---

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রাইভেট বা স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্থান দখল করে আছে। বিগত কিছু বছর ধরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ ও ক্যাম্পাস স্থানান্তর নিয়ে কাজ করছিলো, এবং বর্তমানে নতুন ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ একদম শেষ-পর্যায়ে। এরকম একটি সময়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নির্মিত ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আজকে আপনাদেরকে সেই নিয়েই বলবো।
আমাদের কলেজ থেকে আমরা বেশ কয়েকজন মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক যত্ন নিয়ে একটি দেয়াল-পত্রিকা তৈরির প্রতিযোগিতা ও দেয়াল-পত্রিকা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করি, যার আয়োজক ছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা সেই সুবাদেই প্রথম দর্শনার্থী হিসেবে নতুন ক্যাম্পাস পরিদর্শনের সুযোগটি পাই।

---

_{ছবিটি তোলার তারিখ :- ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৩
স্থান:- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, রামপুরা,ঢাকা
ডিভাইস :- Realme Narzo 20}

---

আমরা যখন ক্যাম্পাসে পৌছাই তখন প্রায় সকাল ১১টার মতো বাজে। ক্যাম্পাসটির অবস্থান ঢাকার বাড্ডা এলাকায়। তো মূল ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে এসেই আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। গেটের বাইরে থেকেই এক অন্যরকম স্থাপত্যশৈলী আমরা দেখতে পাই, আর ভিতরের ক্যাম্পাস দেখার আগ্রহ বেড়ে যায় বহুগুণ। আমরা মূল ভবনে ঢোকার পরই দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়ারা সাদরে আমাদেরকে গ্রহণ করেন এবং আসতে ও নতুন জায়গাটি চিনতে অসুবিধা হয়েছে কি না- তা জানতে চান। এরপর আমরা লিফট দিয়ে উঠি ৬ষ্ঠ তলায়, যেখানে ক্যান্টিন ও মুক্তমঞ্চ অবস্থিত। বলাই বাহুল্য, নিচতলা থেকেই আমরা বেশ বিস্মিত ছিলাম, কেননা নিচতলাতে কিছু গেটওয়ে ছিলো, যা সাধারণত এরকম কোথাও দেখা যায় না। তাছাড়া প্রত্যেক তলাতেই লিফটের পাশাপাশি চলন্ত সিঁড়ি বা এস্কেলারেটর ছিলো, আর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এমন সুবিধা দেখতে পাওয়া সাধারণত যায় না। আমরা উঠার পর প্রথমেই আমাদের চোখে পড়ে যে ক্যাম্পাস ভবনটি আসলে অনেক খোলামেলা। ভবনের কোন অংশটা আসলে বারান্দা? কেউ কেউ বলবে পুরো ভবনটাই আসলে বারান্দা! এতো কম জায়গাটিকে প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করলে জিনিসটার সৌন্দর্য থাকার কোন কারণ ছিলো না, কিন্তু মূল ভবনের অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যশৈলীর কারণেই এতো অল্প একটি জায়গাকে যেমন যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনি সবার স্বাচ্ছন্দের প্রতি-ও লক্ষ্য রাখা হয়েছে, আর এটা আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে।
আমরা ঘোরাঘুরি করার পর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ আমাদের সাথে আলোচনা করেন, আর এই আলোচনাগুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি নিজে বেশ কয়েকবার নিজের অনুভূতি সবার সামনে তুলে ধরেছি, আর এই অনুভূতি শেয়ার করারও মজা আলাদা। এই আলোচনার মাধ্যমে আমার সাথে বেশ কিছু দেশি-বিদেশি অচেনা মানুষের সাথে পরিচয় ঘটেছে, আর এই নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়ায় আমার সময়টা বেশ ভালো কেটেছে।

---

_{ছবিটি তোলার তারিখ :- ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৩
স্থান:- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, রামপুরা,ঢাকা
ডিভাইস :- Realme Narzo 20}

---

এরপর আমাদের হাতে আমাদের দেয়াল-পত্রিকার জন্য পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আমরা আমাদের কলেজের পক্ষ থেকে সবচেয়ে চিন্তাশীল দেয়াল-পত্রিকার পুরস্কারটি অর্জন করি, যা আমার জন্য অনেক কৃতিত্বের একটি অর্জন। এই দেয়াল পত্রিকাটি আসলে আমরা তৈরি করেছিলাম একদিনে ও মাত্র দুই ঘন্টার পরিকল্পনায়, তাই এই পুরস্কারটির মূল্য আমার কাছে অন্যরকম। আমরা এরকম একটি আলোচনার মধ্যে এতক্ষণ ছিলাম, এজন্যে আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকেই দুপুরের খাবার প্রদান করা হয়, আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনেই আমাদের খাওয়া সেরে নিই। এখানে উল্লেখ্য, আমরা খাবার সময় খেয়াল করি যে আমাদের সবচেয়ে নিকটের দুটি ওয়াশরুমের কোনটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয় নি, এতেই আশা করি বুঝতে পারছেন যে আমরা আসলে কতটা সৌভাগ্যবান ছিলাম যে সাধারণ মানুষদের আগেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছি।
এই পর্যায়ে আমাদের চোখে পড়ে একটি অনিন্দ্যসুন্দর ও একদম কার্যকরী পেঁচানো সিঁড়ি, যা প্রত্যেক তলা থেকেই ঘুরে ঘুরে উপরে উঠে গেছে।

---

_{ছবিটি তোলার তারিখ :- ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৩
স্থান:- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, রামপুরা,ঢাকা
ডিভাইস :- Realme Narzo 20}

---

ক্যান্টিনের এই দিক থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যশৈলীর আবার নতুন এক আঙ্গিক দেখতে পাই, যেখানে পুরনো ও নতুন দিনের স্থাপত্যশৈলী একত্রে চমৎকার ভাবে মিশে গেছে। স্থাপত্যের এই ফিউশান দেখে আমার সাথে সাথে ‘লোকি’ সিরিজে দেখা টিভিএ এর স্থাপনাগুলোর কথা মনে পড়ে যায়, যেখানে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীকে আধুনিক ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীকে সুপ্রাচীন রূপ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে পুরো স্থাপনাটিকে আসলে ‘সময়হীন’ মনে হয়। আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ভবনটি তৈরি করার সময়ও স্থপতিরা এরকম কিছুই মাথায় রেখেছিলেন, যার ফলে তাদের চিন্তাভাবনার এক অসাধারণ পরিস্ফুটন এখানে ঘটেছে। খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাই। উচ্চশিক্ষা এখান থেকে গ্রহণ যদি না-ও করা হয়, তারপরেও এরকম একটি জায়গায় যে আমি সুযোগ পেলে আবারো এসে ঘুরে যাবো, সেটা নিয়ে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই।

---

ধন্যবাদ

_{Posted using SteemPro Mobile}