ছোট গল্প, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস /শেষ পর্ব
বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম
আসসালামু আলাইকুম
শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভালো আছেন । আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি ।
প্রিয় , আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম।
আজ আমি আপনাদের, ছোট গল্প, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস শেষ পর্ব সম্পর্কে বলতে চাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।
আসুন শুরু করি
আমি আপনাদের মাঝে গল্পের প্রথম পর্ব আলোক পাঠ করেছি ।
বিদেশে যাওয়ার জন্য আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সকলের সাথে বিদায় নিয়ে ঢাকায় এয়ারপোর্টে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্টেশন এসেছি। এই লাইনগুলো গত পর্বের শেষে ছিল।
ঐ লোকটি বিদেশ যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, জামা কাপড় এবং সাথে কিছু টাকা নিয়ে এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য রেলস্টেশনে এসেছে। এবং রেলের টিকেট কেটেছে। তার টিকিট কাটার আধা ঘন্টার পর ট্রেন ছাড়ার কথা ছিলো। তাই সে ট্রেন স্টেশনের বেঞ্চে বসে টেন আসার জন্য অপেক্ষা করতেছে। তার পাশে জামা কাপড় এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের ব্যাগটি রেখেছিলো। লোকটি প্রিয় মানুষগুলো আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছে এমনিতেই তার মন খুব খারাপ। তার উপর ঐ জায়গা গিয়ে চাকরি করে দেশে টাকা পাঠানো লাগবে কারণ সে কিছু টাকা ঋণ করে বিদেশে যাচ্ছে। সেদিন করে টাকা নেওয়াতে লোকটি খুব চিন্তিত। লোকটি বিষন্ন মনে ট্রেন আসার জন্য অধিক আগ্রহে বসে আছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে তো চোর, বাটপার, প্রতারক ধোকাবাজ এসব লোকের অভাব নেই। তার পাশে থাকা ব্যাগটি হারিয়ে যায়। অর্থাৎ যে কোন ব্যাগটি তার চুরি করে নিয়ে যায়।
যথা সময়ে ট্রেন আসলো সে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার পাশে তাকাতে দেখলো ব্যাগটি নেই। তার ব্যাগটি নেই দেখে মনে হলো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে । লোকটি নাম ছিল শিমুল। শিমুল তখন পাগলের মতন ব্যাগটি খুঁজতে লাগলো। অনেক খোঁজাখুঁজি পরেও ব্যাগটি আর পেলো না। এদিকে টেন স্টেশন থেকে ছেড়ে গেলো। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাগটি হারিয়ে গেল শিমুলের ১১ ঘণ্টা পরে ফ্লাইট। যথা সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বিমানবন্দরে না গেলে তার আর বিদেশ যাওয়া হবে না। এমন পরিস্থিতিতে দিশাহারা হয়ে পাগলের মতন ব্যাগটি খুঁজতে লাগলো। চুরি হওয়া কোন জিনিস কি আর খুঁজে পাওয়া যায়।
? এমন পরিস্থিতিতে তার কথা বলার ভাষা হারিয়ে গেছে। ব্যাগটি না পেয়ে হৃদয় ভাঙ্গা ব্যথা নিয়ে শিমুল বাড়ি গেলো।
শিমুল তার ব্যাগটি হারিয়ে গেছে এই কথা বাড়ির লোকজনের সবাইকে বলছে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো অনেকে তার কথা বিশ্বাস করে নাই। অনেকেই তাকে বলছে সে মিথ্যা কথা বলছে, বিদেশ না যাওয়ার জন্য বাহানা ধরছে, টাকা নিয়ে কাউকে দিয়ে দিছে, টাকা পরিশোধ করবে এ কারণে মিথ্যা কথা বলছে, এসব নানা ধরনের বিভিন্ন কথাবার্তা তাকে বলতেছে। তার এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে সান্তনা না দিয়ে বরং তার উপর বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। ঘরে এবং ঘরের বাইরে প্রতিট মুহূর্তে তার উপর কথার মাধ্যমে তাকে কষ্ট দিচ্ছে। এই অবস্থা এমন কথাগুলো মেনে নেওয়া যায় না। এমনিতে সে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। তার উপর এসব কথাবার্তা শুনে সে রাগে অভিমানে কষ্টে বাড়ি থেকে আজ কয়েকদিন রেলস্টেশনে এসেছে আর বাড়িতে যায় নি। তার দুঃসময় তার পাশে কেউ ছিল না। তার কথাগুলো কেউ শুনলো না।
বিশেষ করে যে আপন মানুষগুলোর কথা ভেবে সেই বিদেশে যাচ্ছে পরিবারের একটু সুখ শান্তি ফিরে আনার জন্য। সে মানুষগুলো তাকে ভুল বুঝলো। শিমুল এখন কি করবে কোথায় যাবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। সে এখন আশা করে তার ব্যাগটি ফিরে পাবে। কোন কিছু হারিয়ে গেলে এমনি মনে হয়। মনে হয় যেন ঐ হারিয়ে যাওয়া জিনিসটি আবার ফিরে আসবে। শিমুলের প্রতিক্ষনে এই ভাবনা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া জিনিস কখনো ফিরে পাওয়া যায় না।
শিমুলের মুখে এতো কষ্টের হৃদয় বিদারক কথা শুনে সুমন এবং তার বন্ধুর সত্যি খুব কষ্ট হলো। সুমন বললো আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এই সময়ে সত্যি সান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমাদের নেই। আপনি আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে চলেন আমি ঢাকাতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করি আপনি এমন দুঃসময়ে ভেঙ্গে পরলে চলবে না। নিজের মনোবল বাড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আপনি এভাবে দিশাহারা হয়ে স্টেশনে থাকলে আপনার জীবনে আরও অন্ধকার নেমে আসবে। আমরা বাড়িতে দুদিন থাকবো। আবার ঢাকা ফিরে যাবো দেখি আপনাকে আমাদের কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া যায় কিনা? সুমন এবং তার বন্ধুর কথা শুনে শিমুলের চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে।
গল্পটি আমি বাস্তব ঘটনার অবলম্বনে লিখেছি। যদিও গল্পটি অনেক ছোট হয়েছে তারপরে গল্পটির মাঝে অনেক শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। যেকোন সময় আমাদেরকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে বিশেষ করে কোথায় যেতে হলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজের কাছে রাখতে হবে। জিনিসপত্রের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। আসলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে গেলে আপন মানুষগুলো পর হয়ে যায় । পৃথিবীতে টাকা ছাড়া সম্পর্ক গুলো মলিন হয়ে যায়। আমাদের সমাজে বাস্তবতা হলো কেউ বিপদে পড়লে তাকে সান্তনা দিয়ে বরং তাকে বিভিন্নভাবে কূট কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়। বিপদের সময় মানুষের কূট কথা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও অনেক মানুষই নিঃস্বার্থভাবে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে।
পোস্টটির কোথায় ভুল ত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
পোস্ট বিবরণ :-
শ্রেণী | ছোট গল্প |
---|---|
ক্যামেরা | Redmi note 7 |
পোস্ট তৈরি | @ah-agim |
লোকেশন | ফেনী, বাংলাদেশ |
এতক্ষণ আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমার পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।আপনাদের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা পেলে আমি এই ধরনের খাবার ছোট গল্প আরো উপস্থাপন করব , ইনশাআল্লাহ।
- অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে।সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন ।এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো ।
আমার পরিচিতি
আমি আওলাদ হোসেন আজিম ।আর আমার ইউজার নাম @ah-agim আমি একজন বাংলাদেশী। মাতৃভাষা বাংলায় বলে - আমি খুব গর্বিত। আমার মনে ভাষা বাংলা এর প্রকাশ করতে খুব ভালো লাগে। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সন্মানীত এডমিন মডারেটর সহ সকল সদস্যদের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা বিরাজমান। আমি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া আমি বিভিন্ন ধরনের কাগজের ( কারুকাজ ) এবং বিভিন্ন রকমের রান্না ( রেসিপি ) করতে পছন্দ করি। আমি ফটোগ্রাফি করে থাকি। ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে।বিশেষ করে সৃষ্টিকর্তার দেওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য সমূহ ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে ভালো লাগে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া আমাদের দেশে কিংবা আমাদের আশেপাশে তো চোরের অভাব নেই। সামান্য একটা ব্যাগের লোভ সামলাতে পারল না। এবার তো শিমুলের পুরো জীবনটাই অনিশ্চিত হয়ে গেলো। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর ছিল আপনার গল্পটি।
আমাদের সমাজ ব্যবস্হা এমনি, সেখানে চোর ও ডাকাতের কোন অভাব নেই। আসলে কষ্টের মানুষেরা আরো কষ্টে পড়ে। শিমুলকে সবাই কথা না শুনিয়ে তার পাশে থাকতে পারতো। শিমুল নিরুপায় হয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে।
আসলেই মানুষ বুঝতে পারে না যে খেতে খেতে কতটা যে কষ্ট হয়। বিশেষ করে একজন মানুষ যদি তার পরিশ্রম দিয়ে তার পরিবার চালায় তাহলে কতটা না কষ্ট করতে হয় তাকে। কিন্তু অন্য একজন তার কাছ থেকে তার পরিশ্রমটা ছিনতাই করে নিয়ে যায় তখন তো সে খুবই ভেঙে পড়ে। আসলেই আমাদের সমাজে অনেক রকমের মানুষ বসবাস করে। যারা একজন আরেকজনের কষ্টটা তেমন বুঝতে পারে না। কারণ যেই মানুষই কষ্ট করে সেই বুঝতে পারে অন্যের কষ্টের কতটা দাম। সকল মানুষেরই উচিত নিজের লোভ সামলিয়ে রাখা। তাহলে সবাই একদিন সঠিক হতে হাঁটতে পারবে। না হলে কখনোই মানুষ মানুষের সাথে চলাফেরা করতে পারবেনা।