উত্তরের জনপদ নীলফামারী ( ১ম পর্ব )
উত্তরের জনপদ আমাদের এই নীলফামারী। ঢাকা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে নীলফামারীর অবস্থান। নীলফামারী ছোট হলেও এই শহরের ইতিহাস অনেক পুরনো। আয়তনের দিক থেকে প্রায় ১৮০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই নীলফামারী শহর বিস্তৃত। নীলফামারী জেলার ৬ উপজেলা রয়েছে। ডোমার, জলঢাকা, ডিমলা কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও নীলফামারী সদর। আমাদের এই নীলফামারী জেলার নামকরণ নিয়ে অনেকগুলো ইতিহাস রয়েছে তবে সঠিক ইতিহাস সেই ভাবে পাওয়া যায়নি। তবে লোক সম্মুখে একটি ঘটনার কথা ম জানা যায়। সেটি হল ইংরেজরা যখন আমাদের এই ভারতবর্ষে রাজত্ব করছিল তখন এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি নীল চাষ করা হতো। সেখান থেকেই সবাই একে নীল খামারি বলে ডাকতে শুরু করেন এবং যুগের প্রবর্তনের সাথে সাথে নীল খামার থেকে নীলফামারী নামে রূপান্তরিত হয়।
আমার জন্ম এই নীলফামারী শহরে এবং নীলফামারী সদরের আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। নীলফামারী জেলা টি অনেক শান্তশিষ্ট। বাইরে হরতাল ভাঙচুর যাই হোক না কেন আমাদের নীলফামারী শহরে এর খুব একটা বেশি প্রভাব পরে না বললেই চলে। আমাদের এই নীলফামারী জেলায় অনেক ধরনের চাষাবাদ হয়ে থাকে তার মধ্যে ধান, গম, ভুট্টা এবং তামাক অন্যতম। আমাদের এই জেলায় কিছু পরিমাণ লিচু আবাদ করা হয়। সেগুলো সত্যিই অনেক মজাদার হয়ে থাকে।
আমাদের এই নীলফামারী জেলার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেগুলো শুনলে আপনারা অবাক হতে পারেন। বর্তমানে শীতত কাল চলছে। আপনারা সকলেই জানেন উত্তরে সবচেয়ে বেশি শীত পরে এবং আরেকটি বিষয় হয়তো জেনে থাকবেন। আমাদের এই উত্তরবঙ্গে গরমের সময় সবচেয়ে বেশি গরম পরে এবং বর্ষার সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। কিন্তু আমাদের এদিকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো থাকায় বৃষ্টির কারণে বন্যা সৃষ্টি হয় না।
আমাদের এই নীলফামারী জেলায় ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষিখাতের সাথে জড়িত রয়েছে এবং আমাদের এই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ জমি, আবাদি জমি। যেখানে প্রতি বছর প্রচুর পরিমানের ধান এবং গম আবাদ করা হয়। আগে অনেক তামাক আবাদ করা হতো কিন্তু সেই সংখ্যাটা আস্তে আস্তে অনেক কমে যাচ্ছে আশা করছি এই সংখ্যাটি শূণ্যে নেমে আসবে এবং এই জায়গায় আরো বেশি বেশি ধান এবং গম চাষাবাদ হবে।
ঢাকা থেকে অনেক দূরে হওয়ার জন্য আমাদের এই জায়গাটি অনেকটাই অনুন্নত থেকে গিয়েছিলো কিন্তু কিছু বছর ধরে এই নীলফামারী আস্তে আস্তে উন্নতি লাভ করেছে। বিভিন্ন ধরনের শপিং কমপ্লেক্স এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান, নতুন নতুন হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছুই নীলফামারীতে হয়েছে।
এইতো গত বছরে নীলফামারী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করা হয় এবং এর বিল্ডিং ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমাদের নীলফামারীতে ২০ হাজার দর্শক সমৃদ্ধ একটি স্টেডিয়াম রয়েছে। যেখানে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল ম্যাচ ইতিমধ্যে কয়েকটি হয়ে গিয়েছে। আমাদের নীলফামারী প্রাণকেন্দ্র নীলফামারী বড় মাঠে এক্সারসাইজ/ ব্যায়াম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট তৈরি করা রয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় Free Wifi দেওয়া হয়েছে।
আমি মাঝে মাঝে অবাক হই এখনও কিছু মানুষ এই নীলফামারী শহর কে চেনে না। অথচ এই নীলফামারী শহরে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে কারখানা অবস্থিত। যেটি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় অবস্থিত এবং সৈয়দপুর উপজেলায় আমাদের রংপুর বিভাগের একমাত্র এয়ারপোর্ট অবস্থিত। আমাদের এই নীলফামারীতে তিস্তা ব্যারেজ অবস্থিত। এই তিস্তা ব্যারেজ দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক চলে আসে। এছাড়া নীলফামারী থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে নীলসাগর অবস্থিত যাকে আমরা বিন্না দিঘি নামেও চিনি। আমাদের এই নীলফামারীতে প্রচুর নীল কুঠি রয়েছে।
আমাদেরই নীলফামারী অনেক শান্ত সৃষ্ট একটি শহর। তাই এই জেলায় খুব একটা বেশি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে না কিন্তু তারপরও সতর্কতার জন্য আমাদের নীলফামারীতে RAB এর ১৩ নম্বর ইউনিট অবস্থান করে এবং আমাদের এই নীলফামারীতে শান্তি রক্ষা করে। এই নীলফামারী সদরে অনেক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা রয়েছে কিন্তু তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির দৃশ্য দেখা যায়। যেগুলো আমি মনে করি প্রত্যেকটি জেলায় রয়েছে তবে আরো অনেক কিছু তথ্য আমি আপনাদেরকে দিতে চাই যার জন্য আমার বেশ কয়েকটি পর্ব করতে হতে পারে। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ, আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: উত্তরের জনপদ নীলফামারী
