গল্পের ফেরিওয়ালা | |10% Beneficiary To @shy-fox | |
আসসালামু আলাইকুম।
আমি আলামিন ইসলাম আছি আপনাদের সাথে। আমার ইউজার নেমঃ@alamin-islam। আমি বাঙালি, বাংলাদেশের একজন নাগরিক।আশা করি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি এর সকল সদস্যবৃন্দ আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছেন। আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আমাদের সবার জীবনে কমবেশি গল্পের ফেরিওয়ালা রয়েছে। যাদের কাছ থেকে আমরা প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প শুনতে পারি তাদেরকে গল্পের ফেরিওয়ালা বোঝানো হয়েছে। আমার জীবনেও ছোটবেলায় একজন গল্পের ফেরিওয়ালা ছিল। আজ হঠাৎ করে কেন জানিনা তার কথা মনে পড়ে গেল। তাই তার জীবনের একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি, আশাকরি গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।
প্রতিদিন বিকেল হলেই আমি এবং আমার বন্ধুরা বাড়ির পাশেই একটি পার্কে বেড়াতে যেতাম। পার্ক টি ছিল মূলত সকাল-বিকাল সবার ফিটনেসের জন্য হাঁটাহাঁটি করার বিশাল একটি মাঠ। এই মাঠে যুবক ছেলেমেয়েরা যেত তাদের ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য হাঁটাহাঁটি করতে এবং বৃদ্ধরা যেত শেষ বয়সে শরীরটাকে একটু খোলা হাওয়ায় মেলে ধরতে। বিকেল হলেই কত লোকের ই না আনাগোনা হতো এই পার্কে। পার্ক টি দেখতেও ছিল বেশ সুন্দর। না কোন কৃত্রিম সৌন্দর্য নয়, পার্ক টি ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গাছপালা এবং ফুল বাগানে ঘেরা। পার্ক টি তে গেলেই মনটা একদম ভরে যেত। তবে সেই পার্ক আজ আর নেই। পার্কের জায়গায় তৈরি হয়েছে এক বিশাল বড় রেস্তোরাঁ। এবার চলে আসি মূল গল্পে। এই পার্কে আমরা যখন সবাই খেলা করতে যেতাম তখন প্রতিদিন খেয়াল করতাম একটি বৃদ্ধ লোক পার্কের একটি সিঁড়ি বাঁধানো কোনে একমনে একা একাই বসে থাকতো। আমরা সেই বৃদ্ধ লোকটির আশেপাশেই খেলা করতাম। একদিন আমরা বন্ধুরা মিলে সবাই গল্প করছিলাম এবং খেলছিলাম।
গল্পে গল্পে আমরা বলাবলি করছিলাম আমার দাদী আমাকে কাল ডালিম কুমারের গল্প শুনিয়েছে, আর একজন বলে উঠল আমাকে আমার নানী রাখালের গল্প শুনিয়েছে, এভাবে এক এক করে আমরা যে যা গল্প জানি তাই বলতে শুরু করলাম। হঠাৎ বৃদ্ধ লোকটি আমাদের কথা শুনে আমাদেরকে ডাক দিল। বৃদ্ধ লোকটি আমাদেরকে দেখে বলল তোমার কি গল্প শুনতে চাও! আমি অনেক গল্প জানি। তখন আমরা বলে উঠলাম হ্যাঁ আমরা গল্প শুনতে চাই। তখন সে বৃদ্ধ লোকটি বলে প্রতিদিন বিকেল হলেই তোমরা এই পার্কে এই সিঁড়ির কাছে চলে আসবে। এখানে বসেই আমি প্রতিদিন তোমাদেরকে নতুন নতুন গল্প শোনাবো। আমরা সবাই আনন্দের সাথে রাজি হয়ে গেলাম। এই বৃদ্ধ লোকটিকে আমরা দাদু বলে ডাকতাম। প্রতিদিন বিকেল হলে আমরা সবাই মিলে দাদুর কাছে ভিড় জমাতে গল্প শোনার জন্য। এভাবেই শুরু হয়েছিল প্রতিদিন বিকেলে আমাদের গল্পের আসর। দাদু প্রতিদিন বেশ অনেকগুলো গল্প শোনাতেন, তবে প্রতিবারই নতুন নতুন গল্প শোনানোর কারণে দাদুর গল্প শোনার আগ্রহ আমাদের কাছে অনেক বেশি বেড়ে যেত। আমরা যখন পার্কে সবাই একজোটে বসে গল্প শুনতাম তখন পার্কের বিভিন্ন ধরনের লোক বিভিন্ন দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকাতো। তবে আমরা সেসব গায়ে মাখতাম না। আমাদের তো গল্প শোনা নিয়ে কথা।
এভাবে দাদুর কাছ থেকে গল্প শুনতে শুনতে আমাদের সবারই দাদুর সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে উঠল। দাদু আমাদেরকে অনেক গল্প শোনাতেন এবং গল্প শুনে আমরা সবাই দাদুকে নানান ধরনের প্রশ্ন করতাম। আর দাদু একেক করে আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন। বেশ ভালই মজার ছিল দিনগুলো। এভাবে বেশ অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছিল কিন্তু হঠাৎ একদিন আমরা সবাই একজোটে বসে গল্প শুনতে গিয়ে জানতে পারলাম দাদু আর আমাদের কোনদিনও গল্প শোনাতে পারবেন না, কারণ তিনি আর নেই। একথা শুনে আমরা সবাই খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে সময়ের সাথে সাথে তা মানিয়ে গেছে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
