অনেকদিন পর গ্রামে কাটানো কিছু মুহূর্ত | @alokroy647 | 10% Beneficiaries to @shy-fox
কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি ঈশ্বরের কৃপায় সকলেই ভাল আছেন। প্রায় অনেকটা সময় পর গ্রামের পরিবেশের ছোঁয়া পেলাম। প্রতিবার গ্রামে গেলে শহরের সকল চিন্তা ও কাজের চাপ কোথায় যে হারিয়ে যায় তার খুঁজেই পাওয়া যায় না। মূলত যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মনসা পূজা। হিন্দুধর্মে মনসা মূলত পৌরাণিক ও লৌকিক দেবী। আমাদের গ্রামে বেশ কয়েক শতক ধরে মনসা পূজা করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে মনসা পূজার প্রচলন আছে।
ডিভাইস :- Realme Narzo 20
প্রথম দিন
আমার গ্রাম বলতে শুধু একটা জায়গায়ই চোখে ভাসে ,টা হলো আমার মামারবাড়ি । আমার মামার বাড়ি গাজীপুর জেলার বাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। যাওয়ার প্রথম দিন আমরা ঢাকা থেকে রওনা দিলাম সকাল আটটায়। রাস্তায় হালকা ট্রাফিক জ্যাম থাকার কারণে যাতায়াতের সময় লেগেছে তিন ঘন্টা। বেশ অনেকটা সময় পর আত্মীয়-স্বজন সকলের সাথে দেখা হলো। সকলের সাথে দেখা হওয়ার পর মন আনন্দে ভরে গেল। সকলের সাথে কথাবার্তা আড্ডা দিতে দিতে বিকাল নেমে এলো এরপর আমি ও আমার ভাইবোনেরা সকলে মিলে চলে গেলাম"দক্ষিনে "এখানে দক্ষিণ বলতে দক্ষিণ দিককে নির্দেশ করে কিন্তু কোন দিক বোঝানো হয় নি, এটি ওখানকার নদী তীরবর্তী একটি জায়গা যার নাম সেখানে আঞ্চলিক ভাবে দক্ষিণ বলে ডাকা হয়। তার কারণ হলো দিনের প্রতিটি মুহূর্ত সেখানে তীব্র বাতাস মেলে। এ যেন একটি ব্যাটারিচালিত বৃহৎ আকৃতির ফ্যান যা চোখে দেখা যায় না । সেখানেই নদীর তীরে ভিড়ে থাকা একটি নৌকার ছাদে বসে বিকালটা পার করে দিলাম। এত সুন্দর এবং মনোরম দৃশ্য মনো প্রান জুড়িয়ে দিল। আগে যেখানে গিয়ে আমরা খেলাধুলা করতাম সে জায়গা গুলা বর্ষার পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে খালের রূপ ধারণ করেছে।
ডিভাইস :- Realme Narzo 20
সন্ধ্যার পর পূজা শুরু হয় এবং যারা উপবাস করেছিল তারা অঞ্জলি নিল। এভাবেই হই হুল্ল , , কথাবার্তা , আড্ডা ও নাচানাচির পর ঘুমাতে গেলাম মধ্যরাতের তিনটায়।
দ্বিতীয় দিন
শহরের অলসতা আর সেখানে কাজ করলো না সকাল সাতটা বাজে ঘুম ভেঙে গেল এবং উঠেই দেখি প্রচন্ড বৃষ্টি। ছাতা নিয়ে এগিয়ে গেলাম মন্ডপের দিকে সেখানে বসে নিমের ডাল দিয়ে ব্রাশ করলাম। এখনো গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় দাঁত মাজার জন্য নিমের ডাল বহুল ব্যবহৃত হয় কারণ এতে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয় এবং এটি ঔষধি হিসেবে কাজ করে। এরপর ভাই-বোনেরা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হলাম। বর্ষার পানি উঠেছে দেখে অনেক সাঁতার কাটতে মন চাচ্ছিল কিন্তু সেদিন আর তা হয়ে উঠলো না। ইতোমধ্যে দুপুর হয়ে গেছে বাড়ি ফিরে স্নান করে খেয়ে- দেয়ে চলে গেলাম খেলা দেখতে। আশেপাশের বিভিন্ন পাড়া মিলে একটি ফুটবল খেলা আয়োজন করা হয়েছে তা দেখতেই চলে গেলাম সেখানকার বিদ্যালয়ের মাঠে। জমজমাট একটি ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করলাম ।
ডিভাইস :- Realme 8
বাড়িতে ফিরে গিয়ে দেখলাম "জ্বালা বিয়ে" দিয়ে শুরু হবে। এটি একটি রীতি ও নাটক যা বেহুলা লক্ষিন্দরের কাহিনীর অনুকরণে দুইটি মেয়ে শিশুকে দিয়ে করানো হয়।
ডিভাইস :- Realme Narzo 20
শেষ দিন
সকালবেলা উঠে মামার সাথে গেলাম সেখানকার বাজারে । মামা-ভাগিনা মিলে বিসর্জনের দিনের কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরলাম। দশটা কি এগারটা নাগাদ বিসর্জন দেওয়া হবে। সবাই মিলে নাচানাচি ও শিদুর খেলার পর সকাল ১০ টায় বিসর্জন দেওয়া হয় তুরাগ নদী তে। বিসর্জন এর পর আমরা সেখানেই সাতার কেটেছিলাম। কিন্তু শরীরচর্চা না করেই পানিতে নামায় হাতের রগে টান লাগে। কোনোভাবেই হাত নাড়াতে পারছিলাম না । হাতের এই অবস্থা নিয়ে এক প্রকার পঙ্গু হয়ে বসে ছিলাম । সবাই কোনো নো কোনো উপায় বের করার চেষ্টায় মগ্ন যে কিভাবে আমার হাত টা আবার ঠিক হবে । ঠিক তখন আমার মামাতো ভাই আমাকে বললো চোখ বন্ধ করে বসতে । হঠাৎ শেনামার হাত ধরে সজোরে একটা মোচড় দিলো। পরের মুহূর্তে আমার হাত আগের অবস্থায় ফিরে এলো। পুরো ব্যাপারটাই সকলকে চমকে দেয়। আমার মনে হচ্ছিলো আমার যেনো ভেঙে গিয়েছে কিন্তু সেরকম অবস্থা থেকে পরের মুহূর্তেই হাত ঠিক হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি আমার কাছে সম্পূর্ণ কাকতালীয় ব্যাপার। হাত ঠিক হয়েছে বলে আমার আনন্দের সীমা নেই । এরপর সকলে মিলে খাওয়া দাওয়ার পর বিকালে আবার সেই দক্ষিণে গিয়ে কিছু সময় কাটালাম । এত সুন্দর পরিবেশে কিছু ছবি না তুলে আর থাকতে পারলাম না ।
ডিভাইস :- Realme Narzo 20
ডিভাইস :- Realme Narzo 20
গ্রামে গিয়ে এভাবেই আনন্দ অন্য তিনটি দিন পার করে পরদিন সকালে রওনা দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। আসলে সকলের কাছেই তাদের নিজ নিজ গ্রাম অতীব প্রিয়। গ্রামে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই স্মৃতির আঙিনায় ডানা বাঁধে।
যদি আপনাদের আমার পোস্টটি ভালো লেগে থাকে আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন এবং ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন।