শৈশবের ঈদ আনন্দ ১০% প্রিয় 💞 @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম

আসসালামু আলাইকুম

শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভাল আছেন । আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি ।

প্রিয় , আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম।

আজ আমি আপনাদের শৈশবের ঈদ আনন্দ সম্পর্কে বলতে চাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।

সকলকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক। সকলে প্রিয়জনদের সাথে খুব সুন্দর ঈদ আনন্দ উপভোগ করুন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সকলকে আমাদের বাসায় দাওয়াত রইল অবশ্যই আসবেন।

আসুন শুরু করি

গত পর্ব, সত্যি এই মুহূর্তগুলো যখনি মনে করে খুবই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।

pexels-photo-3163677 (1).jpeg

source

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতাম। বাড়িতে পুকুরে বা, পানির টেপে গোসল করতাম না। বাড়ি থেকে একটু দূরে বড় একটি পুকুর রয়েছে। সেখানে মহল্লার সবাই গোসল করতে আসে। আমি সবার সাথে গোসল করতে যাই। ঈদের দিন সকাল বেলা গোসল করতে গিয়ে সমবয়সী সকলের সাথে পানিতে লাফালাফি একে অন্যের সাথে দুষ্টামি সহ অনেক ধরনের মজা করতাম সকলের চোখে মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতাম। গোসল করা শেষ বাড়িতে ফিরে আসতাম পরবর্তীতে নতুন জামা গায়ে দেওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ সময় আসতো। নতুন জামা গায়ে দেওয়ার কি যে আনন্দ অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আম্মা জামা গায়ে দেওয়ার কাজে সহায়তা করতো। জামা গায়ে দেওয়ার পরে মুখ দিয়ে হাসির বন্যা বয়ে যেত। জামা গায়ে দেওয়ার পরে প্রথমে বাড়ির সকলের সাথে দেখা করতাম।

জামা গায়ে দেওয়ার পর সকলকে শুধু জিজ্ঞেস করতাম কেমন লাগছে সকালে অনেক সময় সুন্দর মন্তব্য করতো। বাড়ির দাদি, কাকীর, মামি , ছাছি, সবাই জামা নিয়ে অনেক মজা করতো এবং দুষ্টামি করতো। আমার কাছে খুব ভালো লাগতো। সবাইকে জামা দেখানো পর্ব শেষ করার পর ঘরে ফিরে আসতাম। তখন আম্মা বিশেষ করে সেমাই নারিকেল পিঠা এবং ডিমের ফুটিং খেতে দিতে। কিন্তু ঈদের আনন্দে এগুলো একটু আমি খেতাম না। তারপর আম্মু জোর করে একটু খাওয়াতেন। বাড়ির সবাই খুব আনন্দ সহকারে মিষ্টিমুখ করতো। তারপর মূল আনন্দের কার্যক্রম শুরু হতো অর্থাৎ সালাম করার পর্ব শুরু হতো । প্রথমে আমি আম্মাকে সালাম করতাম তিনি আমাকে অনেক টাকা দিতেন । তারপর আব্বুকে সালাম করতাম তিনিও আমাকে অনেক টাকা সালামি দিতেন। পরবর্তীতে বাড়ির সকলকে যাকে যেখানে যে অবস্থায় পেতাম শুধু সালাম করতাম। সালাম করার পরে সবাই টাকা দিতো আহা কি আনন্দ। টাকা দেওয়ার সাথে সাথে শুধু পকেটে রাখতাম‌। দেখা গেছে একজন কে দুই তিনবার সালাম করছি। বাড়ির সকলেই কমবেশি সালামি দিতো ।

pexels-photo-7249190.jpeg

source

পরবর্তীতে আব্বুর সাথে ঈদগাহে যেতাম ঈদের নামাজ আদায় করতে। ঈদগার সামনে ছোট ছোট অনেক ধরনের দোকান বসতো সেখানে অনেক ধরনের খেলনা, কসমেটিক এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার আইটেম থাকতো। এত দোকান, রং বেরঙের এতো ধরনের খেলনা দেখে খুবই অস্থির হয়ে পড়তাম। আব্বুকে বলতাম, আব্বু এই খেলনা কিনে দাও, আবু এটা কিনব, আব্বু ওটা আমার পছন্দ হয়েছে, একটা কিনবো শুধু এইভাবে বলতে থাকতাম। আব্বু আমাকে বলতো খেলনা কম কিনে খাওয়ার জিনিস কিনে দিই। আমি আব্বুকে বলতাম আমি কোন কিছু খাব না খেলনা কিনে দাও আমাকে। প্রত্যেক দোকান থেকে আমি আমার পছন্দের খেলনা কিনতাম। আব্বু আমাকে কিনে দিতো। অনেক ধরনের খেলনা কিনে আমি খুবই আনন্দিত হতাম। আব্বু যখনই ঈদগাহের দিকে যেতে লাগতো তখনই আমি আব্বুকে বললাম আব্বু এটা কিনে দাও ওটা কিনে দাও। আব্বু আমাকে বলতো অনেক খেলনা কিনা হয়েছে এখন আমার নামাজ পড়তে যাই। তখনো আব্বুর সাথে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাইতাম। আব্বুর সাথে নামাজ পড়তাম। নামাজ পড়া শেষ করার পর সমবয়সী সকলের সাথে কোলাকুলি করতাম। আব্বুর বন্ধু বান্ধব সহ গ্রামের অনেকেই আমাকে দেখে খুবই আদর করতো। আমাকে অনেক টাকা সালামি দিতো। সকলের সাথে কোলাকুলি এবং বড়রা সকলেই অনেক আদর স্নেহ করে টাকা দিচ্ছে। আসলে এই মুহূর্তগুলো যেন এখনো চোখে উপর ভাসে।

pexels-photo-7957121.jpeg

source

ছোট বড় সকলেই কোলাকুলি করতেছে সকলের মুখে হাসি কি যে আনন্দ পুরো ঈদগাহের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যেতো । চারদিকে সীমাহীন আনন্দের উচ্ছ্বাসের ছড়িয়ে পড়তো। সবাই মনে বাধভাঙ্গা আনন্দো বিরাজ করতো। তারপর আব্বুর সাথে দাদা দাদির কবর জিয়ারত করতাম। কবর জিয়ারত করা শেষ করে অনেক ধরনের খেলনা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসতাম ।বাড়িতে আসার পর আম্মু আমাদের নানান ধরনের খাবার দিতো বিশেষ করে গরুর মাংস, মুরগির মাংস, পোলাও, সাদা কোরমা মাংসের কিমা ইত্যাদি। আমার কাছে যে আইটেম ভালো লাগত আমি সামান্য খেতাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর আব্বু আমাকে নিয়ে আমাদের আত্মীয়দের বাড়িতে যেত। কারো বাড়িতে আমরা হয়তো এক ঘন্টা থাকতাম বা কারো কারো বাড়িতে পাঁচ ঘন্টা আবার কারো বাড়িতে একদিন থাকতাম এভাবেই আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যেতে যেতে ঈদের তিন চারদিন কেটে যেতো। আবার দেখা গেছে মাঝে মাঝে অনেক আত্মীয় আমাদের বাড়িতে আসতো অনেক ধরনের ফল ফলাদি নিয়ে‌ । বিশেষ করে আমার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসতো। প্রতিটা মুহূর্ত খুব আনন্দের ছিলো। এভাবে ঈদের আমেজ বিরাজ করত আমাদের মাঝে।

শৈশবের মুহূর্ত গুলো যখন মনে পড়ে তখন আবারো শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। সেই হাসি আনন্দের দিনগুলো এখনো মনকে নাড়া দেয়। মুহূর্তগুলো যখন চোখের সামনে ভেসে উঠে তখন এই পর্যায়ে এসে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। বড় না হয়ে যদি ছোট থেকে যেতাম তাহলে এসব আনন্দ আবার উপভোগ করতে পারতাম।

আসলে এখনই ঈদ বলতে আনন্দ হলেও শৈশবের ঐ আনন্দের মতো আজ আর আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন তো মন আনন্দের মাঝে - বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক, এবং ব্যাবসায়িক বা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে। তখন এসব ব্যস্ততা ছিলনা শুধু আনন্দই হয়েছিল।

পোস্টটির কোথায় ভুল ত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

  • অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন ।এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।

সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো ।

♥️ আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ 🖤

Sort:  
 2 years ago 

শৈশবের মুহূর্ত গুলো যখন মনে পড়ে তখন আবারো শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। সেই হাসি আনন্দের দিনগুলো এখনো মনকে নাড়া দেয়। মুহূর্তগুলো যখন চোখের সামনে ভেসে উঠে তখন এই পর্যায়ে এসে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। বড় না হয়ে যদি ছোট থেকে যেতাম তাহলে এসব আনন্দ আবার উপভোগ করতে পারতাম।

ভাইয়া আপনার এই কথাগুলো একদম ঠিক ছিল। আমার কাছেও মনে হয় বড় না হয়ে ছোট থাকলেই মনে হয় ভালো হত।ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

ছোটবেলায় আমাদের ঈদের আনন্দটা থাকতো জামার মধ্যে সীমাবদ্ধ। নতুন জামা পেলেই আমরা অনেক খুশি থাকতাম। নতুন জামা পেলেই আমরা গায়ে দিয়ে সবাই দেখাদেখি করতাম কার কেমন হয়েছে। যাক ভালো লাগলো আপনার এত সুন্দর পোস্ট পড়ে।

 2 years ago 

পোস্টটি দেখে এত সুন্দর গঠনমূলক মতামত প্রদান করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 
আপনাকেও পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক

আপনার শৈশবের ঈদ আনন্দের ঘটনা গুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর ভাবে আপনার ঈদের বিভিন্ন বিষয়গুলি আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন । আপনার পোস্ট পড়ে আমার শৈশব কালের ঈদের কথা মনে পড়ে গেল তবে আপনাদের ঈদ অনেক মজা হয় কারন আপনারা সবাই মিলে মাঠে গিয়ে নামাজ পড়তে পারেন যেখানে সেখানে ঘুরতে পারেন কিন্তু আমরা পারিনা।। আমাদের ঈদ একপ্রকার করে কেটে যায়। যাইহোক এত সুন্দর অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

এত সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

আমি এখনো মনে করি ছোটদের জন্যই ঈদ আনন্দ। আমরা ছোট ছিলাম সে সময় আমরা ঈদকে অনেক অনেক সুন্দর ভাবে উপভোগ করেছি।

 2 years ago 

এত সুন্দর করে উৎসাহ প্রদান করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

স্বাগতম

 2 years ago 

বড় না হয়ে যদি ছোট থেকে যেতাম তাহলে এসব আনন্দ আবার উপভোগ করতে পারতাম।

চাইলে তো আর সম্ভব না ভাইয়া শৈশবে ফিরে যাওয়া 🙂। তবে একদম আপনার মতোই আমিও ছোটবেলায় একইভাবে ঈদ করেছি। বিশেষ পুকুরে সবাই একসাথে গেসল করে খুব আনন্দ পেতাম। আর জামা দেখানোতে অনেকই সুন্দর হয়েছে বলতো। এখন হাজার নতুন জামা পড়লেও আগের মতো আনন্দ পায়না 🙂। যায়হোক ভাইয়া,
ঈদ মোবারক

 2 years ago 

ঈদ মোবারক

এত সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনার পোস্ট পড়ে সেই ফেলে আসা কাটানো ঈদের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো৷ বন্ধুরা মিলে অনেক মজা করতাম। সেগুলো এখন শুধু স্মৃতি ফিরে পেতে ইভছে করে সেই দিনগুলো। আপনার জন্য শুভ কামন রইলো। অনেক ভালো লিখছেন।

 2 years ago 

অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই ভাই এত সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67778.49
ETH 3811.60
USDT 1.00
SBD 3.53