"আমার বাংলা ব্লগঃপ্রতিযোগীতা নং-৮||মাটির নিচে মাটির হাড়ির ইলিশ-পোলাও রেসিপি||
আজ
আজ
১১ই কার্তিক,১৪২৮
27th Oct.-2021
মাটির নিচে মাটির হাড়ির ইলিশ পোলাও রেসিপি
আসসালামু আলাইকুম
শ্রদ্ধেয় ভাই,বোন এবং বন্ধুরা,আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি।আজকে আমি পোস্ট করতে চলেছি চলমান কন্টেস্ট নং ৮ -"আমার জানা সেরা ইলিশ রেসিপি"।প্রথমে ভেবেছিলাম আমার এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করা হবে না যেহেতু আমি বাসা থেকে অনেক দূরে হোস্টেলে থাকি।কিন্তু ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে থেকে এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ না করতে পেরে খারাপ লাগছিল।তাই শত প্রতিকূলতার মধ্যে হোস্টেল সুপার এর থেকে অনুমতি নিয়ে তৈরি করে ফেললাম ইলিশ রেসিপিটি।
আর একটি মজার বিষয় হলো,ইলিশ দিয়ে তৈরি রেসিপিটি ইউনিক হওয়া লাগবে।তাই চারদিন অনেক চিন্তা-ভাবনা করে নতুন পদ্ধতির এই রেসিপিটি ঠিক করলাম।আজকের রেসিপিটি মোট কথায় পুরনোর সাথে নতুনের এবং আমার কিছু আইডিয়ার সংমিশ্রণে তৈরি।আশা করি আপনাদের এটি ভালো লাগবে।
ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে আমি আমার ইলিশ রেসিপি প্রতিযোগিতার পোস্টটি শুরু করছি।
রেসিপিটি তৈরি করতে যেসব উপকরণ প্রয়োজন তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
↘️প্রয়োজনীয় উপকরণাদিঃ↙️
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
ইলিশ মাছ | ১টি(৯০০ গ্রাম) |
আতপ চাল | এক কেজি |
গুড়া দুধ | ৩ টেবিল চামচ |
হলুদ | পরিমাণমতো |
কাঁচা মরিচ | ১০ টি |
কিস মিস | ৩০ গ্রাম |
সাদা সরিষা বাটা | ২ টেবিল চামচ |
জিরা বাটা | ২ টেবিল চামচ |
রসুন বাটা | ২ টেবিল চামচ |
কাজু বাদাম বাটা | ২ টেবিল চামচ |
ধনিয়া বাটা | ২ টেবিল চামচ |
নারিকেল বাটা | ৩টেবিল চামচ |
টক দই | আধা কাপ |
পেঁয়াজ বাটা | ২ টেবিল চামচ |
জাফরান | হাফ টেবিল চামচ |
জর্দা রঙ | পরিমাণমতো |
তৈল | পরিমাণমতো |
লেবু | ২টি |
টেস্টি সল্ট | ২ টেবিল চামচ |
রেসিপিটি তৈরির প্রক্রিয়া নিম্নে ধাপ ক্রমান্বয়ে দেওয়া হলোঃ
১ম ধাপঃ
প্রথমে ইলিশ মাছটি পিস করে কেটে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুঁয়ে নিতে হবে।
২য় ধাপঃ
এবার কড়াইয়ে পরিমাণমতো তেল নিতে হবে।তারপর এর ভিতরে হলুদ গুড়া,টক দই,আদা-রসুন বাটা,পেঁয়াজ বাটা,কাজু বাদাম,নারিকেল-ধনিয়া বাটা,সাদা সরিষা বাটা দেওয়ার পর ৩ মিনিট কষিয়ে নিতে হবে।তারপর কড়াইয়ে আবার সামান্য পরিমাণ পানি নিয়ে ৫ মিনিট কষিয়ে নিতে হবে।
৩য় ধাপঃ
এবার কড়াইয়ে কষানো মসলাগুলোর ভিতরে একে একে মাছের পিস গুলো ছেড়ে দিতে হবে।তারপর কড়াইয়ে মসলার সাথে মাছের পিসগুলোকে ৭-৮ মিনিট সময় পর্যন্ত ভেজে নিতে হবে।
৪র্থ ধাপঃ
মাছগুলোকে কড়াইয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভেজে নেবার পর প্লেটে উঠিয়ে রাখতে হবে।
৫ম ধাপঃ
এবার প্লেটসহ মাছগুলোকে ১০ মিনিট সময়ের জন্য ডীপ ফ্রীজে রেখে দিতে হবে।কারণ এতে মসলাগুলো মাছের গায়ে ভালোভাবে লেগে যায়।
৬ষ্ঠ ধাপঃ
১০ মিনিট পর ডীপ ফ্রীজ থেকে মাছের পিসগুলো বের করার প্রত্যেকটি পিসকে আলাদা ভাবে অ্যালুমিনিয়াম পেপার দিয়ে মুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৭ম ধাপঃ
