নারী নির্যাতন যখন একটি ব্যাধি (১০ ভাগ লাজুক খ্যাঁকের জন্য বরাদ্দ)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি সামাজিক ব্যাধি নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা বলতে পারেন সামাজিক ব্যাধি বলতে তো মাদক,এইডস এসবি বুঝি কিন্তু এর থেকে মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি আছে। এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের সমাজকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়। শিশু কিশোর যুবক সবার নৈতিক ও ভবিষ্যৎ কে নষ্ট করে দেয়। সেই রকম একটি ব্যাধি ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন ।

model-2418442_1280.jpg

Image Source

আজকাল আমাদের সমাজে দেশে ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন এতটাই বেড়ে গেছে যে নারীদের ঘর থেকে বের হওয়াটাই খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধর্ষক বা নির্যাতনকারীরাই হচ্ছে আমাদের সমাজের ব্যাধি। যারা সমাজের ভাইরাস বা বিষফোঁড়া বলতে পারেন। প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে কত যে নারী ধর্ষিত হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। যদিও এটি একটি সেনসিটিভ বিষয় কিন্তু আমি নারী হিসেবে এ বিষয়ে আলোচনা করার তো অনেকে হয়তো বা অন্যভাবে দেখবেন কিন্তু আমি মোটেও সেসব নিয়ে চিন্তিত নয়। আমাদের সমাজে অনেকেই আছে যারা ধর্ষণের জন্য অনেকটাই নারীকে দায়ী করেন। তাদের বিবেকবোধ সম্পর্কে, তাদের নৈতিকতা সম্পর্কে, আমি সত্যি সন্ধিহান। তাই তাদের নিয়ে কিছু বলবো না। শুধু ধর্ষণ না সব ধরনের নারী নির্যাতনের বিপক্ষে আমি। এ কাজকে আমি কোন ভাবেই সমর্থন করতে পারিনা বা একটি সভ্য সমাজ কখনো সমর্থন করে না। আমরা কিছুদিন আগে একটা নিউজ দেখলাম গোপালগঞ্জ শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে দলগতভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। এটি যে কতটা ন্যক্কারজনক একটি কাজ এর ফলে একটা পরিবারে একটি মেয়ের জীবনে কি যে দুর্বিষহ সময় পার হয় তা শুধু ভুক্তভোগীরাই বোঝো। এই ব্যথা এই কষ্ট সহ্য করার মত কোন পুরুষের হয়তো ক্ষমতা হবে না। বন্ধু বান্ধব, সমাজ পরিবারের দিকে তাকাতেও তখন ঘৃণা লাগে। তখন পুরুষ নামের ভাইটির পাশে দাঁড়াতে একজন নারী অনিরাপদ অনুভব করে। এসব বিষয়ে আমাদের সমাজের চরম অবক্ষয় একটি বিষয়। আজ আমাদের সমাজ মানবিক দিক দিয়ে নৈতিকতার দিক দিয়ে অবক্ষয়ের চরম সীমা অতিক্রম করেছে। এর পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজের তরুণদের বেড়ে ওঠা ধরন অনেকটাই দায়ী।
woman-g3ca593a63_1920.jpg

