# শিশুর মানসিক বিকাশ-পর্ব ১

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমার বাংলা ব্লগে আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় " শিশুর মানসিক বিকাশ " আশা করি মনোযোগ দিয়ে পোস্টটি পড়বেন।
শিশু জন্মের পর থেকে বাবা-মার একটায় চিন্তা যে আমার শিশু কেমন হবে?কার মতো হবে? আর আমরাও শিশুর আচার-আচরণ দেখে বলে দেই পরিবারের কোন সদস্যদের মতো হবে।একটি শিশুকে দেখে আপনি কখনোই বলতে পারবেন না যে সে কার মতো হবে আমরা ধারণার উপর ভিত্তি করে কথাগুলো বলি এইগুলোই শিশুর মানসিক বিকাশের ধাপ।বয়স বাড়ার সাথে সাথে এসব আচার-আচরণের পরিবর্তন আসে। আমরা সবাই শিশু ছিলাম মানসিক বিকাশের ধাপ অনুসরণ করেই আজ আমরা এই অবস্থায় পৌছেছি তেমনি আমাদে শিশুদের সেই ধাপ অতিক্রম করতে হবে।কিন্তু আমাদের মাঝে খুব কম সংখ্যক অবিভাবক আছে যারা এই মানসিক বিকাশের প্রক্রিয়ার ধাপ টা বোঝেনা। আমরা যদি আমাদের শিশুদের মানসিক বিকাশের প্রতি যত্নশীল না হই তার মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে আরে।আমদের অবশ্যই শিশুদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এইটা মনে রাখতে হবে শিশুর বিকাশ সম্পূর্ণ নির্ভর করে পরিবারের সদস্যদের উপর।পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণ যদি ইতিবাচক হয় তাহলে শিশুর বিকাশও ইতিবাচক হবে অন্যথায় আপনি নেতিবাচক বা প্রতিক্রিয়া মনমানুসিকতার হন তাহলে শিশুর বিকাশ তেমনি হবে। আমাদের শিশুদের সুস্থ-সুন্দর মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য জন্মের পর থেকেই যত্নশীল হতে হবে।আপনাকে মনে রাখতে হবে শিশুরা অনুকরণ প্রিয় তারা প্রতিনিয়ত আপনার গতিবিধি, কথা বার্তার ধরণ সব অনুসরণ করছে

শিশুর মানসিক বিকাশের ধাপ গুলো আলোচনা করার পূর্বে একটা খুব জানা গল্প বলি

20210723_140035.jpg

আমরা সহসাই দেখি ১-৬ মাস বয়সের শিশুদের হাতে আপনি যা কিছুই দেন না কেন সে ওইগুলো মুখে দিচ্ছে।আপনি বারবার বিরক্ত হয়ে তার হাত সরিয়ে দিচ্ছেন তবুও সে হাত মুখে দিচ্ছে।আমরা এই বিষয়টি খুব সহজ ভাবি আর ভাবি এইটা পরিবর্তন কেন হচ্ছে এই শিশু কি মুখে আঙুল দেয়া শিখল নাকি? না শিশুদের এই অভ্যাস মাতৃগর্ভ থেকেই প্রাপ্ত।মা শিশুকে যখন মাতৃদুগ্ধ পান করার তার মুখে নেন এবং শিশু এই মুখে নিয়ে চর্বণ করতে থাকে।এই প্রক্রিয়া থেকে তার মাথায় এইটা সেট হয় যে সবকিছুই হয়তো মুখে নিতে হয়।শিশুর হাতে অনেক নোংরা থাকে সেগুলো মুখে দিলে পেট খারাপ করতে পারে এই ভাবনাতে আমরা শিশুর উপর রাগ করি,বিরক্ত হই কিন্তু দেখেন যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই অভ্যাস কিন্তু থাকেনা। এটি কিন্তু মানসিক বিকাশের একটি প্রক্রিয়া।

অবজেক্ট পারমানেন্স

শিশুর মানসিক বিকাশের ধাপগুলোর মাঝে সর্বপ্রথম যে ধাপ অনুসরণ করে সেটি হলো এই অবজেক্ট পারমানেন্স
এই প্রক্রিয়ার শিশু কিছু মনে রাখতে পারেনা। আপনি যতক্ষণ শিশুর সামনে থাকবেন ততক্ষণ সে আপনাকে মনে রাখবে, আপনার দিকে তাকাবে কিন্তু আপনি চলে গেলেই সে আপনাকে ভুলে যাবে।এই প্রক্রিয়াটি শিশুর ১-৬ মাস বয়স অবদি ঘটে থাকে। আপনি যদি ৬ মাস বসসে একটি শিশুকে লালন পালন করার জন্য দত্তক হিসাবে নেন।সে যখন আপনার কাছে আসবে সে কিন্তু তার মার কথা কখনোই মনে করবেনা বা কান্নাও করবেনা।সে যতই বড় হবে আপনাকেই মা বা বাবা বলে জানবে।