এবার আতপ চালগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।আমরা যেহেতু মাটির হাড়িতে রান্না করবো তাই মাটির হাড়িতে আগে থেকেই সরিষার তেল মাখিয়ে রাখতে হবে।তারপর ধুয়ে রাখা আতপ চালগুলো হাড়ির ভিতরে ঢেলে দিতে হবে এবং এর সাথে সামান্য পরিমাণে সয়াবিন তেল দিতে হবে।
৮ম ধাপঃ
এবার হাড়ির ভিতরে পরিমাণমতো পানি দিতে হবে।এরপর এর ভিতরে কাঁচা মরিচ,গুড়া দুধ,টক দই,টেস্টি সল্ট,খাবার লবণ দিয়ে একসাথে মিক্স করে নিতে হবে।
৯ম ধাওঃ
সবগুলো উপাদান মিক্স করার পর মাটির হাড়ির উপর এর ঢাকনাটি দিতে হবে।
১০ম ধাপঃ
এবার মাটির হাড়ির ঢাকনার উপর পূর্বে অ্যালুমিনিয়াম পেপাড় দিয়ে মোড়কজাতকৃত মাছের পিসগুলো পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে রাখতে হবে।
১১তম ধাপঃ
আমাদের রান্নার প্রক্রিয়ায় যেহেতু মাটির নিচে তাই মাটিতে দুই ফুট পর্যন্ত গর্ত করে স্টীলের পাত দিয়ে চুলাটি বানিয়ে নিতে হবে।এবার চুলার নিচে ৩ কেজি পরিমাণ কাঠ কয়লা দিতে হবে।
১২ তম ধাপঃ
এবার চুলার ভিতরে দেওয়া কয়লায় আগুন জ্বালিয়ে নিতে হবে।তারপর জ্বলন্ত কয়লার উপর স্ট্যান্ডসহ মাটির হাড়িটি নামিয়ে রাখতে হবে।
১৩ তম ধাপঃ
জ্বলন্ত কয়লার উপর মাটির হাড়িটি রাখার পর রান্নার কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য সম্পূর্ণ চুলার মুখটি অ্যালুমিনিয়াম এর পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।তারপর এর উপর স্টীলের ঢাকনা এবং ঢাকনার উপর বস্তাসহ মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে যাতে কয়লার তাপ বাইরে বের না হতে পারে।এঅবস্থায় মাটির হাড়ির পোলাও ও ইলিশ রান্নাটি সম্পন্ন করার জন্য ৫০ মিনিট রেখে দিতে হবে।
১৪ তম ধাপঃ
দীর্ঘ ৫০ মিনিট অপেক্ষার পর আমাদের সেই মজাদার-"মাটির নিচে মাটির হাড়ির ইলিশ পোলাও টি তোলার পালা।
১৫ তম ধাপঃ
মাটির হাড়ির ঢাকনা খোলার পর ভিতরে পোলাও ভাত এর অবস্থা।খুব সুন্দরভাবে সিদ্ধ হয়ে রান্না হয়েছে।
১৬ তম ধাপঃ
এবার মাছের মোড়কগুলো খুলে একটি প্লেটে রাখতে হবে।
আমাদের ইলিশ মাছ এবং পোলাও রান্নার কাজ শেষ।এখন পরিবেশনের পালা।
পরিবেশনার ধাপঃ
পরিবেশনায় ভাতগুলো দুই রকমের ফুড কালার লাল এবং হলুদ দিয়ে কালার করে নিয়েছি।তারপর অন্যান্য উপাদান দিয়ে সাজিয়ে নিতে হবে।
রেসিপিটির সাথে আমার একটি ছবি।⬇️
আমি আগেই বলেছি আমি হোস্টেলে থেকে এই কন্টেস্ট এ অংশগ্রহণ করেছি।তাই রান্নার শেষে সব বন্ধুরা মিলে একসাথে খেতে বসে পরলাম।আমাদের খাবারের তুলনায় মানুষ বেশি হলেও অল্প খেয়ে যে মজাটা পেয়েছিলাম তা মনে হয় একা খাবার পর পাওয়া যেতো না।আর আমার যেই বন্ধুটা সব কিছুর ভুল ধরে বেড়ায় সে পর্যন্ত খাবারটি খেয়ে আমার প্রশংসা করেছে।রীতিমতো সে দারুণ একটা রেটিং ও দিয়েছে।
তো এই ছিল আমার আজকের চলমান কন্টেস্ট এর রেসিপি পোস্ট।জানিনা কতটুকু স্বার্থক হতে পেরেছি তবে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছি।
🌻ধন্যবাদ আমার পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ আমার পাশে থেকে সাপোর্ট করার জন্য❤️
শুভেচ্ছান্তেঃ@abir10
১০% পে আউট লাজুক-খ্যাকের জন্য
আপনার রেসিপিটা আমার কাছে একদম ইউনিক মনে হয়েছে। এরকম রেসিপি আমি আগে কখনো দেখিনি। খুবই সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন দেখে খুব খেতে ইচ্ছা করছে। মনে হচ্ছে খুবই টেস্টি হয়েছে।
