"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা-১৯ // বৃষ্টির দিনের আমার মজার ও হাস্যকর কিছু অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

১০% পে-আউট 'লাজুক-খ্যাক' এর জন্য

স্টিমিটের সহযোদ্ধারা,

"আসসালামুয়ালাইকুম", আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।

আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর সুন্দর ইউনিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। তার মধ্যে আজকে এই সপ্তাহে যেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতি নিয়ে আসলে বলতে গেলে দুর্দান্ত একটি প্রতিযোগিতা। আমাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি বৃষ্টি নিয়ে অনুভূতি রয়েছে যা আমরা এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সকলে সকলের অনুভূতিগুলো জানতে পারব এবং এখান থেকে আমরা কিছু নতুন বিষয়ের উপর জানতে পারব বা অভিজ্ঞতা হবে।

IMG_20220629_190549.jpg
ক্যানভা দিয়ে তৈরি

তো আমি প্রথমত @shuvo35 ভাইকে ধন্যবাদ জানাই খুবই চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে প্রতিযোগিতা আকারের শেয়ার করার জন্য। আসলে প্রতিযোগিতা যেমনই হোক আমি অংশগ্রহণ করতে ভালোবাসি। শত ব্যস্ততার মাঝেও এই সপ্তাহে আমি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করেছি, আসলে ইচ্ছা থাকলে শত ব্যস্ততার মাঝেও কিছু করা সম্ভব। আমি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে সবাইকে আমার অনেক আগের পুরোনো একটি ছোট বেলার মজার কিছু অনুভূতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব আশা করি আপনাদের কাছে আমার এই বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতিটি ভালো লাগবে।

তাহলে চলুন সকলে মিলে আমার বৃষ্টির দিনের একটি মজার ও হাস্যকর অনুভতি পড়ে আসবেন।

আমি তখন চট্টগ্রামে থাকি বলতে পারেন আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। যদিও আমার জন্মস্থান নোয়াখালী বাবার চাকরির সুবাদে আমাকে আমাদের পুরো পরিবারকে চট্টগ্রামে থাকতে হয়েছে। একবার আমি গ্রামে গিয়েছিলাম ঠিক এরকম বর্ষার মৌসুমে। আসলে বর্ষার মৌসুমে গ্রামের বেশ কিছু অনুভূতি আমার রয়েছে তার মধ্য থেকে আমি কিছু আপনাদের মাঝে শেয়ার করব, যতটুক মনে করতে পারছি।

আমি গিয়েছি আমার নানার বাড়িতে কমবেশি নানার বাড়িতে গেলে বিশেষ করে আম গাছে আম রাখতাম না, ডাব গাছে ডাব থাকত না মোটামুটি আম গাছ এবং নারিকেল গাছ প্রচুর ছিল সেগুলো বলতে পারেন বন্ধুদের কে নিয়ে সাবাড় করে দিতাম। সেজন্য আমার নানু খুব রাগ করত আমি আবার নানুকে বলতাম তোমার নাতি তো খেয়েছে তুমি রাগ করো কেনো আর আমি কি তোমার গাছের এই ফলগুলো কি সব সময় খাই নাকি। যদিও নানু খাওয়া নিয়ে কখনো কিছু বলতো না বা রাগও হতো না কিন্তু নানুর একটা ভয় ছিল যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায়। তো এবার যখন গেলাম মোটামুটি একদিন বন্ধুদেরকে নিয়ে প্ল্যান করলাম যে কয়েকটা ডাব গাছ থেকে ডাব পাড়া হবে। আমার সাথে বন্ধু যারা ছিল তাদেরও ডাব গাছ ছিল আবার আমার নানুদেরও ছিল। তখন আমি মোটামুটি বলতে পারেন যত বড় ডাব গাছে হোক না কেন আমি গাছে উঠতে পারতাম এবং নামতে পারতাম কোন সমস্যা হতো না এমন কি ডাব গাছে উপর বসে কচি ডাবগুলো নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে বা কামড়ায় ছিদ্র করে পানি খেয়ে নিতাম। এরকম অনেক মজার কিছু অনুভূতি ও আমার রয়েছে।

