একটি অলৌংকিক ঘটনা (শেষ পর্ব)

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করছি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন। গতকাল একটি ঘটনা শুরু করেছিলাম। যেটা প্রথম পর্ব ইতিপর্তে আপনারা অনেকেই পড়েছেন। আজকে সেই গল্পের বা ঘটনার দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করবো এবং আজকেই চেষ্টা করব ঘটনাটি শেষ করার জন্য। তবে সবার প্রতি একটা অনুরোধ যারা প্রথম পর্বটি পড়েননি, প্রথমে পর্বটি পড়ে আসুন।

যেদিন অষ্টমী ছিল সেদিন আমরা আমার সেই বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম এবং সে রাত্রি আমরা কোথাও না বেরিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরবর্তীতে নবমী ছিল সম্ভবত এবং সেই দিনেই মূলত অনেক ধরনের গান বাজনা হয় কিংবা অনেক ধরনের অনুষ্ঠান হয় যেগুলো সব নাম হয়তো আমি জানিনা তবে আমার বন্ধুটা বলে উঠল যে আজকের রাতে সে দুর্গাপূজা দেখতে যাবে। দিনের বেলা সাধারণত গ্রাম্য মেলায় গিয়েছিলাম এবং সেই গ্রাম্য মেলায় অনেক ধরনের জিনিসপত্র উঠেছিল, আসলে আমি অবাক হয়েছি যে বাংলাদেশের এখনো এই গ্রাম্য মেলাগুলো হয়। যেখানে মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দেখতে পেয়েছি এবং ছোট বাচ্চাদের খেলনা, বেলুন হাওয়াই মিঠাই, লাটিম আরো অনেক ধরনের বিষয়বস্তু ছিলো। সেখানে আমরা সকালের সময় উপভোগ করেছিলাম এবং বিকেলে ক্রিকেট খেলেছিলাম। যাইহোক ক্রিকেট খেলে পরবর্তীতে আমরা বাসায় গেলাম ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুর্গাপূজা দেখার উদ্দেশ্যে। তাদের বাসা থেকে দুর্গাপূজার মন্ডপ ছিল বেশ কাছে, প্রায় হেঁটে যেতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগতো। পরবর্তীতে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম সেখানে খুব একটা বেশি জাঁকজমক অবস্থা ছিল না। মাত্র দুই একটা দোকানপাট ছিল এবং ডিজে গান বাজাচ্ছিল তাছাড়া কোন কিছুই মনে হচ্ছে না, একটা শুধুমাত্র গান বাজছে।

আমার সাথে থাকা আরও একটি বন্ধু বলে উঠলো, কি দুর্গাপূজা দেখাতে নিয়ে আসলে এখানে তো কিছুই নেই, একেবারেই নীরব। তখন আমার আরেক বন্ধু বলে উঠল আরেকটি দুর্গাপূজা আছে তবে সেটা আমার বাসা থেকে বেশ খানিকটা দূরে এবং সেখানে যদি আমরা এখন যাই বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত হবে। তারপরে সেই বন্ধু বলে উঠল সমস্যা নেই, আমরা তো ঘুরতে এসেছি এমনটা তো না যে, আগামীকাল আমাদের অফিস করতে হবে।

আমি সেখানে কিছু বললাম না, আমি চুপচাপ রইলাম। যেখানে দুজনে সম্মতি রয়েছে সেখানে আমি বারণ করলেও সেটা খুব একটা বেশি কার্যকর হবে না। তবে তারা আরও একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল সেটা হচ্ছে, গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে তারা হেঁটে হেঁটে সেই আর দুর্গা পূজার মন্ডপে যাবে। এখনোও আমি কিছু কথা বললাম না, শুধু মাত্র চুপচাপ তাদের সাথে চলতে থাকলাম। এমন সময় এমন একটি জায়গায় আমরা অবস্থান করছিলাম যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা আমি হয়তো মুখে বলে শেষ করতে পারবো না। একটা অসাধারণ পরিবেশ দুই সাইডেই রয়েছে প্রচুর ধানক্ষেত এবং মাঝখান দিয়ে চলে গেছে গ্রামের কাঁচা রাস্তা এবং সেই রাস্তার মাঝখানে রয়েছে একটি ছোট্ট ব্রিজ। যেখানে বসে আমরা চাঁদের আলো উপভোগ করছিলাম। একবার চিন্তা করে দেখুন কত সুন্দর একটি চমৎকার দৃশ্য ছিল।

