মানুষ কি করে এতটা নিষ্ঠুর এবং পাষাণ হতে পারে। আমাদের জীবনে কি আসলে টাকা পয়সা টাই সবকিছু? ধন সম্পদের জন্য মানুষ আরও কতটা নিচে নামবে তা আমার জানা নাই। আচ্ছা মানুষের সম্পর্ক কি শুধুই টাকা কেন্দ্রিক? যার যত টাকা আছে তার আপনজন ততবেশি এই চিন্তাটা কতটাই বা বাস্তবিক। এই কথাগুলো আমার মাথায় বারবার ঘুরপাক খায়। কখনোই আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলাতে পারিনি। জানিনা কেউ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে কিনা বা কারো এমন প্রশ্নের উত্তর জানা আছে কিনা।

উপরের কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমি গতকাল ফেসবুকে ঢোকার পর একটা নিউজ আমার চোখের সামনে চলে আসে। এবং সেই নিউজটা কোন ফেক নিউজ ছিল না সেটা একটা টিভি চ্যানেলের পেজ থেকে আমি দেখেছিলাম। সেই নিউজটা এমন ছিল যে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মারা যাবার পর তার আত্মীয়স্বজন ছেলে সন্তান এবং তার সহধর্মিণী কেউই তার লাস টি নিতে আসেনি। আর এই লাস টি না নেবার পেছনে কারণ ছিল লোভ এবং লালসা। লোভ মানুষকে ধ্বংস করে দেয় লালসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়।

তো সেই ভদ্রলোক ছিল একজন ব্যাংক কর্মকর্তা তার জীবনে সফলতার কোন কমতি ছিল না। শহরের বুকে তার একটি পাঁচতলা বাড়ি ছিল এবং গ্রামে তার একটি দুই তলা বাড়ি ছিল। দুনিয়ার বুকে অর্জন হিসেবে যা অনেক। তারপরও জীবনের শেষ বেলায় তার পাশে কেউ ছিল না আপন বলতে তার কেউ ছিলনা। এজন্য একটা কথা আমাদের মাথার মধ্যে খুব ভালো ভাবে সেট করে নিতে হবে আসলে আমরা এই দুনিয়াতে এসেছে একা এবং আমাদেরকে যেতে হবে একাই। এজন্যই আমরা একটু মানুষকে সহানুভূতি দেখাবো মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে চলার চেষ্টা করব মানুষের ভালোবাসা অর্জন করার চেষ্টা করব। তাহলে আমরা ভালো থাকতে পারবো।

সেই ভদ্রলোক টি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে সন্তান রা তার অর্জিত সম্পদ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে এই ঝামেলাটা প্রকট আকার ধারণ করে। তাদের মাথায় এটা কাজ করে না যে তাদের বাবারা লাশ হাসপাতালে মর্গে আছে। তারা শুধু তার বাবার অর্জিত অর্থের মোহে অন্ধ হয়ে গেছিল। তারা অর্থের মহা এতটাই অন্ধ হয়ে গেছিল যে বাবার লাশটিও শেষ পর্যন্ত কেউ নিতে গেল না। এবং দুঃখের ইতিহাস কিভাবে লিখব তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এমন মানুষ পৃথিবীতে আজও আছে এরা মানুষ না-মানুষ নামের নরপিশাচ।

একজন বাবা তার সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে তার সন্তানদের কত আদর স্নেহ ভালোবাসা মায়া মমতায় বড় করে তোলে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরেই হয়ে যদি তার প্রতি অন্যায় অবিচার তাহলে প্রশ্ন আমার মানুষ কি করতে পেরেছে তার এই সন্তানদের তার বাবা? কী এমন ছিল না সেই ভদ্রলোকের টাকা পয়সা ধন সম্পদ সব কিছু অর্জন করেছিল এবং সবটাই ছিল তার সন্তানদের জন্য। কিন্তু দিনশেষে ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তার দাফন টুকু তার সন্তানরা করতে আসেনি। এবং ব্যর্থতার কথা কজন কেইবা বলে বোঝানো যাবে এটিতে সত্যিই অনেক মর্মাহত একটি যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা।

এই জীবনটা আসলেই অল খুব অল্পসময়ের জন্য। আমরা খুব অল্পসময়ের জন্য দুনিয়াতে এসেছি, তাই দুনিয়ার মায়ায় অন্ধ না হয়ে পরকালের জন্য আমরা কিছু করি। এ দুনিয়ার মোহ আমাদের পরকালের কথা ভুলিয়ে দেয় তাই চেষ্টা করতে হবে আমাদের দুনিয়ার মোহ থেকে বের হয়ে আসতে। আমার কাছে মনে হয় এ দুনিয়াটা শুধুই একটা ধোকা। তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে এই ভদ্রলোক। কি ছিল না তার তার পরেও তার সন্তানরা তার দাফোন করল না। শেষ পর্যন্ত এত কিছু অর্জন করার পরও বাড়ি-গাড়ি থাকার পরও তার লাশ টুকু দাফোন করেছিল তার গ্রামের লোকজন চাঁদা তুলে, আফসোস।

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আসলে আমি খুবই সাধারন নগণ্য একজন মানুষ। সবাই ভাল থাকবেন এবং সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।