আমার বাংলাব্লগ প্রতিযোগিতা -১৪ (একটি লোমহর্ষক অপারেশন✌️✌️)

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আমাদের এই কমিউনিটিতে অসাধারণ ইউনিক একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, যে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারছি ছোটবেলায় কে কি ধরনের কুকাজ করেছে। সবাই ছোটবেলা বিভিন্ন ধরনের ফলমূল চুরি করে খেয়েছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে চুরি করে কোন কিছু খাওয়ার বিষয়টি খুব নরমাল হলেও আমাদের জন্য একটি বিষয় অনেক কঠিন। আর যেহেতু আমি শহরে বড় হয়েছি সেখানে তো ফল চুরি করার কোন সুযোগ নেই। তাই বলে কি আমার এমন একটি অতীত থাকবে না? অবশ্যই থাকবে সেটি নিয়ে আপনাদের সাথে আজ প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করছি।যদিও আমার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ দেখেই আপনাদের পোস্ট পড়ার প্রতি আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে গেল যে অরা মেডামের কাহিনি কি?উনি আবার কি চুরি করে খেল?

20220330_092949.jpg

২০১২ সাল,

সময়টা ছিল বৈশাখের শুরুতে চারপাশের প্রকৃতি খা খা করছে, সূর্যের উত্তাপ প্রকৃতি যেন নির্জীব, এক ফোঁটা পানির জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। আমি তখন সদ্য নবম শ্রেণীতে ভর্তি হলাম জেরিন, ফারিহা আমার ছোটবেলার বন্ধু। সবসময় আমাদের একসাথে চলা, আজ সময়ের পরিক্রমায় আমাদের গতিপথ আলাদা হয়ে গেছে, জেরিন মেডিকেলে, ফারিহা রুয়েটে আর আমি ঢাবিতে কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব এখনো অটুট। তখন আমাদের জীবনে ছিল যেন এক সুতোয় বাঁধা, আমরা যা করতাম যা পড়তাম সব একই। ক্লাসে প্রথম বেঞ্চে ছাত্রী ছিলাম আমরা। তবে ক্লাসের দুষ্টু মেয়ে বলে আমাদের একটা সুনাম ছিল। আমরাও নিজেরা গর্ব বোধ করতাম। দুষ্টমিতে আমাদের ছোট্ট টিমের বেশ নামডাক ছিল। আমরা প্রতিদিন স্কুলে কিছু না কিছু করতাম বিশেষ করে যারা ক্লাসে প্রেম করতো তাদের ব্যাপক ডিস্টার্ব দিতাম। আমাদের যন্ত্রণায় তারা ক্লাসে প্রেম করতে পারত না। একদিন সকালে আমি স্কুলে যাচ্ছি আমার স্কুল ছিল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ধরাবাঁধা অনেক নিয়ম ছিল যা আমার পছন্দ হত না। আমি এগুলো মানতে পারলাম না ।আমরা যখন স্কুলে যাচ্ছিলাম তখন আমার মাথায় একটি দুষ্টুমি আসে। আমি জেরিন ও ফারিহার সাথে শেয়ার করি। আমাদের স্কুলে যাওয়ার পথে খুব মিষ্টি একটি আমার কাজ আছে। গাছ অনেক ছোট হাত দিয়ে আম পারা যাবে। ফারিহা ও জেরিন কথা শুনেই লাফিয়ে উঠল। তাদের মুখে পানি চলে আসে কিন্তু ফারিহার মুখে হঠাৎ যেন এক চিন্তার ছাপ পড়ে গেল, কি হয়েছে ফারিহা তুই এমন নিরব হয়ে গেলি যে? ফারিহা বলে আমার কাঁচা আম খেতে খুব ইচ্ছা করছে কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে আম চুরি করা সম্পূর্ণ নিষেধ ধরা পড়লে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নালিশ যাবে, তারপর আব্বুর কাছে ব্যাপারটা ভেবে দেখছিস। না বাবা আমি আম খাব না। তখন আমি বললাম আরে আমরা কি সবার সামনে আম পেড়ে নিয়ে আসব । আমরা আম পাড়বো যাতে কেউ না দেখে সেই সময়। আমি বললাম আম তো আমাদের খেতেই হবে ইচ্ছা যখন পোষণ করেছি। আমি একটা নিখুঁত প্লান করব বিষয়টা আমার উপর ছেড়ে দে।

20220330_093028.jpg

আমার পরিকল্পনা ও পরামর্শ তাদের আগে থেকে ভরসা আছে। কেননা আগের আমার পরিকল্পনায় অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে ওরা। আমি বললাম শোন কাল আমরা একটু সকালে আসবো ওই সময় লোকজন কম থাকে আর জেরিন তুই বাসা থেকে সুন্দর করে চাটনি করে নিয়ে আসবি। কিভাবে আম পাড়বো সেসব কালকে আসার সময় বলব। পরদিন সকালবেলা বাসা থেকে একটু দ্রুত বের হচ্ছি আম্মু বলে কিরে তুই এত দ্রুত যাচ্ছিস কেনো? আমি বললাম এখান থেকে জেরিনের বাসায় যাবো একটু ম্যাথ করব। আমি কিছু কিছু ম্যাথ বুঝতেছিনা ওর থেকে বুঝে নিয়ে ক্লাসে যাবে একসাথে।আমার বান্ধবিরা এভাবে বাসায় মিথ্যা বলে প্রেম করে বেড়াত।আজ আমি একটু এপ্লাই করলাম😜 জেরিন আমার নিজের খালাতো বোন তাই আম্মু আর একটি বাক্য উচ্চারণ না করে কাজে মন দিল।