বাঙ্গালীদের বলা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি আপনার ইলিশ মাছের রেসিপি টা অসাধারণ হয়েছে ভাইয়া। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনার জন্যেও শুভকামনা রইলো।
খুব সুন্দর একটি রেসিপি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।
ইলিশ মাছের সুন্দর একটি রেসিপি দেখতে পেলাম আপনার কাছ থেকে। অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার রেসিপি। খেতেও অনেক সুস্বাদু হবে বুঝি।আপনি রেসিপি রান্না অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভাই।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।❤️
আমি বলবো আপনি ফাটিয়ে দেখেন। কারণ এক কথায় অসম। দুর্দান্ত একটা ইলিশ রেসিপি যা খুবই প্রসংসনীয় । ভাই অনেক খেটে বানিয়েছেন রেসিপিটি। ওয়াও মাটির নিচে মাটির হাড়ির রেসিপি ।সত্যি খুবই ভালো হয়েছে। শুভেচ্ছা রইলো
জ্বী দাদা একটু কষ্ট হয়েছে সব জিনিসপত্র ম্যানেজ করতে।ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ইলিশ মাছের রেসিপিটি অসম্ভব সুন্দরভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার রেসিপিটি দেখে মনে হলো আপনি মনে হয় খুব ভালো রান্না করতে পারেন। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য
মাটির নিচে মাটির হারির ইলিশ পোলাও ওয়াও কতো সুন্দর একটি রেসিপি।আপনার ধৈর্য্যর প্রশংসা না করে পারছি না ভাই।অনেক পরিশ্রম করে রেসিপিটি বানিয়েছেন আবার অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন ও করেছেন।আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভাই।
বাসায় থাকলে টুকটাক রান্না করতাম আরকি।আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
বাহ একদম নতুন একটি রেসিপি মনে হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে খেতে খুবই সুস্বাদু হবে। সুন্দর একটা রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
ইলিশ মাছ দিয়ে হাজার রকমের রেসিপি তৈরি করা যায়। আপনার এই রেসিপিটি দেখে আমার সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। আপনার সুন্দর রেসিপি দেখে আমার খেতে খুব ইচ্ছা করছে। ইলিশ মাছ আমার সবচাইতে প্রিয় মাছ। এই মাছ দিয়ে যেকোনো রেসিপির খেতে আমার খুব ভালো লাগে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আমারো খুব পছন্দের একটি মাছ হলো ইলিশ।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আপনার তৈরি রেসিপি দেখে জিভে পানি চলে আসলো। দেখে মনে হচ্ছে খুব সুস্বাদু হয়েছে। ইলিশ আমারনএমনিতেও প্রিয় একটি মাছ।শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ।আপনার জন্যেও শুভকামনা রইলো ভাই
প্রথমে বলব ভাইয়া আপনার উপস্থাপনা খুব সুন্দর ছিল। আপনি ইলিশ রান্নার প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দর ভাবে উল্লেখ করেছেন। আপনার রান্না টা দেখে মনে হচ্ছে খুব জটিল ছিল। যেটা আপনি খুব সহজেই করে ফেলেছেন। আর খাবার যে মজা হয়েছে তা আর বলার কিছু নেই। আপনার রান্নার পদ্ধতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
কষ্টের সাথে মজাও অনেক হয়েছে আপু রান্নাটি সম্পন্ন করতে।ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য