ফেলে আসা সেই ৯০ দশক
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই অনেক ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে সেই ফেলে আসা ৯০ দশকের কিছু স্মৃতিচারণ করব। আশা করছি আপনাদের সাথেও এই স্মৃতিগুলো মিলে যাবে, তবে চলুন শুরু করি। ফেলে আসা ৯০ দশক ছিল এক অনন্য সুখময় সময়, যা আজও স্মৃতিতে গেঁথে আছে অনেকের। যারা ১৯৯০-২০০০ সালের মধ্যে জম্নগ্রহন করেছেন তারা খুব ভালো ভাবেই বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারবেন। সে সময়ে জীবন ছিল সহজ-সরল, সাধারণ, এবং প্রযুক্তির ছোয়া থেকে অনেকটাই মুক্ত। ৯০ দশকের প্রতিটি দিন যেন ছিল, এক অনাবিল আনন্দের উৎসব। একদিকে তখনকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জীবনযাত্রার মান যেমন ছিল বৈচিত্র্যময় ও এক সরল ও মানবিক ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ। আর বর্তমানে এমন একটি অবস্থার রয়েছে, আমরা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে কে রয়েছে তার নাম পর্যন্ত আমরা জানিনা। কিন্তু সে সময়ে আমাদের পুরো পাড়া-মহল্লা মিলেই ছিলাম একটি পরিবার।
৯০ দশকে পরিবার ছিল জীবনের কেন্দ্রবিন্দু যেখানে সবাই যৌথ পরিবারে বসবাস করতো। এখনকার মতো আলাদা থাকা তখন ছিল বিরল প্রায়। বিশেষ করে পরিবারবদ্ধ জীবনে প্রত্যেক সদস্যের অবদান ছিল অপরিসীম, দিন শেষে সন্ধ্যায় সবাই মিলে সাদা কালো টিভির সামনে বসে সিরিয়াল কিংবা নাটক দেখা, এবং রাতের খাবার সময়ের পারিবারিক আড্ডা ছিল সেই দশকের রুটিন। পরিবার এবং সমাজে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন স্পষ্ট ছিল। বড়দের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করা, এটা একদম স্বাভাবিকই একটি নিয়ম ছিল যা বর্তমানে খুব একটা বেশি চোখে পড়ে না।
তখন বিনোদনের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল সাদাকালো টেলিভিশন। আধুনিক ইন্টারনেটের যুগে Netflix, YouTube, Amazon কিংবা অন্যান্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থাকলেও, সেই সময়ের একমাত্র ভরসা ছিল সেই সাদা কালো টিভি। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। আমাদের এলাকায় মাত্র দুই তিনটা বাসায় টিভি ছিল এবং শুক্রবারে আমাদের বাসায় সকলেই ভিড় করতো, শুক্রবারের সিনেমা দেখার জন্য। এছারাও কার্টুন সিরিজগুলো শিশুদের জন্য ছিল এক বিশেষ উপহার। যেমন মিনা কার্টুন শিশুদের বিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল। এছাড়াও সিনবাদ, আলিবাবা চল্লিশ চোর এসব সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগৎ ৯০ এর দশকে ছিল স্বর্ণযুগের পথে।। রিয়াজ, সালমান শাহ, শাবনূর, মৌসুমী প্রভৃতি এক্টররা এসময় সিনেমা জগতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে ফেলেন। সালমান শাহ’র আকস্মিক মৃত্যু সেই দশকের শেষের দিকে পুরো জাতিকে স্তম্ভিত করে দেয়। এই কথাটা হয়তো আপনাদের সকলেরই মনে রয়েছে।
আগে একটা সময় ছিল যেই সময়টাতে বিকেল হলেই খেলার জন্য ছুটে যেতাম কিন্তু এখন মনে হয় এক আলোকবর্ষ পর্যন্ত আমি বিকেলে খেলাধুলা করিনি। তখনকার সময় বিকেল মানেই পাড়ার সকল ছেলেমেয়েরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করা। আমরা আবার ঋতু অনুযায়ী খেলাধুলা করতাম। তখন গোল্লাছুট, লাটিম ঘোড়ানো, হা ডু ডু এছাড়াও লুকোচুরি খেলা এগুলো ব্যাপক পরিমাণে জনপ্রিয় ছিল। আবার ৯০ দশকের শেষের দিকেই ক্রিকেট খেলাটিও আমাদের এলাকায় শুরু হয়ে যায়
আগে কিন্তু সব জায়গায় পোস্ট অফিসের ব্যাপক প্রচলন ছিল। কোন কিছু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো কিংবা তথ্য সরবরাহ করার জন্য একমাত্র মাধ্যম ছিল পোস্ট অফিস। কিন্তু ৯০ দশকের পরেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথেই কিন্তু প্রযুক্তি একটু উন্নতি হয়। তবে এখনকার মতো যে মোবাইলে একটা মেসেজ দিলেই চলে যেত বিষয়টা ঠিক তেমনও ছিল না। তখনকার আমলে যাদের বাসায় রেডিও এবং টেলিভিশন ছিল সেটাই অনেকটা বড় বলে মনে করা হতো। এছাড়াও ৯০ দশকের শেষের দিকে যখন ইন্টারনেটের ব্যবহার ও মোবাইল প্রযুক্তি আসা শুরু করল তখন একটা বিপ্লব ঘটল যার বর্তমানে আমরা সেটারই সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছি।
তবে আমাদের সময়ে আমরা শিক্ষা জীবনে প্রচুর আনন্দ করেছি, পড়াশোনা করেছি। তখনকার আমলে আমরা টিচারদের কে প্রচুর ভয় পেতাম। প্রতিদিন হোমওয়ার্ক করা, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া স্কুল শেষে বাসায় এসে বিকেলে সবার সাথে খেলাধুলা করা এবং সন্ধ্যার আগে বাসা ফেরা। এগুলো ছিল তখনকার সময়ে একটি ফিক্সড রুটিন এবং রাতের বেলা নয়টার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়া। এটাই ছিল তখনকার আমলে সব বাচ্চাদের একটি নির্দিষ্ট রুটিন। কিন্তু বর্তমানের বাচ্চাকাচ্চারা মা-বাবাকে ভয় পায় না বললেই চলে, উল্টো মা-বাবাকে মারতে চলে আসে।
সেগুলো হয়তো আজকালকার প্রজন্মের বাচ্চা-কাচ্চারা কখনো কল্পনাও করতে পারবে না, যে ৯০ দশক কেমন ছিলো। হ্যাঁ, এটা মানছি তখন প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। তবে তখন মানুষের মধ্যে একটা আন্তরিকতা ছিল ভালোবাসা ছিল এবং সবাই একে অপরকে শ্রদ্ধা এবং স্নেহ করতো। কিন্তু সেই বিষয়গুলো বর্তমানে এই সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে, ৯০ দশককে পেছনে ফেলে এখনকার জীবনযাত্রায় প্রবেশ করলেও, সেই সময়ের স্মৃতিগুলো আজও প্রানোবন্ত। বন্ধুদের সাথে লুকোচুরি খেলা, বাইসাইকেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া, পাড়ার মাঠে ক্রিকেট খেলা এসব কিছুই যেন আজকের প্রযুক্তির মাঝে কোথাও হারিয়ে গেছে। ৯০ দশকের মানুষের জীবন ছিল যতটা সরল, ততটাই আনন্দময়। মানুষে মানুষে ভালোবাসা, আন্তরিকতা, আর বিনোদনের সহজলভ্য মাধ্যমগুলোই সেই যুগকে করে তুলেছিল এক পরম সুখের সময় যা এখন অনেক মিস করি।
ফেলে আসা ৯০ দশক আজকের প্রজন্মের জন্য অনেকটাই অজানা, কিন্তু যারা সেই সময়কে অনুভব করেছেন, তাদের কাছে এটা এক সোনালী যুগ হিসেবে গেথে থাকবে তার মনে। আজকের মত এখানেই শেষ করছি আপনারা সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: ফেলে আসা সেই ৯০ দশক
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
