আমার জীবনের ছোট্ট একটি অধ্যায় (পর্ব ১) [10% ʙᴇɴᴇғɪᴄɪᴀʀɪᴇs ғᴏʀ @sʜʏ-ғᴏx🦊]

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago
আমার জীবনের ছোট্ট একটি অধ্যায় (পর্ব ১)

আমার জীবনের ছোট্ট একটি অধ্যায় (পর্ব ১).png

Create by Canva Pro

siam,.png

প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব কিছু গল্প থাকে, নিজস্ব কিছু কষ্ট, বেদনা, হাসি, কান্না সবকিছু মিলিয়ে একটি জীবন গঠিত হয়। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনের একটি গল্প বলবো।

গল্পটা ২০১৫ সালের। যখন আমি প্রথম ঢাকায় পদার্পণ করি। তখন একটি পলিটেকনিকে আমার ভর্তি নিশ্চিত করা হয় এবং সেখানেই পড়ার জন্য আমি নীলফামারী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ঢাকায় আসার পরেই একটি হোস্টেলে উঠি। আমি কখনো নিজের মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন এর থেকে দূরে থাকে নি। তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়েছে একা থাকার। যাইহোক প্রথম কিছুদিন ভালো লাগছিল সবকিছু খুব সুন্দর লাগছিল কিন্তু হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম ফ্যামিলি প্রবলেম চলছে। একটি সত্যি ঘটনা অনেক পরে জানতে পারি আমাকে পড়ানোর জন্য মায়ের গলার হার বিক্রি করেছিল। বিষয়টা অনেক কষ্ট পেলাম, যখন প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হবে তখন আমি এই বিষয়টা জানতে পারি। পরীক্ষা দেওয়ার পরে আমি বাসায় না গিয়ে ঢাকায় পার্ট টাইম জব খুজতে থাকলাম।

book-794978.jpg

Image Source

siam,.png

আসলে মধ্যবিত্তদের পরিবার অনেকটা কষ্টে থাকে, হয়তো বাইরে থেকেই অনেকেই বুঝতে পারেনা তবে মধ্যবিত্তরা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না তাই দূর থেকে অনেক হাসিখুশি মনে হয়। যাইহোক অনেক খোঁজার পরে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি তে আমি একটি স্টাফ এর চাকরি পেয়েছিলাম। বুঝেই গেছেন সবচেয়ে নিম্ন ক্লাসে চাকরিটি হয়ে থাকে। এসব বলতে আমার একটুও বিন্দুমাত্র লজ্জা করছে না কারণ আমি যেসব বিষয়ে ফেস করেছি সেসব বিষয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আর জীবনে অনেক কষ্ট করেছে কিন্তু সেগুলো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমি যে জায়গা থেকে এসেছি সেটা সত্যি অনেক কষ্টের একটি জায়গা। সেখানে চাকরি কনফার্ম হওয়ার পরে অনেক ছোটখাটো কাজ করতাম এবং সেখানে বেতনের কথা না বললে হয়তো ভালো তবে এমন একটা বেতন দিত যেখানে ঢাকায় থাকা খাওয়ার পরে, কলেজের বেতন দেওয়ার পরে আমার হাতে তা কিছুই থাকত না।

আর যদি সেখানে ডিউটির কথা বলি তাহলে আমাকে ক্লাস করার জন্য শুধুমাত্র ৪ ঘন্টা সময় দিতো। সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সেখানে আমাকে ডিউটি করতে হতো তা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। এভাবেই প্রায় একটি বছর চলে যায়। আমি ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি একটু এক্সপার্ট ছিলাম এবং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার যখন কোন সমস্যা হয় তখন আমি কাজের কারণে আমি মাঝেমাঝে ঠিক করতে পারতাম। এই বিষয়গুলো আমাদের এই এইচ আর স্যার লক্ষ করলেন এবং আমাকে একদিন ডেকে বললেন, তুমি কাজ গুলো কিভাবে জানো? তিনি জানতেন না আমি এখানে পড়াশোনা করতাম পাশাপাশি আমি সব কিছু ঘটনা খুলে বললাম তিনি আমাকে একটি কম্পিউটার ল্যাব এর দায়িত্ব দিলেন। যেখানে প্রায় ৫০ কম্পিউটার রয়েছে এবং আমার প্রাথমিক কাজ হল সেই কম্পিউটারগুলোকে দেখাশোনা করা এবং কম্পিউটারের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যারজনিত কোন সমস্যা থাকলে সেগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে নিজে ঠিক করার চেষ্টা করা এবং নিজে ঠিক করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে আমাদের আইটি সেক্টরে জানান দেওয়া।

