গ্রামে থাকার শান্তি টাই অন্যরকম। গ্রামে থাকার অনুভূতিটা আসলে বলে বুঝাবার মত নয়। গ্রামের প্রকৃতির মতো গ্রামের মানুষজন অনেক সহজ সরল সতেজ মনের অধিকারী হয়ে থাকে। যতদিন গ্রামে থাকি মনের মাঝে অন্যরকম এক আনন্দ বিরাজ করে। যতই দুঃখ বেদনা মনের মাঝে জমা থাকুক না কেন, গ্রামের সহজ সরল মনের মানুষের সাথে কথা বললেই যেন মন ভালো হয়ে যায়। গ্রামের প্রকৃতি মন ভালো করার এক আনন্দ অসাধারণ মাধ্যম। এক কথায় গ্রাম হচ্ছে ভালোলাগার এক অনন্য প্রতীক। শহরের অনেক কোলাহল এর মাঝে দিন কাটানো মানুষগুলো গ্রামের গিয়ে এক তৃপ্তির নিশ্বাস ছেড়ে প্রাণ খুলে বাচতে পারে।

আমার মনে হয় শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের বসবাসকারী মানুষ অনেক গুণে সুখী। শহরের মানুষের মধ্যে আলাদা ধরনের একটি স্মার্টনেস হয়তোবা আছে। তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ হয়তোবা গ্রামের মানুষের থেকে অনেক উন্নত। কিন্তু আমার মনে হয় গ্রামের মানুষের তুলনায় তারা অধিক গুনে কম সুখী। শহরের মানুষ সব সময় যেন এক রোবটের মতো জীবন যাপন করে। কিন্তু গ্রামের মানুষের এক মুক্ত স্বাধীন পাখির মত জীবন ধারণ করে। তারা দলবদ্ধভাবে কাজের মধ্যেই তাদের আনন্দটা খুঁজে নেয়। গ্রামের মানুষ চার দেয়ালে বন্দি না থেকে মাঠে প্রকৃতির সাথে তাদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়ে মনের আনন্দে কাজ করে যায়।

ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন এটি বেশ কয়েকদিন আগের তোলা। আমি পরিবারের ছোট সন্তান, ছোট সন্তান হলেও আমার অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় আমার পরিবারের জন্য। কয়েকদিন পূর্বে আমার বাড়ি থেকে ফোন আসলো এবং আমার মা আমাকে জানালে আমি যেন বাড়িতে আসি। জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে হবে তার জন্য কিছু থেকে শুরু করে জমি চাষ করা আরো অন্যান্য যে কাজগুলো থাকে তার জন্য কিছু মানুষের প্রয়োজন। আমি জানি এইসব বাড়ি গিয়ে নিজে অথবা অন্য কোন মানুষের দ্বারাই করে নেই। মায়ের কথা আমি খুব কম খেলার চেষ্টা করি মা আমাকে যখনই যেটা বলুক না কেন হাজার ব্যস্ততা শেষে আমি তা পালন করার চেষ্টা করি। তো সেই সুবাদে আমি সেদিন বাড়িতে গেলাম।

বাড়িতে যাওয়ার পর দেখি আমাদের জমিতে পানি দেওয়া এবং জমি চাষ শেষ করে ফেলেছে। অর্থাৎ এখন শুধু কিছু সংখ্যক মানুষের প্রয়োজন তারা ধানের চারা রোপন করবে। কেননা আমার একার দ্বারা এই কাজ ছিল প্রায় অসম্ভব। এজন্য আমি বাড়িতে ফিরে আসলাম এবং আমার মাকে জিজ্ঞেস করলাম জমিতে কোন জাতের ধানের চারা রোপন করবে । ধানের চারা জমিতে রোপণ করার আগে আলাদা একটি জমিতে ধান গাছ প্রস্তুত করে নেয়া হয়। তো আমি সেই জমিতে গেলাম এবং আমার মায়ের থেকে কোনটা কোন জাতের ধান সেগুলো সব চিনে নিলাম।

গ্রামের কৃষকদের একটা রীতি আছে তা হচ্ছে তারা সারাদিন কাজ শেষ করে, গ্রামের যে ছোট বাজার থাকে সেখানে গিয়ে তারা সবাই একত্রিত হয়। তো আমিও দিনের বেলা সবকিছু ঠিকঠাক বুঝাইনি সন্ধ্যা বেলাতে বাজারে গেলাম। কৃষকদের সঙ্গে কথা বললাম তাদেরকে আমার জমিতে ধান রোপনের জন্য কথা বললাম। তারা আমার সাথে ধান রোপন সম্পর্কিত সকল কথা চূড়ান্ত করে নিল। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বাড়ি ফিরে আসলাম। তাদের শর্তসমূহঃ মধ্যে একটি ছিল তাদেরকে খাওয়াতে হবে।

আমি তাদের খাওয়ার জন্য বাজার থেকে কিছু সদাই করে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এবং মাকে আমি ঠিকঠাকভাবে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে বললাম কিভাবে রান্না করতে হবে। আমার বাজার অনুযায়ী আমার মাকে রান্নার তালিকা বলে দিলাম। পরেরদিন তারা আমার জমিতে ধান চারা রোপন করে খাবার খেয়ে তাদের পারিশ্রমিক নিয়ে তারা খুশিমনে বিদায় নিল।