আমার স্মৃতির পাতা থেকে নেওয়া (পর্ব ৩) // ১০% পে-আউট লাজুক খ্যাঁকে 🦊
হ্যালো, স্টিমিটের আমার সহযোদ্ধারা, আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় আমিও ভালো আছি। আমি আজকে আপনাদের সামনে আমার জীবনের কিছু ঘটে যাওয়া ভাল ও খারাপ স্মৃতি শেয়ার করতে যাচ্ছি।
আজকে আমি আপনাদের সামনে আমার শৈশবের একটি আনন্দঘন মুহূর্ত শেয়ার করব। আমি তখন ক্লাস নাইনে ছিলাম। সালটা ছিল ১৯৯৮ ইং। বাংলাদেশে তখন ঋতু ছিল হেমন্তের শেষের দিকে। শীতকাল এর আগমন একটু ঠান্ডা ঠান্ডা পড়ছে। আমি তখন আমার পরিবারের সাথে থাকতাম চট্টগ্রামের বন্দরের এলাকা পোর্ট কলোনিতে। তখন আমার বেশ কয়েকজন ভালো ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল। তারা হলো মোর্শেদ, মনোয়ার, জামাল, ফারুক, হারুন, রুবেল ও সুমন। যদিও এখন আর এদের কারো সাথে আমার তেমন কোনো যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। মোটামুটি আমার এই ৭ জনের সাথে খুব ক্লোজ বন্ধুত্ব ছিল এবং আমরা যখন যেখানে যেতাম যখন যা করতাম এই ৭ জনে মিলে একটা ডিসিশন নিয়ে করতাম।
যে কথা সেই কাজ আমরা সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা কোথাও ঘুরতে যাব। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় তখন একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন। যেহেতু জায়গাটা আমাদের জন্য নতুন ছিল তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সবাই এক দিনের ভ্রমণে সেখানে যাব।
আমরা পরে সিদ্ধান্ত নিলাম পরবর্তী সপ্তাহে আমরা সেখানে যাব। সত্যিকার অর্থে কোথাও যেতে হলে তার একটা পূর্ব প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। যেমন আমাদের কত টাকা লাগতে পারে, আমরা কিভাবে যাবো, কটার সময় রওনা হব, সেখানে গিয়ে আমরা কিভাবে কি করব সে ভাবে আমাদের একটি পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গেল। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এবং হিসাব-নিকাশ করে দেখলাম আমাদের মোটামুটি জনপ্রতি 120 টাকা করে যদি আপনারা একসাথে করি তাহলে আমাদের এই ভ্রমণটি সুন্দর ভাবে আমরা সম্পন্ন করতে পারব। এবং সেটাই ফাইনাল করা হলো। সেই সাথে আমরা একটা তারিখ নির্দিষ্ট করলাম।
পরবর্তী সপ্তাহ এলো আমরা চিন্তা করলাম আমরা সেখানে গিয়ে কোথায় কি খাবো তার চেয়ে ভালো আমরা যদি এখান থেকে আমাদের সমস্ত খাবার তৈরি করে নিয়ে যায় তাহলে আর বাইরে খেতে হবে না বেশি টাকা খরচ ও হবে না। তখন অবশ্য আমরা যেহেতু ছাত্র ছিলাম আমাদের হাতে সেরকম মোটা অংকের কোনো টাকা ছিল না। স্কুলের টিফিন খরচ থেকে বাঁচিয়ে অথবা বাবার পকেট থেকে মেরে আমরা আমাদের ভ্রমণের জন্য টাকাটা জোগাড় করেছিলাম। যদিও ভ্রমণের আগে বাবাকে বলে আরো কিছু টাকা নিয়েছিলাম।
যেটা সিদ্ধান্ত নিলাম সেটাই আমরা করার জন্য আমরা সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার বিরানির প্যাকেট করে নিয়ে নিলাম (বিরানির প্যাকেটটি আমার মায়ের হাতে রান্না করে তৈরি করা)। আর বিকেলে খাবার হিসেবে আমরা হালকা বাইরে কিছু খেয়ে নেব। এভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর আমরা যেদিন যাব সেদিন খুব সকালে আমরা সবাই প্রস্তুতি নিয়ে সেই সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যেহেতু ইকোপার্কটি আমাদের থেকে কাছে ছিল এবং সেখানে বাসে করে যেতে জনপ্রতি ২০ টাকা লাগে সেজন্য আমরা নির্দিষ্ট কোন গাড়ি রিজার্ভ করি নাই।