Image Source

আমাদের মাঝে একশ্রেণীর লোক আছে যারা এদেরকে বখাটে হিসেবে আখ্যায়িত করে কিন্তু আমি তা ভিন্ন বলি কারণ শুধু বখাটে বা টোকাইরা যে এই কাজে জড়িত তা না আমাদের সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণী, অভিজাত পরিবারের সন্তান,ও আপনার পাশে থাকার যাকে আপনি আমি ফেরেস্তা ভাবি সেও নারী নির্যাতন এর সাথে জড়িত থাকতে পারে আমরা যখনই বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে গেছি বা শুনেছি তখনই রাস্তাঘাটে, স্কুলে, পরিবারে পুরুষদের অশালীন আচরণ, বিরূপ মন্তব্য, কটূক্তি ও ইঙ্গিতপূর্ণ অভিব্যক্তির সম্মুখীন হয়েছি যা একজন নারীর প্রতি অবমাননাকর।আমরা যখন রাস্তায় ঘাটে চলাচল করি বিশেষ করে পাবলিক যানবাহন চলাচল করি তখন এক শ্রেণীর লোক ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের সাথে অশালীন আচরণ করে । ইচ্ছাকৃতভাবে স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। একজন নিকৃষ্ট মনের মানুষ যখন এসব কাজ করে তখন নারীরা অনেক সময় মুখ বুঝে সহ্য করে। নিজের সম্মানের ভয়ে কারণ ওই সময় যদি একজন নারী প্রতিবাদ করে তখন তার আশেপাশে থাকা পুরুষ নামের কিছু জীব বলবে পাবলিক জায়গা এসব স্বাভাবিক। আপনার যদি এত সমস্যা হয় তাহলে নিজের গাড়িতে যাওয়া-আসা করেন না কেন? আসলে সেই সময় ওইসব মানুষের মুখে দিকে তাকালে নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে ঘৃণা হয়। কারণ যে কথাগুলো যারা বলছে তার মা আছে তার বোন আছে তারাও কোনো না কোনোভাবে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বা হবে।

আমরা সাধারণত বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্ন ভাবে জানতে পারি যে বিশেষ করে পাবলিক সার্ভিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকুরী বলেন কর্মক্ষেত্র বলেন নারীরা তাদের পুরুষ কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিছুদিন আগে আমরা একটি বাসে দেখলাম একজন মেয়েকে প্রতিবাদ করতে । কিন্তু তার মত সাহসী কয়জন মেয়ে আছে লড়াই করার মত। অথচ ওই মেয়ে যখন প্রতিবাদ করছিল সেই বাসে থাকা অনেক মানুষই বলছিল ছেড়ে দেন ছেড়ে দেন যা হয়েছে হয়েছে। ধিক্কার জানাই সেই সব পুরুষকে যারা নারীদের সম্মান করতে জানেনা,রক্ষা করতে জানেনা। যারা নারীদের সাথে অশোভন আচরণ করার সময় চুপ থাকে। এছাড়াও একজন নারী যখন রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তখন অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়।

rope-2322774_1280.webp

Image Source

আমাদের সমাজকে যদি সুষ্ঠু সুন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চায় তাহলে এর গোড়া থেকে পরিছন্নতা শুরু করতে হবে। শুধুমাত্র শাস্তির ভয় দেখিয়ে কখনো এই ধরনের পশুদের পশুত্ব দমন করা যাবে না। পশুরা কখনো শাস্তির ভয় করে না। সব বিকৃত মন-মানসিকতার লোকদের সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে ও রাষ্ট্রীয় ভাবে যখন হেয় প্রতিপন্ন করতে হবে এবং আইনের আওতায় আনা যাবে তখনই মাত্র সম্ভব। তবে আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে কোন নিরাপদ ব্যক্তি যেন এই দায়ে অভিযুক্ত না হয়। বর্তমানে সত্যি কথা বলতে অধিকাংশ নারী নির্যাতন মামলা মিথ্যা একটি চরম সত্য। এই মিথ্যা মামলার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত নির্যাতিত-নিপীড়িত মা-বোনের নির্যাতনের গল্প। আমাদের সমাজ নারী-পুরুষ নিয়ে গঠিত হয় নারী পুরুষ একে অপরের পাশে থেকে এই সমাজকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে পারবে এবং গড়ে তুলে যাচ্ছে। একজন পুরুষ একা কখনোই চলতে পারবে না অন্যদিকে একজন নারীর পক্ষে একা কখনও টিকে থাকা সম্ভব নয়।