guy-2617866.jpg

Image Source

siam,.png

এর মাঝে কিছু কথা না বললেই নয়, রাত ১০ টা প্রযন্ত ডিউটি করে বাসায় গিয়ে রান্না করতে হতো, আমার কলেজের পড়াশোনা ছিল সবমিলিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুটো বেজে যেত এবং পরের দিন আবার সকাল আটটায় আমাকে জয়েন করতে হতো। সেখানে নিয়ম এমন ছিল এমন, তিনদিন আটটার পরে জয়েন করলে, সে ক্ষেত্রে এক দিনের স্যালারি আমি কেটে রাখা হতো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম এ রকম হয়ে থাকে আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন। আমি সপ্তাহে কোনো ছুটি নিতাম না, একদিন করে ছুটি দিতে সেটাও নিতাম না কারণ পরবর্তীতে ছুটি পাওয়ার জন্য সেই ছুটিগুলো আমি রেখে দিতাম। পরবর্তী দুই মাসের ছুটি একবারে একসাথে করে আমি বাসায় গিয়ে ৪-৫ দিন থেকে আসতাম। ডিপ্লোমা লাইফের চারটা বছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি তা আমি ভালো জানি। এই ৪ বছরে খুব বেশি দিন ছুটি নিয়েছি বলে মনে হয়না। বছরে সর্বোচ্চ গেলে ১৮ থেকে ২০ দিন আমি ছুটি কাটিয়েছি। বিষয়গুলো চিন্তায় এখন আমার অনেক খারাপ লাগে আবার মাঝে মাঝে নিজের প্রতি গর্ব হয়। এটা বলছি না যে আমার সামর্থ ছিলনা। আমার পরিবারের সামর্থ্য ছিল বিধায় সেখানে আমাকে ভর্তি করেছিল কিন্তু আমি চেয়েছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়ানো, বাস্তবতা টাকে একটু বোঝার জন্য, একা চলা এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো যে কতটা কষ্ট হয় সেটা অনুভব করতে চেয়েছিলাম। অনেকটা অনুভব করতে পেরেছি কিন্তু জানিনা কার মনে কতটা রক্ষা করতে পেরেছে। আমি সবসময় চেয়েছি আমার পরিবার এবং আমি যেন সুখে থাকি এর জন্য আমাকে যা করা লাগে সেটাই আমি করার চেষ্টা করেছি কিন্তু জানি না কেন তারপরও কারো মন পাই না। সবাই সবার মত কথা বলা যায়।

আমার সেই দিনগুলোর কথা এখনো মনে পরে, যখন কলেজ শেষ করে সবাই একটু আড্ডা দিতে যায়, আমাকে তখন একটি দৌড় দিতে হয়। অফিসে খুব তাড়াতাড়ি যেন যেতে পারি, লেট হলে আবার সমস্যা হবে। সবাই আড্ডা দেয় আর আমি ডিউটি করি। বিষয়টা সত্যিই আমার কাছে অনেক খারাপ লাগতো তারপরও আড্ডা দেইনি তেমনটা না আমিও মাঝে মাঝে আড্ডা দিতাম বন্ধু বান্ধবের সাথে।

সেই ডিপ্লোমা লাইফের অনেক গল্প রয়েছে, সেগুলো না হয় পরবর্তী পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আজকের মতো এই পর্যন্তই।



Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

photo_2021-06-28_11-13-39.jpg

আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



বিষয়: আমার জীবনের ছোট্ট একটি অধ্যায় (পর্ব ১)

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.........

Sort:  
 3 years ago 

আপনার জীবনের ছোট্ট অধ্যায়টি পরে খুব খারাপ লাগলো। তারপরেও আমি বলবো যা হয়েছে ভালো হয়েছে হয়তো এই দিন গুলো থেকেই আপনি আপনার জীবনের অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। আর মা সবসময় সবার উপরে, মায়ের ত্যাগ এর কথা কখনো বলে শেষ করা যাবে না। উনি উনার নিজের গলার হার বিক্রি করে আপনাকে পাঠিয়েছে কিন্তু সন্তান তা জানে না। প্রতিটি মা এই এমন। সন্তানের সুখের জন্য সব কিছুই করতে পারে। আর আমি মনে করি কোনো কাজকেই ছোট ভাবে দেখতে নেই। আপনি যেখানেই যে ভাবেই কাজ করেন না কেন সেই জায়গা থেকে আপনার যোগ্যতা আপনাকে টেনে উপরে নিয়ে যাবে।

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু যোগ্যতা থাকলে এই যোগ্যতার কারণে সেই কাজে অগ্রগতি করা সম্ভব। আসলে আপু দিনশেষে কিছু বলার নেই সব কিছুই তো আপনারা জানেন তারপর আমি সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সবসময় হ্যাপি রাখার জন্য।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনার জীবনের এই অধ্যায়টি ছিল অনেক কঠিন একটি অধ্যায় যা প্রতিটি মানুষের জীবনে থাকে , কেউ এই অধ্যায় কে ভালো করে জয় করতে পারে কেউ পারে না। আর আপনি সেই অধ্যায়ের একজন জয়ী যোদ্ধা। আসলে জীবনে যুদ্ধো করে না চল্লে জীবনের মানেই বোঝা যায় না। আমরা জীবনের মানে কে যদি বুঝতে চাই তাহলে আমাদেরকে প্রথমত বুঝতে হবে কষ্ট, আর যে জীবনে কষ্ট থাকে না সে জীবনের মানে হয় না। আপনি আজ কষ্ট করেছেন বলেই সুখকে একটু অনুভব করতে পারছেন আর দোয়া করি সামনের দিন গুলি আপনার জন্য আরো সুখের হোক এই শুভকামনা এবং ভালোবাসা রইল

 3 years ago 

আপনার পোষ্টটি পড়ে এক অন্যরকম সিয়াম ভাই কে আবিস্কার করলাম যে ভীষণ আত্মনির্ভরশীল, পরিশ্রমি আর লক্ষ্য অর্জনে একাগ্র। আপনার মায়ের গণনা বিক্রির কথা শুনে আপনি যে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছিলেন স্বনির্ভর হওয়ার জন্য তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এত কঠোর পরিশ্রম করেও আপনি যে আপনার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছেন আর এভাবে চারটি বছর অতিবাহিত করেছেন এ থেকেই বোঝা যায় আপনার একাগ্রতা কতটুকু ছিল। দোয়া করি এভাবেই এগিয়ে যান। সফলতা আপনার কাছ থেকে বেশি দিন দূরে থাকতে পারবে না

 3 years ago 

আরো অনেক গল্প আছে ভাই যেগুলো এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করে নি, তবে আস্তে আস্তে সব কিছু শেয়ার করবো। কারো জীবনটা সুখের নয় অনেক কষ্ট করে এই প্রযন্ত এসেছি। সবটাই গল্প আমি আস্তে আস্তে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব, ধন্যবাদ আপনাকে।।

 3 years ago 

অপেক্ষায় রইলাম

 3 years ago 

সত্যি বলতে গেলে আপনার জীবনের গল্প অনেক কিছু আমার সাথে মিলে যায়।
এজন্য হয়তো আমরা কারো কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। আমার জীবনে এমন কিছু কষ্টের কাহিনী রয়েছে কি আর বলবো। যদি কখনও সুযোগ হয় অবশ্যই বলবো। তবে সত্যিই আপনার পলিটেকনিক লাইফের গল্পটা পড়ে ভীষণ আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলাম। সবথেকে বড় বিষয় আপনি কষ্টগুলো খুব কাছে থেকে দেখেছেন এবং নিজেকে তৈরি করেছেন একটু একটু করে। এই শিক্ষা আর পরিশ্রম আপনাকে বহুদূর নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
আর পরিবার ভুল বুঝবেই কারন আপনি তো আর ওদের আয়না না। যদি আয়না হতেন তাহলে তারা তাদের মতো করে দেখতো আপনাকে। কষ্ট পাবেন না মনে রাখবেন আপনি চাইলে পাথরেও ফুল ফোটাতে পারেন ✨
দোয়া অবিরাম 💚

 3 years ago 

আপনার স্টরি গুলো পড়তে চাই ভাই, খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো পাবলিস্ট করেন। দিন শেষে কি আর বলব কষ্ট গুলো কারো সাথে শেয়ার করা যায় না। কেন জানি মনে হল পোস্ট করে আপনাদের সাথে শেয়ার করি তাই এই গল্পগুলো পোস্ট করা।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.031
BTC 81242.61
ETH 3198.79
USDT 1.00
SBD 2.79