কলাবাগান থেকে কলা চুরির গল্প | |10% Beneficiary To @shy-fox | |

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম।
আমি আলামিন ইসলাম আছি আপনাদের সাথে। আমার ইউজার নেমঃ@alamin-islam। আমি বাঙালি, বাংলাদেশের একজন নাগরিক।আশা করি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি এর সকল সদস্যবৃন্দ আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছেন। আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

bananas-404536__480.jpg

Source

আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনের একটি স্মৃতিচারণাময় ঘটনা শেয়ার করতে চলেছি, আজ আপনাদের সাথে কলাবাগান থেকে কলা চুরি করার একটি মজার ঘটনা শেয়ার করবো‌। আশা করি, আপনাদের ভালো লাগবে। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন ‌।

বেশ অনেকগুলো বছর আগের কথা, তাও প্রায় পাঁচ বছর আগের ঘটনা। সময়টা ছিল ঈদের সময় । ঈদের পরের দিন আমি পরিবারসহ আমার মামার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে সময় মামার বাড়িতে আরো অনেক আত্মীয়-স্বজন ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছিল। পুরো বাড়ি আত্মীয়-স্বজনে গমগম করছিল, দেখে মনে হচ্ছে যেন বাড়িতে কোন বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু আসলে কোন বিয়ের অনুষ্ঠান নয়, ঈদের ছুটিতে সবাই শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে এসেছিল। সেখানে আমার বয়সী এবং আমার থেকে একটু বড় আমার তিন জন মামা ও ৪ জন খালামণি ছিল। আমরা প্রায় সমবয়সী বলতে গেলে। তারা ছিল আমার আম্মুর চাচাতো ভাই-বোন। তাছাড়াও গ্রামের স্থায়ী আরো অনেক সমবয়সী ছেলে মেয়েও ছিল আমাদের সাথে। আমরা প্রতি ঈদেই একসাথে হতাম এবং অনেক ঘুরাঘুরি করতাম। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

ঈদের পরের দিন সকাল বেলা মামার বাড়ি পৌঁছেই কোনরকম খাওয়া দাওয়া সেরেই আমরা সবাই মিলে বেরিয়ে পড়েছিলাম পুরো গ্রামটা ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে। গ্রামের মাঠ ঘাট গাছপালা সবকিছুর মাঝ দিয়ে আমরা হাটাহাটি করছিলাম এবং সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। এরপর আমরা ঠিক করলাম একটু বিলের ধারের ওইদিকে ঘুরতে যাবো। কিন্তু বিলের ওই দিকে যেতে হলে একটা সাঁকো পার হতে হয়। বিশাল বড় সাঁকো পার হওয়া লাগতো সে সময় তবে এখন সেখানে একটি সুন্দর ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। সেই বিশাল সাঁকো পার হওয়ার মধ্য এক অদ্ভুত ভয় এবং অদ্ভুত আনন্দ কাজ করতো আমাদের মাঝে। সাঁকো থেকে নিচে পড়লেই ছিল কাদা মাখা বিলের পানি তবে সেখানে হাত-পা ভাঙ্গা বা মৃত্যু কোন ঝুঁকি নেই। আমরা সবাই বেশ গল্পের ছলে আনন্দ করে সাঁকো পার হলাম। এরপর আমরা হাটা দিলাম বিলের পথে । বিলের পথে কিছুদূর যেতেই ছিল বিশাল বড় এক কলার বাগান। আমরা সবাই মিলে দুপুরবেলা করে কলাবাগানে ঢুকেছিলাম এমনি বাগানটা ঘুরে দেখার জন্য কিন্তু বাগানে ঢুকতেই দেখি কাঁদি কাঁদি পাকা কলা গাছে ধরে আছে।

যখন আমরা ঘুরে ঘুরে পাকা কলা দেখছিলাম তখন আমাদের খালামণির হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে গেছিল তাই তারা কলাবাগানে একটু বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। আমরাও বসে পড়লাম একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। এরপর গল্পে গল্পে আমাদের মধ্যে জিন ও ভূত নিয়ে কথা উঠলো। আমার এক খালামনি বলে উঠলো, এই ভরদুপুর বেলা করে কলাবাগানে থাকা উচিত নয়, এখানে জিন থাকতে পারে। এই জিনের ব্যাপারটা নিয়ে আমরা বেশ হাসাহাসি এবং মজা করলাম। এরপর হঠাৎ করে খেয়াল করলাম কোথা থেকে যেন একটা ছোট্ট ঢিল আমাদের দিকে ছুঁড়ে আসলো। ব্যাপারটা কে আমরা তেমন পাত্তা দিলাম না, তখন আমার খালামনি বলল এটা হয়তো জিনের কাজ। কিন্তু পরক্ষণেই দেখতে পেলাম কলাবাগানের পাশ দিয়ে কিছু ছেলে মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। পরে আমরা আবিষ্কার করলাম এটা হয়তো ওই ছেলেমেয়েদের কাজ। এরপর বিশ্রাম নেওয়া শেষে আমাদের সবার পাকা পাকা কলা দেখে একটু খিদে পেয়ে গেল।

তাই আমরা ভাবলাম বাগান থেকে একটু কলা পেড়ে খাবো। আমরা একসাথে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম মোট নয়জন। সবাই একটা করে কলা খেলেও আমাদের অনেকগুলো কলার প্রয়োজন। তাই আমরা প্ল্যান করলাম একটা কলার কাঁদি চুরি করে এখান থেকে পালাবো। তবে এই বাগানটা কার সেটা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা মনে করি খাওয়ার জিনিস চুরি করায় কোন পাপ নেই। তাই আরকি যেই ভাবনা সেই কাজ। এক কাঁদি কলা কোনভাবে আমরা সবাই গাছ থেকে কেটে নিয়ে দিলাম চম্পর। তবে সেটা ভুলেও বাড়িতে নিয়ে যায়নি কারণ বাড়িতে এটা দেখলেই একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না। তাই আমরা গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে গেলাম কলা গুলো খাওয়ার জন্য।

আমরা সবাই বেশ মজা করেই সবগুলো কলা খেয়ে নিলাম। এরপর নিশ্চিন্ত মনে আনন্দের সাথে সবাই মিলে বাড়ির দিকে ফিরলাম। কিন্তু বাড়িতে ফিরেই এক মহা বিপত্তি। আমাদের বাড়ি পৌঁছতে না পৌঁছতে ই কলা চুরি করার ঘটনাটা বাড়ির সবাই কিভাবে যেন জেনে গেছিল। এরপর সবাই মিলে আমাদের খুব বকাঝকা করল কিন্তু শেষমেষ আমার মামা আমাদেরকে রক্ষা করল সবার বকার হাত থেকে। পরে জানতে পারলাম, কলাবাগানের মালিক নাকি বাড়িতে এসেছিল নালিশ করার জন্য এবং রাস্তায় যে ছেলেগুলো আমাদেরকে ঢিল ছুঁড়েছিল তারাই নাকি কলাবাগানের মালিক কে গিয়ে সব বলে দিয়েছে। কলার বাগানের মালিককে শুনেছিলাম আমার মামা পরে এক কাদি কলার দাম দিয়ে দিয়েছিলো। এখানে আমাদের কলা চুরি করাও হলো এবং জরিমানাও দেওয়া হলো।

মামা বাড়িতে ঘুরতে যেয়ে এমন আরো অনেক মজার ঘটনা রয়েছে। তবে আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আবারও নতুন কোন বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো।

IMG_20220714_131330.jpg

আমি@Al-Amin ইসলাম , আমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আমার ইচ্ছা আমি দেশ ও দশের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করতে চাই, আমার গর্ব হয় নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে। আমি গর্বিত বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, বাংলাদেশের মানুষ মাছে ভাতে বাঙালি, প্রকৃতির রূপ, রস ,গন্ধ সবকিছুই আমার অহংকার।

প্রয়োজনে পাশে আছি আমার সাথে যোগাযোগ করুন:-

ফেসবুক || টুইটার || ইউটিউব || ডিস্কোড

ধন্যবাদ সবাইকে।


Sort:  
 2 years ago 

আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনার কলা চুরির গল্পটি খুব রোমাঞ্চকর ছিলো ।চমৎকারভাবে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

বেশ রোমাঞ্চকর ঘটনা কলাবাগান থেকে কলা চুরি করেছে সেই অভিজ্ঞতাটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন খুব ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

ছোটবেলার দুষ্টুমিপনা দিনের কথা গুলো ভাবতেই এখন অন্যরকম লাগে। কতশত স্মৃতি আছে সে সময় গুলোর। যদিও আমি এমনটা খুব কম করেছি তারপর ও ছোট ছোট ঘটনা গুলো মনে পড়লেই হাসি পায়।

আপনার আজকের এই গল্পটি পড়ে বেশ ভাল লাগলো।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

হয়তো এমন একটি ঘটনা আপনাদের মাঝে আমিও শেয়ার করব। আমার লাইফেও এমন সুন্দর কিছু ঘটনা রয়েছে, যেগুলো তুলে ধরা হয়নি। তবে আপনার এই ঘটনাটি পড়ার পরে তার স্মরণ হয়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর ঘটনা শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65133.17
ETH 3480.37
USDT 1.00
SBD 2.52