জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর বিরূপ প্রভাব || 10% Beneficiaries @shy-fox

বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তার সাথে সাথে আমাদের এই পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ও খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন থেকে যদি আমরা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তাহলে এই পৃথিবীতে আমাদের বসবাস করা অনেক কঠিন হয়ে উঠবে। আমাদের এই প্রকৃতির যে কী বেহাল দশা হয়েছে তা প্রকৃতি খুব সহজে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে কিন্তু আমরা মানুষেরা কি সেগুলো বুঝতে পারছি?? নাকি বুঝেও বুঝতে চাচ্ছিনা!!! আজ আমি জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাবে কিরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদের এই পৃথিবীতে হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলব, আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

Image Source

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি এবছর যেরূপ দেখিয়েছে, সেরূপ অন্য কখনো দেখায়নি। পৃথিবীর সব অঞ্চলেই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে, এ বছর আপনি যদি শুরু থেকে দেখেন, শুরুর দিকে বন্যা, দাবানল তারপরে খরা এখন আবার বিশ্ব উষ্ণায়নের দিক থেকে অনেক রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে গত বছরগুলো থেকে। অনেকেই বলতে পারেন এ বছরে করোনাকালীন সময়ে বছরের বেশিরভাগ সময় কিন্তু অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল কিন্তু তারপরও একটি জরিপে দেখা গেছে এই বছরের উষ্ণতার হার অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। একটা বিষয় লক্ষ করে দেখবেন গত বছরগুলোতে বনাঞ্চলের সংখ্যা বেশি ছিল কিন্তু তার তুলনায় এবছর বনাঞ্চলের পরিমাণ অনেক কম। যুগে যুগে মানুষ এই বনাঞ্চল কেটে কেটে অনেক বনাঞ্চল শেষ করে দিয়েছে, তাই পরিবেশ তার আসল রূপ এখন দেখাচ্ছে, যার কারণে অনেক দাবানল সৃষ্টির কারণে প্রকৃতিগতভাবে অনেক বনাঞ্চল নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

Image Source

অনেক বিজ্ঞানীরা বলেছেন বর্তমানে যেরকম তাপদাহ চলছে তা এক হাজার বছরে একবার হওয়ার কথা কিন্তু সেটি বছরের পর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পুরনো সব রেকর্ড গুলো কে ভেঙে দিচ্ছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার। মুখ্য কারণ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চল গুলো আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যেসব বনাঞ্চল রয়েছে সেগুলো কে যদি সংরক্ষণ করা না হয় অদূর ভবিষ্যতে আমাদের পরিবেশ আরও মারাত্মক অবস্থানে চলে যেতে পারে এটা অনেক বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। বর্তমানে বিশ্বের যত মানুষ রয়েছে তার তুলনায় গাছপালার পরিমাণ অনেক কম, তাই গাছপালাগুলো সব মানুষের কার্বন ডাই অক্সাইড কে অক্সিজেনের রূপান্তরিত করতে পারছে না। তাই আমাদের পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমাদের পরিবেশের উষ্ণতা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

Image Source

উষ্ণতা বাড়ার ফলে আমাদের মেরু অঞ্চলে যেসব বরফ রয়েছে সেগুলোর উষ্ণতা গত ২০ বছরে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে অনেক বরফ গলে সমুদ্রের উপরে উঠে আসছে তার জন্য নিচু এলাকাগুলো বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। বছরেই জার্মানি, চীন এবং ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো অনেক ভয়াবহ বন্যার মুখে পরেছিল। হাজার হাজার মানুষ দের বসতবাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে, বন্যার সময় দেখা দেয় মারাত্মক পানিবাহিত রোগ এবং বিশুদ্ধ পানির প্রচুর অভাব। বন্যা কবলিত অঞ্চলে সাহায্য পৌঁছানো খুবই দুস্কর একটি বিষয় হয়ে ওঠে এবং প্রত্যেকটি মানুষের খাবার নিশ্চিতকরণ ও একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা, তার সাথে রাষ্ট্রের ক্ষতি তো আছেই।

Image Source

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধুমাত্র দাবানল, তাপদাহ এবং বন্যার সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু নয় এছাড়াও আরও অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন: সাইক্লোন, টর্নেডো, ভূমিকম্প এগুলোরও সংখ্যা অনেক বেরেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আরো কতকিছু যে হচ্ছে এটা এভাবে বলে শেষ করা সম্ভব নয় তবে আমাদের সকল সকলকে সচেতন হতে হবে এবং আমাদের এই পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতে। আমরা যদি এই পরিবেশ রক্ষার জন্য এখন থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে এই পৃথিবীতে মানব সমাজ বেঁচে থাকাটাই অনেক দুষ্কর একটি বিষয় হয়ে উঠবে।

Image Source

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় করণীয়

---

• আমাদের এই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর প্রয়োজন। এমন একটি সিস্টেম করলে কেমন হতো, ধরেন আপনি সারাদিনে যতটুকু অক্সিজেন ব্যবহার করেন ততটুকু অক্সিজেন নিঃসরন সমতুল্য আপনি একটি বা দুটি গাছ রোপন করে দিলেন। তাহলে হবে কি ,, পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অক্সিজেনের নিঃসরন ও গ্রহনের পরিমাণ সমান থাকবে। তাহলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য তা আবার আগের মত ফিরে আসবে।

• কল কারখানা থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ বিষাক্ত গ্যাস আমাদের এই পরিবেশে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে এবং পরিবেশ উত্তপ্ত করে তোলে, এই দিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

• প্রতিবছর যে পরিমান কার্বন নিঃসরণ হয় তার 8 শতাংশ আসে খাবারের অপচয় থেকে, শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্য। আরও অবাক হবেন, পৃথিবীতে প্রতিদিন ১৩০ কোটি টন খাবার অপচয় হয়। অপচয় কৃত খাবার থেকেই পরিবেশে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। আমরা মানুষরা বড়ই অদ্ভুত যেখানে প্রতিদিন ৮১ কোটি মানুষ না খেয়ে বিছানায় ঘুমাতে যায়, সেখানে ২০০ কোটি মানুষ বেশি খাবার গ্রহণ করে। আমাদের সকলকে খাবার অপচয় থেকে বিরত থাকতে হবে।

Image Source

আমি যতটুকু সম্ভব পোস্টটি ছোট করার চেষ্টা করেছি কারণ আমি জানি অতিরিক্ত বড় পোস্ট কেউ পড়তে চায় না এবং কারও পক্ষে এত সময়ও নেই তারপরও আমি চেষ্টা করেছি যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। আপনাদের ভাল লাগলে অবশ্যই মন্তব্যে জানাবেন, ধন্যবাদ।