আমরা যখন মেইন রাস্তায় আসলাম তখন আমি চিন্তা করলাম সব সময় তো বাসে চলাফেরা করি আজকে যদি ট্রাকে করে সেখানে যায় তাহলে কেমন হয়? এবং আমি সবাইকেই প্রপোজালটা দিলাম সবাই এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম এবং বলতে লাগল তাহলে তো আমরা সম্পূর্ণ ভাবে ইনজয় করতে করতে যেতে পারবো। তার পরে আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে সে রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি খালি ট্রাককে থামিয়ে সেই ট্রাকে আমরা সবাই উঠে পরলাম এবং যেহেতু ট্রাকটি সম্পূর্ণ খালি ছিল আমরা ছাড়া আর কেউ ছিল না তাই আমরা সেখানে অনেক গান বাজনা ও আনন্দ-ফুর্তি মাধ্যমে আমরা সেই সীতাকুণ্ডর ইকোপার্কে পৌঁছে গেলাম।
এখানে আমি আপনাদেরকে বলে রাখি যেহেতু তখন আমরা সবাই ছাত্র ছিলাম তাই আমাদের ইকো পার্কের গেটের কোন টিকেট কাটতে হয়নি তার কারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি ছিল। সে সময় আমরা এরকম একটি সুযোগ পেয়ে আসলে খুবই আনন্দিত ছিলাম। যাই হোক আমরা একে একে ভিতরে ঢুকে পড়লাম। কি বলবো এক কথায় অসাধারণ পার্ক ছিল। যতই ভিতরের দিকে যাচ্ছি ততই যেন দেখে মগ্ন হয়ে যাচ্ছি, আহ্! কি অসাধারণ দৃশ্য। প্রথম আমরা দেখতে পেলাম বিশাল বড় এক গোলাপ ফুলের বাগান যেখানে অগণিত গোলাপ ফুল কি সুন্দর ভাবে ফুটে আছে। ইস তখন যদি এই ছবিগুলা ক্যাপচার করতে পারতাম শুধুমাত্র স্মৃতিতেই মনে রয়েছে।
চলবে.........
শুভেচ্ছান্তে,@alauddinpabel
আমি আলাউদ্দিন পাবেল।
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে।
আমার পরিচয়
আমি আলাউদ্দিন পাবেল। আমার জন্ম ১৯৮৩ সালের পয়লা জানুয়ারি নোয়াখালী জেলা অন্তর্গত সোনাইমুড়ি থানার আওতাধীন বারগাঁও গ্রামে। বর্তমানে আমি গাজীপুরে আমার পরিবার নিয়ে বাস করছি। আমি পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট তার পাশাপাশি পার্টটাইম হিসেবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করছি। আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলাটি হলো ক্রিকেট খেলা। আমি ক্রিকেট খেলা দেখতে ও খেলতে খুব ভালোবাসি। সেই সাথে আমি আর্ট করতেও খুব ভালোবাসি। আমি সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করতে ভালোবাসি এবং মাঝে মাঝে তৈরি করে আমার পরিবারের সাথে শেয়ার করে তারা খুব আনন্দিত হয়। আমি নিয়মিত লিখি না তবে স্টিমিট এ যোগ দেওয়ার পর থেকে মোটামুটি নিজে থেকে কিছু লেখার চেষ্টা করি।
খালি ট্রাকে দলবেঁধে চলার মজাই আলাদা। ভাল ছিল
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আপনি আমাদের আনন্দের মূল জায়গাটা খুঁজে পেয়েছেন বলে। শুভকামনা অবিরাম।
আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা রইল
আপনার শৈশবের গল্প গুলো অসাধারণ হবে। আপনি যখন 120 টাকা দিয়ে পিকনিক করতে গিয়েছিলন সেই সময় আমরা দশ টাকার চিন্তা করতেও কষ্ট হতো। আমাদের পিকনিক ছিল বাড়ি এক পট চাউল একটা ডিম অথবা একটি ছোট মুরগি এমন। আপনার জন্যও শুভকামনা রইল।
আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি আপনার অতীতের স্মৃতি মনে করতে পেরেছেন এবং সেইসাথে আপনার এই গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার ছোটবেলার গল্পটি পড়ে সেই ছেলেবেলায় ফিরে গেলাম।কত মজার সৃতি জড়ানো সেই সময় টা এখন আর কোনোভাবেই ফিরে পাবার নয়।😔
ঠিকই বলেছেন আপনি যেটা একবার চলে যায় সে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না তবে তার স্মৃতিগুলোকে মনে করে কিছু সময় ভালই লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।
দারুন হয়েছে ভাইয়া আপনার স্মৃতির পাতার ৩য় পর্বটি। আপনি আপনার বন্ধুদের নিয়ে ইকো পার্কে যাওয়ার বিভিন্ন স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার স্মৃতির পাতাগুলোর এই পর্ব পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আলাউদ্দিন ভাই আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল। সেই সাথে আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Hi, @alauddinpabel,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP