আমার শেষ উৎসবের কিছু স্মৃতি। দুর্গাপূজা

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

নমস্কার, আসসালামু আলাইকুম এবং আদাব


কেমন আছেন আপনারা সবাই?? আশা করছি ঈশ্বরের কৃপায় সকলেই ভালো আছেন। শুরুতেই ধন্যবাদ দিতে চাই @moh.arif ভাইয়াকে এমন অসাধারণ একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। আমাদের এই কারারুদ্ধ জীবনের আগে শেষ পুজোর স্মৃতিগুলো অনেক মনে পরে । এই চার দেয়ালের বন্দী জীবন আমাদের উৎসব-পার্বণ করা থেকে বিরত রাখছে। আজ আমি আমার পালন করা শেষ দুর্গাপূজার কিছু স্মৃতি আপনাদের সাথে বিনিময় করতে যাচ্ছি।


দুর্গাপূজা


received_1462018497524471.jpeg


হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবথেকে বড় উৎসব হচ্ছে দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা বাংলাদেশসহ ভারত বর্ষ ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে প্রতিস্থাপন করে দুর্গাপূজা শুরু হয় এবং ৫ দিনব্যাপী চলতে থাকে। কোন কোন জায়গায় আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে দুর্গাপূজা শুরু করা হয়। তবে ষষ্ঠীর দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজা শুরু করার রীতি অধিক অনুসৃত। গতবছর আমার কাটানো দুর্গাপূজার এই পাঁচটি দিন নিম্নে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছি।

ষষ্ঠী পূজার দিন


ষষ্ঠী পূজার দিন ভোর ছয়টা বাজে ঘুম থেকে উঠি ‌‌। ঘুম থেকে উঠে, স্নান করে এসে সকলে মিলে একসাথে প্রার্থনা করলাম তারপর চিড়া, মুড়ি, খই ,ছাতু, দই ,মিষ্টি সকালে খাবার হিসেবে খেলাম। তারপর গিয়ে বসলাম টিভির সামনে যেহেতু করোনার প্রকোপ ছিল তাই সেই দিন আর কোথাও বের হলাম না। ঘরে বসেই বিভিন্ন পূজা মন্ডপের ষষ্ঠী পূজা দেখলাম। কোনমতে ঘরে বসেই সকলের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া এবং মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে কাটিয়ে নিলাম ষষ্ঠীর দিন টি।

সপ্তমীর দিন


সপ্তমীর দিন ও সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে চট করে স্নান করে, নতুন জামা কাপড় পড়ে প্রস্তুত হয়ে বসি পূজামণ্ডপে যাব বলে। প্রথমে আমরা গেলাম কলাবাগান পূজামণ্ডপে ,সেখানে গিয়ে অঞ্জলি নিলাম। মহামারীর পরিস্থিতির জন্য কোন জায়গায় প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছিল এবং খুব একটা ভালো ছিল না তাই আমরা সেখান থেকে চলে গেলাম ঢাকেরশরী মন্দির। প্রতিবছর ঢাকেরশরী মন্দির খুব বড় করে দুর্গাপূজার পালন করা হয় কিন্তু এবার পুরো জায়গাটা জনশূন্য হয়েছিল। ঢাকেরশরী মন্দির এ আমরা আমার মাসির পরিবারের সাথে যুক্ত হয়েছি। সকলে মিলে মন্দিরের ভেতর ও বাইরের প্রতিমা দর্শন এর পর চলে গেলাম রমনা কালী বাড়ি। সেদিনটা আসলে আমরা সবাই ঢাকার কিছু কিছু জায়গায় প্রতিমা দেখতে চেয়েছিলাম কারণ পরের দিন সকলে মিলে আবার গ্রামে যাব। রমনা কালীবাড়িতে ঘোরার পর গেলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সেখানেও খুব বড় করে দূর্গা পূজা করা হয়। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল তখন রওনা দিলাম বনানীর দিকে , বনানীতে খুব জাঁকজমক করে দূর্গা পূজা করা হয়। তারপর বনানীতে প্রতিমা দেখার পর এই ভাবে সপ্তমীর দিনে শেষ হলো।

