ছোট গল্প (জীবন থেকে নেওয়া) /১০% প্রিয় 💞 @shy-fox
বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম
আসসালামু আলাইকুম
শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভালো আছেন । আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি ।
প্রিয় , আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম।
আজ আমি আপনাদের আমার জীবন থেকে নেওয়া, ছোট গল্প সম্পর্কে বলতে চাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।
আসুন শুরু করি
আমার বয়স খুব কম তখন মাত্র ১২ বছর। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আজ থেকে ৯-১০ বছর আগে সবার নিকট মোবাইল ছিলো না। তখন সাধারণত যাদের অথিক অবস্থায় খুব ভালো বা, যারা ব্যবসায়িক শ্রেণীর লোকজন তারা মোবাইল ব্যবহার করতো। ঐ সময় আমার এক বন্ধু ছিলো তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো তার একটি মোবাইল সেট ছিলো। সে প্রতিদিনই আমাকে মোবাইল সম্পর্কে নিত্য নতুন তথ্য দিতো। তখন থেকে আমার মোবাইল ব্যবহার করতে খুবই ইচ্ছে হলো । যখনি তার সাথে আড্ডা দিতাম তখনই সেই মোবাইল সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলতো। সে থেকে আমার মোবাইলের কৌতুহল জাগলো। আমি প্রায় সময় সুযোগ পেলে তার মোবাইল ব্যবহার করতাম। আমার মনের মধ্যে জাগ্রত হলো আমার যদি একটি মোবাইল সেট থাকতো তখন থেকে সবসময় শুধু একটি মোবাইল ফোন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছি। তখন খুব ছোট ছিলাম তাই পরিবারের কাছে মোবাইল সেট চাওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। এমনিতে মাত্রা অতিরিক্ত কোন কিছু চাইলে বাবা খুবই বকাঝকা করতো। তারপরও প্রতিদিনই ভাবতাম কিভাবে নিজের একটি মোবাইল সেট নেওয়া যায় । মোবাইল সেটের জন্য আমার ঘুম হতো না। আসলে আমার যে জিনিসের পাওয়ার ইচ্ছা হয় তা না পাওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারি না।
এভাবে করতে করতে কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলো। তারপর একদিন হঠাৎ করে দুপুরবেলায় খাবার টেবিলে আব্বুকে বললাম আমাকে কে একটি মোবাইল ফোন কিনে দিতে। আমার কথা শুনে তো আব্বু খুবই আচয্য হয়ে গেলো।বাবা বললেন এত বাজে বুদ্ধি মাথায় কিভাবে এলো? এত অল্প বয়সে মোবাইলের কি দরকার তোমার । বড় হলে মোবাইল কিনে দেবো ।এই বলে ধমক দিয়ে খাবার শেষ করে চলে গেল। কয়দিন পর আম্মুকে মোবাইল কিনে দেওয়ার জন্য বললাম আম্মু বললো আমার কাছে তো কোন টাকা পয়সা নেই। আর তুই তো তোর আব্বুকে চিনস তোর আব্বু কোনভাবে এখন মোবাইল কিনে দিবে না। আসলে যত দিন যাচ্ছে ততই আমার মোবাইলের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্ম হচ্ছে। পড়ালেখা, খেলাধুলা, ঘুরতে যাওয়া, আড্ডা দেওয়া কোন কিছুতে মন বসছে না। এভাবে করতে করতে কয়েক মাস কেটে গেলো আমি আবার আব্বুকে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার কথা বলছি তখন আব্বু আমাকে খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বললো এখন পড়ালেখার সময় মোবাইল ব্যবহার করার সময় নয় ।
সময় হলে তোমাকে ভালো মানের মোবাইল কিনে দেবো। অন্য কোন কিছুর প্রয়োজন হলে বলতে পারো। তখন আব্বুর কথাগুলো শুনে আমার কাছে খুবই কষ্ট লাগলো। তখন বুঝতে পারলাম মোবাইল পাওয়া আর হবে না। কিন্তু যেভাবে হোক আমাকে মোবাইল পেতে হবে। মোবাইল পাওয়া যে আমার নেশাতে পরিণত হলো। কয়েকদিন যাবার পর আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এলো আমার একটি সাইকেল ছিলো সাইকেল দিয়ে আমি প্রাইভেটে এবং স্কুলে যেতাম। সাইকেলটি কয়েক মাস আগে আব্বু নতুন কিনে দিয়েছে। আমি ভাবতে লাগলাম আব্বু আম্মুকে না বলিয়ে সাইকেলটি বিক্রি করে দেবো। তখন আমি আমাদের ক্লাসের একটি ছেলের কাছে সাইকেলটি বিক্রি করে দিয়েছি। সাইকেলটি বিক্রি করার পর বাড়িতে গিয়ে বললাম সাইকেল চুরি হয়ে গেলো। তখন আব্বু বাড়িতে ছিল না তাই সাইকেলটি খোঁজার আর কোন চেষ্টা করা হলো না। আমি সাইকেল বিক্রি টাকা দিয়ে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড নোকিয়া বাটন মোবাইল সেট কিনলাম। মোবাইল কেনার পর আমি খুবই আনন্দিত যাই হোক আমার বুদ্ধি কাজে লেগেছে কোন সমস্যা হয়নি। যখন আমি মোবাইল কিনেছিলাম তখন যে জেএসসি পরীক্ষার বাকি ছিল মাত্র ১৬ দিন। মোবাইল হাতে পাওয়ার পরে যখন সুযোগ পেতাম তখনই মোবাইল ব্যবহার করতাম। মোবাইলে বিভিন্ন গেম খেলতাম। মোবাইলের কারনে এদিকে পড়াশুনা মন বসছে না। ঐ সময়ে আমি সারাক্ষণ মোবাইলের মধ্যেই লেগে থাকতাম। তাই আমি জেএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি।
এজন্য পরিবারের সকলে আমার উপরে খুবই বিরক্ত বোধ হলো। পরীক্ষার ফলাফল ভালো না করার কারণে সকলে আমাকে উঠতে বসতে নানা ধরনের কথা বলছে। যাই হোক পরীক্ষায় ভালো নাম্বার না পেলেও সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে। এর মাঝে আব্বু বাড়িতে ফিরে এলো। ভালো ফলাফল না করার কারণে আব্বুর মন খারাপ। তখন আমার আব্বু লেখাপড়ার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য স্কুলে গেলো। স্কুলে আমার সাইকেলটি দেখতে পেলো। তখন থেকে সব সমস্যা সৃষ্টি হলো। আব্বু সাইকেলটির সম্পর্কে স্কুলের শিক্ষকদেরকে অবগত করলেন। শিক্ষকেরা আমি সাইকেলটি যার কাছে বিক্রি করেছি তাকে নিয়ে এলেন। ঐ ছেলেটি আব্বু এবং শিক্ষকদের সামনে সব সত্য কথা ফাঁস করে দিলেন। আব্বু যখন সাইকেলটি দেখেছে তখন আমি ওই বন্ধুকে বলছি সাইকেলটি আমার কাছে থেকে কিনেছে এই কথা না বলতে কিন্তু অফিসে আসার পর শিক্ষকদের ভয়ে সব সত্য কথা বলে দিলো। এই ঘটনার জন্য শিক্ষকেরা সবাই আমাকে একতরফা মার দিলেন। এবং শিক্ষকরা সবাই আমার উপর রেগে গেলেন। মার খেয়ে কোনরকম বাসায় আসলাম তারপর রাতে আব্বু আমাকে চোরের মতন অনেক অনেক মারছে। আব্বু যেভাবে আমাকে মেরেছে এভাবে মার আমি জীবনে কখনো খাইনি। এখনো এ মারের কথা মনে পরলে গা শিউরে উঠে। তখন থেকে পরিবারের কোন সমস্যা হলে সব দোষ আমার উপরে পড়তো। আমি যতই সত্য কথা বলি না কেন পরিবারের কেউ আমার কথা বিশ্বাস করতো না। যে মোবাইলের জন্য এত কিছু হলো সে মোবাইলটি কিছুদিন পরে চুরি হয়ে গেলো। সব কষ্ট আমার বিফলে গেল তখন থেকে বুঝতে পারলাম সত্য কখনো চাপা থাকে না।
