স্মৃতির পাতা থেকে // প্রচণ্ড গরমে তরমুজ চুরি করে খাওয়া এবং প্রচন্ড ভয় পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা।
১০% পে-আউট 'লাজুক-খ্যাক' এর জন্য
স্টিমিটের সহযোদ্ধারা,
"আসসালামু আলাইকুম" সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। আর হয়তো একটি রমজান বাকি আছে এরপরে আমরা আমাদের সেই কাঙ্খিত ঈদের দিনে পৌঁছে যাব। যাইহোক আমার পক্ষ থেকে সবাইকে আগাম ঈদ মোবারক।
আজ পহেলা মে এই দিনে আমাদের মেহনত শ্রমিক ভাইয়েরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আমি তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
আমি আজকে আপনাদের মাঝে আমার স্মৃতি থেকে নেওয়া কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত এবং সেইসাথে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আশা করি আপনারা আমার এই বাস্তব গল্পটি পড়ে দেখবেন অনেক ভালো লাগবে।
আমি তখন ক্লাস এইটে পড়তাম। আপনারা হয়তো এর আগে আমার শৈশব কৈশোরের বেশ কিছু গল্প শুনেছেন তখন আমি চট্টগ্রামে থাকতাম, এটা অনেকেই অবগত আছেন তার পরও আবার বলে নিলাম আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত এটা আমরা সকলেই জানি, তো আমি যেখানে থাকতাম পোর্ট কলোনী সেখান থেকে তেমন একটা দূরত্ব ছিল না ৪/৫ কিলো দূরত্ব। আমরা বেশিরভাগ সময় সেখানে হেঁটে চলে যেতাম এবং মাঝে মধ্যে গাড়ি ব্যবহার করতাম। যখন আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু একত্র হয়ে যেতাম তখন আমরা কথা বলতে বলতে আড্ডা মারতে মারতে হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম এবং সারা দিন সেখানে অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতাম খুব ভালো লাগতো। সাগরের পানিতে গোসল করতাম, অনেক মজা করতাম, মাঝে মাঝে মাছ ও ধরতাম এভাবেই অনেক সময় কাটিয়েছি।
একবার এরকম আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সেই বঙ্গোপসাগরের পাড়ে যাব এবং আমরা জানি সেখানে অনেক তরমুজের বাগান হয়ে থাকে। সেখান থেকে তরমুজ খাওয়ার একটা পরিকল্পনা করে নিলাম সবাই, সেজন্য সবাই একটা ছুরি ও নিয়ে নিয়েছি সাথে করে। এভাবেই আমরা সবাই সেদিন গল্প করতে করতে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম। আমরা যখন সেখানে পৌছালাম একটা বিষয় আমরা লক্ষ্য করি অন্যান্য দিন যে রকম অনেক মানুষ থাকে সেই দিন তেমন কোনো মানুষ ছিল না। অনেক পরিমাণে গরু-ছাগল থাকত সেখানে মানুষ সে গঙ্গাসাগরের বাঁধের উপর চরাতো কিন্তু সে সময় সেরকম আমরা দেখতে পাইনি। যদিও কিছুটা আমাদের নজরে এসেছে কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পারিনি। তারপর আমরা চিন্তা করলাম যেহেতু প্রচন্ড গরম পড়েছে আগে গিয়ে তরমুজ খেয়ে নেয়া যাক। আসলে বাগান থেকে তরমুজ কেটে খাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। আমরা পাঁচজন বন্ধু একেকজন একেকটা তরমুজ নিয়ে নিলাম খুব সহজে। যেহেতু সেদিন তেমন কোনো জনমানব ছিল না তাই আমাদেরকে এই তরমুজ চুরি করার ক্ষেত্রে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। আমরা খুব নির্জন একটা জায়গায় গিয়ে বসে তরমুজ গুলো সবাই সবারটা কেটে খেয়ে নিলাম বেশ ভালই লেগেছিল।
এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সাগরের পানিতে আমরা গোসল করব, তারপর বাড়ি ফিরে যাব। সেদিন ছিল বাটা। জোয়ার আসতে অনেক সময় লাগবে, সেই জন্যেই অনেক দূর পর্যন্ত পানি দেখা যাচ্ছে তারপরও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সেখানে যাব এবং গোসল করে বাড়ি ফিরব। যেই কথা সেই কাজ আমরা রওনা দিলাম সেখানে বেশ কিছুদূরে ছিল পানি, কমপক্ষে এক কিলো হবে এত দূরে পানি ছিল। যাওয়ার পথে একজন রাখাল সে তার গরু গুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে যদিও ওই সময়টা ছিল সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা তারপরও আমরা তেমন একটা লক্ষ করিনি। রাখাল লোকটি আমাদেরকে বলল যে ভাই আজকে তোমরা ওদিকে যেও না আজকে একটু সমস্যা আছে। তখন আমরা ওনার কোন কথায় গুরুত্ব দিলাম না। আমরা সোজা চলে গেলাম সেখানে গিয়ে অনেকক্ষণ গোসল করলাম ভালই লাগলো। গোসল করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল আমরা বুঝতে পারি নিয়ে আস্তে আস্তে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু হলো। যেহেতু অনেকদূর চলে গিয়েছিলাম তো তার আগেই বেশকিছু খালের মত ছিল জোয়ারের পানি আমাদের ঐদিক থেকে পানি বাড়ার আগে ওই খালগুলো পানিতে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল এবং ধরতে গেলে পাড়ের দিকে পানি প্রচুর হয়ে গিয়েছিল, আমরা সেটা বুঝতেই পারিনি। পানি বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা হল যে আমরা মাঝখানে রয়ে গেছি চতুর দিকে পানি আর পানি। এরপরে আর দেরি না করে আমরা ছুটলাম পাড়ের দিকে। এদিকে খালগুলোতে অনেক স্রোত ছিল প্রায় তিন তিনটা কাল ছিল যেগুলো আমাদেরকে পার হয়ে আসতে হবে। আমাদের মধ্যে একজন সাঁতার জানত না বাকিরা সবাই সাঁতার জানত ভয় ছিল ওর জন্যেই। তারপরও আমরা বাকি চারজন ঐ একজনকে অনেক কষ্ট করে প্রত্যেকটা খাল পার করে নিয়ে আসলাম। সেই যে কি কষ্ট সেই দিনের কষ্ট টার কথা মনে হলে এখনো অবাক লাগে, আর সে যে কি ভয় পেয়েছিলাম তখন চতুর দিকে পানি মাঝখানে আমরা একটা দ্বীপের মধ্যে মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যাই হোক অবশেষে আমরা পাড়ে উঠলাম।
পাড়ে আসার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ একটা যুদ্ধবিমান খুব দ্রুতগতিতে এসে একটা বোমা ফেলল এত জোরে আওয়াজ হলো এত জোরে আওয়াজ হল যে আমরা সবাই এতটা ভয় পেয়ে গেছি মনে হচ্ছিল যে আমাদের মাথার উপর দিয়ে ফেলেছে। আমরা সবাই দৌড়ে গিয়ে যে বাঁধছিল বাদের এক পাশে শুয়ে পরলাম বেশ কিছুক্ষণ এভাবে একটার পর একটা যুদ্ধবিমান হাসতে শুরু করল আর বোমা ফেলতে শুরু করল আমরা তো ভয়ে কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিলাম যে এখান থেকে দৌড়ে চলে যেতে হবে। তা না হলে আমরা যদি এভাবে এখানে থেকে যাই তাহলে বোমার আওয়াজেই আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। সেই যে দৌড় কাকে বলে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা একটা দূরত্ব গিয়ে সবাই রাস্তার মধ্যেই চিত পটাং হয়ে শুয়ে পড়লাম। ওই মুহূর্তে সকলের বুক ধুপ ধুপ করে কাঁপছে। পুরো শরীর ঘামে ভেসে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল যে ওই সময়ে হার্ট অ্যাটাক করার মত অবস্থা এতটা ভয় পেয়ে ছিলাম আমরা সবাই। তবে সবচেয়ে একটা বিষয় হল এই ভয়ের কারণে আমাদের সবারই প্রচুর জ্বর উঠেছিল এবং এই জ্বরের কারণে আমরা বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম।
বলব আমাদের এই বাস্তব ঘটনার মধ্যে বেশ কিছু সতর্কতামূলক বিস্ময় ছিল। যেগুলো আমরা মানিনি এই কারনে আমাদের এত ভয় পেতে হয়েছিল সাথে কষ্ট ও করতে হয়েছিল। অবশ্যই আমার এই বাস্তব কাহিনী পড়ে আপনারা সেই সতর্কতামূলক বিষয়গুলো জেনে নিজেদেকে সাবধানে পরিচালিত করবেন। এগুলো যদি মেনে চলেন তাহলে অবশ্যই আপনারা বিপদ থেকে মুক্ত থাকবেন এটা আমার বিশ্বাস।
তো বন্ধুরা আজ তাহলে এ পর্যন্তই আশা করি আমার এই গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে। তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন, আর আমার জন্য দোয়া করবেন।
আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছান্তে,@alauddinpabel
আমি আলাউদ্দিন পাবেল।
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে।
তারিখঃ ০১-০৫-২০২২ ইং
ভাইয়া,আপনার পুরোটা পোস্ট খুব ভালো গেছে আবার খুব খারাপও লেগেছে। বন্ধুরা, মিলে তুরমজ চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা। আপনার বন্ধুদের সাথে আপনি খুবই আনন্দ করে তরমুজ খেয়েছেন কিন্তু সমুদ্রে গোসল করার ব্যাপারটা আপনাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তাই আপনাদের এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ভাইয়া, আপনি তো সাহস করে সাগরের পাড়ে উঠে এসেছেন আমি হলে ওখানে মরে যেতাম😔 যাইহোক ভাইয়া,আপনার তরমুজ চুরি করে খাওয়া আর ভয় পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতার পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।।
আপু আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার খুবই মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার বাস্তব গল্পটি পড়ে অসাধারণ ও গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য। আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের সিদ্ধান্তটা আসলেই ভুল ছিল সেটা আমরা পরে বুঝতে পেরেছিলাম।
আপনার অভিজ্ঞতার ঘটনাটি পড়লাম। আসলে অল্প বয়সী মানুষ না বুঝেই অনেক কাজ করে থাকে। ফল চুরি করে খাওয়া আমি মনে করি তেমন দোষের কিছু নয়। তবে ভাটার সময় সাগরে নামাটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি। আমি শুনেছি ভাটার সময় সাগরে নামা খুবই ভয়ের একটি ব্যাপার। সাগরের পানিতে নাকি তখন প্রচন্ড স্রোত থাকে। ফলে মানুষকে টেনে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। আর বোমা ফেলার ব্যাপারটি নিশ্চয়ই সামরিক মহড়া ছিল। যাইহোক বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছিলেন সেদিন। গল্পটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
জি ভাই আপনি ঠিকই ধরেছেন বোমা ফেলার ব্যাপারটি সামরিক মহড়ায় ছিল। আসলে সেদিন বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছিলাম যদিও সতর্ক করেছিল কিন্তু আমরা গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই এই ঘটনাটি ঘটেছে।
ভাই আপনার গল্পটি পড়ছি আর চোখের সামনে গল্পটি ভেসে উঠছিল। গরু চরানো রাখালের কথা না শুনে আপনাদের জীবনে কত বড় বিপদে আসতে চলেছিল তা ভালভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাই অনেক সময় নিজেদের কথার উপর আস্থা না করে অন্যের কথা শুনতে হয়। আপনাদের খুবই সৌভাগ্য ভালো ভাটার সময়ে গোসল করতে নেমে খুব বড় বিপত্তি ঘটে নি। তার উপরে আপনার এক বন্ধু সাঁতার জানতো না। কি ভয়ানক গল্প, গল্পটি পড়তে আমার মনের ভেতরে শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে ভাটার সময় সাগরে নামা অন্যদিকে যুদ্ধবিমানের বোমা বিস্ফোরণ করা। কি ভয়ানক ব্যাপার। ভাই আপনার জায়গায় আমি থাকলে হয়তো হার্ট অ্যাটাক করেই মরে যেতাম। আপনার স্মৃতির পাতা থেকে তরমুজ চুরি করে খাওয়া এবং প্রচন্ড ভয় পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা টুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে ভাই তখন ছোট ছিলাম আর কেমন একটা বুঝবুদ্ধি হয়নি, তাই রাখাল এ কথাটা আমরা গুরুত্ব দেইনি। তবে পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।