আমাদের অবশ্যই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নারী-পুরুষের এই সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্য উভয়ের সাবলীল ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে এবং একে অপরের প্রতি সম্মানের জায়গা অটুট রাখতে হবে। সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ যদি এখনই না নেওয়া হয় অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সমাজের অবক্ষয় এত নিচে নেমে যাবে শত চেষ্টা করে কখনোই ঠিক করা সম্ভব নয়। তবে সে ক্ষেত্রে সবথেকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারকে। একজন সন্তানের সামনে যখন বাবা তার মাকে নির্যাতন করে তখন ওই সন্তান অবশ্যই এ বিষয়টি শিখে নেবে এটাই হয়তো বা পুরুষের স্বভাব চরিত্র। অন্যদিকে একজন নারীকে বা স্ত্রী সঙ্গীকে অবশ্যই সাবলীল আচরণ করতে হবে এমন কিছু না করার জন্য যাতে পরিবারে অশান্তি লেগে যায়। সংসারে অবশ্যই নারী-পুরুষের সমান ভূমিকা থাকাটা জরুরী যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো অসভ্য বর্বর হয়ে না জন্মায়।

এই বিষয়ে আপনাদের সাথে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব পরবর্তী পর্যায়ে আর অবশ্যই এই সব আমার নিজস্ব মন্তব্যকে ব্যক্তিগত ভাবে নেবেন না আশা করি ধন্যবাদ সকলকে।

ধন্যবাদ

@abidatasnimora


break.png

banner-abb23.png

Sort:  
 2 years ago 

দারুণ লিখেছেন আপু,নারী নির্যাতন সত্যিই একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।তার জন্য দায়ী আমাদের পুরুষশাসিত সমাজ।এখনো আধুনিক যুগে অনেক জায়গায় নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে হয় যা সত্যিই লজ্জার।সকলের সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা দরকার, ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপু। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপু আপনি খুব সুন্দর কথাগুলো আপনার পোষ্টের মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। সত্যি বর্তমানে নারী নির্যাতন যেমন একটি রোগে পরিণত হয়েছে। তার জন্য দায়ী শুধু এ পুরুষশাসিত সমাজ। এখনও এই বর্তমান যুগে অনেক মেয়েরা নারী নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু লজ্জায় কারো কাছে কখনো কিছু বলতে পারেনা। সব সময় তাদের সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে যায়। কিন্তু আমি মনে করি এগুলো থেকে আমাদের নারীদের বের হয়ে আসা উচিত। আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

সত্যি বলতে ভাইয়া ধর্ষণ আমাদের সমাজের ব্যাধি হয়ে দাড়িয়েছে। কিছুদিন আগে আমিও নিয়েছি দেখেছিলাম অনেক খারাপ লেগেছিল নিউজটি দেখে। পুরুষ হিসেবে নিজের প্রতি ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে। যাই হোক আপনি অনেক সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন । আর এর কারণগুলো সুন্দর ভাবে উল্লেখ করেছেন যেগুলো আমার ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ জানাই ভাই আপনাকে । শুভেচ্ছা রইল আপনার প্রতি

 2 years ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

নারীরা আমাদেরই মা বোন। তাদের উপর কোনো নির্যাতনের কথা শুনলে সত্যি অনেক খারাপ লাগে। তবে আপনি সত্যি বলছেন নারী নির্যাতন এখন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো, ভালো লিখছেন। 💫

 2 years ago 

সবাই যদি বুঝত ভাইয়া।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

নারী নির্যাতন নিয়ে সুন্দর একটি গল্প উপহার দিয়েছেন। নারী নির্যাতনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। জঘন্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করছি।সেইসাথে সমাজ থেকে একটি দূর করতে আইনে প্রয়োগের পাশাপাশি মানবিক সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।নতুন প্রজন্মের হাত ধরে সমাজ থেকে এ ব্যাধিমুক্ত হোক সেটাই প্রত্যাশা করছি।

 2 years ago 

আপনার মন্তব্য পড়ে খুব ভালো লাগলো।এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.12
JST 0.024
BTC 51460.37
ETH 2243.25
USDT 1.00
SBD 2.01