pexels-photo-1247499.jpeg
উৎস

সেই দিন শুক্রবার কিংবা শনিবার ছিল খুব একটা মনে নেই। আমরা এরকম প্রায় দশটা এগারোটার দিকে মোটামুটি একেক জন একেক গাছে ডাব পাড়ার জন্য উঠে গেলাম। কিছুটা আকাশ মেঘলা ছিল তেমন একটা না আমরা যদিও গাছে ওঠার সময় গাছগুলো সম্পূর্ণ শুকনো ছিল। দুই তিন দিন বৃষ্টি হয়নি সে কারণে শুকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে আমরা যখন গাছে উঠলাম হঠাৎ সেই যে কি ভারী বর্ষণ কি বৃষ্টি গাছ থেকে নামার সুযোগ পেলাম না, এত বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ সবাই যে যে গাছে উঠেছে গাছের উপরে বসে ভিজতে লাগলাম। যদিও পাতার নিচে বসে ছিলাম কিন্তু এত বেশি বৃষ্টি ছিল যে পুরো ভিজে গিয়েছিলাম।

আমি শহরে থাকতাম বাকিরা কিন্তু গ্রামে থাকার কারণে ওরা অনেক বেশি গাছে ওঠানামা করার কারণে তাদের আমার চাইতে ভাল প্র্যাকটিস ছিল। কিন্তু আমি মাঝে মধ্যে উঠতাম তাই আমার তেমন একটা অভিজ্ঞতা ছিল না। পরবর্তীতে যখন কিছুটা বৃষ্টি থামল এমন একটা অবস্থা গাছ থেকে নামতে পারছিলাম না। ওরা সবাই অনেক কষ্ট করে যদিও সবাই কমবেশি ব্যথা পেয়েছে স্লিপকার্টার কারণে, বিভিন্ন জায়গায় তাদের ক্ষত হয়ে গিয়েছিল, তারপরও তারা মোটামুটি নেমে গিয়েছিল। কিন্তু আমি এমন একটা বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম যে আমি গাছের উপর থেকে নামতে পারছিলাম না। অনেকক্ষণ প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আমি কোনভাবেই নামতে পারছিলাম না, কারণ পুরো গাছটা এত পিচ্ছিল হয়ে গেল আমার নামার কোন সুযোগই ছিল না। আমি মোটামুটি ভয় পেতে লাগলাম একেতো গাছটা অনেক লম্বা ছিল, বেশি লম্বা হওয়ার কারণে মোটামুটি বাতাসে গাছটা দুলছিল সব মিলিয়ে একটা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে পড়ে গেছি। এদিকে বাসায় কাউকে জানাতে ও পারছে না ওরাও, ভয়ে। এভাবে বেশ কিছুক্ষন কেটে গেল সম্ভবত ঘড়ির টাইম তখন দুইটা বেজে গিয়েছিলো ওরা আমাকে নামানোর জন্য অনেকভাবে চেষ্টা করতে লাগলো। পরে আমার বন্ধুরা আমাকে গাছ থেকে নামানোর জন্য বাসা থেকে বিভিন্ন কাপড় এনে গাছটি থেকে পানিগুলো শুকানোর চেষ্টা করল। এরপর একজন গাছে উঠে বিভিন্ন জায়গা মুছে গাছটাকে মোটামুটি পানি গুলো মুছে গাছের পিচ্ছিল ভাবটা কিছুটা কমানোর চেষ্টা করল।