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
এতো চমৎকার করে নীলফামারী জেলার বর্ণনা করেছ।যা পড়ে আমার কাছে এত বেশি ভাল লেগেছে, যে কি বলব। মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে আমার হৃদয়ে। আশা করি বাকি পর্বগুলো আরো বেশি প্রাণবন্ত হবে। আর বেশি মুগ্ধতা ছড়াবে।♥♥
চেস্টা করবো।
নীলফামারী জেলা আমার কাছে পরিচিতি কারন আমার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব ওখানকার ছিল। তবে দুঃখের বিষয় এখনো যেতে পারিনি। তবে তাদের মুখ থেকে নীলফামারীর অনেক সুনাম শুনেছি। বাবার চাকরির সুবাদে বেশ কিছু বছর উত্তরবঙ্গে ছিলাম। তাই ঐ দিককার মানুষ চিনি, বেশ শান্ত শিষ্ঠ এবং ভদ্র মনে হয় আমার কাছে।
ধন্যবাদ আপনাকে নিলফামারী জেলাকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য।
দাওয়াত রইলো, আসবেন কিন্তু।
আমি নীলফামারির ডোমারে একবার এবং সৈয়তপুর বেশ কয়েকবার গিয়েছি। বেশ শান্ত শহর। ঢাকার মতো কোলাহল নেই । নির্মল বাতাস । বেড়াতে বেশ ভাল লাগে। আপনার পোস্টের মাধ্যমে আরো নতুন কিছু তথ্য জানতে পারলাম। অনেক ধন্যবাদ বেশ কিছু তথ্যবহুল পোস্ট করার জন্য।
আমাদের শহর টি বেশ শান্ত। দাওয়াত রইলো।
নীলফামারী জেলা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম ভাইয়া। যেগুলো আগে জানা ছিল না। নীল চাষ থেকেই যে নীল খামারি কিংবা নীলফামারীর নামটি এসেছে এটা সত্যি অজানা ছিল। সত্যিই এই শান্তি প্রিয় শহর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। যেগুলো আগে জানা ছিল না। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে।
অনেক পুরুনো ইতিহাস আপু, আরো অনেক কিছু শেয়ার করা বাকি আছে।
ভাই আপনি আপনার নিজের জেলা নীলফামারীর অনেক সুন্দর বর্ণনা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। নীলফামারী তো অনেক উন্নত হয়েছে। হ্যাঁ সেখানে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। তামাকের পরিবর্তে এখন ধান আর গম বেশি চাষ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হয়েছে। শপিং মল দোকানপাট হয়েছে। আরো অনেক অনেক উন্নতি হয়েছে। এসব জেনে ভালোই লাগলো ভাইয়া।
জি আপু, আস্তে আস্তে উন্নত শহরে পরিনিত হচ্ছে।
আপনার এলাকা নীলফামারী নিয়ে সুন্দর বর্ননা করেছেন ভাইয়া। অনেক আগে থেকেই নাম জানা কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি। তবে ইচ্ছে আছে সৈয়দপুর যাওয়ার। ধন্যবাদ ভাইয়া অনেক অজানা বিষয় আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম।
সৈয়দপুর থেকে বেশি সময় লাগেনা আপু, ভাই সহ আসবেন একবার, দাওয়াত রইলো।
আপনার পোস্ট পড়ে নীলফামারী সম্পর্কে জানতে পারলাম। অনেক সুন্দর করে নীলফামারীর বর্ণনা করেছেন।আসলে ভাইয়া নীল চাষ থেকেই যে নীলফামারী এটা সত্যি দারুণ ছিল । এটা অনেক ভালো লেগেছে নীলফামারীতে ২০ হাজার দর্শক সমৃদ্ধ একটি স্টেডিয়াম রয়েছে।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নীলফামারী সম্পর্কে সুন্দর বর্ণনা দেওয়ার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আশাকরি এই শীতে বাড়তি যত্ন নিয়ে শীতটাকে খুব আনন্দে উপভোগ করছেন।
এটা সত্যি আপনার আজকের পোস্ট পড়ে অনেককিছু নীলফামারি সম্বন্ধে জানতে পারলাম, আগে এতকিছু জানতাম না।এখানে নীলের চাষ করা থেকে এই জায়গার নাম নীলফামারি হয়েছে এটাও বেশ ভাল লাগলো জেনে। আপনাদের এলাকা আগের চেয়েও অনেক উন্নত হচ্ছে। এখানে ২০ হাজার দর্শকসমৃদ্ধ একটি স্টেডিয়াম ও আছে।কোলাহল নেই,শান্ত স্নিগ্ধ শহর সত্যি ই দারুন। পড়ে খুব ভাল লাগলো আর জানতেও পারলাম অনেক কিছু। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেক অভিনন্দন আপনাকে।
আমাদের এই নীলফামারী সত্যিই অনেক শান্ত সৃষ্ট একটি জেলা।
সত্যিই খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার এই পোস্ট পড়ে আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে নীলফামারী জেলা সম্পর্কে অনেক ধারণা লাভ করলাম যেটা আগে জানতাম না। সব থেকে বেশি অবাক লেগেছে যে,
এই ব্যাপারটা আমি সত্যিই আগে জানতাম না আপনার এই প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে নিজ জেলা সম্পর্কে এত চমৎকার একটি বর্ণনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই বিষয়গুলো অনেকেই জানেনা তবে যারা নীলফামারীতে বসবাস করে তারাই শুধুমাত্র জানে।