বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ পর্ব -১
আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগের সকল ভাই ও বোনেরা আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই বেশ ভালো ও সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ও আল্লাহর অশেষ রহমতে বেশ ভালো ও সুস্থ আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আবারো একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।
আমরা যখন জীবনের প্রথম স্কুল জীবনে পা রাখি তখন আমরা সবাই একটু হলেও ভয় পাই। আবার আমি এমন অনেক বাচ্চাকেও দেখেছি প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে কান্না করে ফেলে আর তাদের আম্মুকে তাদের সাথে ক্লাস করতে হয়। কিন্তু আমি যখন প্রথম স্কুলে যাই তখন আমি বেশ খুশি ছিলাম। আমি ক্লাস এ ঢুকার পর দেখতে পারলাম আমার বয়সের অনেক ছেলে মেয়ে ।এরমধ্যে অনেকেই কান্না কাটি করতেছিল। কিন্তু আমি কান্না না করলেও মনের ভিতরে একটু ভয় কাজ করতেছিল। মনের ভিতর ভয় দুর করার জন্য আমি ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওরা কান্না নিয়েই মহাব্যস্ত। আমার কথা শোনার সময়ই ওদের নেই।
কিছুক্ষণ পরে দেখি একটা মেয়ে যার চুলগুলো বেশ লম্বা সে বেনি করে এসেছিল। সে দেখি ঠিক আমার পাশে এসে বসলো। মেয়েটা কান্না না করলেও সে ছিল বেশ চুপচাপ ছিল । তারপর মেয়েটার সাথে আস্তে আস্তে কথা বলার চেষ্টা করলাম ফ্রেন্ডশিপও করে ফেললাম। মেয়েটার নাম ছিল মালিহা।আমি আর মালিহা সব সময় এক সাথে বসতাম।আমাকে যদি কেও জিজ্ঞাসা করত তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর নাম কি? আমি সাথে সাথে বলতাম মালিহা। আমি আর মালিহা এক সাথেই স্কুল ভ্যানে যাওয়া আসা করতাম। আমাদের সেই স্কুল ভ্যানে আমাদের থেকে বড় ক্লাসের ভাইয়া ও আপুরা আমরা সবাই মিলে এক সাথে স্কুল এ যেতাম ।যার কারনে আমার আর মালিহার ফ্রেন্ডশিপ এর কথা শুধু আমাদের ক্লাস রুমে না পুরো স্কুল জানতো।আমাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়াও লাগতো তখন আমরা আলাদা বসতাম। স্যারেরাও বুঝত আমাদের ঝগড়া হয়েছে যার কারণে আলাদা বসেছি। পরে কেমন করে যে আবার মিল হয়ে যেতাম বুঝতেই পারতাম না। এখন ওই সময়ের ঝগড়া করার কথা মনে করলেই ভীষণ হাসি লাগে। আমি ওই স্কুলটাতে প্লে ও নার্সারি এই দুইটা বছর মালিহার সাথে কাটিয়েছিলাম। বাট এই দুইটা বছর আমার কাছে মনে হয় স্কুল লাইফের মধ্যে বেস্ট ছিল।
এরপর ভালো লেখা পড়ার জন্য আম্মু আমাকে গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসে ভর্তি করিয়ে দেয়। এরপর আর ওইভাবে কখনো দেখা-সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ করা হয়নি। কিন্তু মনের ভেতরে মালিহার কথা সবসময় মনে হতো। যেহেতু আজ থেকে ১২ বছর আগের কথা আমাকে ওইভাবে ফোন ব্যবহার কখনোই করতে দিত না এটাই স্বাভাবিক। আমি সব সময় ভাবতাম আমি যেভাবে মালিহাকে মনে রেখেছি ও কি আমাকে মনে রেখেছে। একবার আমি খোঁজ নিয়েছিলাম মালিহার কিন্তু জানতে পারলাম মালিহা আর গ্রামে থাকে না। ভালো লেখাপড়ার জন্য মালিহা অন্য কোথাও চলে গেছে । তারপর মালিহারার খোঁজ পায়নি।
জীবনের একেক পর্যায়ে হয়তো অনেক বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়েছি কিন্তু মালিহার মত বেস্ট ফ্রেন্ড আর একটাও পাইনি। এখন যত বড় হচ্ছি ততই যেন বুঝতে পারছি সবাই স্বার্থের জন্য বা প্রয়োজনের তাগিদে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু মালিহার সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ টা ছিল একদম নিঃস্বার্থ। সেজন্য আমি কখনোই ওর কথা ভুলতে পারিনি। ৫-৬ বছর আগে আমার বাবা এক বিয়েতে গিয়েছিল সেখানে মালিহার বাবার সাথে আমার বাবার দেখা হয়। তখন বাবা জানতে পারে মালিহার পুরো পরিবার ঢাকায় সেটেল হয়ে গিয়েছে। অবশেষে মালিহার খবরটা পেয়ে বেশ খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু নাম্বার না থাকার কারণে ওইভাবে আর যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি।
আজ এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে মালিহার সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছিল কিনা এই গল্প নিয়ে আমি পরবর্তীতে আবারো আপনাদের সাথে হাজির হবো। সে পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন। আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসসালামু আলাইকুম। আমি আফরিন খান উপমা। আমি রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলায় বসবাস করি। আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের মানবিক বিভাগের একজন ছাত্রী। আমার জাতীয়তা বাংলাদেশী। আমি একজন ব্লগার উদ্যোক্তা। আমি গান গাইতে , নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করতে এবং ছাদ বাগান করতে খুব ভালোবাসি। আমি আনন্দময়ী এবং সকলকে নিয়ে হৈহুল্লর ও একসঙ্গে সকলকে নিয়ে মজা করতে পছন্দ করি। আমি সকলের দুঃখে দুঃখী এবং সকলের সুখে সুখী