# অসুস্থ প্রতিযোগিতা 🏃♀️🏃♂️১০% 🦊🦊
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমাদের বাস্তব সমাজের কিছু চিত্র তুলে ধরবো। আমরা সাধারণত নিজেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সবার আগে দেখতে চাই। আমাদের বাবা-মা সব সময় চায় আমরা সফলতা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যাই। আমাদের সক্ষমতা থাক বা না থাক, আমার সেখানে ভালো লাগুক বা না লাগুক কিন্তু আমাকে লরতে হবে এটাই জানো নিয়তি হয়ে গেছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে সেই প্রতিযোগিতার মধ্যে নিজেকে আজ বেশ অসহায় মনে হচ্ছে। সেই সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে নাম লেখাতে বড্ড ভয় পাই।বাচ্চারা যখন সদ্য প্রাইমারি স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হয় তখন বাবা-মার প্রত্যাশা তখন থেকেই সন্তানেরা তাদের সফলতা দেখাবে। স্কুলে 100 তে 100 মার্ক পাবে। আপনাদের সাথে একটি ঘটনা শেয়ার করি।
২০১৪ আমার এস এসসি পরীক্ষা শেষে ছুটি কাটাতে যাই যশোর। আমি যশোর ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম দুই মাস আমার চাচার বাসায় । তো আমি আমার কাজিন কে নিয়ে একদিন তার স্কুলে গেলাম তা পরীক্ষার জন্য অর্থাৎ তার পরীক্ষা চলছিল কাকি বলল অরা ওকে একটু স্কুলে নিয়ে যাও । স্কুল বাস করে স্কুলে নিয়ে যেতে হয় ।আমার কাজিনের নাম মিফতাউল। ওর স্কুল ছিল শহরের ভিতরে। তাকে এক্সাম হলে ঢুকে দিয়ে আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম ওয়েটিং রুমে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে তাকে নিয়ে আমি যখন বাসে উঠলাম তখন দেখলাম।
একজন অভিভাবক তার মেয়েকে জিজ্ঞেস করছে এক্সাম কেমন হয়েছে মেয়েটি কান্না কান্না স্বরে বলল ভাল হয়নি আম্মু। এ ভালো হয়নি কথা শেষ না হতেই মা তার পা থেকে জুতা খুলে মেরে গালে কয়েকটি মেরে দিল😭 তখন ঐ অভিভাবকদের প্রতি আমার এতটাই ঘৃনা জমেছিল যে বলে বোঝাতে পারবো না। একটা বাসে সন্তানকে কতটা অপদস্ত করতে পারলো মা। তিনি নিজেকে কতটা ছোট করলেন এতগুলো মানুষের সামনে। সবাই অনেক রিকোয়েস্ট করার পরও তিনি থামলেন না বারবার তাকে গালে থাপ্পর মারছে আর বলছে বাসায় গিয়ে তোর খবর আছে আজ। আমি অবাক হলাম সামান্য একটি পরীক্ষার কারণে একটা মেয়েকে এতটা মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া যায় যার।মেয়েটির বয়স কেবল ৮/১০ বছর। সে পরীক্ষা নামক বিষয়টা সে তো এখন অভ্যস্ত না অথচ তার ভিতর সফলতাকে বা পরীক্ষা ভালো দেওয়াকে এমনভাবে ঢুকে দেওয়া হয়েছে যা তার জন্য গলা কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র পরীক্ষা দিয়ে একটা মানুষকে বা একটা শিক্ষার্থীকে কখনো জাজ করা যায় না। আমি অনেক দেখেছি আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব তারা সবসময় খুব ভালো পড়াশোনা করত কিন্তু পরীক্ষা হলে গিয়ে খারাপ করত। আসলে আসলে অনেকের এক্সাম প্যানিক নামে একটা সমস্যা হয় এক্সাম হলে গিয়ে, জানা জিনিস ভুলে যাই ভয়ের কারণে। তবে যাই হোক সেদিন ওই অভিভাবকের আচরণ দেখে আমি খুব হতবাক হয়েছি। আপনারা ভাবুন কতগুলো শিক্ষার্থীর সামনে তার সহপাঠী সামনে তার মা যখন তাকে জুতা খুলে তাকে মারে ওই শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থাটা কতটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে বলে মনে হয়। সে তার সহপাঠীদের সামনে কতটা ছোট হলো । আমার মনে হয় পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীর তার মায়ের প্রতি অনেকটাই শ্রদ্ধাবোধ চলে গেছে। অভিভাবক সন্তান কে শাসন