৮.৩০ মিনিট সকাল বেশ গড়িয়ে গেছে। ইসলামবাগ মোড়ে আমরা তিনজন এক হলাম ওদের মাঝে একটু ভয় ভয় কাজ করছে । আমি সাহস দিয়ে বললাম আরে আম চুরি তো ব্যাংক চুরি না,আম চুরি করলে কাউকে ফাঁসি দেবে না বা কোর্ট মার্শালে তুলবে না। আর আম পাড়ার সময় ধরা না পড়লে সাতখুন মাফ বুঝিস না। তখন ওরা একটু সাহস পেল। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট বিশাল বড়। রাস্তায় তেমন কেউই নাই।সেনাবাহিনীর সকালবেলা অনেকেই ডিউটিতে দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে। আমের গাছটা রাস্তার পাশেই। আমি ওদের বললাম আমাদের অপারেশন হবে এক মিনিটের মাঝে। গাছ থেকে আমি আম পাড়বো আমপারার দায়িত্ব আমার। তোরা দুইজন রাস্তার দুই দিকে নজর রাখবি। তোরা দেখ চোখের পলকে আমি কিভাবে অপারেশন শেষ করে আসি। আমরা আম গাছের খুব নিকটে চলে এসেছি চোখ যত দূরে যাই কাউকেই দেখা যাচ্ছে না আমি বললাম এই সুযোগে এই কাজটা করতে হবে। জেরিন ফারিহা তোরা ধীরে ধীরে হাট আমি আগে গিয়ে আম পাড়বো যাতে কেউ বুঝতে না পারে ।কথা বলা শেষ না হতেই আমি দ্রুত গিয়ে শপিং ব্যাগ বের করে আম পাড়া শুরু করলাম ।আমি আম পারতে পারতে প্রায়ই ২০ টা র মত আমপারা হয়ে গেছে । এদিকে জেরিন ফারিহা গাছের দিকে যখন আসলো আমিও অপারেশন শেষ করে বেরিয়ে আসলাম।✌️✌️

20220330_092940.jpg

এই যাত্রায় আমাদের অপারেশন সাকসেসফুল এখন সামনে এমপি পোস্টে একটি বিপদ কারণ তারা বই-খাতা ছাড়া আর কিছুই নিয়ে যেতে দেয় না জেরিন বলে এমপি পোস্টে কি করবো? তখন আমি বললাম চল দেখা যাক কি করা যায় এসব আমার উপর ছেড়ে দে। তোরা শুধু চুপ থাকবি।আমি আম যখন পেরেছি অবশ্যই খাবো।

আমরা যখন গেট পার হবো তখন আমাদের থামিয়ে দিয়ে বলল আপনাদের ব্যাগে কি আমি বললাম আম তখন উনি ব্যাগ দেখে বলল এতগুলো আম আপনারা কোথায় থেকে পারলেন? আমি বললাম কোথায় থেকে আবার আম তো গাছ থেকেই পারে। আমরাও গাছ থেকে পেরেছি। তখন উনি বললো না মানে আপনারা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে থেকে আম পারলেন কিনা সেটা জিজ্ঞেস করছি। আমি বললাম বাসার গাছ থেকে নিয়ে এসেছি তখন উনি আমার দিকে দেখে বললেন আমের বোঁটা থেকে এখনো রস পড়ছে! দেখে মনে হচ্ছে দুই মিনিট আগেই পাড়া হয়েছে। তখন আমি বললাম হ্যাঁ এখনই পাড়া হয়েছে তবে দুই মিনিট আগে না পাঁচ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গাছ থেকে পেরেছি।উনি সন্দেহ করেছেন কারণ ছেলেমেয়েরা ক্যান্টন থেকে আম পারে চুরি করে সেটা উনি জানেন।কিন্তু আমরা মেয়ে তারপর হাতে কোনো প্রমান নাই তাই একটু এডভান্টেজ পাচ্ছি। তখন উনি একটু চুপ থেকে বললেন আম নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি বললাম কেন? নিয়ে যাওয়া যাবে না মানে যাবে না উনি অনেক জোর গলায় বললেন। আমিও নাছোড়বান্দা। আমি বললাম নিজে খাওয়ার জন্য কি আম নিয়ে যাচ্ছি নাকি নওশোবা ম্যামের জন্য আম নিয়ে যাচ্ছি। উনি আমাকে আনতে বলেছেন আমের আচার করবেন। আমাদের আম খেতে হলে তো বাসায় বসেই খেতে পারতাম এত কষ্ট করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার দরকার হতো না।নওশোবা ম্যাম আমাদের গনিত নিত আর শৃঙ্খলার বিষয় গুলো উনি দেখত। সবাই ওনাকে খুব ভয় পেত, পুরো ক্যান্টমেন্ট ওনার কঠোরতা সম্পর্কে জানত। আমিও ওনার মাথায় কাঠাল ভাংলাম 🤭 এবার অন্য কিছু বলতে না পেরে বলেন যান আপনারা আপনাদের সাথে পারা যাবে না।

