মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনার সবাই অনেক ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি। পোস্টের টাইটেল দেখেই হয়তো অনেকেই বুঝতে পেরেছেন আজ আমি কি নিয়ে কথা বলবো। আসলে মহাকাশ ভিত্তিক যেসব বিষয়বস্তু রয়েছে সেসব বিষয় নিয়ে আগে প্রচুর পোস্ট করতাম কিন্তু এই পোস্টগুলো সাধারণ ইউজারা পড়ে না, তাই এই পোস্ট করার আগ্রহটাও আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছি। তারপরও মাঝে মাঝে পোস্ট করি, যাই হোক তবে আজকের টপিক শুরু করি, চলুন।
আমরা যেই গ্রহে বসবাস করছি সেই গ্রহকে পৃথিবী বলা হয় এবং এই পৃথিবী আমাদের সৌরমডেলের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। সূর্যকে আমাদের এই সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। আমাদের এই সৌরজগতের যত ধরনের বস্তু রয়েছে সব বস্তুর ভর ২% ও নয় সূর্যের তুলনায়। বেশিরভাগ বস্তুর ভরেই রয়েছে সূর্যের মধ্যে। তাই সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ বল ও অনেক বেশি। তাই আমাদের এই সৌরজগতের যতসব বস্তু রয়েছে তা সূর্যকে কেন্দ্র করেই ঘোরে। যেমন আমাদের এই সৌরজগতের সকল বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে করে ঠিক তেমনি আমাদের সূর্য কিন্তু একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রবিন্দু কে প্রদক্ষন করে ঘুরছে। অর্থাৎ আমাদের এই সৌরজগতের মতো কোটি কোটি গ্রহ উপগ্রহ এবং সৌরজগৎ সবকিছুই একটি গ্যালাক্সির অংশ এবং আমাদের এই গ্যালাক্সির নাম হল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমাদের এই সূর্য আমাদের পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড়। এই সূর্যের প্রকৃত আকার আমরা কখনো কল্পনা করতে পারব না। তবে এটা জেনে আরো অবাক হবেন আমাদের এই গ্যালাক্সির আকার এই সূর্যের চেয়েও কোটি কোটি গুণ বড় অর্থাৎ আমাদের এই গ্যালাক্সির সামনে আমাদের এই সূর্য অনু পরমানুর সমান দেখাবে। একটি গ্যালাক্সির মাঝে কোটি কোটি নক্ষত্র এবং কোটি কোটি নক্ষত্রের গ্রহ উপগ্রহ এবং astroid এসব কিছু বিদ্যামান। এছারা রয়েছে নীহারিকা, ব্ল্যাক হোল, নিউট্রন স্টার ও মহাজাগতিক অনেক বস্তু। একটি মাঝারি আকারের ছায়াপথে এক কোটি থেকে এক লক্ষ কোটি পর্যন্ত নক্ষত্র এবং নক্ষত্রের গ্রহ উপগ্রহ ইত্যাদি থাকতে পারে।
আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি একটি মাঝারি আকারের গ্যালাক্সি। তবে এই গ্যালাক্সি ও কিন্তু কম বড় নয়। এই গ্যালাক্সির ব্যাস হচ্ছে এক লক্ষ আলোকবর্ষ। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে বলে রাখি, আলো এক বছরে যতদূর পর্যন্ত যেতে পারে সেই দূর পর্যন্ত আমরা তাকে এক আলোকবর্ষ বলি এবং এখন পর্যন্ত সৃষ্ট সবথেকে গতিশীল বিষয় হচ্ছে আলো। আলো প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারে। তাহলে চিন্তা করুন এই আলো এক লক্ষ বছর পর্যন্ত যতদূর অতিক্রম করতে পারবে ততটাই হচ্ছে আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ব্যাস।
কল্পনা করুন আপনি একটি মহাকাশ যান তৈরি করেছেন, যার স্পিড আলোর গতির সমান তাহলেও আপনাকে এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যেতে সময় লাগবে প্রায় এক লক্ষ বছর। কিন্তু আপনারা জেনে আরো অবাক হবেন আমাদের মানব সৃষ্ট সর্বোচ্চ গতিশীল বস্তু হচ্ছে পার্কার সোলার প্রো, যা আলোর গতির প্রায় ০.০২ পার্সেন্ট প্রযন্তই এচিভ করতে পেরেছে। আপনারা জেনে আরো অবাক হবেন, আমাদের এই মহাবিশ্বের শুধুমাত্র আমাদের একটি ছায়াপথ নেই বরঞ্চ আমাদের চেয়েও অনেক বড় বড় ছায়াপথ রয়েছে যার সংখ্যা বিলিয়ন এর চেয়ে বেশি।তবে আমাদের এই ছায়াপথকে রাক্ষসী ছায়াপথ বলা হয় এবং আমাদের যে প্রতিবেশী ছায়াপথ রয়েছে অ্যান্ড্রোম গ্যালাক্সি তাকে রাক্ষসে গ্যালাক্সি বলা হয়। বিজ্ঞানের ধারণা করছেন এই দুই গ্যাল্যাক্সির মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি একটি সংঘর্ষ হতে যাচ্ছে, যদিও এই সময়টা আরো বিলিয়ন বছর পরে।
আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে রাক্ষসী কেন বলা হয় বা রাক্ষস গ্যালাক্সি কেন বলা হয়! এর সহজ উত্তর হচ্ছে এই গ্যালাক্সি গুলো সাধারণত ছোট ছোট গ্যালাক্সি গুলোকে খেয়ে আরো বড় হয়ে যায়। আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও এখন পর্যন্ত তিনটি গ্যালাক্সি যে নিজের মধ্যে করে নিয়েছে এবং অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি প্রায় দশটির ও অধিক গ্যালাক্সি নিজের মধ্যে করে নিয়েছে। এছাড়াও অ্যান্ড্রয়েড গ্যালাক্সি আমাদের এই গ্যালাক্সির তুলনায় দেড় গুণ অর্থাৎ এর ব্যাস এক লক্ষ বিশ হাজার আলোকবর্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রত্যেকটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থাকে। যার ব্যাস অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ কিংবা সূর্য থেকে কোটি কোটি লক্ষ গুণ বড় হতে পারে। আমাদের এই গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাক হোল রয়েছে যার, নাম সেক্রেটারিয়াস এ ব্ল্যাক হোল। আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে কিনা সেটা বলতে পারি না তবে আমার মনে এই প্রশ্নটা অনেক আগেই এসেছিল। যেহেতু আমাদের সৌরজগতের মোট ভরের ৯৮% সূর্যের কাছে রয়েছে তাহলে হয়তো আমাদের এই গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের ভর আমাদের সমস্ত গ্যালাক্সির তুলনায় অনেক বেশি!! কিন্তু এর উত্তর হচ্ছে না.....
সে ক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন আসতে পারে। সূর্যের ভর বেশি তুলনায় আমাদের এই সৌরজগতের সমস্ত বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। তাহলে আমাদের এক গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্লাকহোলের ভর কম হওয়া সত্ত্বেও কেন গ্যালাক্সিতে থাকা সমস্ত মহাজাগতিক বস্তু এই ব্ল্যাক হোল কে কেন্দ্র করে ঘুরছে??? বিষয়টা মজাদার না?? তবে এর উত্তরও কিন্তু বিজ্ঞানের দিয়েছে। এর উত্তর হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি।আপনাদের সুবিধার্থে আরও একটি ও তথ্য দিয়ে আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করব।
এই মহাবিশ্বে যত কিছু রয়েছে তার তো আমরা ০.০০০০০১% ও এখন আবিষ্কার করতে পারিনি। তবে আমরা এর ধারণা করতে পারি যে সেই বস্তুগুলো অ্যাটলিস্ট রয়েছে। কিন্তু আরো মজার বিষয় হচ্ছে মহাবিশ্বের যত ধরনের বস্তু আছে সেটা কেবলমাত্র ৫% বাকি ৯৫ শতাংশই হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি। এই ডার্ক ম্যাটার এবং তার এনার্জি নিয়ে জানার ইচ্ছা হলে অবশ্যই মন্তব্য লিখতে পারেন। তাহলে অন্য কোন একদিন সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
ভাই আপনার শেয়ার করা মহাকাশ সম্পর্কিত পোস্ট গুলো পড়লে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে পারি। তবে এটা ঠিক এই পোস্ট গুলো অনেকেই পড়েন না। তবে আমি মনে করি তবুও আপনার উচিত মহাকাশ সম্পর্কিত পোস্ট কন্টিনিউ করা।
এটা জেনে সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম ভাই। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি মাঝারি আকারের হয়েও কতো বড়,আরো বড় আকারের গ্যালাক্সি তাহলে কতোটা বড় হতে পারে সেটাই ভাবছি। আসলেই আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির কথা যতই জানি, ততই অবাক হয়ে যাই। ভাই ডার্ক ম্যাটার এবং তার এনার্জি সম্পর্কে অবশ্যই বিস্তারিত জানতে চাই। সবমিলিয়ে পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম ভাই। এমন তথ্যবহুল একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ভাই, তবে এতো কষ্ট করে লিখেও দিন শেষে ১ জন পোস্ট পড়লো! এটা কি কোন ভাবে মানা যায়? যাই হোক ভাই, আমি পোস্ট চালিয়ে যাবো।
আসলে এই বিষয়গুলো সত্যিই খুব খারাপ লাগে ভাই। যাইহোক গানের ভাষায় বলতে গেলে,"যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে"। এগিয়ে যান ভাই, আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
মহাকাশ সম্পর্কে জানতে অনেক ভালো লাগে। অনেকদিন পর এই সম্পর্কে পোস্ট দেখে ভালো লাগলো ভাইয়া। আসলে এটা একদম ঠিক যদি পোস্ট কেউ না পড়ে তাহলে পোস্ট লেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরে ভালো লাগলো ভাইয়া। ডার্ক ম্যাটার এবং এর এনার্জি সম্পর্কে জানার ইচ্ছে পোষণ করছি ভাইয়া। আশা করছি খুব শীঘ্রই এই পোস্ট দেখতে পাবো।
তারাতারি সেই পোস্ট নিয়ে আসার ট্রাই করবো আপু, ধন্যবাদ আপনাকে ।।