প্রকৃতির নির্মম বাস্তবতা

সে দেখতে কিন্তু অনেকটা স্বাস্থ্যবান ছিল। যেহেতু গ্রামের ছেলে এবং কৃষি কাজ করে তাই তার স্বাস্থ্য আমাদের তুলনায় অনেকটাই ভালো ছিল। কিন্তু তাকে দেখার পরে কেন যেন মনটাই খারাপ হয়ে গেল। মনে হচ্ছে শরীরের মধ্যেই এক বিন্দু পরিমাণ রক্ত ছিল না, একদম শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তার সাথে কিছুক্ষণ কুফল বিনিময় করার পরে তার বাবার কাছ থেকে আসল ঘটনা জানতে পারি। তার ছেলের ক্যান্সার হয়েছে যে কোন ক্যান্সার নয়, ব্লাড ক্যান্সার। যার কারণে কিছুদিন পরপর রক্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

এদিকে ডাক্তার নাকি বলেছে, সে আর খুব বেশিদিন বাঁচবে না। এগুলো কথা শোনার পরে আমাদের নিজেরেই মনে হয় পা থেকে মাটি সরে গেল। সামনে আমাদের সকলের এসএসসি পরীক্ষা। সে অনেক ভালো ছাত্র এবং পরীক্ষার জন্য প্রচুর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তার একটাই শেষ ইচ্ছা ছিল পরীক্ষায় বসতে চায়। পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে আসে তার শরীর ততটাই খারাপ হতে থাকে। এদিকে আমরাও তার জন্য অনেক প্রার্থনা করি, অনেক দোয়া দরুদ পড়ি। এছাড়াও আমাদের স্বার্থ অনুযায়ী তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করি।

সে যতদিন হাসপাতালে ছিল আমরা সকলেই স্কুল শেষ করে তার সাথে দেখা করতে যেতাম, তার জন্য কিছু হলেও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। তার সাথে আনন্দ মস্তি করার চেষ্টা করতাম যাতে করে সে একটু মনোবল পায়। পরীক্ষার শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে আমাদের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে তাকে গ্রামের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েও তার কোন লাভ হয়নি, তারা সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলো। তারপরও আমরা তিন চারজন বন্ধু মিলে মাঝে মাঝে তার গ্রামের বাসায় গিয়ে তার খোঁজ খবর নেওয়া চেষ্টা করেছিলাম। এখনো মনে পরে সাইকেল নিয়ে তিন বন্ধু বহুদূর পথ পেরিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে দেখা করে আসতাম।

তার বাসায় যখন আমরা যেতাম তার পড়ার টেবিলটা দেখে প্রচুর খারাপ লাগতো। সব গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং সূত্রগুলো তার পড়ার টেবিলের সামনে রয়েছে, এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে নোটস এবং বই তার টেবিলের উপর ছিল। পড়াশোনা করছি তার প্রচুর টান ছিল। তার মা-বাবা থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন এবং আমরাও জানতাম সে আর খুব বেশিদিন বাঁচবে না, কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা ছিল সে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুদিন আগে বিকেল বেলা খবর আসলো সে আর এই দুনিয়াতে নেই। সেদিন এত পরিমানে কষ্ট পেয়েছিলাম যা বলে বোঝাতে পারবো না আপনাদের।

Source

খবর পাওয়ার সাথে সাথে বন্ধুদের কে ও জানিয়ে দিলাম এবং সবাই মিলে তার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। তার বাসায় আস্তে আস্তে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, রাতেই দাফন কার্য সম্পন্ন করা হবে। দাফন কার্য শেষ করার আগে তার যখন চেহারাটা দেখছিলাম আর সেটা সত্যি অনেক ভয়ানক ছিল। মনে হচ্ছে শরীরের মধ্যে এক বিন্দু পরিমাণ রক্ত নেই, সম্পূর্ণ শরীর একেবারে নীল হয়ে গিয়েছিল। সেই চেহারাটা আমি আজও ভুলতে পারিনি।

দাফনকার্য শেষ করে আসার সময় বেশ কিছু ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম, সেগুলো না হয় অন্য একদিন আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তবে ওর মৃত্যুর পরে দু'রাত ভালো ভাবে আমি ঘুমাতে পারিনি। বরঞ্চ মা-বাবার সাথে ঘুমাতে হয়েছে। এতটাই ভয় পেয়েছিলাম আমি। আজ বড় দাদার পোস্টটি পড়ে আমার সেই বন্ধুর কথা আবারও মনে পড়ে গেল। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যত বন্ধু-বান্ধবকে তার কাছে ডেকে নিয়েছে তাদেরকে যেন সবসময় ভালো রাখেন, এটাই শুধুমাত্র কামনা করতে পারি। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ সবাইকে।

---

VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy

---

---

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP	500 SP	1000 SP	2000 SP	5000 SP

---

|| Join the Discord Server for more Details ||

---

আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।

---

---

বিষয়: প্রকৃতির নির্মম বাস্তবতা

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......