ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক মিউজিয়াম দর্শন।(10% beneficiaries for @shy-fox)
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ আমি আপনাদের সামনে আরেকটি ফটোগ্রাফি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজ আমি যে বিষয়ে গুলো নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব তা হচ্ছে আমি যখন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে গিয়েছিলাম তখন বেশ কিছু ছবি তুলছিলাম সেই ছবিগুলো আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আমি মূলত দাদার মিউজিয়াম পোস্ট গুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই পোস্টগুলো করে যাচ্ছি।
আসলে আমরা জাদুঘর বলতে কি বুঝি? জাদুঘর হচ্ছে এমন একটি ভবন যেখানে বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক জিনিসের সংগ্রহশালা থাকবে। একটি যাদুঘর একটি দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সাথে পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করে থাকে। জাদুঘরকে বলা হয় ইতিহাসের দর্পণ অর্থাৎ পৃথিবীতে যুগে যুগে যতকিছু নিদর্শন ঐতিহাসিক কোন বস্তু বিষয় সবকিছুই জাদুঘর সংরক্ষণ করা হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যাতে যুগ যুগ ধরে এ বিষয়গুলি থেকে শিক্ষা নিতে পারে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রধান প্রধান শহরে মিউজিয়াম আছে যেমন লন্ডনে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, প্যারিসে লুভর মিউজিয়াম, কলকাতা মিউজিয়াম আর বাংলাদেশের ঢাকার জাতীয় জাদুঘর এই সবগুলোই ঐতিহ্যের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এর মধ্যে সবথেকে আকর্ষনীয় যে বিষয়টি তা হচ্ছে নীল তিমির জীবাশ্ম বা কঙ্কাল। নীল তিমির কঙ্কাল দেখার জন্যই হাজার হাজার পর্যটক জাদুঘর দর্শন করে। নীল তিমির এই বিশাল দেহ সত্যি আশ্চর্যজনক। বিশাল এই দানবাকৃতির নীল তিমি সাধারণত গভীর সমুদ্রে বসবাস করে এবং পুরো সমুদ্র, সাগর, মহাসাগর রাজ করে বেড়াই। আমরা তিমি কে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুভি দেখেছি। আমার মনে হয় এই তিমিগুলোর কঙ্কাল সাধারণত বিভিন্ন সময় দেখা যায় সৈকতে মৃত তিমি ভেসে আসে সে সময় সংরক্ষন করা হয়েছে। এই তিমির কঙ্কাল সাধারণত ছোট বাচ্চারা দেখে খুব খুশি হয় এবং আগ্রহের সহিত আমরা সব সময় ছোট বাচ্চাদের এগুলো দেখাতে পছন্দ করি। তিমি মাছের কঙ্কাল টি সংরক্ষণে অসুবিধার কারণে এবং হাড়গুলো রাতে খুলে না যায় সে জন্য চিকোন গুনা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে এক কাঁচের দেয়ালের মাঝে।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সাধারণত চারটি তলায় বিভক্ত। প্রতিটি তলায় বিভিন্ন ধরনের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংগ্রহ রয়েছে তারই একটি গ্যালারিতে রয়েছে গ্রামোফোন। গতকাল বৌদি যখন গ্রামোফোন অংকন করেছিলেন তখন ভাবলাম আমার কাছে একটি ফটোগ্রাফি আছে সেটি নিয়ে ফটোগ্রাফি পোস্ট করা যেতে পারে। এইখানে সংস্কৃতি চর্চার সকল ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট সংরক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামোফোন বহু আগে সঙ্গীত চর্চা, রেকর্ডিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন হরর মুভি তে এই ফোনের ব্যবহার প্রথম দেখেছিলাম। কি ভয়ঙ্কর ছিল এর সুর।
এই গ্যালারিতে আপনারা দেখছেন তা হচ্ছে নকশি কাঁথা। আমরা সবাই কবি জসীমউদ্দীনের সেই নকশীকাঁথার কথা জানি। গ্রামেগঞ্জে নকশি কাঁথা কথা তিনি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার নকশী কাঁথার মাঠ উপন্যাস এর মধ্য দিয়ে। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন গ্রামের নারীরা যখন কাঁথা বোনা তখন সেই কাঁথার সুইয়ের ফোরে বিভিন্ন ধরনের গল্প রচিত হয়। সেই গল্পের পরিপ্রেক্ষিতেই সুন্দর সুন্দর নকশা তৈরি করে তারা।
নকশি কাঁথা সাধারণত বাংলার ঐতিহ্য বহন করে যার ফলে এত সুন্দর ভাবে জাতীয় জাদুঘরের সংরক্ষন করা হয়েছে। যদিও বর্তমানে নকশি কাঁথা দেখা যায় তবে তা হাতে বোনা খুব কম এখনকার নকশি কাঁথা গুলো সাধারণত মেশিনে বোনা হয়। এই গ্যালারিতে আপনাকে মুগ্ধ করবে বিভিন্ন ধরনের নকশী কাঁথা দেখে। নকশি কাঁথার পাশের ছোট ছোট যেগুলো দেখতে পাচ্ছেন ওগুলোকে আমরা সাধারণত নকশী পাপোশ বলে থাকি।
বাংলাদেশের এমন কোন জাদুঘর নেই যেখানে এই ঐতিহাসিক বিষ্ণু মূর্তির ভাস্কর্য পাবেন না। আমি আমার জীবনে যতগুলো জাদুঘরে ঘুরেছি সবগুলোতেই বিষ্ণুমূর্তির অনেক সংগ্রহ দেখেছি। এই বিষ্ণুমূর্তি গুলো সাধারণত কালো পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যা বলা হয়ে থাকে অনেক মূল্যবান। দেশের যে প্রান্তেই এই মূর্তি গুলো পাওয়া যায় সরকার কর্তৃক জব্দ করা হয়। যদিও বর্তমানে অনেক অসাধু লোভী লোকজন এই মূর্তি পেলে অবৈধ উপায়ে বিক্রি করার চেষ্টা করে যা দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ ।
