টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্ব
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনার সবাই অনেক ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তালার অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি। আজ আমি আমার ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে আপনাদের সাথে বেসিক কিছু কথা শেয়ার করে নেব। আমি বর্তমানে বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছি এবং আমার প্রধানত পড়াই হচ্ছে টেক্সটাইল রিলেটেড। তো, এই টেক্সটাইল আমাদের ব্যক্তি জীবনে কি রকম প্রভাব ফেলে এবং এই টেক্সটাইলের গুরুত্ব আমাদের জীবনে
কতটুকু তা আলোচনা করার চেষ্টা করব।
একবার কল্পনা করে দেখুন তো, পৃথিবীতে যদি কোন কাপড় না থাকে তাহলে আমাদের অবস্থা কি হবে!!! মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে পোশাক অন্যতম। মৌলিক চাহিদার মধ্যে প্রথমে আসে খাদ্য এর পরবর্তীতেই আসে পোশাক। বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এর পরে। এর মানে আমরা এটাই বুঝতে পারছি মৌলিক চাহিদার মধ্যে পোশাক অন্যতম। পৃথিবী যতদিন টিকে আছে, যতদিন মানব সভ্যতা টিকে আছে পোশাক মানুষ পড়বেই। হোক একটু বড় বা একটু ছোট, কিন্তু পোশাকের বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। বর্তমানের বাংলাদেশের টোটাল রপ্তানি আয়ের প্রায় আশি শতাংশ বেশি এই পোশাক শিল্প থেকে আসে এবং এই পোশাক শিল্প বাংলাদেশের জন্য বিপ্লব হয়ে এসেছে।
পড়াশুনা করার জন্য অনেকগুলো সেক্টর রয়েছে। কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স এবং আরো বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং। তবে আপনারা এটা যেন অবাক হবেন বর্তমানে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাপকভাবে উন্নতি সাধন করেছে। প্রত্যেকটি সেক্টরেই প্রযুক্তিগত বিপ্লব ঘটেছে এবং বাংলাদেশের এখনো অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বেশি একটা লেবারের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র গার্মেন্টস সেক্টরে একটু বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন। কিন্তু বাদ বাকি যেগুলো সেক্টর রয়েছে যেমন সুতা তৈরি সেক্টর কিংবা, ডাইং সেক্টর এগুলোতে বেশিরভাগ মেশিন অটোমেটিক ভাবে কাজ করতে সক্ষম।
আপনারা অনেকেই ভাবতে পারেন, এই সামান্য প্যান্ট শার্ট কিংবা বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করতে কি এমন ইঞ্জিনিয়ারিং লাগতে পারে! কিন্তু আপনারা যদি কখনো এই বিষয়ে একটু বেসিক ধারণা নিতে যান তাহলেই বুঝতে পারবেন এই জ্ঞানের সমুদ্র কতটা গভীর।প্রথমত তুলা থেকে সুতা তৈরি করতে হয়। এবং এর একটি নির্দিষ্ট একক রয়েছে (কাউন্ট)। সেই পরিমাপেই সুক্ষতা নির্ধারণ করেই আমাদেরকে সুতা তৈরি করতে হয়। এর একটু ১৯-২০ হলেই পরবর্তী প্রসেসের জন্য সেই সুতাটা উপযুক্ত হবে না, বরঞ্চ কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে।
পরবর্তীতে দুই ভাবে প্রসেস করা যায়। ১, সুতা গুলোকে ডায়িং করে আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে পোশাক তৈরি করে তারপরে ডাইং কিংবা প্রিন্টিং করে। প্রত্যেকটি সেক্টরেই অনেক বড় বড় ক্যালকুলেশন রয়েছে। এবং একটু ছোট ভুলের কারণে হাজার হাজার মেট্রিক টন সুতা কিংবা কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বোঝার জন্য আরও ছোট্ট করে একটু বিষয় বলতে চাই। একটি কালারের আমরা কতগুলো সেড চিনি? কিন্তু টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে একটি কালারের এই দুই হাজারের বেশি সেড তৈরি করা সম্ভব। এই সেড মিলিয়েই আমাদের বিভিন্ন কালার তৈরি করতে হয়। যেমন একটিমাত্র কালার লাল, এই লালকেই আবার আমরা দুই হাজার ভাগে ভাগ করতে পারি। একটু কল্পনা করে দেখুন বিষয়টি।