আর একটি উদাহরণ দিলে ভালো ভাবে বুঝতে পারব আমরা ধরুন আপনি ঢাকায় বা শহরে জব করেন।মাতৃকালীন ছুটি নিয়ে আপনি গ্রামের বাসায় আসলেন এবং সন্তান প্রসব করলেন। ছয় মাস পর্যন্ত আপনি এখানেই থাকলেন আপনার আত্বীয়-স্বজন সবাই শিশুকে খুব আদর করছে,স্নেহ করছে, তার সাথে খেলছে,কোলে করে ঘুরে নিয়ে বেরিয়েছে।কিন্তু ৬ মাস পর আপনি যখন আবার শহরে গেলেন কিছুদিন পর দেখলেন শিশু তার গ্রামের সেই মানুষদের কথা ভুলে গেছে। তাদের দেখলে হা করে তাকিয়ে থাকে কোনো রেসপন্স করেনা। কিন্তু আমরা তার মানসিক বিকাশের ধাপটা না বুঝে বলি শিশু ভুলে গেছে।

এটি আসলে তার মানসিক বিকাশের কারনেই হয়।সে কিছু মনে রাখতে পারেনা।

সেন্সমোটরি স্টেজ

এই ধাপটি শিশুর বয়স ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত। এই সময়ে শিশুরা ধীরে ধীরে সবাইকে চিন্তে শুরু করে। সেন্সমোটরি কথা থেকে আমরা সহজেই বুঝব যে সেন্সর বা শিশুর ক্ষেত্রে তার ইন্দ্রীয়। এই ইন্দ্রীয় কাজ করতে শুরু করে যার ফলে চেনা মানুষ চোখের সামনে থেকে সরে গেলেই কান্না করে। এই সময় শিশুরা খেলতে শেখে।

প্রি-অপারেশনাল স্টেজ

শিশুর মানসিক বিকাশের ধাপগুলোর মাঝে প্রি-অপারেশনাল স্টেজটি গুরুত্বপূর্ণ। শিশু ২-৭ বছর বয়সের মাঝে এই ধাপ অতিক্রম করে।এই সময় শিশুর আচার-আচরণের পরিবর্তন লক্ষণীয়। অপারেশনাল কথাটি থেকে আমরা বুঝি কোন কার্য বা যৌক্তিক। শিশুর ক্ষেত্রে তার যৌক্তিক চিন্তার কথায় আলোচনা করব।এই পর্যায়ে শিশু চিন্তা ভাবনা করতে পারেনা।সে যা দেখে তাই করতে চায়।যে মনে করে সেটায় করে।

ধরুন আপনি বাজারে গেছেন শিশুকে নিয়ে সে খেলনার দোকান দেখে খেলনা নিতে ইচ্ছা করল।আপনি বুঝাচ্ছেন যে টাকা নাই কিন্তু সে নাছর বান্ধা সে নিবেই। এমন এক পর্যায়ে আপনি রাগ হয়ে বিরক্ত হয়ে পরবর্তীতে তাতে বাজারে নেন না। বা নিয়ে যাওয়ার আগেই আমরা বলি ওকে নিয়ে যাবনা যা দেখে তাই নিতে চায়। আসলে এইটা তার একটা মানসিক বিকাশের ধাপ। শিশুকে নিয়ে আপনি পার্কে গেছেন বা মেলায় গেছেন সেখানে গিয়ে নাগড় দোলা দেখে সে ঊঠার জেদ করল কিন্তু আপনি জানেন সে ভয় পাবে। কিন্তু সে মানবে না তাকে নিয়ে উঠতেই হবে।

শিশুর এই প্রক্রিয়া গুলোই প্রি-অপারেশনাল স্টেজ।

কংক্রিট অপারেশনাল স্টেজ

শিশু যখন ৭ - ১১ বছর বয়স অতিক্রম করে তখন এই ধাপে থাকে।এই বয়সে যে ধরনের মানসিক বিকাশ অর্জন করে তাকে আমরা কংক্রিট অপারেশনাল স্টেজ বলি। কংক্রিট মানে শক্ত বা মজবুত বুঝি আমরা।অর্থাৎ এই পর্যায়ে শিশুর চিন্তাভাবনা শক্তিশালী হতে থাকে।সে চিন্তা করতে শুরু করে।যে কোনো বিষয় নিয়ে ধারণা অর্জন করতে শুরু করে।বিশ্বাস করতে শেখে।চোখের সামনে যে বস্ত দেখতে পায় সেই বিষয়ে কৌতুহল জন্মে তার মনে।প্রশ্ন করে থাকে এইটা কি?কিভাবে হলো? অন্যদিকে শিশু যেসব বিষয় চোখে দেখেনা যেমন -রাগ, দুঃখ,ভালবাসা এগুলো বুঝতে শেখে।

ফরমাল অপারেশনাল স্টেজঃ

ফরমাল অপারেশনাল স্টেজ হলো শিশুর মানসিক বিকাশের সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে শিশু থেকে কিশোর,কিশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে আত্বপ্রকাশ ঘটে।এই ধাপটি ১১ বছর বয়স থেকে পরবর্তী জীবনে অর্জন করে।এসব সে বড়দের মতো আচার-আচরণ করে। এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে।
এই ভাবে একটি শিশু জন্মের পর থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার মানসিক বিকাশ অর্জন করে।

আসুন আমরা শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশে সাহায্য করি।তাদের আচার-আচরণ বুঝতে শিখি

মানসিক বিকাশের বিস্তারিত আলোচনা পরের পর্বে করব ইনশাআল্লাহ।
ধন্যবাদ

Sort:  
 3 years ago 

শিশুর মানসিক বিকাশ নিয়ে অনেক সুন্দর লিখেছেন। আপনার সুন্দর পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 67584.80
ETH 3438.61
USDT 1.00
SBD 2.70