নারীর মুক্তি (10% beneficiaries for @shy-fox)
কাজী নজরুল ইসলামের একটি কথা আছে, যে পৃথিবীর যা কিছু বিস্ময় অর্ধেক করিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী। এই কথাটির মাধ্যমে আমরা পৃথিবীতে এবং নারীর গুরুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাত্রা কতটা গভীর তা সহজেই বুঝতে পারি। আমি আগেও নারীদের নিয়ে অনেক লেখা লিখেছি তাই আজও তাদের নিয়ে লিখব। আপনারা আমার পোস্টে নারীদের অবহেলা, পিছিয়ে পরার বিষয়গুলো নিয়েই দেখে থাকেন। যদিও বর্তমানে অনেক দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসছে তবুও নারী নির্যাতনের ধরন গুলো আধুনিকতা লাভ করেছে। নারীদের নিয়ে আমার বেশ গুটিকয়েক কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি। আমাদের সমাজে নারীরা সবসময় নিজেদের অসহায় বলে মনে করে, তারা ভাবে তাদের কোনো শক্তি নেই, তাদের কোন সৃজনশীলতা নেই, তারা সমাজের পিছিয়ে পরা প্রাণী। তারা ভাবে আমরা আমাদের হাত পায়ের ব্যবহার জানিনা, কিভাবে কাজ করবে বুঝতে পারিনা, আমাদের হয়তো শুধু পুরুষের মনোরঞ্জন করার জন্য জন্ম হয়েছে। মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা আজও আমাদের নারীদের মাঝে দেখা যায় যার কারণ তার ভবিষ্যতে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারছে না। এটা বোঝেনা যে শুধুমাত্র অন্যের মনোরঞ্জন করে বেঁচে থাকাটা বেশ কঠিন।
কেননা আজ আপনার স্বামী আছে কাল নাও থাকতে পারে বা হঠাৎ করে তিনি মারা যেতে পারেন। তারপর আপনি কোথায় যাবেন কখনো ভেবেছেন? এখন বলতে পারেন বাপের বাড়ি চলে যাব কিন্তু আপনি বাপের বাড়ি গেলে আপনার ছেলে-মেয়ে সন্তানদের কি আপনার বাপের বাড়ির লোকজন নেবে? কতজন বাবা- মা, ভাই আছে যারা তার বোনের এবং বোনের সন্তানদের সম্পূর্ণ ভরণপোষণ দায়িত্ব নেয় যদি বোনের কিছু না থাকে। তাহলে আমাদের সমাজে নারীদের মুক্তি কোথায় এ প্রশ্ন আসতে পারে। আমি বলব আপনি এতদিন স্বামীর ঘরে রাজা রানীর মত করে সংসার করেছেন কিন্তু আপনার পক্ষে কি অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা সম্ভব? আমার তো মনে হয় সম্ভব না কারণ আপনার একটি আত্মসম্মান আছে, বিবেক বোধ আছে। আমরা যদি চাই পুরুষের মতোই আমাদের জীবনটাকে সার্থক করে গড়ে তুলতে পারে। চারপাশে অনেক মানুষ আছে তারা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করে। আমরা তাদের করতে দেই কিন্তু এটুকু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে আমাদের ভেতরে একটি আত্মা আছে,মানুষের আত্মা। যে আত্মা পথে ভেসে যাবার জন্য নয়। আমাদের সমাজে অনেকেই আছে নারীদেরকে ছোট করে রাখে। তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে না যার ফলে তারা তাদের শক্তিকে প্রকাশ করতে পারে না। তুমি নারী বলে তোমাকে যদি কেউ ছোট করে রাখে, তোমাকে বিয়ে দিয়ে পুরুষ তার দায়িত্ব শেষ করেছে আর সেটা ভেবেই যদি তুমি নির্বোধের মতো ঘরে বসে থাকো তাহলে তুমি কখনোই কল্যাণ সাধন করতে পারবেনা।তখন স্বামীর অনুপস্থিতিতে তোমাকে অবশ্যই অন্যের দাসত্ব করতে হবে।
আমি বলব উন্নত জীবনের কথা ভাববার আগে আপনাকে অবশ্যই আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজের মস্তিস্ক ও হাতের সম্পূর্ণ ব্যবহার জানতে হবে। আপনার হাতে অর্থ নেই, জীবনের স্বাধীনতা নেই, আপনি আবার উন্নত জীবন মানে কি বুঝবেন? আমি যতই বলি না কেন এই সমাজে কখনোই একজন পুরুষের মত করে নারী বেড়ে উঠতে পারেনা আর যারাই বেড়ে উঠবে তারাই হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক। তাদের মনে রাখবে আজীবন ধরে যেমন রেখেছে বেগম রোকেয়া , সুফিয়া কামালদের । তোমার মন-মানসিকতা এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন পুরুষের সহযোগিতা ছাড়া আমরা যেকোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি। তুমি যদি ভেবে থাকো পুরুষ তোমার হাত-পা বেঁধে রেখে খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রেখেছে আর এর ফলেই তোমার মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেছে। তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছ তাহলে আমি বলব মানব সমাজের সঙ্গে যদি তুমি বন্ধুত্ব করো তাহলে তুমি বিশ্বে পাপ সৃষ্টি করবে। আমি বলব তোমার ভিতর কি ন্যূনতম বিবেক নেই? তোমার ভিতরে কি মর্যাদা নেই ?তোমার ভেতরে কি আমি আমিত্ব নেই? কেউ তোমাকে বেঁধে রাখবে আর তুমি নিজেকে বন্দী রাখবে এর মত দাসত্ব আর কিছু নেই।
আমার কথা হচ্ছে এই পৃথিবীতে যদি তোমাকে সাহায্য করার মত কেউ না থাকে সেজন্য তুমি কখনো কাঁদবে না। আমাদের ভেতরে যে শক্তি রয়েছে সেই শক্তিকে আমাদের জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাদের পড়াশোনা শিখতে হবে নিজেদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। তুমি যেন কখনো পরাধীন হয়ে না থাকো সেই শক্তি তোমাকে অর্জন করতে হবে। স্বামী তোমাকে ভাত না দিলেও তুমি নিজের ভাত যত সংগ্রহ করতে পারো তার ব্যবস্থা তোমার নিজেকেই করতে হবে। পুরুষ যদি তোমাকে অনেক অত্যাচার করে থাকে সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে তোমাকে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। তবে তার জন্য কখনোই প্রতিশোধের ঘৃণা না হয় , তা যেন হয় ক্ষমার বিনয় নিয়ে। আমাদের জাগতে হবে। আমরা যদি না জাগি তাহলে অবশ্যই স্বার্থপরের মত কাজ করে যাব আমরা। আজও গ্রাম গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় অনেক নারী তাদের স্বপ্নগুলোকে ঘর বন্দি করে রেখেছে। আমাদের তাদের বের করতে হবে ঘর থেকে। মুক্ত আকাশ বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারে। তারা যেন পাখির মত খোলা আকাশে উড়তে পারে, বিশাল এই পৃথিবী চিনতে পারে নিজের মত করে, কখনো যেন তার মনে হীনমন্যতা না আসে, পরাধীনতার শিকল কে যেন সে কখনো ভয় না পায়। নারী যখন নিজের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করা শিখবে আমি সত্যি বলছি এই সমাজ তখন অতি উন্নত হবে।
ধন্যবাদ
![banner-abb23.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmb8iudwDiWcPoEeCL9ghCV5egjvdDiK7MicfoDPjaNLg4/banner-abb23.png)
![break.png](https://steemitimages.com/640x0/https://images.hive.blog/DQma7eDsaUxzt7EVhxxHm2ePVexWhgcEsgXRUqWRygQYFjW/break.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
আমি এটা বিশ্বাস করি আমরা যত ভালোই করি নারীরা তার পিছনে অবশ্যই অনেক অনেক অবদান রেখে যায়। আপনি এটা ঠিক বলেছেন যে নারী অত্যাচারিত হয় সে মুখ বুঝে থাকলে অত্যাচার আরো দিন দিন তার ওপর বেড়ে যাবে। তাই সব জায়গায় মুখ বুজে সহ্য করাটা এককথায় বোকামি বলে আমি মনে করি।
আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
❤️❤️❤️❤️
অসম্ভব সুন্দর একটি প্রবন্ধ লিখেছেন আপু। আপনার এই পোস্ট থেকে আসলেই অনেক কিছু শেখার ও বোঝার আছে।
ধন্যবাদ আপু আপনাকে।শুভ কামনা রইল।
এই কথাটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপু। আজকে নারীদের নির্যাতন নিয়ে আপনি অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরেছেন। আপনার পোস্টের মধ্যে অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় ছিল। এরকম পোস্টগুলো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে আপনার আজকের পোষ্ট থেকে সবার শেখা উচিত। অনেক ভালো লাগলো আপু।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । অসাধারণ একটা মন্তব্য করেছেন ।