800px-বৃষ্টির_ফোঁটা.jpg
উৎস

তারপর একজন আমার কাছে উঠে চলে আসলো উপরে। তাকে কাছে পেয়ে আমি মোটামুটি কিছুটা সাহস ফিরে পাই। ওইখান থেকে আমাকে সাহস দিয়ে আস্তে আস্তে করে আমাকে পুরো গাছ থেকে নামিয়ে আনে। তারপরও গাছটা অনেক পিচ্ছিল ছিল ভিতর থেকে কেমন যেন পানি মোছার পর ও পানি বের হচ্ছিল। যাক অবশেষে আমি নিচে নেমে আসলাম। তারপরেও আমার অনেক জায়গায় ক্ষত হয়ে যায় এবং অনেক ব্যথা পেয়েছিলাম সেদিন, ভয়ে আমার রাতে জ্বর উঠে গিয়েছিলো। আর তো বিষয়টি বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা শুনতে পেয়ে সকলের এত এত বকাঝকা শুনতে হয়েছে এবং কি এরকম করেও শাসিয়েছে আর জীবনে যাতে গাছে নাও উঠি। শিক্ষা যদি হয়ে থাকে তাহলে আর জীবনে উঠবে না এরকম অনেক অনেক কথা শুনতে হয়েছে এই ছিল আমার বৃষ্টির দিনের প্রথম কিছুটা ভয়ংকর এবং হাস্যকরও বটে, একটি ঘটনা।

এখন আমি এই বর্ষার দিনের কিছু মজাদার ঘটনা শেয়ার করব। প্রায় সময়ই আমি গ্রামে গেলে এরকম বৃষ্টির সময় আমাদের অনেক বড় উঠান ছিল। যদিও বৃষ্টি হলে গ্রাম অঞ্চলের উঠান গুলো অনেক পিচ্ছিল হয়ে যায়। আমরা মোটামুটি সে সময়টা উঠানে অনেক আনন্দ ফুর্তি করে থাকি। যেমন ধরেন আমরা সবচেয়ে বেশি একটা খেলা খেলতাম এই বৃষ্টির সময় উঠানে এবং সেটা প্রতিযোগিতার মতো করেই খেলা হতো। প্রথমে আমরা উঠানে সবাই মিলে অভিযান চালিয়ে উঠানে কোন পাথর বা কোন ধারালো কিছু রয়েছে কিনা সবাই এটাকে ভালো করে চেক করে এগুলা সরিয়ে ফেলতাম। যাতে করে কেউ পড়ে গিয়ে বা পা কেটে গিয়ে আঘাত না লাগে। এরপর আমরা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তাম। তো প্রথমে একজন একজন করে আমরা দৌড় দিয়ে পা দিয়ে স্লিপ কেটে কে কতদূর যেতে পারতাম এই ধরনের প্রতিযোগিতা হত, খুব মজা পেতাম। কারণ এই পা দিয়ে উঠানে স্লিপ কেটে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকদূর পর্যন্ত যাওয়া সবাই পারতো না, আমিও প্রথম প্রথম পারতাম না কিন্তু পরবর্তীতে করতে করতে শিখে নিয়েছি, এমনকি অনেক দূর পর্যন্ত চলে যাওয়া যায়। পা দিয়ে স্লিপ কেটে অনেক দূর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে যাওয়া এই জিনিসটা খুবই ভাল লাগত এবং খুবই মজা পেতাম এই খেলাটা খেলে। বেশিরভাগ সময় আমরা গ্রামে এই ধরনের খেলা খেলতাম পাশাপাশি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুটবল খেলতাম।

download (3).jpeg
উৎস

যাইহোক বৃষ্টির দিনের বেশকিছু অনুভূতি আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। আশা করি আমার অনুভূতি গুলো আপনাদের ভালো লাগবে। আমার অনুভূতি গুলো পড়ে অবশ্যই সবার কেমন লেগেছে মন্তব্য করতে ভুলবেন না। সেই সাথে সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার আজকের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Sort:  
 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করার জন্য । বৃষ্টির দিনে আপনার মোটামুটি বিপদ এবং এর থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা পড়ে বেশ হাসি পেল । নারিকেল গাছে চড়াটা আসলেও অনেক বিপদ জনক প্রফেশনাল ছাড়া যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে ।

বৃষ্টির সবার জীবনে কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়ে যায়। বৃষ্টির দিনে আপনার মুহূর্তগুলো অসাধারণ। ধন্যবাদ আপনাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। এত সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যও ধন্যবাদ। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 67614.76
ETH 2610.64
USDT 1.00
SBD 2.73