received_154844723388915.jpeg

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমা

received_1190347098095451.jpeg

সপ্তমীর দিন আমরা ও আমাদের মাসির পরিবারের সকলে মিলে একসাথে ঘুরাঘুরি করলাম


অষ্টমী পূজার দিন


অষ্টমী পূজার দিন সকলে মিলে আমরা আমার মামার বাড়ি যাই সেখানে কি অষ্টমী দিনের কুমারী পূজা করি। আত্মীয়-স্বজন মোটামুটি সকলেই এসেছিল। সকলে মিলে হই-হুল্ল আড্ডা ও সেখানকার বিভিন্ন জায়গার প্রতিমা ঘুরে দেখি। গাজীপুরে প্রতি এলাকায় দুর্গাপূজা হয় তাই এত প্রতিমা আর আমরা দেখে শেষ করতে পারলাম না। কিন্তু মোটামুটি বেশ কয়েকটা প্রতিমাই ঘুরে দেখা হয়েছে। ঘুরে বাসায় যাওয়ার পর শুনলাম আমার মার মামা বেশ অসুস্থ তাই তখন সকলে মিলে ঠিক করলাম নবমী পূজা সেই দাদুর বাড়িতে গিয়ে কাটাব। রাতেই দুইটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ফেলছিলাম সবাই। অনেক আগ্রহ করে বসে ছিলাম সকাল হওয়ার আশায় যে আমার মামার মামার বাড়ি যাচ্ছি, নরসিংদী।

IMG-20201024-WA0073.jpg

মামার বাসার ছাদে বসে আছি ,মনে হচ্ছে যেন সিংহাসনে বসে আছি


নবমী পূজার দিন


নবমী পূজার দিন সকাল হতে না হতেই বাড়ির সবাই তৈরি । আমাদের পরিবার, আমার দুই মাসির পরিবার , দুই মামার পরিবার নিয়ে মোট ১৮ জন ছিলাম। রওনা হলাম নরসিংদীর পথে, রাস্তা প্রায় ফাঁকা ছিল তাই দেড় ঘন্টায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখা করলাম দাদুর সাথে , তাদের এক বিশাল পরিবার। ছেলে- বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে একান্নবর্তী পরিবার। নরসিংদীতে ও প্রতি গলিতে গলিতে দুর্গাপূজা হয়। আমরা ছোটরা বাদে বড়রা অনেকেই উপাস ছিল । বিকেলের অঞ্জলি দেওয়া হল তারপর বাড়িতে গিয়ে সবাই জমিয়ে খিচুড়ি খেলাম। সারাদিন এতো মানুষের মধ্যে, এত আত্মীয় স্বজনের মধ্যে থেকে অনেক আনন্দপূর্ণ একটা দিন কাটলো। সন্ধ্যার পর আবার ফিরে গেলাম আমার মামার বাড়িতে, গাজীপুর।
received_548540752848175.jpeg

আমাদের ছোটখাট একটি দল


দশমী পূজার দিন


দশমীর দিন দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। একে বিজয়াদশমী ও বলে। দুর্গা প্রতিমার নদী, পুকুর প্রভৃতি জলাশয়ে বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয় দূর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে। তাই সকাল থেকেই একটু মন ঢভতরতঢখারাপ ছিল, কিন্তু এটা ভেবেই নিজেকে সান্ত্বনা য়েছিলাম যে আবার আগামী বছর মহামারী চলে গেলে এমন ভাবেই মজা করব। গাজীপুরে সাধারণত সন্ধ্যার পর সিঁদুর খেলা হয় এবং এরপর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পরদিন সকালে আবার সকলে মিলে ফিরে আসলাম বাসায়।


এভাবেই মহামারীর মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজোর পাঁচটা দিন আনন্দপূর্ণ ভাবে কেটে যায়। যদি আপনাদের আমার লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার কাটানো শেষ উৎসবটি ও শেয়ার করুন।


ক্যামেরা ১Samsung Galaxy S8
ক্যামেরা ২Samsung Galaxy A30s
ক্যামেরা ৩Samsung Galaxy A7

ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য

Sort:  

বাহ দারুন লিখেছো

 3 years ago 

ধন্যবাদ দাদা ❤️😻

 3 years ago 

খুব সুন্দরভাবে প্রত্যেকটি দিন সম্পর্কে উপস্থাপন করেছেন।মায়ের প্রতিটি মূর্তি খুব ভালো ছিল।ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আপনার উৎসবের আনন্দময় মুহুর্তগুলো আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া ❤️

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 63815.31
ETH 3124.40
USDT 1.00
SBD 3.99