ভীষণ সুন্দরভাবে ৯০ দশকের সময় কালটা ব্যাখ্যা করলে সিয়াম। আমি যদিও তার আর একটু আগের জেনারেশন। কিন্তু ৯০ এর দশকে আমি স্কুল ছাত্র। তাই সেই সময়ের স্মৃতিচারণ ভীষণ ভালো লাগলো এবং মন ছুঁয়ে গেল। আমাদের এদিকে সেই সময়টা সিনেমাতে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার সময়। হিন্দিতে তখন শাহরুখ খান সালমান খান রাজ করছে। সেই সময়ের গানগুলো আজও অমর হয়ে রয়েছে। এই ধরনের স্মৃতিচারণ আমাকে যেন শৈশবে ফিরিয়ে দিল আবার। অনেক ধন্যবাদ তোমায় এমন সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
ঠিক বলেছেন, সময়টা অনেক মধুর ছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম শৈশব এর মধুর স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এই পোষ্টের মধ্যে দিয়ে। এমন একটা সময় ছিল যখন শুক্রবার শনিবারে সিনেমা দেখার জন্য বাড়িতে মানুষ ভিড় করতো। সারাদিন কত রকমের খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতাম। একটা খেলার পর আর একটা একটা ভালো না লাগলে আরেকটা খেলা নিয়ে আমরা বন্ধুরা মেতে উঠ। আবার গোসল করার সময় পুকুরে লাফ দিয়ে বিভিন্ন রকমের খেলা খেলতাম। কিন্তু এখন সেই সমস্ত খেলা গুলো আর চোখে দেখা যায় না, বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েরা মোবাইলে ইন্টারনেটের মধ্যেই মূল্যবান সময় নষ্ট করছে, এমনকি সুন্দর সুন্দর খেলা গুলো উপভোগ করতে পারছে না। তবে মনে করি আমাদের সময়টা বেস্ট ছিল।
সত্যি দিন গুলো অনেক মধুর ছিলো। আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম।
৯০ দশকের ব্যাপার টা বতর্মান জেনারেশন কখনোই বুঝবে না। তখন আমাদের এসব ওটিটি ছিল না। আমাদের ছিল শুক্রবারের দুপুর এবং বিটিভি। আমরা যেভাবে উপভোগ করেছি এরা তার কিছুই পারবে না। এদের দুনিয়া ঘর ইন্টারনেট এগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
এই সব তাদের কাছে অবাস্তব বলে মনে হয়।
আমরা ছোটবেলায় বিভিন্ন ভাবে আনন্দ উপভোগ করতাম আর সেই শৈশবের স্মৃতিগুলো আমাদের কাছে মধুর। এখনকার ছেলেরা যে সমস্ত সময় অতিবাহিত করছে এমন মধুর স্মৃতি কিন্তু তারা পাবে না। কারণ আমাদের সময় প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করেছি খেলাধুলা উপভোগ করেছি এখন সেই প্রাকৃতিক পরিবেশটাই যেন তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। তাই আমাদের জেনারেশন টা সত্যি সোনালী অধ্যায় পার করেছে ৯০ দশকে।
হ্যা, তখন পরিবেশ ও অনেক সুন্দর ছিলো।
ভাই ৯০ দশকের দিনগুলো ছিলো জীবনের সেরা সময়। তখন বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম এবং সত্যিই অনেক আনন্দ করতাম। মীনা কার্টুন,সিনবাদ, রবিনহুড, হারকিউলিস, আলিফ লায়লা দেখার জন্য ভীষণ এক্সাইটেড থাকতাম। সালমান শাহ যখন মারা গেলো,তখন অনেক মেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। পোস্টটি পড়ে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গিয়েছে ভাই। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আগেরকার দিনের কথা গুলো মনে পড়লে কেমন জানি মনের মধ্যে আলাদা রকম শান্তি কাজ করে।যারা ২০০০ সনের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছে, তারাই বুঝবে নব্বই দশকের সোনালী অতীত গুলো। আসলে তখন আমরা সকলেই একত্রিত হয়ে বসবাস করতাম। তখন ছিল না কোন ধরনের দ্বন্দ্ব।আজ কালের শিশুরা এদিক থেকে অনেক টা পিছিয়ে রয়েছে।