ঢাকার জাদুঘরে বিশাল একটি অংশজুড়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত বিভিন্ন স্মৃতি ফটোগ্রাফির সংগ্রহশালা। এই গ্যালারিতে গেলে আপনি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ফটোগ্রাফি দেখতে পাবেন বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিভাবে আন্দোলন করা হয়েছিল, যুদ্ধ করা হয়েছিল, পাকিস্তানি হানাদার নিশংস অত্যাচারে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা শহীদদের স্মৃতি দেখতে পাবেন। এছাড়া ও ১৯৫২,৬৯ এর বিভিন্ন ফটোগ্রাফি রয়েছে। আমি আপনাদের সাথে যেটি শেয়ার করেছে সেটি সাধারণত একটি যুদ্ধবিমান।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত যৌথ বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধবিমান টি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে যদিও এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত। যুদ্ধবিমান এর একাংশ। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে সে সময়ের কথা মনে করে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে অনেকগুলো সংগ্রহশালার মধ্যে এটি একটি। এটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত কামানের অংশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় খুব কম আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। যুদ্ধ শেষের দিকে বাংলাদেশ-ভারতের মিত্রবাহিনীর আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
বাংলাদেশের পঞ্চাশের দশকে বহুল ব্যবহৃত একটি বাহন এটি । আমরা এইটাকে ঠেলাগাড়ি বলতাম। আমি দেখতাম বিভিন্ন জায়গায় মহিষ, গরু ব্যবহার করে এই গাড়িগুলো চালানো হতো। আবার পরবর্তীতে কাঠের চাকা বাদ দিয়ে টায়ার ব্যবহার করা হয়। এটি কিছুদিন পূর্বে বহুল ব্যবহৃত ছিল কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই গাড়ি গুলো বিলুপ্তের পথে তাইতো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এগুলো এক সংরক্ষন করা হয়েছে। এই গাড়িগুলোতে করেই বিভিন্ন ধরনের মালপত্র পরিবহন করা হতো। গ্রামগঞ্জে গরুর গাড়ি নামে পরিচিত ছিল। এগুলো বহুল ব্যবহৃত এমনকি বিয়ের বাড়িতে গরুর গাড়ি করে যাওয়া হতো। সেই সময়গুলো কতই না ভালো ছিল।
ঢাকা শহরের সব থেকে যে যানবহন বেশি ব্যবহৃত হতো তা হচ্ছে বেবিট্যাক্সি আমরা টেম্পু নামে ডাকি। ছোটবেলায় যখন বাংলা সিনেমা দেখতাম তখন সিনেমার নায়ক বিশেষ করে জসিম, রাজ্জাক, আলমগীর সাহেবরা এইসব টেম্পু চালাতো পরিবারের ব্যয় বহন করার জন্য। বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অংশ বলা যেতে পারে এই টেম্পুকে । যদিও বর্তমানে এই টেম্পুর পরবর্তীতে রূপ হয়েছে সিএনজি। বহু বছর ধরে এগুলোকে দেখা পাওয়া যায় না বাংলাদেশের কোথাও তাই এর শেষ স্থান জাদুঘর।
এই ছিল আমার জাদুঘরের বিভিন্ন নিদর্শন এর ফটোগ্রাফি অভিজ্ঞতা বর্ণনা। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।
ছবির লোকেশনW3Wlocation |
---|
ধন্যবাদ
![banner-abb23.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmb8iudwDiWcPoEeCL9ghCV5egjvdDiK7MicfoDPjaNLg4/banner-abb23.png)
![break.png](https://steemitimages.com/640x0/https://images.hive.blog/DQma7eDsaUxzt7EVhxxHm2ePVexWhgcEsgXRUqWRygQYFjW/break.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক পুরোনো জিনিসের দেখা মিললো। আমার যাদুঘর এই জন্যই এতো বেশী ভালো লাগে, কত যত্ন করে আমাদের ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো সংরক্ষন করে রাখে।
আপনার পোস্টে সব চেয়ে বেশী ভালো লেগেছে বেবীট্যাক্সি বা টেম্পু। এটা আগের দিনে বিয়ের সময় ভাড়া করা হতো। আমার এখনো মনে আছে আমার মামার বিয়েতে টেম্পু দিয়েই গিয়েছিলাম। এখনতো টেম্পুর ভার্সন পালটে সি এন জি হয়ে গেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার পোস্টটি দেখে অনেক ভালো লাগলো। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে যাওয়া হয়নি তবে
আপনার পোস্ট দেখে অনেকটা ধারণা হলো। তথ্য গুলো শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ।
আপনাকে স্বাগতম আপু মনি 🥰
একদমই অসাধারণ একটি পোস্ট ❤️
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর আর তথ্যবহুল একটি পোস্ট আমাদের মাঝে ভাগ করে নেয়ার জন্য 🥀
সত্যিই অনেক অসাধারণ জিনিস দেখতে পেলাম আপনার বদৌলতে ☺️
অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য 💌
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় জাদুঘরের বেশ কিছু পুরনো জিনিসপত্র দেখতে পেলাম । বিশেষ করে বেবি ট্যাক্সি বা টেম্পু এটি দেখে ছোটবেলার সেই কথা মনে পড়ে গেল । নানু বাড়িতে গেলে এই টেম্পু দিয়ে যেতে হতো । এই আধুনিক যুগে এই টেম্পো এখন আর পাওয়া যায় না । প্রত্যেকটা ছবি খুব সুন্দর ছিল আপু ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ❤️
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।