এরপরও বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কাপড় কাটা থেকে শুরু করে কাপড় গুলোকে সেলাই করা এগুলো বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জিং মোকাবেলা করে এগোতে হয়। আমরা মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খাবার যেরকম প্রয়োজন, বাসা থেকে বের হতে গেলেও কিন্তু পোশাকের প্রয়োজন। পোশাক ছাড়া আমরা কোনভাবেই চলতে পারবো না, আমরা অচল হয়ে যাব। আপনারা জেনে অবাক হবেন শুধুমাত্র পোশাকের ইন্ডাস্ট্রিকেই যে টেক্সটাইল বলা হয় এমন কিন্তু নয়। পোশাকের বাহিরে ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক পরিসরে রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের অপটিক্যাল ফাইবার থেকে শুরু করে প্লেন এবং চাকার বেশ কিছু অংশ এই টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতেই তৈরি করা হয়। এছাড়াও আগামী পাঁচ দশ বছরের মধ্যে এমন কিছু টেক্সটাইলের পোশাক আপনারা দেখতে পারবেন যেগুলো হয়তো আপনারা কখনো কল্পনাই করতে পারেননি। বিষয়টা একটু বিস্তারিত বলার চেষ্টা করি। আপনারা যে আমার এই পোস্টটি পড়ছেন হয়তো মোবাইলেই কিংবা ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে দেখছেন। কম্পিউটারের ডিসপ্লে তে এটা শো হচ্ছে কিন্তু। এমন যদি কোন বিষয় হয় যে, আপনি যেই শার্টটি পড়ছেন সেই শার্টটা সম্পূর্ণ একটি ডিসপ্লের মত কাজ করছে, তাহলে কেমন হবে!!
টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এতটাই উন্নত করেছে একটি সুতার মধ্যেও নেগেটিভ এবং পজেটিভ চার্জ তারা প্রবাহ করতে সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই পরবর্তীতে শার্টের মধ্যেই ডিসপ্লে জাতীয় অনেক তো কিছু তৈরি করা সম্ভব এবং এটা বর্তমানে ট্রাইলে রয়েছে। টেক্সটাইল মানেই আমরা সুতা কিংবা কাপড় এগুলো নয় কিন্তু। এর বাইরেও টেক্সটাইলের বিরাট বড় সেক্টর রয়েছে। সেগুলো নিয়ে অন্য একদিন আপনাদের সাথে আলোচনা করে নেব। তবে আজকের এই পোস্টটিকে আমি শুধুমাত্র বোঝাতে চেয়েছি আমাদের এই টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আমাদের সকলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পোশাক ছাড়া কোন মানুষ চলতে পারে না, তাই এটাও বলতে পারি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া পৃথিবী অচল হয়ে যাবে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্ব
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
খুবই তথ্যবহ একটি ব্লগ শেয়ার করেছে আজ তুমি। কয়েক বছর আগে আমার মাথায় ভূত চেপে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করবার। তখনই নানান ধরনের বিষয়গুলো জানতে পেরেছিলাম কাপড় সংক্রান্ত। তো আমাদের একটা গ্রাউন্ড রিসার্চ ছিল সেখানে আমরা গিয়েছিলাম কিভাবে সুতো তৈরি হয় দেখতে। এই ফ্যাশন ইলাস্ট্রেশন গুলো দেখে নিজেরই পোর্টফোলিওর কথা মনে পড়ছে খুব।
আমার বাবা একটা কথা বলেন, সভ্যতা যতদিন থাকবে ওষুধ কাপড় আর খাবার এই তিনটে ততদিন থাকবে। বাকি সবটাই যাওয়া আসা করবে।
ঠিকই বলেছ, একটা কালারের প্রায় দু'হাজার শেড হয়, কালার শেডিং এবং কালার হুইল বানাতে গিয়ে দেখেছিলাম একটুখানি হিউ এদিক ওদিক হলেই শেড বদলে যায়। ব্রাশে অতি সামান্য কালার লেগে থাকলেই শেড বদলে যায়।
খুব ভালো পোস্ট হয়েছে। তথ্যবহুল।