আমি যখন কথা বলছিলাম আমার সাথে দুই ভীতু কাঁপতেছিল মনে হয় আমি ধরা পরবো এইটুকু বিশ্বাস আমার উপর নাই। একটু দূরে গিয়ে আমরা তিনজন অট্টহাসি দিলাম এত জোরে হাসি মনে হয় এক জীবনে আর কখনো হাসিনি।ফারিহা বলে অরা তুই পারিসও এসব ।কিভাবে লোকটাকে বোকা বানালি। আজ আমাদের মনে অনেক খুশি। খুব মজা করে আম খাব বিভিন্ন কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে এসেছি আজ একটু আগে এসেছে বলে বাকিরা এখনো আসেনি তাই আমরা তিনজন বসে থেকে তৃপ্তি সহকারে চাটনি দিয়ে মজা করে আম খেলাম আর এভাবেই আমরা একটি দুরন্ত সফল আম অপারেশন শেষ করলাম........

20220330_092640.jpg
আম চুরি করা আপনাদের কাছে সামান্য হলেও ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে আমাদের জন্য এটি অনেক অসাধ্য একটি কাজ। আশা করছি আমার গল্পটি আপনাদের ভাল লেগেছে যদিও আমার চুরি করার গল্প পড়ার জন্য আপনারা পোস্ট দেখেই উদগ্রীব ছিলেন।

Sort:  
 3 years ago 

গল্প পড়ে যতটা অবাক হয়েছি তার চাইতেও বেশি অবাক হয়েছি 2012 সালেই ক্লাস নাইনে থাকা মেয়েরা প্রেম করত এ কথা শুনে। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে পাকা চোর আপনি। চুরিও করলেন আবার মিলিটারি পুলিশ কে বোকা বানিয়ে আমগুলো ভেতরেও নিয়ে গেলেন। মাথায় ঘিলু না থাকলে আসলে ভালো চোর হওয়া যায় না হাহাহাহা।

 3 years ago 

বুঝতে হবে ব্রো।আপনি গল্পটি পড়েছেন দেখে খুব ভালো লাগল।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনার আম চুরি করার ঘটনাটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। আমরা সবসময়ই মনে করি শুধু ছেলেরাই বুঝি বেশি দুরন্তপনা হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের ফল গুলো ছেলেরাই চুরি করে থাকে। কিন্তু আপনার পোস্টটি পড়লে ধারনা পাল্টে যাবে মেয়েরাও যে ফলমূল চুরি করে খায় আপনি তার একমাত্র প্রমাণ। আপনার গল্পটি বেশ সুন্দর গুছিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এ জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 3 years ago 

হা হা হা আমি একমাত্র প্রমান কি যে বলেন আপনি।আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন ভাইয়া।

 3 years ago 

আপনার পুরো গল্পটা পড়লাম আপু আসলে আপনি খুবই সাহসিকতার সাথে এই আম চুরি করেছিলেন সেটাই বোঝা যাচ্ছে আর আপনি প্রতি পথে পথে আপনার বুদ্ধি নিজেদের বাচিয়ে নিয়েছেন।

 3 years ago 

বুদ্ধি না থাকলে হবে বলেন। এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনার আম চুরির ঘটনাটি পরে আমার খুব মজা লাগলো। একথা স্বীকার করতেই হবে আপনি একজন পাকা চোর চুরিবিদ্যা আপনার ভালই জানা আছে। আম চুরি করতে গিয়ে আপনি বাড়ি থেকে শুরু করে চেক পোস্ট পর্যন্ত অনেক গুলো মিথ্যা কথা বলেছেন। যাক শেষ পর্যন্ত একটা দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে আম তো খাওয়া হয়েছে। চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পরি ধরা এই কথাটি আজ ভালো করে বুঝতে পারলাম। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

 3 years ago 

ছোটবেলায় কতই না মিথ্যা বলি মজার ছলে। যাইহোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি আমার পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন।

 3 years ago 

আপনার শৈশবের স্মৃতিচারণ গুলো অনেক সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন যা পড়ে খুবই ভালো লাগলো আমার আর তাই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া সুন্দর একটি গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন আপু। আসলে বাল্যকালে আমাদের সবারই এই ধরনের অনেক মধুময় স্মৃতি থাকে। ঘটনাটি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো।

 3 years ago 

আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62684.33
ETH 2456.60
USDT 1.00
SBD 2.66