কিন্তু এই দাদু টা কে? কোথা থেকেই বা এসেছিল, তা আস্তে আস্তে জানতে পারলাম। এই দাদুটির নাম ছিল সামসুল মিয়া। তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রমের থাকতেন। বৃদ্ধাশ্রম থেকে প্রতিদিনই বিকেল হলে পার্কে বেড়ানোর জন্য চলে আসতেন। এই লোকটির একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ে বিয়ে করে লন্ডনে সেটেল হয়েছে এবং ছেলে বিয়ে করে তার একটি সন্তানও হয়েছে। তার বড় ছেলে এবং ছেলের বউ মিলে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছে। ছেলের বউয়ের ভাই নাকি পড়ালেখা করার জন্য শহরে আসবে। আর তাদের বাড়িতে নাকি বেশি মানুষের থাকার জায়গা নেই, তাই বৃদ্ধ বাবাকে তারা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছে। বৃদ্ধাশ্রমের পাঠানোর পর ছেলে, ছেলের বউ, নিজের মেয়ে কেউই নাকি বৃদ্ধ লোকটির খোঁজখবর নেয়নি। একটি বারের জন্য কেউ তাকে দেখতেও আসেনি। শুধু তাদের দায়িত্ব মাঝে মাঝে খরচ পাঠানো টুকুই ছিল। শুধুমাত্র বৃদ্ধ লোকটি মারা যাওয়ার খবর শুনে মৃত্যুর পর তার শেষ কার্যে সবাই এসেছিল।যে বাবা সন্তানের জন্মের আগ থেকেই সন্তানের ভবিষ্যত সুন্দর করার পরিকল্পনায় নিজের প্রাণপাত করে, যে বাবা নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সন্তানকে রক্ষা করে সেই বাবাকে সন্তান কিভাবে বোঝো ভেবে দূরে ঠেলে দিতে পারে তা সত্যিই ভাবতে বেশ অবাক লাগে। এইসব মানুষরূপী পশু সন্তানদের তার বাবা মায়ের সাথে করা এই অন্যায়ের কি শাস্তি দেওয়া উচিত তা আমার জানা নেই। তবে এই মানুষরূপী পশুদের সমাজ থেকে অবশ্যই বয়কট করা উচিত। বৃদ্ধ লোকটির জীবনের কাহিনী আমরা আমাদের আশেপাশের লোকজনের থেকে শুনেছিলাম তার মারা যাওয়ার পর। আজ সে ঘটনাটি আমাদের সাথে শেয়ার করলাম। আর এই করুন ভাবেই শেষ হয়ে গিয়েছিল আমার গল্পের ফেরিওয়ালার জীবন।
আমি@Al-Amin ইসলাম , আমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আমার ইচ্ছা আমি দেশ ও দশের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করতে চাই, আমার গর্ব হয় নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে। আমি গর্বিত বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, বাংলাদেশের মানুষ মাছে ভাতে বাঙালি, প্রকৃতির রূপ, রস ,গন্ধ সবকিছুই আমার অহংকার।
প্রয়োজনে পাশে আছি আমার সাথে যোগাযোগ করুন:-
ফেসবুক || টুইটার || ইউটিউব || ডিস্কোড
https://twitter.com/Alamini15050207/status/1506970641370877952?t=LB1h_Oxa7q2Fw6TiSUGWXw&s=19
খুব সুন্দর একটি লেখা গল্পের ফেরিওয়ালা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার শেয়ার করা গল্পের ফেরিওয়ালা লেখাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনি খুব বাস্তবধর্মী লেখা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। গল্পের ফেরিওয়ালা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আপনার সুন্দরতম মন্তব্য পেয়ে আমি অনেক অনেক খুশি ও আনন্দ হয়েছি, অসংখ্য ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য।
প্রথমেই বলি এমন ঘটনা না পড়ে কমেন্ট করা উচিত নয়। অনেকেই আপনার পোস্টে কমেন্ট করবেন তা দেখলেই বুঝা যাবে যে তারা পোস্ট একফোঁটাও পড়েনি। আমি আপনার লিখার লাস্টের লাইনগুলোর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। সত্যিই আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। এমন সময় আসবে যখন বাবা-মা সন্তানকে ভালোবাসবে না আমার মনে হয়। সন্তান যদি এমন করে তাহলে বাবা মা কি করে তাদের এত কষ্ট করে বড় করার আশা আকাঙ্ক্ষা মনে জন্মাবে। আমার তো ইচ্ছে করছিল তার সন্তান যখন সে সে সে ছিল তাদেরকে ইচ্ছেমতো পিটালে তাহলে ঠিক হতো।
ভাই আপনার সুন্দরতম ও গঠনমূলক মন্তব্য পেয়ে সত্যিই আমি অনেক অনেক খুশি হয়েছি, সেই সাথে আমি আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি যে জেনারেল রাইটিং পোস্টগুলো 99% ইউজার পড়ে না এমনকি এক শতাংশ মানুষ পড়ে তার মধ্যে আপনি অন্যতম । শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য।
আসলে আপনি ভালভাবে গল্পের ফেরিওয়ালা সাজতে পেরেছেন। অন্যের ছবিতে একটি গল্প সাজানো যা অনেকের পক্ষে সহজসাধ্য নয়। যা আপনি পেরেছেন।
লেখার নাম করণ আমার কাছে সব চেয়ে বেশি ভালো লাগছে। গল্পের ফেরিওয়ালা কথাটি দেখেই আপনার পোস্ট পড়া শুরু করলাম। আসলেই ভাই আপনি অনেক সুন্দর লিখেন। আপনার সাজানো গুছানো লেখে পড়ে আপনার লেখার প্রেমে পড়ে গেলাম। 💞
আপনার সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার সুন্দরতম মন্তব্য পেয়ে আমি সত্যিই অনেক অনেক আশ্চর্য খুশি হলাম, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য।