বিশ্ব নারী দিবস ও আমার ভাবনা ( ১০ ভাগ লাজুক খ্যাঁকের জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন? আমার বাংলাব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। সেই সাথে নারী দিবস উপলক্ষে আমার চিন্তাভাবনা আপনাদের সাথে আলোচনা করব। তবে শুরু শুরু করাযাক

international-womens-day-g2428feb3a_1920.jpg

Image Source

আজ ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। সারাবিশ্বে এই দিবসটি কে গুরুত্বের সহিত পালন করা হয়। নারীর অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমঅধিকার ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে এ দিনটি তাৎপর্য সহিত পালন হচ্ছে। বাংলাদেশেও এত ব্যতিক্রম না। ২০২২ সালে নারী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ তাদের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে "নারী সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ"। অর্থাৎ এই প্রতিপদ্যের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে নারী স্বাস্থ্যের প্রতি আমাদের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। নারীস্বাস্থ্য ঠিক থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ধারায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব অন্যদিকে নারী জাগরন যদি না হয় তাহলে সমাজ কখনই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য নারী জাগরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী যখন শিক্ষা-দীক্ষায় পুরুষের পাশাপাশি অবদান রাখবে, তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হবে এবং সমাজের অন্যায় গুলোকে আঙ্গুলদিয়ে দেখাবে তখনই সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উন্নয়নের ধারা বজায় থাকবে। যে সমাজে নারীকে দমিয়ে রাখা হয় নারীর জাগরণকে নিশ্চুপ করা হয় সেই সমাজ কখনই সুস্থ ধারায় প্রবাহিত হতে পারেনা। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও নারীদের যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী-পুরুষকে একে অপরের সহযোগী হতে হবে। একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে পুরুষের মতো সমান অবদান রাখারপ্রত্যয় নিয়ে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।কিন্তু দুঃখের বিষয় নারীদের দূর্ভাগের জন্য নারীরাই সবথেকে বেশি দায়ী বলে আমার মনে হয়। আমরা নারী দিবস নিয়ে অনেক আলোচনা করলাম এবার এর প্রেক্ষাপট নিয়ে নিয়ে কথা বলা যাক।

barcelona-gabfe34489_1920.jpg

Image Source

উল্লেখ্য আমাদের নারী দিবসের পটভূমি সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব নারী দিবস উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালে কাজে কর্মঘন্টা নিশ্চিত করা, এছাড়াও কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় নেমে এসেছিল সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই সময় নারীকর্মীদের সম্মানের চোখে দেখা হতো না এবং পুরুষের তুলনায় নারীদের মজুরি ছিল তুলনামূলকভাবে অধিক কম ।কিন্তু নারীর পুরুষের তুলনায় বেশি কাজ করত ।আবার সেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাথে অমানবিক ,শারীরিক হেনস্থার শিকার হতে হতো । নারীদের কাজের অবমূল্যায়ন করা হতো। সেই মিছিলে সরকারি বাহিনী দমন নিপীড়ন চালায়। দীর্ঘদিন পরে ১৯০৯ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্রেট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তারপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন । সেই সম্মেলনে ১৭ টি দেশ থেকে ১০০ নারী প্রতিনিধি যোগদান করে। সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে আর সেই থেকেই আমরা বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে ৮ মার্চকে পালন করে আসতেছি ।

business-g51749560d_1920.png

Image Source

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

কাজী নজরুলের এই কবিতা থেকে আমরা বুঝতে পারে নারী এবং পুরুষের সমানধিকারের গুরুত্ব। আমাদের সমাজে নারীদের সব সময় উপেক্ষা করা হয়, তাদের অধিকারের ব্যাপারে সমাজ সবসময় নিশ্চুপ থেকেছে। বাইরের জগতকে যতটা পারা যায় নারীর কাছে অচেনা করে রাখতে সবটুকুই যুগে যুগে করে আসছে আমার সমাজ। একটা সময় তো নারীদের সমাজে সব থেকে অবহেলিত প্রাণী মনে করা হতো কিন্তু যুগে যুগে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে আসছে। তবে অনেক পরিবার এবং সমাজে এখনও নারীদের অবহেলার চোখে দেখা হয়।অথচ একজন পুরুষের কাজের পেছন সবথেকে অনুপ্রেরণাদায়ক হতে পারে নারী। প্রতিটি কাজে নারীর ভূমিকা আমরা অগ্রগণ্য করতে পারিনা । নারীদের অধিকারের প্রশ্নে আমাদের সবসময় সোচ্চার হওয়া উচিত।

