ছোট গল্প * ভুলা যায় না / শেষ পর্ব ।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম

আসসালামু আলাইকুম

শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভালো আছেন । আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি ।

প্রিয় , আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম।
আমি আপনাদের মাঝে ছোট গল্প * ভুলা যায় না প্রথম পর্ব গত পরশুদিন উপস্থাপন করেছি। আজ আমি ভুলা যায় না গল্পের শেষ পর্ব উপস্থাপন করেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।

আসুন শুরু করি

IMG_20230215_200620.jpg

গত পর্বে শেষের লাইনগুলো ছিল। লিমারও মুন্নাদের পরিবারের প্রতি নেগেটিভ চিন্তাভাবনা জন্মেছে। তাই সে মুন্নার সাথে আর সংসার করতে চাই না।

তাই প্রতিনিয়ত তাদের পরিবারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমস্যা হতো মুন্নার সাথে। এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো। লিমার মনে দিন দিন মুন্না এবং তার পরিবারের উপর বিরূপ প্রভাব আরও তীব্র আকার ধারণ করলো‌। মুন্না তার স্ত্রী অর্থাৎ লিমিকে অনেক ভাবে বুঝাতে লাগলো। কিন্তু লিমা তার কোন কথা পাত্তা দিলো না। লিমা কথা হচ্ছে একজন বেকার অশিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সাথে কোন ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে না। মুন্না সাথে তার জীবন মানিয়ে নিতে কোন ভাবে পারবে না। সে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে।

এমন পরিস্থিতিতে মুন্না খুবই হতবাক সে এখন কি করবে কোন কিছু বুঝতে পারছে না। মনে মনে ভাবছে যদি একটি চাকরি পাওয়া যেতো তাহলে কিছুটা হলেও লিমার চাহিদা পূরণ করতে পারতো। মুন্না লিমাকে অনেক ভাবে বুঝিয়ে আকতি মিনতি করে বলছে তাদের জীবন একসাথে চালিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই একই চাকরি ঠিক করে নেবে ‌। তখন আর ফ্যামিলিতে অভাব অনটন থাকবে না। মুন্না চাই না কোনভাবে তার সংসার ভেঙ্গে যাক‌। কিন্তু লিমার একটি কথা এই হতদরিদ্র পরিবারে কোন ভাবে থাকবে না। এদিকে লিমার মামাতো বোন এবং তার দূর সম্পর্ক আত্মীয় প্রায় সময় এসে লিমার সাথে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য কথাবার্তা বলতে থাকে।

তাদের কথাবার্তা শুনে লিমার মন আরো খারাপ হতে লাগলো। যত দিন যাচ্ছে ততই লিমা খুবই সাধারণ বিষয় নিয়েও অনেক বাড়াবাড়ি করে। সে কথায় কথায় ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলে। এমন পরিস্থিতিতে মুন্নার আত্মীয়-স্বজন এবং মুন্না আম্মা লিমাকে বুঝিয়ে বলছে সে যেভাবে চাই সেভাবে তার মতন করে জীবন যাপন করবে‌। কেউ তাকে কোন কিছুই বলবে না। সবাই মিলে এত সুন্দর করে বুঝানোর পরেও লিমার কোন কথাই কানে গেল না। তার শেষ কথা হল এই গরিব ঘরে বেকার স্বামীর সাথে কোন ভাবে সংসার করবে না। আসলে মুন্না লিমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছে সে চায় না তাদের এই সুন্দর সংসার কোন ভাবে ভেঙে যেতে। তাই সেই লিমাকে ডিভোর্স দিতে রাজি হলো না। এভাবে আরো কয়েকদিন কেটে গেলো। মুন্না যখন লিমাকে ডিভোর্স দিচ্ছে না। তখন সে তার বাপের বাড়ি চলে গেলো। লিমা যখন তার বাপের বাড়ি চলে গেলো মুন্না মাথার উপর যেন আকাশে ভেঙে পড়েছে। সত্যি সেই অনেক কষ্ট পেয়েছে। তার সুন্দর সংসার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।

আসলে মুন্না কখনো কল্পনা করে নাই তাদের এই সুন্দর সংসার ভেঙে যাবে। তাই সে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। যে কষ্ট কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়। মুন্না অনেক বার লিমাদের বাড়িতে গিয়েছে। তাকে ফিরে আনতে কিন্তু কিছুতে আর লিমা ফিরে আসলো না। সে অনেকভাবে চেষ্টা করেছে লিমাকে তার কাছে ফিরে আনতে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছে। মুন্না একদিন বিকেলে লিমাদের বাড়িতে গেল তার সাথে কথা বলতে। লিমাকে তার সাথে তাদের বাড়িতে ফিরে আনতে। কিন্তু লিমা তার সাথে কুকুরের মতো আচরণ করলো তাকে বাড়ি থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। সে থেকে মুন্নার মন কঠিন পাথর হয়ে গেলো। সেই থেকে মুন্না আর কখনো লিমাকে নিয়ে ভাবে নাই। তখন থেকে মুন্না ভেবে নিয়েছে তার জীবন থেকে লিমা মরে গেছে।

কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর মুন্নার একটি চাকরি হলো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। বেতন মোটামুটি ভালো। এখন মুন্না লিমাকে হারিয়ে চাকরি পেয়ে তার দিন বেশ ভালই কাটছে। এদিকে লিমা একটি ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করে ফেলেছে। মুন্না যখন বাড়িতে আসলো তখন লিমার বিয়ের কথা শুনতে পেয়ে খুবই দুঃখ প্রকাশ করল। সত্যি তার সংসার ভেঙে গেল তবে সে পরিস্থিতি মানিয়ে নিয়ে আবার চাকরি করতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চলে গেলো। মুন্না চাকরি করতেছে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলো।

এদিকে তাদের পরিবারে তার মা খুবই অসুস্থ। তাই তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন যাচ্ছে সে আবার বিয়ে করতে। তাই আত্মীয় স্বজন এবং পরিবারের লোকেরা একটি মেয়ে ঠিক করে ফেলেছে মুন্নার বউ করার জন্য। মুন্না আত্মীয়-স্বজনের কথা মেনে সামাজিকতা রক্ষা করে আবারো একটি বিয়ে করলো। বিয়ে করার পর তাদের সংসার খুব সুন্দর ভাবে কাটছে। অনেকদিন পর সে যখন গ্রামের বাড়িতে আসলো হঠাৎ একদিন একটি রেস্টুরেন্টে মুন্না সাথে দেখা হয়ে গেলো লিমার। লিমাকে দেখে মুন্না চিনতে পেরেছে। মুন্না রিমাকে চিনেও কিছু বলে নি। মুন্নাকে দেখে লিমা এসে তার সামনের চেয়ারে বসলো।

লিমা মুন্নার খোঁজ খবর নিচ্ছে কি করে কেমন আছে জানতে চাচ্ছে। মুন্না তখন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলছে ভালো আছি। তখন লিমা মুন্নাকে দেখে বললো তোমাকে দেখতে মনে হচ্ছে তুমি বেশ ভালো আছো। তখন লিমা নিজ থেকে বলতে লাগলো তার দিনকার ভালো যাচ্ছে না । এখন সে তার বাপের বাড়িতে রয়েছে। তার যে বিয়ে হইছে ঐ বিয়ে কিছুদিন যাওয়ার পর ভেঙে গেলো। লিমা তখন চোখের অশ্রু ঝরিয়ে বলছে তোমার সাথে থাকলে অনেক ভালো হতো। তখন মুন্না বলল ঐসব কথা বলার দরকার নেই । আর মনে মনে বলছে হৃদয়ের ব্যথা কখনো ভুলা যায় না।

পোস্টটির কোথায় ভুল ত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

পোস্ট বিবরণ :-

শ্রেণীছোট গল্প
ক্যামেরাRedmi note 7
পোস্ট তৈরি@ah-agim
লোকেশনফেনী, বাংলাদেশ

এতক্ষণ আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমার পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।আপনাদের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা পেলে আমি এই ধরনের ছোট গল্প আরো উপস্থাপন করবো, ইনশাআল্লাহ।
অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে।সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন ।এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।

সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো ।

আমার পরিচিতি

G0mIPwfurEJVlbirXIKFAUZVIuK.jpg

আমি আওলাদ হোসেন আজিম ।আর আমার ইউজার নাম @ah-agim আমি একজন বাংলাদেশী। মাতৃভাষা বাংলায় বলে - আমি খুব গর্বিত। আমার মনে ভাষা বাংলা এর প্রকাশ করতে খুব ভালো লাগে। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সন্মানীত এডমিন মডারেটর সহ সকল সদস্যদের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা বিরাজমান। আমি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া আমি বিভিন্ন ধরনের কাগজের ( কারুকাজ ) এবং বিভিন্ন রকমের রান্না ( রেসিপি ) করতে পছন্দ করি। আমি ফটোগ্রাফি করে থাকি। ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে।বিশেষ করে সৃষ্টিকর্তার দেওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য সমূহ ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে ভালো লাগে।


VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

♥️ আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ 🖤

Sort:  
 last year 
যদিও এই গল্পের আগের পর্বটি পড়া হয়নি। তবে এটা ঠিক যে কেউ কাউকে কষ্ট দিয়ে সুখি হতে পারে না।লিমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।কিন্তু আমার মনে হয় মুন্নাও লিমাকে আজও ভুলেনি।তবে প্রকাশ করেনি।যাইহোক আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 59715.05
ETH 3186.24
USDT 1.00
SBD 2.42