জোড়াজোড়ি করার পর অবশেষে রাজি হলো তারা। পরে সবাই রেডি হয়ে নিচে নামলাম, তখন রাত আনুমানিক ১০.১৫। তার কিছুক্ষণের মধ্যে ছোট ভাই সাজ্জাদ গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। ও সঙ্গে মুকুল ভাইয়ের ছেলে তাফীফও ছিল।

বাসার নিচে সবাই চা খেয়ে রওনা হলাম মাওয়ার উদ্দেশ্য।
ঢাকার যানজট কাটিয়ে আমরা প্রায় এক ঘন্টা পর আমরা মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ের কাছে পৌঁছে গেলাম। সেখান থেকে গাড়িতে গ্যাস নিয়ে আবার চায়ের দোকান খুঁজতে লাগলাম। বাহিরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল যার জন্য বারবার চা ইচ্ছা করছিল। গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টির মধ্যে আমি আর মুকুল ভাই চায়ের দোকান খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা চায়ের দোকান পেলাম। সিএনজি গ্যাস স্টেশন থেকে বেশ দূরেই ছিল দোকানটা। আমি আর মুকুল ভাই দুইজনে দুইটা চা খেয়ে বাকি সদস্যদের জন্য নিয়ে গেলাম। তবে চা টা বেশ টেস্টি ছিল। যার কারনে গাড়িতে গিয়ে ওদের থেকেও আমরা দুজনে ভাগ নিয়ে খেলাম আবার।

এইবার আমরা উঠে গেলাম মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়েতে।

FB_IMG_1674159663810.jpg

FB_IMG_1674069566628.jpg

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে
https://w3w.co/deform.somewhere.reverses

অনেক সুন্দর রাস্তা। দেখতে যেমন চমৎকার চলতেও তেমন মজা। রাস্তায় কোন ঝাকি নেই, একভাবে গাড়ি চলছে। ১৩০-১৪০ কিঃ মিঃ গতিতে গাড়ি চলছে কিন্তু বোঝার কোন উপায় নেই। অনেক সুন্দর রাস্তা এবং দুই পাশের লাইটিং উপভোগ করতে করতে আমরা পৌঁছে গেলাম মাওয়াতে। তখন রাত আনুমানিক ১ঃ৩০

সেখানে গিয়ে গাড়ি পার্কিং করে আমরা চলে গেলাম পদ্মার ধারে, দূর থেকে পদ্মা সেতুর লাইট গুলো দেখতে বেশ লাগছিল।

IMG_20221004_012825.jpg

IMG_20221004_012028.jpg

মাওয়া পদ্মার পাড়
https://w3w.co/contrived.bumpy.আদপ্ত

ফটো সেশন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানোর পর এইবার ইলিশ খাওয়ার পালা। বৃষ্টি থাকার কারণে বেশ অনেকগুলো খাবারের দোকান বন্ধ ছিল। পার্কিং এরিয়ার পাশে দেখতে পেলাম কিছু খাবারের দোকান খোলা আছে।
চললাম দোকানের উদ্দেশ্যে। দোকানের আশেপাশে যেতেই এই দোকান ওদোকান থেকে ডাকছে মামা এখানে আসেন মামা আমার মাছ ভালো মামা এখানে আসেন গরম ভাত আছে। মাঝ বরাবর একটা দোকানে দাঁড়ালাম এবং সেখানে মাছ দেখতে থাকলাম। অনেক মাছ দেখালো প্রথমে তারা সামগ্রিক ইলিশ দেখাচ্ছিল। কিন্তু আমি যখন বললাম যে এগুলো ইলিশ ভালো না বলে ওখান থেকে চলে যেতে লাগতেই আবার ডেকে বলল মামা এবার আমি মাছ দেখাচ্ছি দেখেন।

IMG_20230120_182308.jpg

পদ্মার ইলিশ
https://w3w.co/contrived.bumpy.

কয়েকটা ইলিশ বের করতেই আমার এই দুটো ইলিশ পছন্দ হয়ে গেল দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা অরিজিনাল পদ্মার ইলিশ। দাম জিজ্ঞেস করতেই তারা বলে ফেলল দুটো ৩০০০ টাকা। আমিও কম জানি না আমি বললাম দুটো ১২০০ টাকা দিবো। কিন্তু তারা তাতে মানবে না বলছে না দুটো ২৫০০ টাকা দেন। ফাইনালি আমি দুটো ইলিশ চোদ্দোশো টাকা বলে চলে আসতে লাগলাম, পরে পিছন থেকে ডেকে বলল মামা আসেন আর ১০০ টাকা বেশি দিন আমি বললাম না ১৪০০ টাকা হলে নিব না হলে নিব না। পরে তারা দিয়ে দিল দুটো ইলিশ।

নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ইলিশ দুটো কাটালাম এবং পরিষ্কার করালাম। উনারাই ইলিশ ভেজে দিবে এবং ইলিশের লেজ দিয়ে ভর্তা করে দিবে। যদি সরিষার তেল দিয়ে ভেজে নেয় তাহলে সরিষার তেল আলাদা কিনে দিতে হবে তাছাড়া উনারা ওনাদের সয়াবিন তেল দিয়ে ভেজে দিবে। পরে সরিষার তেল কিনে দিলাম। সঙ্গে আলাদা করে আলু ভর্তা, কালোজিরা ভর্ত, বেগুন ভাজি, ডাল ভর্তা এবং ভাত অর্ডার করলাম। এবং দাঁড়িয়ে থেকে ইলিশ মাছ, মাছের ডিম এবং বেগুন ভাজি করে নিলাম।

FB_IMG_1674069599859.jpg
ইলিশ এবং বেগুন ভাজি

FB_IMG_1674069594044.jpg
ইলিশ ভাজি

FB_IMG_1674069582013.jpg
ইলিশের ডিম

ইলিশ মাছ, মাছের ডিম এবং বেগুন ভাজি চলছে
https://w3w.co/contrived.bumpy.

এরপর ইলিশ মাছের লেজগুলো কড়া করে ভেজে নিয়ে সরিষার তেল, কাঁচামরিচ এবং পেঁয়াজ দিয়ে ভালো ভাবে ভর্তা করে নেয়া হলো। অপেক্ষা আর সইছে না। এরপর শুরু হলো খাবার পরিবেশন।

FB_IMG_1674069585123.jpg

ইলিশ মাছ ভাজি বেগুন ভাজি, মাছের ডিম এবং মরিচ

FB_IMG_1674069572039.jpg

সাজানো খাবার প্লেট

FB_IMG_1674069576040.jpg

ডাল ভুনা

IMG_20230119_005010.jpg

ইলিশের লেজ ভর্তা

এরপর খাওয়া শুরু। খাবারগুলো অনেক মজার ছিল বিশেষ করে ইলিশের লেজের ভর্তাটার টেস্ট অন্যরকম।প্রথমত ভেবেছিলাম ইলিশের লেজ ভর্তাটা খেতে পারবো না হয়তোবা অনেক কাটা থাকবে কিন্তু লেজ ভর্তাটাই বেশি স্বাদ ছিল কোন কাটাও ছিল না।

অনেক ভালো একটা সময় কাটিয়েছি। খাবারগুলো অনেক ভাল ছিলো। সঙ্গে আবহাওয়াটা তো দারুন ছিলো। সবকিছু মিলিয়ে এক কথায় অসাধারণ একটা সময়।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মোটামুটি ভোর ৪ টা নাগাদ ওখান থেকে রওনা হই আমরা। ভোর ৫.৩০- ৫.৪৫ এই সময়ের মধ্যে আমরা বাসায় পৌছাই।

অনেক ভালো লাগলো গল্পটা আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আশা করি আপনাদেরও অনেক ভালো লাগবে। তবে মাওয়া ইলিশ খেতে গেলে অবশ্যই ইলিশ দেখে এবং যাচাই করে কিনবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে। আজ এই পর্যন্তই থাক।সবাই সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন।

বিষয়হঠাৎ ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছা।
ভিডিও ক্রেডিট@amitroy
ডিভাইসরেডমি নোট ৮প্রো
লোকেশনমাওয়া পদ্মার পাড়
Sort:  
 2 years ago 

ভাই আপনার পোস্টে পড়ে আমারও বেশ রাতে যেয়ে ইলিশ আর বিভিন্ন রকম ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে । ১৪০০ টাকা দিয়ে দুইটা ইলিশ বেশ ভালোই মনে হচ্ছে,এরা তো দেখি অনেক দাম চায়।যাই হোক পরিবার নিয়ে এত রাতে মাওয়াতে বেশ ভালোই সময় কাটিয়েছেন। ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে। তবে রাতে মাওয়া যেয়ে ইলিশ খাওয়ার মজা আসলেই অন্যরকম। হ্যাঁ ১৪০০ টাকায় দুইটা ইলিশ কিনেছি বৃষ্টির দিন ছিল মানুষজন কম ছিল তো তাই দামটা অতটা বেশি নিতে পারে নাই।