mother-ga9bf4fd35_1280.png

Image Source

আপনাদের মনে রাখা উচিত যে একজন নারী তার শক্তি সামর্থ যোগ্যতা দিয়ে সমাজে অবস্থান নিশ্চিত করছে এবং এর ধারাবাহিকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীরা কখনো করুণা চায় না, তারা চায় তাদের সুযোগ,সমতার ক্ষেত্র। আমি বলব নারীদের সমঅধিকার নয় অগ্রাধিকার দিন দেখবেন পৃথিবীটা সমাজটা কতটা সুন্দর হয়। নারীকে যতটা পিছিয়ে রাখবেন সমাজ তত পিছিয়ে পড়বে। পৃথিবীর প্রতিটা ক্ষেত্রে নারী বৈষম্য চোখে পড়ার মতো, প্রতিটা কর্মক্ষেত্রে নারীদের কে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এখনো দেখবেন অনেক প্রতিষ্ঠানে নারীদের ও পুরুষদের বেতনে তারতম্য। আমাদের দেশে বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে দেখবেন নারীদের বেতন সবথেকে কম। একজন পুরুষ যত ঘন্টা কাজ করে একজন নারী সমপরিমাণ কাজ করার পরেও পুরুষের তুলনায় নারী কম পারিশ্রমিক পায় যা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক একটি আচরণ বলে আমার মনে হয়। বর্তমানে এই পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর গুলোতে নারীদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়াতে নারীদের ভিতরে আত্মবিশ্বাস জাগতে শুরু করেছে এবং পরিবার গুলো তাদের আদিম ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের সব সময় নারীদের সম্মানের চোখে দেখা উচিত কিন্তু প্রতিদিন পত্রিকার পাতা নিউজ চ্যানেল খুললেই দেখা যায় নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি বৈষম্য ,নারীর প্রতি অবহেলা।

পৃথিবীর সকল নারীদের প্রতি সম্মান রেখে আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ

@abidatasnimora


break.png

banner-abb23.png

Sort:  
 2 years ago 

এইতো আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আসলেই নারী-স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ ধারায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমাদের উচিত নারীদের সম্মান করা।আসলে আমরা দিনশেষে তাদের মূল্যায়ন করতে পারিনা। তাদের সব সময় ছোট চোখে দেখি। তারা পারবেনা কিন্তু এখন সমাজে নারী পুরুষ সমান তালে চলছে। আসলে সমাজকে উন্নয়ন করতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে আসা উচিত এই কথাটির সাথে একমত আমি।আসলে একটা সময় নারীদের মূল্য দিতো না। তাদের দাসী হিসেবে রাখা হতো । আসলে একজন নারী তার সন্তান সমাজ-সংসার ঠিক রাখতে পারে কারন একটা পুরুষ ব্যস্ত থাকে তার কর্মজীবন নিয়ে। আসলে এখন ঠিক বলেছেন নিউজ চ্যানেল খুললেই নারীর প্রতি নির্যাতন। নারীদের প্রতি অবহেলা বেড়েই চলছে। খুব ভাল লিখেছেন আপু

 2 years ago 

আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

অসম্ভব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। আমি নিজেও এত গভীরভাবে জানতাম না নারী দিবসের পেছনের কারণগুলো। এত সুন্দর গুছিয়ে তুলে ধরেছেন। সত্যি অনেক ভালো লাগলো। দুঃখের বিষয় মুখে নারীদের সম্মান আর অধিকার দেওয়ার কথা বললেও এখনও ভারতীয় উপমহাদেশ গুলোতে নারীর সেই সম্মান আর অধিকার একদমই নেই। নারীদের সবসময় নীচু চোখে দেখা হয়। জানিনা কত দিন আরো এভাবে চলবে।
সকলের মনে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এটাই চাওয়া। অনেক ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

আপু আপনি কি একদম ঠিক বলছেন মুখে সবাই বলে কাজে কেউ নাই ।

 2 years ago 

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী-পুরুষকে একে অপরের সহযোগী হতে হবে। একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে পুরুষের মতো সমান অবদান রাখারপ্রত্যয় নিয়ে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।

সুন্দর একটি আলোচনা উপস্থাপন করেছেন খুবই ভালো লাগলো আলোচনাটি পড়ে ।
অবশ্যই সব রকম ভাবে একে অপরের পরিপূরক হয়ে সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে কাজের মাধ্যমে।
""পৃথিবীতে যা কিছু চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর""

 2 years ago 

আপনিও অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56588.25
ETH 2399.94
USDT 1.00
SBD 2.32