করতেই পারে। সেটা হতে পারত বাসায় গিয়ে।যা খুশি তার কিন্তু তেমন কিছু হতো। আমি দেখেছি মেয়েটি যখন কান্না স্বরে বলছে আম্মু মেরো না লাগছে।মেরো না আম্মু। আর খারাপ হবেনা, আমি ভুলে গেছিলাম আমাকে মেরো না আম্মু তখন মনে হয়েছিল নিজে গিয়ে অভিভাবককে থামায় এবং তার কাজের কড়া জবাব দেই কিন্তু তার বোঝার বা নূন্যতম বিবেক বোধ থাকলে এ কাজ কখনোই করত না।অথচ মা সুন্দর করে বলতে পারত ভালো হয়নি সমস্যা নাই পরের বার ভালো হবে মা।তোমাকে আরো পরিশ্রম করতে হবে তাহলেই ভালো করবা।এখন কেমন হয়েছে সে কথা ভুলে যাও। তাহলে ঐ মেয়েটা কতটা খুশি হতো এবং পরবর্তীতে সে ভালো করার অনেক চেষ্টা করত
।কিন্তু সে মনে মনে এতই আঘাত পেয়েছে যা তার কোমল মনকে কঠিন করে তুলেছিল হয়তো। যে সময় তার খেলে বেড়ানোর সময় অথচ তখন তাকে পরীক্ষার বেড়াজালে আটকে দেওয়া হয়েছিল ।পরীক্ষা নামক প্যানিক তার মনে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল। একজন সন্তানকে সুস্থ মানসিক সম্পূর্ণ গড়ে তুলতে গেলে তার পরিবারকে অবশ্যই সাপোর্ট করতে হবে। পরিবারে যদি সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা না থাকে, সুস্থ মানসিক বিকাশের সুযোগ না থাকে তাহলে সেই পরিবারের সন্তান কখন ভালো কিছু দিতে পারেনা পরিবারকে। সন্তান খারাপ করবেই ভুল করবেই তার জন্য পিতামাতাকে ভালো করে বোঝাতে হবে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে, তার মনকে বুঝতে হবে কিন্তু আফসোস লাগে আমাদের এই সমাজে খুব কমসংখ্যক পিতা মাতা আছে যারা তাদের সন্তানকে বোঝে। তাদের মনের অবস্থা জানার চেষ্টা করে, কেন সে খারাপ করছে সেদিকে খেয়াল রাখে, তাদের একমাত্র লক্ষ্য থাকে কেন সে পরীক্ষায় ভালো করবে না, কেন যে ফার্স্ট হবে না? কেন সে gpa-5 পাবেনা?। বাবা মা বলে এত টাকা খরচ করছি ওর পিছনে, টিউশন দিচ্ছি রেজাল্ট কেন ভালো হবে না। টিউশন দিলে, ভালো ভালো স্কুলে পড়ালেখা রেজাল্ট ভালো হবে আর রেজাল্ট ভালো হলে কি সব হয়ে গেল। আজকাল আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মানসম্মত স্টুডেন্ট গড়ার পরিবর্তে তারা ভাল রেজাল্ট করতে পারে সেদিকে ছুটছে ।
একজন শিক্ষার্থী নৈতিকতার দিক দিয়ে কতটা স্বচ্ছ, শিক্ষকদের সাথে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তার আচরণ কতটা পরিপক্ষ, সে কতটা ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা করতে পারে, তার অন্যান্য যোগ্যতা কতটুকু গভীর সেসব না ভেবে শুধুমাত্র মুখস্ত করে কতটুকু খাতায় ঢেলে দিতে পারছে সেদিকে খেয়াল রাখছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেকটাই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়ে নিয়েছে। অনেকটা বললে হয়তো বা ভুল হবে পুরোপুরি ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা যত রেজাল্ট ভালো করবে তাদের প্রতিষ্ঠানে শত শিক্ষার্থী ভর্তি হবে তাতে ইনকাম কত বৃদ্ধি পাবে। আর প্রতিবছর তো তারা বেতন বাড়ার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। তারা যেভাবে বেতন বাড়ার দিকে মনোযোগ দেয় ঠিক সেভাবে যদি শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে মনোযোগী দিতো তাহলে আমাদের সমাজ আজ অনেকটাই মানবিক সমাজে পরিণত হতো। আমি বলব পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অসুস্থ প্রতিযোগিতা কারণেই মানবিকতা আমাদের সমাজ থেকে চলে গেছে। আজকাল শিক্ষার্থীদের রুক্ষ ব্যবহার দেখলে, হোক সে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, সহপাঠী, বড় ভাই বোন বা তাকে পরিবহন করা রিক্সা চালক, বাসের ড্রাইভার সবার সাথে কেমন করে কথা বলে, কথায় লেশ মাত্র সম্মানবোধ নেই। যা আমাদের সমাজকে অনেকটাই নিচে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমাজকে উন্নত সমাজে, উন্নত মন মানসিকতা সমাজে পরিণত করতে হলে অবশ্যই পরিবারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার উন্নত মানসিক চর্চার প্রধান কেন্দ্র। পরিবারের সবাইকে সংস্কৃতিবান হয়ে হবে। সংস্কৃতির প্রতি সম্মান থাকতে হবে। সেই সাথে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া পরিবারের প্রধান কর্তব্য। শুধু সন্তানকে শিক্ষা দিলেই হবে না পরিবারের সকল সদস্যকে তা যে কোনোভাবেই মানতে হবে। আমি নৈতিকতা শিক্ষা দিচ্ছি কিন্তু আমার ভিতরেই নৈতিকতার কোন ছিটেফোঁটা নেই যার কারণে ঐসব শিক্ষার্থীদের বা সন্তানদের মনে নৈতিকতা ব্যাপারে ভন্ডামি জন্ম নিয়েছে। তাদের কাছে এগুলো নিহত ভণ্ডামি মনে হয়। তাই বলবো সন্তানকে সফলতা সর্বোচ্চ শিখরে দেখতে চাইলে বাবা-মাকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যত্নশীল হতে হবে। আপনার স্বপ্ন থাকতে পারে কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন সন্তানের জন্য গলাকাটা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার সন্তান হতে চায় ডাক্তার আপনি তাকে বানাতে চান ইঞ্জিনিয়ার। আপনাকে অবশ্যই সন্তানের মনের অবস্থা বুঝতে হবে। সেই সাথে সে কি চাই তার কোন দিকে ট্রেন্থ সেটা খেয়াল করেই তাকে সেই লাইনেই সেই দিকেই আপনাকে অনুপ্রেরণা দিতে হবে।তাহলেই দেখবেন সন্তান আপনার জন্য অনেক সফলতা নিয়ে আসবে।
ধন্যবাদ
সত্যিই আপনি অসাধারণ একটি ব্লগ তৈরি করেছেন এবং কথা বলেছিল অসম্ভব সুন্দর এবং যৌক্তিকতা। আমাদের এই সমাজ যেন সকল অথবা যে কোন জায়গায় আমরা সবসময় ভুল জায়গায় সফলতা খুঁজতে গিয়ে আসল সফলতা থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ি। আমার ওই অভিভাবকের প্রতি ঘৃণা জমে গেছে আপনার এই পোস্টটি পড়তে পড়তে। সে আমার মনে হয় অভিভাবক হিসেবে কতটা সফল? আসলে কী সে একজন ভালো অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা রাখে? আপনার এই পোস্টটি অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার আগামীর জন্য শুভকামনা রইল। সামনের দিনগুলোতে আরো ভালো কিছু করবেন ইনশাল্লাহ।
আপনি অনেক গঠনমূলক মন্তব্য করেছেন ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে আপনি খুব সুন্দর করে আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্রের অবস্থানগুলো তুলে ধরেছেন। প্রত্যেকটি গার্ডিয়ানের সচেতন হওয়া উচিত। তারা যদি তাদের সন্তানকে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে তাহলে ভাল ফলাফলের চেয়ে খারাপ ফলাফলই বেশি হবে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আপনি আপনার এই লেখার মাঝে তুলে ধরেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।
আপনি পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন দেখে ভালো লাগল।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আমার মনে হয় এই সমস্ত পরিবারের গার্ডিয়ানদের সুশিক্ষার অভাব। এদের সবাইকে জোর করে থ্রি ইডিয়ট ছবি দেখানো দরকার। তাহলেই এরা প্রকৃত শিক্ষা কি জিনিস বুঝতে পারবেন। আর এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করবেন। ধন্যবাদ সুন্দর একটি বিষয় সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। তা হচ্ছে এ ধরনের পোস্টগুলো পড়ার আগ্রহ থাকলেও কমেন্ট বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ভয়ে খুব বেশি পড়ার সুযোগ হয় না
আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া।আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঘুনে ধরা পচা মানুষের পদচারণায়, বাড়ি থেকে রাস্ট্র পর্যন্ত পচে গেছে এর জন্য কে দায়ী বলা সহজ নাহলেও বুঝি এর রুপকার আমরা নিজে।
আপনার আর্টিকেলটি অনেক ইউনিক ছিল । অনেকদিন পর এরকম লেখা পড়লাম । ভালো লেগেছে অনেক । এরকম লেখা আপনারা মাধ্যমে আরও চাই আমরা । ধন্যবাদ আপনাকে। ভালোবাসা রইলো