এতক্ষণ আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমার পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।আপনাদের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা পেলে আমি এই ধরনের গল্প আরো উপস্থাপন করবো , ইনশাআল্লাহ।
- অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে।সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন ।এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো ।
আমার পরিচিতি
আমি আওলাদ হোসেন আজিম ।আর আমার ইউজার নাম @ah-agim আমি একজন বাংলাদেশী। মাতৃভাষা বাংলায় বলে - আমি খুব গর্বিত। আমার মনে ভাষা বাংলা এর প্রকাশ করতে খুব ভালো লাগে। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সন্মানীত এডমিন মডারেটর সহ সকল সদস্যদের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা বিরাজমান। আমি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া আমি বিভিন্ন ধরনের কাগজের ( কারুকাজ ) এবং বিভিন্ন রকমের রান্না ( রেসিপি ) করতে পছন্দ করি। আমি ফটোগ্রাফি করে থাকি। ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে।বিশেষ করে সৃষ্টিকর্তার দেওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য সমূহ ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে ভালো লাগে।
আসলেই ভাই সত্য চাপা থাকে না।আমার পাশের বাড়ির এক ছেলে তার বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করত।তার বাবা বড় ব্যবসায়ী তাই বুঝতে পারত না।একদিন ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য টাকা রেখেছিলেন।কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখেন টাকা কম।সেদিন ঐ ছেলের সব ফাস হয়ে যায়।তাই মিথ্যা বলা উচিত না।আর সব সময় বড়দের কথা শুনে চলা উচিৎ।
পোস্টটি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ভাইরে ভাই আপনি তো সাংঘাতিক লোক ছিলেন সাইকেল বিক্রি করে মোবাইল ভাবা যায়। তবে ভাই কোনো জিনিসের উপর এতটা আসক্ত হওয়া কিন্তু মোটেই ঠিক না। এজন্যই হয়তো বলে গন্ধ এবং সত্য কখনো চাপা থাকেনা। আপনার ঘটনাটা অনেকের জন্য শিক্ষা।।
সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার এই কথাটি আমার খুবই ভালো লেগেছে বড়দের কথা প্রথমে তিতো লাগলেও পরে কিন্তু অনেক মিষ্টি হয়ে থাকে। আর ভাই সত্যি কখনো চাপা থাকে না। আপনার বন্ধুর কাছ থেকে মোবাইলের সব খবরা-খবর পেয়ে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে আপনি সাইকেল বিক্রি করে মোবাইল কিনেছেন। যার ফলে আপনার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। আপনি যদি আপনার বাবার কথা শুনতেন তাহলে আপনার পরীক্ষা হয়তো ভালোই হতো। আপনি আপনার বাবার কথাটি বুঝেছেন পরীক্ষার খারাপ হওয়ার পরে। আপনার গল্পটি পড়ে আসলে খুবই ভালো লেগেছে। আশা করি আমাদের মাঝে এরকম গল্প আরো শেয়ার করবেন।
পোস্ট দেখে সুন্দর ভাবে আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
কোন কিছুতে অতিরিক্ত আসক্ত হওয়া ভালো না, যা জীবনের ক্ষতি হয়ে নিয়ে আসে। খুব ভালো লাগলো আপনার এই গল্পটি পড়ে। হয়তো গল্পটি পড়ে অনেকেই এই বিষয়ে সচেতন হবে।
গঠনমূলক মন্তব্য শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।