তখনো আকাশ একদম পরিষ্কার ছিল, যাইহোক তখন আনুমানিক রাত নয়টা বাজে। তারপরে আমরা সেই জায়গা ত্যাগ করে সেই দুর্গাপূজা মন্ডপের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম সেখান থেকে আরো মিনিট ৩০ এ খাটার পরে আমরা সেই জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হলাম সেটা সত্যি দেখার মত একটি জায়গা ছিল। মনে হচ্ছে একটি মেলা বসেছে এবং আশেপাশে প্রচুর হইহুলর হচ্ছিল এবং দেখেই মনে হচ্ছিল আজকে তাদের ঈদের মতো আনন্দ করছে। যদিও যারা হিন্দুরা রয়েছেন তাদের জন্য দুর্গাপূজায় ঈদের আনন্দ সম্মানই। তবে সেখানে কিছু দোকান বসে ছিল এবং অনেক চমৎকার চমৎকার সুস্বাদু খাবারের দোকান। খাবারের বিষয়টা তো বুঝেন এই। সেই খাবার কে কি কোন ভাবে না করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে সেখানে প্রচুর খাওয়া-দাওয়া করেছি এবং সেখানেও একটি নাটক দেখানো হচ্ছিল সেই নাটকগুলো দেখেছি। সবকিছু করতে করতে আমাদের যে বাসায় ফিরতে হবে সেই বিষয়টা আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম।

Source

পরবর্তীতে হুট করে মনে হলো যে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, পরে ঘড়ির কাঁটায় দেখি এগারোটা পার হয়ে গিয়েছেন আমি দুজনকেই বললাম আজ অনেক হয়েছে চলো এখন বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। যার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম, সেই বন্ধু বলছে যে, এখন এত রাতে সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না যে রাস্তা দিয়ে আমরা এসেছিলাম। কারণ সেই এলাকায় অনেক ডাকাতি হয় এবং ছিনতাই হয়। আমাদেরকে মেইন রাস্তা দিয়ে ঘুরে যেতে হবে। মেইন রাস্তা দিয়ে আসতে হলে প্রায় পাঁচমাইলের মতো পথ আমাদের অতিক্রম করতে হবে। তবে আমার সেই বন্ধু সে বলে উঠলো চিন্তা নেই, এখান থেকে প্রচুর অটো রিক্সা যায় যে কোন একটি অটোরিকসায় উঠে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা বাসায় পৌঁছে যাব। আমরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় পূজা মন্ডপ থেকে বের হওয়ার একটু আগেই প্রচন্ড পরিমাণে বাতাস বইতে লাগলো এবং প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমাদের মাথায় হাত!! কি থেকে কি হয়ে গেল!!! একটু আগেই একদম শান্তশিষ্ট পরিবেশ এবং মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে এমন মনে হচ্ছে যেন দুই তিন দিন ধরে এখানে ঝড় হচ্ছে।

যেহেতু, গ্রাম্য দুর্গাপূজা ছিল তাই বেশিরভাগের বাসা ছিল আশেপাশে তাই খুব দ্রুত দেখলাম দুর্গা পূজার মন্ডপ বন্ধ করে সবাই নিজ নিজ বাসায় চলে গেল। কেমন যেন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হল। যেমন বাজারের মধ্যে আপনাকে যদি ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাজারের সকল দোকান যদি বন্ধ থাকে তাহলে আপনার কি রকম অবস্থা হবে? সেরকমই অবস্থা হয়েছিল। প্রায় এক ঘণ্টা আমরা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু কোন অটো রিক্সা পাইনি। পরবর্তীতে আমাদের সকলের ফোন পলিথিন এর মধ্যে ভরে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা হেটেই বাসায় যাব কিন্তু শর্টকাট রাস্তা দিয়ে নয় বরঞ্চ মেইন রাস্তা দিয়েই যত রাতেই হোক না কেন। তখন অবশ্য বৃষ্টিটা অনেক কম ছিল এবং এলাকাটা একটু গ্রামের ভিতরে থাকায় বাহিরে খুব একটা বেশি আলো ছিল না। এছাড়াও ঝড় বৃষ্টির কারণে সেখানকার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে আমরা পলিথিনের মধ্যে থেকেই একে একে করে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে আমাদের রাস্তা দেখছিলাম। এতটাই কুচকুচে কালো অন্ধকার ছিল যা কোন ভাবেই বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

আমার সাথে যে আরো একটি বন্ধু ছিল সে বলে উঠছেন এসব জায়গায় কিন্তু বেশিরভাগ ছিনতাই হয়। সে আর কি ডাকাতি ছিনতাইয়ে ভয় পাচ্ছিল কিন্তু আমার ভয়টা অন্য জায়গায় ছিল। আসলে ছোটবেলা থেকেই ভূত অনেক ভয় পাই এবং সেই আতঙ্কটা কাউকে বুঝতে দেইনি। আমি চুপচাপ হাঁটা শুরু করলাম। এমন অবস্থায় আবারও খুব জোরে ঝড় বৃষ্টি বইতে লাগলো। আমরা কোথাও না থেমে তিনজনে দৌড়াতে লাগলাম। এমন একটি পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এভাবে কতক্ষণ দৌড়েছি ঠিক মনে নেই কিন্তু সেখানে একটি দোকান আমরা পেয়েছিলাম সেই দোকানের নিচেই আমরা সবাই আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমার সেই বন্ধু জানালো এখান থেকে তার বাসা মাত্র ২ কিলোমিটার।

