সময়টা বেশ ভালই কাটছিল। নতুন ভার্সিটিতে উঠেছি, নতুন বন্ধুদের পেয়েছি এবং নিয়মিত ক্লাস করছি। ভার্সিটি লাইফ টা কেবল শুরু করতে যাচ্ছিলাম। তিন মাস হতে না হতেই এই করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে এবং দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সবার ভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আমি প্রথম প্রথম ভাবছিলাম যাক কিছুদিন ছুটি পাওয়া গেল এডমিশনের জন্য প্রচুর পড়াশোনা করেছিলাম প্রায় এক বছরের মতো বাসায় যাওয়া হয়নি সেই সুযোগে বাসা থেকে কিছু দিন ঘুরে আসা যাবে।

কে জানতো এই করোনা মহামারী এতটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। যাইহোক অনেক দিন যাবত বোসে বোসে ছিলাম কিন্তু আমার বয়স টা দিন দিন বয়স বেড়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের যারা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করেছে তাদের বয়স একটু বেশি তারপরে এডমিশন ক্লাস একটি ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া সব মিলিয়ে অনেকটা সময়। ভার্সিটি বন্ধের দুই মাস পর থেকে আমি অনলাইনে কিছু কাজ করার জন্য সবসময় খুঁজতে থাকি, যদি কিছু করতে পারি। কারণ এত বয়স বেড়ে যাচ্ছে বাসা থেকে হাত খরচের টাকাটা নাওয়া আমার জন্য খুবই লজ্জাস্কর একটি বিষয় হয়ে।

আমি প্রতিদিন নিত্যনতুন অনলাইনে কাজ করার পদ্ধতি খুঁজতে থাকি। একদিন খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ আমার একটি ইউটিউব চ্যানেলের দিকে নজর পড়লো। যেখানে আমাদের সোহানা আপু খুব সুন্দর ভাবে স্টিমিট সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। এস্টিমেট এর জয়েন এর আগে আরো দুইটি পারফর্মে আমি কাজ করছিলাম কিছুদিন কিন্তু তারা পেমেন্ট করে নি তাই দুঃখের সহিত সেই প্লাটফর্ম থেকে আমাকে বের হয়ে আসতে হয়েছে।

9 এপ্রিল 2021 সালে আমি প্রথম স্টিম একাউন্ট ওপেন করি। তখন স্টিমিট সম্পর্কে বেশি কিছু জানতাম না কিন্তু আস্তে আস্তে বিভিন্ন জায়গা থেকে ইনফর্মেশন কালেক্ট করা শুরু করলাম এবং পোস্ট করা শুরু করলাম। ১০-১২ দিন হয়ে গেল আমি একটি কমিউনিটি তে পোস্ট করতাম কিন্তু আশানুরূপ কোন ফল আমি পাচ্ছিলাম না। এক পর্যায়ে আমার মন মানসিকতা ভেঙে যায়।

তারপরে আমি এস্টিমেট সম্পর্কে ডিটেইলস এ পড়াশোনা করতে শুরু করি। স্টিম ব্লগের প্রত্যেকটি আপডেট নিউজ পোস্ট পড়ে আমি আমার পোস্টগুলো কে একটু ডিফারেন্ট করার চেষ্টা করি। ছোটখাটো মার্কডাউন এবং কিভাবে পোস্ট করতে হবে, কোন কোন বিষয়গুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এসব জানার পরে আমি কয়েকটি পোস্ট করলাম এবং একটিতে আশানুরূপ ফল পেলাম। সেদিন যে রকম অনুভূতি আমার ফিল হয়েছিল সেটা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় কিন্তু আমি খুবই পজেটিভ ছিলাম এবং আমার কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।

এক মাসের মধ্যে মোটামুটি প্রাথমিক ধারণাটি আমি অর্জন করি এবং নিয়মিত পোস্ট করে যাই। আমার একদিন এমন গেছে 5 থেকে 6 টা পর্যন্ত পোস্ট আমি করেছি বিভিন্ন বিভিন্ন কমিউনিটিতে। আমি অনেকগুলো কমিউনিটিতে নিয়মিত পোস্ট করে গিয়েছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সব জায়গায় লভিং চলে সেজন্য আমি আমার আশানুরূপ সাপোর্ট পায় পেতাম না। আমি বিভিন্ন কনটেস্টে পার্টিসিপেট করা শুরু করলাম এবং কনটেস্টে আমি পার্টিসিপেন্ট করে দেখেছি আমি আশানুরূপ ফল পাচ্ছি বিভিন্ন কনটেস্ট আমি প্রথম স্থান দ্বিতীয় স্থান এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি। তারপরে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সন্ধান পেলাম। যেদিন আমার বাংলা ব্লগ ক্রিয়েট করা হয়েছে তার দুইদিন পরে থেকেই আজ পর্যন্ত এই কমিউনিটির সাথে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি।

এ প্লাটফর্মে টিকে থাকতে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে তার মধ্যে হাফিজুল্লাহ ভাই অন্যতম তিনি আমাকে সবসময় আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং বিভিন্ন ইনফরমেশন দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে। আবার এমনও কিছু মানুষের সম্মুখীন হয়েছে যারা অন্যের উন্নতি দেখে জেলাস ফিল করে।

এ প্লাটফর্ম থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেয়েছি। সৃজনশীলতা কি কিভাবে তৈরি হয় এসব সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমার নিজের ভিতরে যে প্রতিভা রয়েছে সে গুলোকে খুঁজতে প্ল্যাটফর্মের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিগত ১০০ দিনে আমার সবকিছু পরিবর্তন করে দিয়েছে। কিভাবে একটি সাধারন বিষয়কে খুব গুছিয়ে উপস্থাপন করতে হয়, সেই সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি এবং মূলকথা নিজেকে জানতে পেরেছি।

এখন আর পকেট খরচের জন্য বাবা-মায়ের কাছে হাত পাততে হয় না। এই প্লাটফর্ম কে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি।