শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আমার আদর্শ অনুপ্রেরণা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
আসসালামু আলাইকুম
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কিছু বাস্তবধর্মী কথা শেয়ার করব।তাহলে চলুন শুরু করা যাক:-
শিক্ষা এবং শিক্ষক শব্দ দুইটি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করেই চলেছি। আমরা জীবনের প্রাথমিক শিক্ষা পায় আমাদের পরিবার থেকে। আমাদের প্রাথমিক জীবনের শিক্ষক হলেন আমাদের পিতা-মাতা ও আমাদের পরিবার। এরপর যখন আমরা একটু বড় হয়ে স্কুলজীবনে পা রাখি তখন আমরা খাতায়-কলমে শিক্ষিত হওয়ার জন্য এবং জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক শিক্ষককে আমাদের জীবনে পাই। স্কুল জীবনে পা রাখার পরে আমরা কলেজ জীবনে পা রাখি। এই জীবনে আমরা শিক্ষকদের ভিন্নভাবে পাই। এরপর আমরা যখন ইউনিভারসিটিতে পড়ালেখা শুরু করি তখন আমরা শিক্ষকদের আরেকটু ব্যাতিক্রম পাই। শিক্ষক আমাদেরকে শিক্ষা দেবেন এবং তার থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করব এইটাই নিয়ম। কিন্তু এমন কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাদের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের একটু আলাদা রকমের সক্ষমতা তৈরি হয়। যেসব টিচারদের ক্লাস কোন স্টুডেন্টই মিস করতে চাইনা।
ঠিক তেমনই আমার জীবনের একজন আদর্শ শিক্ষকের কথা আমি আপনাদের সাথে তুলে ধরবো।
আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন আমি পড়াশোনাতে ভালো হলেও কোন বিষয় না বুঝতে পারলে প্রশ্ন করতে ভয় পেতাম। কখনো কোন শিক্ষক যদি বলতো তোমরা এটা বুঝেছো কিনা, আমি না বুঝেই হ্যা বলে দিতাম। পরে বাসায় এসে অন্য কারো থেকে সেটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এই বিষয়টি যে একদমই ঠিক নয় তা আমি সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমার এক শিক্ষকের মাধ্যমে। একদিন একটি ক্লাসে স্যার একটি ম্যাথ বোঝাচ্ছিলেন। আমি তা কিছুটা বুঝলেও শেষের টুকু বুঝতে পারিনি। স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি বুঝেছো কিনা"? তখন আমি স্যারকে বললাম, "স্যার আমি বুঝাতে পেরেছি"। তখন স্যার হঠাৎ আমাকে বলে বসলেন এবার তুমি ম্যাথ টা আমাদের সবাইকে বুঝিয়ে দাও। তখন আমি খুব বিপদে পড়ে গেলাম। কারণ আমি তো ম্যাথ টা পুরোপুরি ভাবে বুঝতে পারিনি। একথা স্যার বুঝতে পেরে আমাকে সেদিন কিছু বলল না। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরে স্যার এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে আমি পড়ালেখা তে ভালো হলেও ক্লাসের সবার মাঝে প্রশ্ন করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার সেই দুর্বলতা কাটানোর জন্য স্যার আমাকে প্রায়ই প্রতিনিয়ত ক্লাসে কোন নতুন ম্যাথ করার পরে বুঝিয়ে দিয়ে আমাকে আবারো বোঝাতে বলতেন কিন্তু আমি তা না পাড়াতে স্যার আমাকে ছোটখাটো অপমান করতে থাকেন। আর আমি একটা বিষয় খেয়াল করলাম যারা ক্লাসে প্রশ্ন করত স্যার তাদেরকে একটু বেশিই পছন্দ করতেন। কিন্তু তাদের রেজাল্ট আমার থেকে যে খুব একটা ভালো তা নয়। আমার মূল দুর্বলতায় ছিল ক্লাসে প্রশ্ন না করা।
আমি ধীরে ধীরে খেয়াল করলাম ,আমি যতই ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করিনা কেন কোথাও যেন আমি যে ভালো স্টুডেন্ট, সেই সুনামটা হারিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো, ক্লাসে স্যার ম্যাথ বোঝাতে বললে, আমি তা বোঝাতে পারতাম না। স্যারের করা আমাকে অপমান এবং অন্যদেরকে আমার থেকে বেশি অ্যাপ্রিশিয়েট করার কারণে তারা যেন ক্লাসের ভালো স্টুডেন্ট হয়ে উঠেছে আর আমি নরমাল স্টুডেন্ট হয়ে উঠেছি দিন দিন। এসব দেখে ধীরে ধীরে আমার মনে জেদ আসতে লাগলো। আমি আগের থেকে আরো ভালো করে পড়াশোনা করতে লাগলাম এবং ক্লাসে স্যার যাই বোঝাতো, যায় বলতো আমি আমার সব ভয়-ভীতি ভেঙ্গে অনেক বেশি বেশি প্রশ্ন করতে লাগলাম। এতে আমি খেয়াল করলাম স্যার ধীরে ধীরে আমাকে পছন্দ করছেন। আমার অনেক প্রশংসা করছেন। আগে আমি যতটা ভালো স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিলাম, স্যারের করা প্রশংসার কারণে আমি আরো বেশি মেধাবী হয়ে উঠেছি যেন সবার মাঝে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে লাগলো আর আমি আমার সমস্ত ভয়-ভীতি ভেঙে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রশ্ন করার ক্ষমতা অর্জন করতে শিখে গেলাম।
এরপর বেশ কিছুদিন পর সেই স্যারের ক্লাসে আমরা ক্লাস করছি। এরপর স্যার অন্য আরেক স্টুডেন্টকে ডেকে বলছে আমি এখন যেই ম্যাথ বোর্ডে করিয়েছি তা কি তুমি বুঝেছো? তখন সেই ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে বলে, "হ্যা"। তখন স্যার তাকে বোঝাতে বলেন। কিন্তু সে ম্যাথ টা বোঝাতে পারে না। তখন স্যার তাকে আমার উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই ক্লাসে এই ছেলেটা প্রথমদিকে তোমার মতোই আমি পড়া ধরলে পারতো, খাতায় ম্যাথ করতে দিলে পারতো কিন্তু তাকে যখন আমি আমার বোর্ডে করানো কোন ম্যাথ বোঝাতে বলতাম তখন সে পারতো না। আমি তাকে অনেক অপমান করেছি, এবং তার সহপাঠীদের কে সবসময়ই বেশি প্রশংসা করে তাকে ছোট করেছি। এতে ছেলেটির আমার প্রতি রাগ ও জেদ জন্মেছে কিন্তু আজ সেই ফলস্বরূপ ছেলেটা প্রশ্ন করতে শিখে গেছে। তার সমস্ত দুর্বলতা কাটিয়ে সে ক্লাসের একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে পেরেছে। এটাই আমার শিক্ষক হিসেবে সার্থকতা।
সেদিন স্যারের মুখ থেকে এই কথাগুলো শোনার পরে আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। সেই স্যারের প্রতি সম্মান টা যেন আমার নিমেষেই হাজার গুণ বেড়ে গেল। স্যারের আমাকে অপমান করার কারণে আমি তখন যতটা রাগ করতাম, স্যারকে খারাপ ভাবতাম সেই ভাবনার জন্য আমি নিজেকে দোষী ভাবতে লাগলাম। এবং স্যারের প্রতি আমার ধারনাটা পাল্টে গেল।
আমি বুঝতে পারলাম, স্যার এর করা সেই অপমানের কারণেই আজ আমি স্টুডেন্ট হিসেবে সফল। স্কুল, কলেজ ,ইউনিভার্সিটি এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে আজ আমি প্রশ্ন করতে শিখেছি।যা একটা মানুষের জন্য তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আমি মনে করি, আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এরকম আদর্শ শিক্ষক খুবই প্রয়োজন। একজন শিক্ষকই পারেন তার শিক্ষা ও বুদ্ধির মাধ্যমে কোন এক ছাত্রকে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তা দেখাতে। শিক্ষক আমাদেরকে রাস্তা দেখাবেন এবং সেই রাস্তা অনুসরণ করায় আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজ। এমন কিছু কিছু শিক্ষক সবার জীবনেই আছে যে শিক্ষক তাকে শুধু শিক্ষাদানই করেননি শিক্ষার প্রকৃত মানে বুঝিয়ে গেছেন এবং সেই সাথে জীবনে চলার সঠিক শিক্ষা দান করেছেন। সেই সকল শিক্ষককে জানাই, মনের অন্তস্থল থেকে অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা।
আমি@Al-Amin ইসলাম , আমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আমার ইচ্ছা আমি দেশ ও দশের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করতে চাই, আমার গর্ব হয় নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে। আমি গর্বিত বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, বাংলাদেশের মানুষ মাছে ভাতে বাঙালি, প্রকৃতির রূপ, রস ,গন্ধ সবকিছুই আমার অহংকার।
প্রয়োজনে পাশে আছি আমার সাথে যোগাযোগ করুন:-
ফেসবুক || টুইটার || ইউটিউব || ডিস্কোড
https://twitter.com/Alamini15050207/status/1484116253073879043?t=gnFOCLGnyBV_u_Gts6JGrQ&s=19
বাহ ভাইয়া আপনি শিক্ষকদের নিয়ে অনেক সুন্দর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। যেটা আমার কাছে অনেক সুন্দর লেগেছে। যারা আমাদের জীবন গড়তে সাহায্য করে আপনি তাদের ছোট ছোট বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভাইয়া
আপনার সুন্দরতম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
শিক্ষক হলো আমাদের জীবন গড়ার কারিগর। তারদের প্রতি আমাদের ব্যবহার হতে হবে মার্জিত। তাদের মনে কখনোই কষ্ট দেওয়া একদমই ঠিক না।
সত্যি বলতে আপনার লেখাটা পড়ে প্রিয় স্যার ম্যামদের মিস করতেছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ।
আপনার গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে
"সবার উপর উচু থাক শিক্ষা গুরুর শীর"
এখনকার দিনে শিক্ষক আর সে ভাবে মর্যাদা নেয় না নেয়না।বন্ধুর মত আচরণ করে বটে, তাও আবার ব্যবসায় ভরপুর। ভাল লিখেছেন ভাই। উপাস্থাপন সুন্দর ছিল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
স্বাগতম