আমরা দোকানের ছাউনিতে বসে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছিলাম এবং অপেক্ষা করছিলাম আশপাশ দিয়ে যদি কোন অটো রিক্সা যায় তাহলে সেখানে চড়েই আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেব। একটু পরে একটি অটো রিক্সা আসলেও কিন্তু সেখানে তিন-চারটা সিট খালি ও ছিল কিন্তু তারা আমাদেরকে কোনভাবেই অটো রিক্সায় উঠালো না। আরো ২০ মিনিটের মত প্রায় আমরা সেখানে অপেক্ষা করেছিলাম। তারপরে দেখলাম হুট করে আমাদের সবার সামনে একটি অটোবিশা এসে দাঁড়ালো। আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। আমরা অবশ্য সেই অটো রিক্সাকে দেখতেই পাইনি যে সেই অটোরিকশা কোথা থেকে এসেছে, এসে বলল উঠে পড়ো তোমাদেরকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।

আমরা এরকম সাহায্যে এই অপেক্ষা করছিলাম। বাংলাদেশের অটোরিকশা তো আপনারা জানেন, এর ড্রাইভারের পিছে একজন বসানো যায় অর্থাৎ ড্রাইভারের সাথে আপনার পিঠ লেগে যাবে এবং তার সামনে আরো দুজন বসার জায়গা থাকে। তো আমি সেই ড্রাইভার এর পিছন দিকেই বসলাম। বসার পরে অনুভব করলাম ড্রাইভার এর শরীর থেকে একটু গরম হাওয়া আসছে। আমি চিন্তা করলাম এত ঠান্ডায় আমরা কাপছি কিন্তু ড্রাইভার এর গা থেকে এত গরম কিভাবে আসছে, বিষয়টা আমি ইগনোর করে গিয়েছিলাম এবং বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করিনি। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে দেখি আমাদেরকে ছেড়ে এসেছিল যে অটো রিক্সাটা, সেটা দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরে আমরা জানতে পারলাম সামনে একটি গাছের গুড়ি পড়ে আছে যার কারণে অটো রিক্সা যেতে পারছে না। সেখানকার প্যাসেঞ্জাররা যেতে ভয় করছে যদি কোন ডাকাত দল তাদের হামলা করে, কিন্তু আমরা তিনজন নেমে সেই গাছের গুড়িটাকে সরিয়ে দিলাম।

Source

পাঁচ সাত মিনিটের বাসায় আমরা চলে আসলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয় আমরা ড্রাইভারকে বলিনি যে কোথায় গাড়ি থামাতে হবে, ড্রাইভার নিজেই বাসার সামনে এসে আমাদেরকে নামিয়ে দিল। এর পরবর্তীতে আমরা পকেট থেকে টাকা বের করছি এমন অবস্থাতে ড্রাইভারসহ অটো রিক্সা সম্পূর্ণ গায়েব হয়ে গেল। জানি বিষয়টা আপনাদের অনেকেরই বোধগম্য হবেনা এবং আমরা যখন আমাদের সাথে ঘটেছে তখন আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারেনি কিন্তু ড্রাইভার এর পড়নে ছিল সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় দিচ্ছিল টুপি। কিন্তু বিশ্বাস করুন সেই ড্রাইভার কিভাবে আমাদের কাছে আসলো এবং আমাদের গন্তব্য কিভাবে জানলো এবং কিভাবে হাওয়া হয়ে গেল কোন কিছুই আমরা ঠিক ভাবে বুঝতে পারলাম না। কোন কিছুর ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত আমি দিতে পারিনি। আমরা তিনজন অটো রিক্সা থেকে নেমেছি, একজন বাসায় তার মাকে ডাকতে গিয়েছে। আমরা দুজন পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করার চেষ্টা করছি। এই একটু সময়ের মধ্যে একজন অটোরিকশা নিয়ে কিভাবে গায়েব হয়ে যেতে পারে? এই বিষয়টা আমার বোধগম্য হয় না। এই ছিল আমার একটি ছোট্ট ঘটনা। জানিনা আপনারা এই ঘটনাটি কিভাবে দেখবেন! ঘটনাটি আমার সাথে ঘটেছিল ২০১৮ সালে।

VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy

---

---

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP	500 SP	1000 SP	2000 SP	5000 SP

---

|| Join the Discord Server for more Details ||

---

আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।

---

---

বিষয়: একটি অলৌংকিক ঘটনা (শেষ পর্ব)

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......