 2 years ago 

ভাবিকে নিয়ে বাহিরে গিয়েছেন এবং ইলিশ খেয়েছেন দেখে সত্যি ভালো লাগলো। আসলে হঠাৎ করে যদি সেখানে কেউ যায় তখন ইলিশ মাছের দাম অনেক বেশি চায়। আপনি কিন্তু ভালোই দামাদামি করেছেন। শেষ পর্যন্ত কিন্তু বেশ কমেই পেয়েছেন 3000 টাকার ইলিশ 1400 টাকায়। খাবার গুলো দেখেই তো খেতে মন চাইছে। ইলিশ মাছ ভাজা খেতে সবাই পছন্দ করে। আশা করছি ভাবির সাথে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনাদের জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপু আপনাকে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। এটা ঠিক কেউ যদি প্রথম যায় তাহলে অমন দাম শুনে আর দাম করতে পারবে না। বেশি দামে কিনে খেতে হবে। আমি এর আগেও কয়েকবার গিয়েছিতো তাই বুঝতে পারি ওরা কিভাবে দাম বলে। সময় পেলে ঘুরে আসবেন ভালো লাগবে অনেক।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার পোস্ট দেখে আমার জিভে জল চলে এলো। আপনি ভাবিকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে গিয়েছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো। আপনাদের দুজনার ঘুরতে যাওয়ার সুন্দর একটি মুহূর্ত সম্পর্কে জানতে পেলাম। ইলিশ মাছের কাঁটা বেশি থাকার কারণে আমার কাছে ভেজে খেতে অনেক ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে

 2 years ago 

হ্যা আপু আমিও তাই ইলিশ মাছ ভেজে খেতে পছন্দ করি কাটার জন্য। ধন্যবাদ আপনাকে আপু সুন্দর করে বলার জন্য।

 2 years ago 

ইচ্ছেটা কিন্তু মন্ধ ছিল না। শীতের সময় এমনিতেই মাছ ভাজা খেতে মন চায়। আর তা যদি হয় ইলিশ মাছ তাহলে তো আর কথাই নেই। ইলিশের ডিম টা দেখতে তো সেই রকম ছিল। পাশাপাশি বেগুন ভাজি সব মিলিয়ে সুন্দর একটি ভজন ব্যবস্থা করেছিলেন। আনন্দঘন একটা মুহূর্তের দৃশ্য ফুটে উঠেছে আপনার ব্লগে।

 2 years ago 

হুম ভাইয়া ইলিশের ডিম টা মজা ছিলো। কিন্তু লেজের ভর্তাটা বেশি মজা ছিল। বেগুন ভাজা এমনিতেই আমার অনেক পছন্দের। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে পোস্ট টা পরে সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

দাম তুলনামূলক অনেক বেশি হয়েছে, আপনি দেখছি অনেকটা আমার মতই। আমার যখন যেটা খেতে ইচ্ছা করেন তখন সেটা খাওয়ার জন্যই বেরিয়ে পরি।

 2 years ago 

দামটা বেশি হতে পারে। তবে ইলিশ প্রতটা কিন্তু ১ কেজি এর চেয়ে বেশি ছিল, মানে ২ টা প্রাই ২ কেজি ৩০০ গ্রাম ছিলো। শুনে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া যে আপনিও ইচ্ছাটাকে প্রাধান্য দেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আমি আমার পোস্টে সব সময় বলি, নিজের ছোট খাটো ইচ্ছেগুলো পুরন করার জন্য। মাঝে মাঝে মোটিভেশনাল পোস্ট করি।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার মোটিভেশনাল পোস্টগুলো আমাদের অনেক হেল্প করবে।

 2 years ago 

পোস্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব সুন্দর সময় পার করলেন। তবে আমিও মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে আমার ওয়াইফ কে নিয়ে ঘুরতে যাই। অনেকদূর গিয়ে ইলিশ মাছ খেলেন। ইলিশ মাছের লেজ দিয়ে ভর্তা গুলো খেতে মনে হয় অনেক মজা হয়েছে। তবে সব জায়গাতে একটা জিনিস দেখি কিছু কিনতে গেলে ওটার দাম অনেক ছড়াভাবে চাই দোকানদার লোকগুলো। তবে আমি কখনো মাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজনের পোস্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে সেখানে তাজা ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর কমেন্টস করার জন্য।হ্যা ইলিশ এত লেজ ভর্তা অনেক টেস্টি ছিল। আসলে কাজের ফাকে একটু ঘুরাফেরা করার দরকার আছে, মনের খোরাক মেটানোর জন্য । শুধু তাজা না পঁচা ইলিশ ও পাওয়া যায়, সাবধানে কিনতে হবে।

 2 years ago 

একা একা যেয়ে এভাবে পোস্ট করা হচ্ছে !! এগুলো ঠিক না দাদা। একদম ঠিক না। কাছেই তো থাকি। ডাকলে কি আর না করতাম 😉। ওখানকার ইলিশের লেজ ভর্তার যে স্বাদ 👌👌👌 একদম মুখে লেগে থাকার মত পুরো। যে না যাবে এখানে, তার ইলিশ খাওয়ার তৃপ্তিই হবে না।

 2 years ago 

একা একা তো যাই নাই, সংগে আরো অনেকেই ছিল। রাত অনেক ছিলো তাই ডাকি নাই, কারণ তুই তো আবার বেশি রাতে বের হোস না। ঠিক আছে নেক্সট টাইম অবশ্যই নিয়ে যাবো।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62720.27
ETH 2447.07
USDT 1.00
SBD 2.64